সদ্য সমাপ্ত সেপ্টেম্বর মাসে দেশে নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতার চিত্র আবারও উদ্বেগজনক মাত্রায় পৌঁছেছে। মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত এক মাসে সারা দেশে বিভিন্ন ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ১৫৯ জন নারী ও কন্যাশিশু। এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৫৫ জন, যাদের মধ্যে ১০ জন সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার এবং একজনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। এছাড়া যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন আরও ২০ জন নারী ও কন্যাশিশু।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, পারিবারিক সহিংসতায় নিহত হয়েছেন ৩৯ জন নারী, আত্মহত্যা করেছেন ২৩ জন, এবং আহত হয়েছেন ১৮ জন। যৌতুকজনিত নির্যাতনের ঘটনায় নিহত ২ জন ও আহত ১ জন। একই সময়ে ১৩৩ জন শিশু শারীরিক বা মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে, যার মধ্যে ২৫ জন প্রাণ হারিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে রংপুরের এক বিদ্যালয়ে শিক্ষক কর্তৃক অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীকে মারধরের ঘটনা শিশু অধিকার লঙ্ঘনের জ্বলন্ত উদাহরণ হিসেবে দেখা যাচ্ছে। মানবাধিকার সংস্থাটি মনে করে, দেশে আইনের শাসন, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষায় সর্বস্তরে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি। নারী, শিশু ও সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতা বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি রাজনৈতিক সহিংসতা ও নিরাপত্তাহীনতা প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা নেওয়া প্রয়োজন।
রাজনৈতিক সহিংসতা
সেপ্টেম্বর মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার ৩৭টি ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৯ জন, আহত হয়েছেন ২৬৮ জন। এর মধ্যে একটি রাজনৈতিক দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে ২৪টি ঘটনায় ৭ জন নিহত ও ১৯২ জন আহত হন। রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা, আধিপত্য বিস্তার, কমিটি গঠন ও সমাবেশ কেন্দ্রিক বিরোধ এসব সহিংসতার প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
সাংবাদিক নির্যাতন
একই মাসে সাংবাদিক নির্যাতনের ৩২টি ঘটনায় মোট ৪২ জন সাংবাদিক ভুক্তভোগী হয়েছেন। এর মধ্যে নিহত ১ জন, আহত ২০ জন, লাঞ্ছিত ৯ জন, হুমকিপ্রাপ্ত ৬ জন এবং মিথ্যা মামলায় অভিযুক্ত হয়েছেন ৬ জন।
গণপিটুনি বা মব সহিংসতা
সেপ্টেম্বরে ২৮টি মব সহিংসতার ঘটনায় প্রাণ হারান ২৪ জন, আহত হন ২১ জন। এসব ঘটনায় অনেক ক্ষেত্রে মানসিক প্রতিবন্ধী ও নিরীহ মানুষও গণপিটুনির শিকার হয়েছেন।
ধর্মীয় ও জাতিগত সহিংসতা
প্রতিবেদনে বলা হয়, ৮টি ধর্মীয় সহিংসতায় ২টি মন্দিরে হামলা, ২০টি প্রতিমা ভাঙচুর এবং ৫টি মাজারে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। পার্বত্য এলাকায় এক ধর্ষণ ঘটনার প্রতিবাদে সংঘর্ষে তিনজন পাহাড়ি নাগরিক নিহত হন।
সীমান্ত সহিংসতা
সীমান্ত এলাকায় সহিংসতা অব্যাহত থেকেছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর গুলিতে আহত হয়েছেন দুই বাংলাদেশি, আটক হয়েছেন ১৩ জন এবং ১৩২ জনকে পুশ-ইন করা হয়েছে। পাশাপাশি সমুদ্র উপকূলে এক সংঘবদ্ধ গোষ্ঠী ৫টি মাছ ধরার ট্রলারসহ ৪০ জন জেলেকে ধরে নিয়ে যায়।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু
গত মাসে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে বা হেফাজতে মোট ৮ জন নিহত হয়েছেন—এর মধ্যে ৪ জন গুলিতে এবং ৪ জন হেফাজতে। এছাড়া পুলিশের তাড়া খেয়ে পানিতে ডুবে মারা গেছেন আরও দুজন। কারাগারে মারা গেছেন ৫ জন বন্দি।
মানবাধিকার সংস্থাটি বলেছে, এসব ঘটনার ধারাবাহিকতা দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতিকে চরম উদ্বেগজনক অবস্থায় নিয়ে যাচ্ছে। নাগরিক নিরাপত্তা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় রাষ্ট্রের কার্যকর পদক্ষেপ এখন অত্যাবশ্যক।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে পদোন্নতিতে অনিয়ম ও অসঙ্গতির অভিযোগে দায়ের করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে মহামান্য হাইকোর্ট রুল জারি করেছেন। একই সঙ্গে আদালত নির্দেশ দিয়েছেন, রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত পদোন্নতি সংক্রান্ত যেকোনো কার্যক্রম অবৈধ হিসেবে গণ্য হবে। দেশের বৃহত্তম রাষ্ট্রায়ত্ত বিশেষায়িত ব্যাংকটির ১০ম গ্রেডের পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন ধরে ন্যায্য পদোন্নতির দাবিতে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করে আসছিলেন। দাবি আদায়ে বারবার কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন ও মানববন্ধন করেও সাড়া না পেয়ে তারা শেষ পর্যন্ত আদালতের দ্বারস্থ হন। সূত্র জানায়, পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তারা গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর (শনিবার) ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে ছুটির দিনে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন করেন, যাতে গ্রাহকসেবা ব্যাহত না হয়। তাদের দাবির প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করে তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শওকত আলী খান দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন। তবে তিন মাস পার হলেও প্রতিশ্রুত আশ্বাস বাস্তবায়িত না হওয়ায় তারা পুনরায় ওই বছরের ৩০ নভেম্বর মানববন্ধনের আয়োজন করেন। এতে সারা দেশের শাখা থেকে ১২০০–এর বেশি কর্মকর্তা অংশ নেন। পরদিন (১ ডিসেম্বর) বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক সঞ্চিয়া বিনতে আলী পদোন্নতির বিষয়ে মৌখিক আশ্বাস দিলে আন্দোলনকারীরা কর্মস্থলে ফিরে যান। পরে কর্মকর্তাদের জানানো হয়, সুপারনিউমারারি পদ্ধতিতে মার্চের মধ্যে পদোন্নতির বিষয়টি সমাধান করা হবে। কিন্তু এখনো তা বাস্তবায়ন হয়নি। অন্যদিকে অগ্রণী, জনতা, রূপালী ও সোনালী ব্যাংকে ইতোমধ্যে মোট ৭,৩১৬ কর্মকর্তা এই পদ্ধতিতে পদোন্নতি পেয়েছেন, যা অর্থ মন্ত্রণালয়ও অনুমোদন করেছে। পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তাদের অভিযোগ, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের এই উদাসীনতা তাদের প্রতি কর্মীবান্ধবহীন মনোভাব ও কর্তৃপক্ষের অনীহারই প্রকাশ। তারা বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট স্বৈরাচার পতনের পর অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পরিবর্তন এলেও কৃষি ব্যাংকে আগের প্রশাসনিক কাঠামো অপরিবর্তিত রয়ে গেছে, যা ন্যায্য দাবি আদায়ের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের অভিযোগ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, মহাব্যবস্থাপক ও মানবসম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক জাহিদ হোসেন একাধিক বৈঠকে আশ্বাস দিলেও বাস্তব পদক্ষেপ না নিয়ে বরং আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী কর্মকর্তাদের হয়রানি ও নিপীড়ন করা হয়েছে। ফলে তারা বাধ্য হয়ে এ বছরের চলতি মাসে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন (রিট মামলা নং: ১৬৪২৮/২০২৫, মো. পনির হোসেন গং বনাম রাষ্ট্র ও অন্যান্য)। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৬ অক্টোবর হাইকোর্ট রুল জারি করে জানতে চেয়েছেন, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের পদোন্নতিতে দেখা দেওয়া অনিয়ম ও অসঙ্গতি কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না। পাশাপাশি আদালত নির্দেশ দিয়েছেন, রুল নিষ্পত্তির আগে কোনো পদোন্নতি কার্যক্রম শুরু করা হলে তা অবৈধ ও আদালত–অবমাননার শামিল হবে। রিটে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক পদোন্নতিতে ১০৭৩ জন কর্মকর্তা (ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা থেকে মূখ্য কর্মকর্তা) এবং ৫১ জন মূখ্য কর্মকর্তা (ঊর্ধ্বতন মূখ্য কর্মকর্তা পদে) অনিয়মের মাধ্যমে পদোন্নতি পেয়েছেন। এদিকে জানা গেছে, পূর্বে দুর্নীতির অভিযোগে আলোচিত মানবসম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক জাহিদ হোসেন এখনো পদোন্নতি কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তারা বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করে যদি পুনরায় অনিয়মের পথে যাওয়া হয়, তাহলে তা আদালতের অবমাননা ও রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল হবে। তারা আশা করছেন, এ বিষয়ে দ্রুত ন্যায়বিচার ও সমাধান মিলবে।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে সাম্প্রতিক সময়ে পদোন্নতি ও প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। পদোন্নতিবঞ্চিত কর্মকর্তাদের একটি অরাজনৈতিক সংগঠন ‘বৈষম্য বিরোধী অফিসার্স ফোরাম’ এর কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক মো. পনির হোসেন ও সদস্য সচিব এরশাদ হোসেনকে শৃঙ্খলাজনিত মোকদ্দমা এবং মুখ্য সংগঠক মো. আরিফ হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া মুখপাত্র তানভীর আহমদকে দুর্গম অঞ্চলে বদলি করা হয় এবং সারাদেশের দুই শতাধিক কর্মকর্তাকে ব্যাখ্যা তলব করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে যে, মো. আরিফ হোসেনকে বরখাস্ত করার নথিতে তাকে ‘ব্যাংক ও রাষ্ট্রবিরোধী’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে, অথচ ব্যাখ্যা তলবপত্রে বলা হয় তিনি ‘রাজনৈতিক কাজে তহবিল সংগ্রহ করেছেন।’ ফরেনসিক বিশ্লেষণ অনুযায়ী, তার ব্যাখ্যাতলবের জবাব প্রদানের পরও বরখাস্ত চিঠি আগেই তৈরি করা হয়েছিল, যা অনেক কর্মকর্তার মধ্যে প্রশ্ন তোলেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মহাব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, সরকারি কর্মকর্তারা যদি সংবিধান বা আইন অনুযায়ী দায়িত্ব না পালন করেন, হাইকোর্ট তাদের ক্ষমতা প্রয়োগ বা অপব্যবহার রোধের জন্য আদেশ দিতে পারে। অন্য একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, এ সিদ্ধান্তের পেছনে ব্যাংকের ফ্যাসিস্ট সরকারের সহযোগী একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা বলছেন, পদোন্নতি ও ন্যায়বিচারের জন্য আন্দোলন এবং আইনি লড়াই চলবে। ভুক্তভোগী কর্মকর্তারা শিগগিরই বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, অর্থ উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার কাছে এ বিষয়ে প্রতিকার চাইবেন। এ ব্যাপারে মো. আরিফ হোসেন ও পনির হোসেনের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে একটি ভুয়া কর্মচারী ইউনিয়নের সভায় জোরপূর্বক কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণ করানোর অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন ব্যাংকের ভিজিল্যান্স স্কোয়াডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা তাসলিমা আক্তার লিনা ও তার স্বামী মিরাজ হোসেন। গত ২০ অক্টোবর প্রধান কার্যালয়ের অডিটোরিয়ামে ‘বিশেষ সাধারণ সভা’ নামে একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের (সিবিএ) নামে তারা এটির আয়োজন করে। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির সহ-শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির খান ও উদ্বোধক হিসেবে জাতীয়তাবাদী শ্রমিকদলের সভাপতি আনোয়ার হোসাইনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তবে তারা প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে ভুয়া নেতাদের কার্যকলাপ সম্পর্কে অবগত হয়ে অনুষ্ঠানটি বয়কট করেন। অভিযোগ রয়েছে, তাসলিমা আক্তার লিনা হেড অফিসের বিভিন্ন দপ্তরের নারী কর্মকর্তা এবং তার স্বামী মিরাজ হোসেন পুরুষ কর্মকর্তাদের ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে ওই সভায় অংশগ্রহণে বাধ্য করেন। অংশগ্রহণে অস্বীকৃতি জানালে বদলি বা পদোন্নতি রোধের হুমকিও দেওয়া হয় বলে জানা গেছে। হেড অফিসের কয়েকজন কর্মকর্তার ভাষ্য অনুযায়ী, লিনা তার স্বামীর প্রভাব খাটিয়ে নারী সহকর্মীদের ওপর দীর্ঘদিন ধরে অনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে আসছেন। কেউ আপত্তি জানালে মিরাজের সহযোগীরা এসে অশালীন আচরণ ও গালিগালাজ করে থাকে বলেও অভিযোগ ওঠে। এ ছাড়া, লিনা ‘উইমেনস ফোরাম’ নামে একটি সংগঠন গড়ে মাসিক চাঁদা সংগ্রহ করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। তার এই কর্মকাণ্ডে অনেক নারী কর্মকর্তা বিব্রতবোধ করলেও চাকরির স্বার্থে নীরব থাকছেন। অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা গেছে, মানবসম্পদ বিভাগের ডিজিএম জাহিদ হোসেনের প্রত্যক্ষ সহায়তায় তাসলিমা আক্তার লিনা ও তার স্বামী মিরাজ ব্যাংকের অভ্যন্তরে প্রভাব বিস্তার করছেন। এ ঘটনায় নারী কর্মকর্তাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তারা কর্তৃপক্ষের কাছে তাসলিমা আক্তার লিনা ও মিরাজ হোসেনকে অবাঞ্ছিত ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন। এ বিষয়ে জানতে তাসলিমা আক্তার লিনার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি নিয়ম অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করছি, অভিযোগগুলো ভিত্তিহীন। অন্যদিকে, মিরাজ হোসেনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে সংঘটিত এজাহারভুক্ত হত্যা মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি ফয়েজ উদ্দিন আহমেদ ও মিরাজ হোসেন পলাতক রয়েছেন। ব্যাংক প্রশাসন বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। খুনের শিকার কৃষি ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী আব্দুল হালিম ছিলেন কৃষি ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের (সিবিএ) সভাপতি। তার গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলায়। পরিবারের ভাষ্য অনুযায়ী, তিনি স্থানীয়ভাবে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। মামলার বিবরণ অনুযায়ী, ১ নম্বর আসামি হিসেবে অবসরপ্রাপ্ত পিয়ন ফয়েজ উদ্দিন আহমেদ এবং ২ নম্বর আসামি মিরাজ হোসেনের নাম রয়েছে। তারা বর্তমানে নিজেদের সিবিএ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দাবি করে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে প্রভাব বিস্তার করছেন। ব্যাংক সূত্রে গেছে, তারা চাঁদাবাজি, ঘুষ আদায় ও নানা অনিয়মের সঙ্গে জড়িত। সূত্র জানায়, ব্যাংকের ভেতরে একটি সিন্ডিকেটের প্রভাবেই এসব আসামিরা এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছেন। এই সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে আছেন মানবসম্পদ বিভাগের ডিজিএম জাহিদ হোসেন। এতে আরও যুক্ত রয়েছেন ডিজিএম সৈয়দ লিয়াকত হোসেন, হাবিব উন নবী, ডিএমডি খালেকুজ্জামান জুয়েল ও ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সঞ্চিয়া বিনতে আলী। গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর রাতে মতিঝিলের বিমান অফিসের সামনে আব্দুল হালিমের মৃত্যু হয়। পরদিন সকালে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠায়। মতিঝিল থানার উপ-পরিদর্শক সজীব কুমার সিং সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে জানান, পুরনো সহকর্মীদের সঙ্গে বিরোধের জেরে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং রাত ১টা ৪০ মিনিটে হাসপাতালে মারা যান। হালিমের ছেলে ফয়সাল বলেন, তার বাবা ২০১৪ সাল থেকে কৃষি ব্যাংক সিবিএর সভাপতি ছিলেন এবং বোয়ালখালী উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করতেন। ইউনিয়নের নেতৃত্ব ও পদ নিয়ে সহকর্মীদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। এ নিয়ে গত নভেম্বরেই মতিঝিল থানায় একটি জিডি (নং ০৫/১১/২০২৪ - ৩৩৫) করেছিলেন তার বাবা। তিনি আরও বলেন, বুধবার রাতে আমার বাবাকে তার অফিসের সহকর্মীরা মারধর করে হত্যা করেছে। সিবিএর বর্তমান সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জানান, ২০১৪ সালে আমরা নির্বাচিত হই। এরপর আর কোনো নির্বাচন হয়নি। কিন্তু গত ৫ আগস্ট বিনা নির্বাচনে নতুন কমিটি ঘোষণা করে আমাদের অফিস দখল করে নেয় ফয়েজ ও মিরাজ। এ নিয়ে মামলা চলছে। মামলার তথ্য অনুযায়ী, আসামিরা অস্থায়ী জামিনে ছিলেন। সম্প্রতি তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। এছাড়া আরও কয়েকজন পলাতক রয়েছেন—যাদের মধ্যে আছেন ড্রাইভার সাইফুল, শাহেদ, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর মেহেদী ও অবসরপ্রাপ্ত ক্লিনার সিরাজ। এদিকে, মামলার ২ নম্বর আসামি মিরাজ হোসেন নৈমিত্তিক ছুটির আবেদন করে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। যদিও ওয়ারেন্টভুক্ত আসামির নৈমিত্তিক ছুটি পাওয়ার কোনো এখতিয়ার নেই। মানবসম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক এ বিষয়ে বলেন, তিনি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন এবং নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। কিন্তু স্থানীয় মুখ্য কার্যালয়ের প্রধান মহাব্যবস্থাপক জানান, তিনি কোনো মন্তব্য করতে চান না। কারণ ব্যবস্থাপনা পরিচালক মন্তব্য না করার নির্দেশ দিয়েছেন। ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। অভ্যন্তরীণ এই পরিস্থিতিতে কৃষি ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
অভিনব কায়দায় চাঁদাবাজিতে নেমেছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের একদল ভুয়া সিবিএ নেতা। অভিযোগ উঠেছে, তারা বিশেষ সাধারণ সভা আয়োজনের নামে সারা দেশের শাখাগুলো থেকে কোটি টাকারও বেশি চাঁদা আদায় করছে। তথ্যসূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন (সিবিএ), রেজি. নং বি-৯৮৫-এর নাম ব্যবহার করে আগামী ২০ অক্টোবর ‘বিশেষ সাধারণ সভা’ শিরোনামে একটি অনুষ্ঠান আয়োজনের ঘোষণা দেয় একদল ভুয়া নেতা। এ উপলক্ষে তারা ব্যাংকের প্রায় ১ হাজার ২৫০টি ইউনিট থেকে ১০-২০ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করে ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার উঠে। গোপন সূত্র জানায়, তাদের নিয়ন্ত্রিত লোকজন শাখা পর্যায়ে বদলি ও পদোন্নতির ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন উপ-মহাব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, তারা এসব কর্মকাণ্ডে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করলেও এ সিন্ডিকেটের ভয়ে কিছু বলার সাহস পাচ্ছেন না। এ ঘটনায় ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগের ডিজিএম জাহিদ হোসেনের প্রত্যক্ষ মদদ ও আস্কারায় চাঁদাবাজি চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রাপ্ত আমন্ত্রণপত্রে দেখা গেছে, ভুয়া সভাপতি দাবিকারী কৃষি ব্যাংকের সাবেক পিয়ন ফয়েজ আহমেদ ও ভুয়া সাধারণ সম্পাদক মিরাজ হোসেন স্বাক্ষরিত পত্রে প্রধান অতিথি হিসেবে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির, উদ্বোধক হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন এবং প্রধান বক্তা হিসেবে সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম খান নাসিমকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। কয়েকজন মহাব্যবস্থাপক জানান, তারা বিভিন্ন শাখা থেকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ পেয়েছেন এবং বিষয়টি ব্যবস্থাপনা পরিচালক অবগত আছেন বলে জানানো হয়েছে। অনুষ্ঠানটি কৃষি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত হওয়ায় তারা কার্যত কিছু করতে পারছেন না। অনুসন্ধানে জানা যায়, এর আগেও একই সিন্ডিকেট শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে প্রায় ৫০ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করেছিল। সেই টাকা তারা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, চাঁদাবাজ ও তাদের মদদদাতাদের সঙ্গে দলের কোনো সম্পর্ক নেই। তারা বহিরাগত অনুপ্রবেশকারী। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এসব ভুয়া সিবিএ নেতাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও অবাঞ্ছিত ঘোষণা দাবি করেছেন। তাদের আশঙ্কা, এসব কর্মকাণ্ডের নেতিবাচক প্রভাব আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে পড়তে পারে।
খাদ্যে বিভিন্ন ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থের উপস্থিতি এবং এর ফলে জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকি মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপ নিতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোববার (৭ ডিসেম্বর) দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এ বৈঠক হয়। বৈঠকে কৃষি ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী সায়েদুর রহমান, মুখ্য সচিব সিরাজ উদ্দিন মিয়া এবং সংশ্লিষ্ট সচিবরা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া বিএসটিআই মহাপরিচালক এসএম ফেরদৌস আলম, ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ফারুক আহম্মেদ, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জাকারিয়া এবং পরমাণু শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মো. মজিবুর রহমানও অংশ নেন। বৈঠকে খাদ্যবাহিত রোগ, খাদ্যে দূষণের ধরন ও এর ঝুঁকি এবং সংকট মোকাবিলার উপায় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, খাদ্যে বিভিন্ন দূষণের অস্তিত্ব সম্পর্কে আমরা জানি; এখন এটিকে কীভাবে মোকাবিলা করা হবে, সেই ব্যবস্থাই জরুরি। আমাদের সন্তান, বাবা-মা—সবারই ঝুঁকি রয়েছে। তাই আমাদের সবার স্বার্থেই একসঙ্গে কাজ করতে হবে। তিনি সংশ্লিষ্ট প্রত্যেককে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে খাদ্যে দূষণ সংকট মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় কার্যক্রমসংক্রান্ত লিখিত প্রস্তাব জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন। জরুরি উদ্যোগগুলো তাৎক্ষণিকভাবে গ্রহণ করা হবে বলেও জানান। বৈঠকে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ খাদ্যবাহিত রোগ ও দূষণের বিভিন্ন উপাত্ত তুলে ধরে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুসারে, প্রতি বছর ১০ জনের ১ জন শিশু অন্তত একবার খাদ্যবাহিত রোগে অসুস্থ হয়। আক্রান্ত প্রতি তিন শিশুর একজন মৃত্যুবরণ করে। বিশ্বে বছরে ৬০ কোটি এবং বাংলাদেশে প্রায় ৩ কোটি শিশু এসব রোগে আক্রান্ত হয়। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ জানায়, খাবারে সাধারণত চার ধরনের দূষক পাওয়া যায়—ভারী ধাতু, কীটনাশক-জীবনাশকের অবশিষ্টাংশ, তেজস্ক্রিয়তা ও জৈব দূষক। গত অর্থবছরে ১,৭১৩টি এবং চলতি অর্থবছরে ৮১৪টি নমুনা পরীক্ষায় অতিরিক্ত মাত্রায় সিসা পাওয়া গেছে। পরীক্ষাকৃত ১৮০টি নমুনার মধ্যে ২২টিতে সিসা শনাক্ত হয়েছে। শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও ইউএমইএ সুইডেনের গবেষণায় পানি ও মাছের নমুনায় ৩০০ ধরনের ওষুধ, ২০০ ধরনের কীটনাশক এবং ১৬ ধরনের পিএফএএস পাওয়া গেছে। ইউনিসেফের জরিপে বলা হয়, বাংলাদেশে সাড়ে তিন কোটি শিশু সিসা সংক্রমণে আক্রান্ত। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জাকারিয়া জানান, সিসা দেহে প্রবেশ করে মস্তিষ্ক, যকৃত, কিডনি, হাড় ও দাঁতে জমা হয়। শিশুদের হাড় নরম হওয়ায় সিসা সরাসরি মস্তিষ্কে গিয়ে মানসিক বিকাশ ব্যাহত করে। এ ছাড়া গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের ৫ শতাংশ গর্ভবতী নারীর শরীরেও সিসার সংক্রমণ রয়েছে। সিসা দূষণ কমাতে পরিবেশ মন্ত্রণালয় ১০ বছরের একটি কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী সায়েদুর রহমান জানান, দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েই প্রয়োজনীয় ল্যাব ও সক্ষমতা রয়েছে। খাদ্যে সিসার মাত্রা নিয়ে সমন্বিত গবেষণা শুরু করলে খুব দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব। খাদ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয় প্রতিনিধিরা হাঁস-মুরগি, দুগ্ধজাত খাবার ও মাছের মাধ্যমে মানবদেহে ক্ষতিকর পদার্থ প্রবেশের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। তারা জানান, অনেক পোলট্রি খামারে অনিয়ন্ত্রিতভাবে ওষুধ ও অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়। মুরগিকে অ্যান্টিবায়োটিক দিলে তা ৭ থেকে ২৮ দিন পর্যন্ত দেহে থাকে। ২৮ দিন পূর্ণ হওয়ার আগেই মুরগি বাজারজাত করা হলে মানুষের দেহে অপ্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিক প্রবেশের ঝুঁকি বাড়ে। বড় প্রতিষ্ঠানগুলো তুলনামূলকভাবে সতর্ক থাকলেও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান নজরদারি এড়িয়ে অনিয়ন্ত্রিতভাবে পোলট্রি ফার্ম পরিচালনা করছে বলেও জানা যায়। কৃষিতে অবৈধ কীটনাশকের ব্যবহার রোধে ইতোমধ্যে নেওয়া পদক্ষেপ এবং আরও কীভাবে এটি নিয়ন্ত্রণ করা যায়—বৈঠকে এই বিষয়েও আলোচনা হয়। খাদ্য উপদেষ্টা বলেন, পর্যাপ্ত খাদ্য নিশ্চিত করতে গিয়ে কখনো কখনো খাদ্যের নিরাপত্তার দিকটি উপেক্ষা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। পাঠ্যপুস্তকেও খাদ্য নিরাপত্তা অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি।
নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, জাতির জন্য প্রতীক্ষিত এ নির্বাচনে আপনারাই চালকের আসনে আছেন। আমাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতেই হবে। রবিবার সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশনের চার কমিশনার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। বৈঠকে তিনি নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতিতে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে সরকার ইসিকে সর্বাত্মক সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে। জাতিকে একটি সুন্দর নির্বাচন উপহার দিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে আমরা ইতিহাসের সেরা নির্বাচন উপহার দেওয়ার প্রত্যয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। এ সময় সিইসি নাসির উদ্দিন আগামী সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের প্রস্তুতি সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করেন। তিনি জানান, ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই জাতীয় নির্বাচন ও একই দিনে গণভোট আয়োজনের জন্য কমিশন সম্পূর্ণ প্রস্তুত। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমান মাছউদ, তাহমিদা আহমদ, মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ এবং নির্বাচন কমিশন সচিব আখতার আহমেদ। অন্যদিকে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান ও প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়াও উপস্থিত ছিলেন। প্রস্তুতিকালে সর্বাত্মক সহযোগিতা করায় সিইসি আইন–শৃঙ্খলা বাহিনী ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং তাদের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানান।
রাজধানীর ধানমন্ডিতে মায়ের বাসায় রাত কাটানোর পর আবারও শাশুড়ি খালেদা জিয়াকে দেখতে এভারকেয়ার হাসপাতালে গেছেন জোবাইদা রহমান। রোববার (৭ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে তিনি হাসপাতালে পৌঁছান বলে জানিয়েছেন বিএনপির মিডিয়া সেলের এক সদস্য। জানা গেছে, জোবাইদা রহমান গত শুক্রবার লন্ডন থেকে ঢাকায় এসে সরাসরি হাসপাতালে গিয়ে শাশুড়ির খোঁজ নেন। এরপর থেকে তিনি বাবার বাড়ি এবং হাসপাতালের মধ্যে নিয়মিত যাতায়াত করছেন। রাতে ধানমন্ডির মাহবুব ভবনে অবস্থান করলেও তিনি সিসিইউতে থাকা চিকিৎসকদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখেছেন। সকালে আবার তিনি হাসপাতালে যান। গত ২৩ নভেম্বর থেকে গুরুতর অসুস্থ খালেদা জিয়া এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে একটি বিশেষজ্ঞ মেডিকেল বোর্ড তার চিকিৎসা পরিচালনা করছে। এই বোর্ডের সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন ডা. জোবাইদা রহমান।