প্রথমবারের মতো নারী কাবাডি বিশ্বকাপ আয়োজন করতে চলেছে বাংলাদেশ। সোমবার (১৭ নভেম্বর) থেকে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আসরটি। এবারের টুর্নামেন্টে স্বাগতিকসহ ১১ টি দেশ অংশ নিতে চলেছে। রোববার প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনূসের উপস্থিতিতে তাঁর বাসভবন যমুনায় বিশ্বকাপ ট্রফি উন্মোচন করা হবে। সেখানে অংশগ্রহণকারী ১১ টি দেশের অধিনায়কেরা উপস্থিত থাকবেন। এর আগে, ২০১২ সালে প্রথম নারী কাবাডি বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়। দীর্ঘ ১৩ বছর পর ঢাকায় টুর্নামেন্টটির দ্বিতীয় আসর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আসন্ন নারী কাবাডি বিশ্বকাপকে সামনে রেখে ১৪ সদস্যের দল ঘোষণা করলো বাংলাদেশ। শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে দল ঘোষণা করে বাংলাদেশ কাবাডি ফেডারেশন।
এশিয়ান আরচ্যারি চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ আরেকটি পদক পেয়েছে। কম্পাউন্ড মিশ্র বিভাগে রৌপ্যের পর কম্পাউন্ড নারী এককে ব্রোঞ্জ জিতেছে তারা। কুলসুম আক্তার মনি বাংলাদেশকে এই পদক এনে দেন। একক ইভেন্টে বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিনিধি ছিলেন মনি। আজ (বৃহস্পতিবার) সেমিফাইনালে ভারতের প্রদীপ পৃথিকার বিপক্ষে পরাজিত হন তিনি। ৫ সেটের মধ্যে চার সেটেই দুজনের সমান স্কোর ছিল। তৃতীয় সেটে পৃথিকা ৩০ আর মনি ২৯ স্কোর করেন। শেষ পর্যন্ত ওই ১ পয়েন্টের ব্যবধানই ম্যাচের ফলাফল গড়ে দেয়। ১৪৬-১৪৫ পয়েন্টে হেরে মনি ফাইনালে উঠতে ব্যর্থ হন। ব্রোঞ্জ লড়াইয়ে মনির প্রতিপক্ষ ছিল চাইনিজ তাইপের চেন সি। মনি প্রথম সেটে ২৯-৩০ পয়েন্টে পিছিয়ে পড়েন। দ্বিতীয় ও তৃতীয় সেট ২৯ পয়েন্টে সমতা ছিল। চতুর্থ সেটে মনি আবার এক (২৯-২৮) পয়েন্টে পিছিয়ে পড়েন। শেষ সেটে মনির তিন পয়েন্টে জয় প্রয়োজন ছিল। সেটা তিনি কাঁটায় কাঁটায় করেছেন। ৩০ এর মধ্যে তিনি ৩০ করেন। প্রতিপক্ষ চেন ২৭ করলে ১৪৬-১৪৫ পয়েন্টে মনি ব্রোঞ্জ জেতেন।
জাতীয় স্টেডিয়ামে আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) বাংলাদেশ-নেপালের ফুটবল ম্যাচ। দুপুরের পরই এই স্টেডিয়াম ছাড়তে হবে আরচ্যারদের। যেখানে সর্বশেষ ইভেন্ট কম্পাউন্ড মিশ্র বিভাগের সেমিফাইনাল। সেই সেমিফাইনালে দক্ষিণ কোরিয়াকে ১৫৮-১৫৩ পয়েন্টে হারিয়ে বাংলাদেশ ফাইনালে ওঠে। এশিয়ান আরচ্যারি চ্যাম্পিয়নশিপে অন্তত রৌপ্য পদক নিশ্চিত হওয়ায় উল্লাসে মাতে স্বাগতিকরা। বাংলাদেশ তৃতীয় বারের মতো এশিয়ান আরচ্যারির স্বাগতিক। আয়োজন ও ব্যবস্থাপনায় বেশ দক্ষতা দেখিয়েছে আরচ্যারি ফেডারেশন। গতকাল পর্যন্ত আট ইভেন্টের মধ্যে পদকের সম্ভাবনা রয়েছে শুধু কম্পাউন্ড নারী একক ইভেন্টে মনিরের। তার সেমিফাইনাল আগামীকাল। আজ (বুধবার) রিকার্ভ মিশ্র বিভাগে কোয়ার্টারে বিদায়ের পর কম্পাউন্ড মিশ্র বিভাগে সেমিফাইনালে উঠায় আশা খানিকটা জিইয়ে আছে। হিমু বাছাড় ও বন্যা আক্তার নিরাশ করেননি। শক্তিশালী কোরিয়ার বিপক্ষে ১৬০ স্কোরের মধ্যে ১৫৮ করেছেন তারা। এশিয়ান আরচ্যারিতে অন্তত রৌপ্য নিশ্চিত করে বেশ খুশি হিমু বাছাড়, ‘এশিয়ান আরচ্যারিতে এটাই বাংলাদেশের প্রথম কম্পাউন্ড পদক। এর অংশ হতে পেরে অবশ্যই ভালো লাগছে।’ ফাইনালে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ভারত। তাদের হারিয়ে স্বর্ণপদকে চোখ হিমুর, ‘আমরা অবশ্যই এখন স্বর্ণের জন্য খেলব। কোরিয়াকে হারিয়েছি, ভারতকেও হারানো সম্ভব।’ নারী কম্পাউন্ড আরচ্যার বন্যা আক্তার অনেকদিন ধরেই খেলছেন। এশিয়ান পর্যায়ে একটি পদক পেয়ে তিনিও বেশ তৃপ্ত, ‘এর আগেও এশিয়ান আরচ্যারিতে আমি ও আশিক রেকর্ড স্কোর করেও পদক পাইনি। এবার ব্যক্তিগত ইভেন্টে যখন পারলাম না, তখন ফোকাস ছিলাম মিশ্র বিভাগ নিয়ে। আমি পার্টনারকে সহায়তা করেছি, সেও করেছে। আমরা নিজেদের সেরাটা দেওয়ায় ফাইনালে উঠতে পেরেছি।’ কোরিয়া বিশ্ব আরচ্যারির বড় পরাশক্তি। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ এবং অলিম্পিকেও পদক থাকে তাদের। সেই দেশের আরচ্যারকে হারানো নিয়ে ফরিদপুরের কন্যা বন্যা বলেন, ‘গত তিন বছর আমি কয়েকটি আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে খেলেছি। এজন্য আমার টেম্পারমেন্ট অন্য আরচ্যারদের চেয়ে একটু বেশিই। কোরিয়ান আরচ্যারকে ভয় পাইনি, স্বাভাবিক খেলা খেলেই হারিয়েছি।’ বরাবরই রিকার্ভ আরচ্যাররা বাংলাদেশের আরচ্যারিতে আলোচনায় থাকেন। রোমান সানা, দিয়া সিদ্দিকী, আলিফ ও সাগরদের তুলনায় বন্যারা সুযোগ-সুবিধায় পিছিয়ে, তাই ফেডারেশনের কাছে বন্যা ও আশিকের দাবি, ‘আমরা আগেও বলেছি আমাদের বিদেশি কোচ দরকার। কম্পাউন্ড আগে অলিম্পিক ইভেন্ট ছিল না। সামনের অলিম্পিকে কম্পাউন্ড রয়েছে। আমাদের বিদেশি কোচ ও সুযোগ-সুবিধা দিলে আমরা আরও ভালো করতে পারব।’ শুধু বিদেশি কোচ নয়, অনেক সময় কম্পাউন্ড আরচ্যাররা সেভাবে দেশের বাইরে খেলার সুযোগও পান না। এ নিয়ে আক্ষেপ ঝরল তাদের কণ্ঠে, ‘অনেক টুর্নামেন্টে কম্পাউন্ড আরচ্যারদের পাঠানো হয় না, আবার পাঠালেও সংখ্যায় কম। অথচ আমাদের কম্পাউন্ডের ফলাফল কিন্তু খারাপ নয়।’ আরচ্যারি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক তানভীর আহমেদ। তিনি কম্পাউন্ড বিভাগেও গুরুত্ব দেওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করলেন, ‘২০২৮ লস অ্যাঞ্জেলস অলিম্পিকে কম্পাউন্ড অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। আমরা সেই লক্ষ্যে কম্পাউন্ডে আলাদা কোচ ও পরিকল্পনা করছি। এশিয়ান আরচ্যারি চ্যাম্পিয়নশিপের এই ফলাফল আমাদের আরও উৎসাহিত করছে।’
তীর এশিয়ান আরচ্যারী চ্যাম্পিয়নশিপে স্বাগতিক বাংলাদেশের সকালটা ভালো হলেও দ্বিতীয় সেশন ভালো কাটেনি। কম্পাউন্ড নারী দলগত বিভাগে ব্রোঞ্জ পাওয়ার আশা থাকলেও শেষ দিকে ছন্দ হারিয়েছে। রোমাঞ্চকর লড়াইয়ের পর ইরানের কাছে ২২৭-২২৪ পয়েন্টে (৫৪-৫৬, ৫৮-৫৬, ৫৭-৫৭, ৫৫-৫৮) হেরেছে বাংলাদেশ। নারী কম্পাউন্ড দলের হয়ে খেলেন বন্যা আক্তার, কুলসুম আক্তার ও পুষ্পিতা জামান। কম্পাউন্ড নারী দলগত বিভাগে শুরুটা ভালো ছিল বাংলাদেশের। এলিমিনেশন রাউন্ডের প্রথম ধাপে কাজাখস্তানকে ২৩০-২২৬ স্কোরে (৫৭-৫৭, ৫৭-৫৬, ৫৯-৫৮, ৫৮-৫৫) হারিয়ে সেমি-ফাইনালে উঠেছিল দল। সেমি-ফাইনালে ভারতের কাছে ২৩৪-২২৭ স্কোরে (৫৮-৫৪, ৫৮-৫৬, ৫৯-৫৮, ৫৯-৫৯) হেরে যায় বন্যা আক্তার, কুলসুম আক্তার ও পষ্পিতা জামানকে নিয়ে গড়া বাংলাদেশ দল। সেমি-ফাইনালের হারে ব্রোঞ্জ নির্ধারণী ম্যাচে ইরানের মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ। বাংলাদেশকে হারিয়ে নিজেদের প্রথম পদক পেল ইরান। কম্পাউন্ড নারী বিভাগের ফাইনালে আগামী বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) মুখোমুখি হবে ভারত ও দক্ষিণ কোরিয়া। পদক হাতছাড়া হওয়ায় হতাশ বন্যা আক্তার বলেন, 'আমরা শুরুটা ভালো করলে ম্যাচটা জিততে পারতাম। ইরানের সঙ্গে এই মাঠেই টিম খেলেছিল। ওই ম্যাচে আমি ছিলাম না। তবে হেরেছিলাম। এবার জিততে হবে- এমন লক্ষ্য স্থির করেছিলাম। বাতাস ছিল, কিন্তু তেমন প্রভাব পড়েনি। চাপ ছিল না । মনের মধ্যে আনন্দ কাজ করছিল যে টিম মেটদেরও বলাবলি করছিলাম মেডেল নিব আমরা কিন্তু হয়নি।' রিকার্ভ পুরুষ দলগত বিভাগে শুরুটা ভালো হলেও পরে ছন্দ ধরে রাখতে পারেননি সাগর ইসলাম, রাকিব মিয়া ও রাম কৃষ্ণ সাহাকে নিয়ে গড়া বাংলাদেশ দল। এলিমিনেশন রাউন্ডের প্রথম ধাপে ভিয়েতনামকে ৬-০ সেট পয়েন্টে (৫৫-৫২, ৫৩-৫২, ৫৬-৫২) উড়িয়ে দেয় বাংলাদেশ। কিন্তু সেমি-ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে দল ৫-৩ সেট পয়েন্টে (৫৩-৫৩, ৫৫-৫৩, ৫৪-৫৯, ৫৪-৫৬) দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে হেরে যায় বাংলাদেশ। রিকার্ভ পুরুষ দলগত বিভাগের ব্রোঞ্জ নির্ধারণী ম্যাচে কাজাখস্তানকে ৫-৩ সেট পয়েন্টে (৫৬-৬০, ৫৭-৫৪, ৫৩-৫৩, ৫৭-৫৬) হারিয়েছে উজবেকিস্তান। তীর এশিয়ান আরচ্যারী চ্যাম্পিয়নশিপের চলতি আসরের প্রথম পদকটি পেল তারা। এই ইভেন্টের স্বর্ণ পদকের লড়াইয়ে আগামী শুক্রবার মুখোমুখি হবে দক্ষিণ কোরিয়া ও ভারত।
এশিয়ান আরচ্যারী চ্যাম্পিয়নশিপে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখিয়েছেন বাংলাদেশের রাম কৃষ্ণ সাহা ও বন্যা আক্তার। রিকার্ভ পুরুষ ও কম্পাউন্ড নারী বিভাগের কোয়ালিফিকেশন রাউন্ডে এই দুইজন ছিলেন বাংলাদেশের সেরা। বাংলাদেশের মধ্যে সর্বোচ্চ ১২তম স্থান অর্জন করেছেন বন্যা আক্তার, স্কোর করেছেন ৬৯৩ পয়েন্ট — যা তার ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ। এ ইভেন্টে ভারতের দীপশিখা ৭০৫ স্কোর করে প্রথম হয়েছেন। রিকার্ভ পুরুষ বিভাগে ৬৬৮ স্কোর করে ষষ্ঠ হয়েছেন রাম কৃষ্ণ সাহা। ৬৮৭ স্কোর করে শীর্ষে রয়েছেন ভারতের সঞ্জয় ইয়াশদিপ ভোগে। ক্যারিয়ার সেরা স্কোর করার পর বন্যা বলেন, “আমি আমার পারফরম্যান্সে খুশি। অনুশীলনে যেমন স্কোর করতাম, আজও সেটা দিতে পেরেছি। বাতাস শুরুতে বেশ ছিল, তবে পরে কমে যায়। আন্তর্জাতিকভাবে প্রথমবার ক্যারিয়ার সেরা স্কোর করেছি — এটি আগামী ম্যাচে আত্মবিশ্বাস বাড়াবে।” রাম কৃষ্ণ বলেন, “র্যাঙ্কিংয়ে ৬ নম্বরে আসতে পেরে খুশি। নক-আউট রাউন্ডে সবাইকে হারানো সম্ভব, তাই নিজের সেরা পারফরম্যান্স দিতে পারলে অবশ্যই মেডেল আশা করা যায়।” এছাড়া রিকার্ভ পুরুষ বিভাগে মোহাম্মদ রাকিব ৬৪৭ স্কোর নিয়ে ৩২তম, সাগর ইসলাম ৬৩৯ স্কোর নিয়ে ৩৮তম এবং আব্দুর রহমান আলিফ ৬৩৭ স্কোর নিয়ে হয়েছেন ৪১তম। চারজনই প্রথম রাউন্ডে ‘বাই’ পেয়েছেন, রাম পেয়েছেন দুটি ‘বাই’ — সরাসরি উঠেছেন সেরা ১৬-তে। কম্পাউন্ড নারী এককে বাংলাদেশের অন্যান্য আরচ্যারদের মধ্যে কুলসুম আক্তার ১৭তম (৬৮৮), পুষ্পিতা জামান ২৪তম (৬৮০) এবং মিথিলা আক্তার ৩২তম (৬৬২)। এলিমিনেশন রাউন্ডে বন্যা মুখোমুখি হবেন ইরানের বিতা ওসকই আশেঘজাদেহের, কুলসুমের প্রতিপক্ষ ইরানের ফাতেমেহ বাঘেরি, পুষ্পিতা লড়বেন দক্ষিণ কোরিয়ার পার্ক জং উনের, আর মিথিলা খেলবেন সৌদি আরবের রাঘাদ কাবির বিপক্ষে। দলগত ইভেন্টে পুরুষ দল রিকার্ভে ভিয়েতনামের বিপক্ষে, আর কম্পাউন্ড নারী দল সেমিফাইনালে উঠতে কাজাখস্তানের বিপক্ষে লড়বে বাংলাদেশ।
তরুণ তারকা কার্লোস আলকারাজ ও ইয়ানিক সিনারের উত্থানে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছিলেন নোভাক জোকোভিচ। কিন্তু তিনি আবারও প্রমাণ করলেন— এখনো ফুরিয়ে যাননি। এথেন্স হেলেনিক চ্যাম্পিয়নশিপে লরেঞ্জো মুসেত্তিকে হারিয়ে জোকোভিচ জিতলেন নিজের ১০১তম ক্যারিয়ার শিরোপা। ৩৮ বছর বয়সী এই সার্ব তারকা ১৯৭৭ সালে কেন রোজওয়েলের পর সবচেয়ে বয়স্ক হিসেবে এটিপি ইভেন্ট জয়ের কৃতিত্ব দেখালেন। আর এই জয়ের মাধ্যমে জোকোভিচ গড়েছেন নতুন বিশ্বরেকর্ড হার্ড কোর্টে এটি তার ৭২তম শিরোপা, যা রজার ফেদেরারকে (৭১) ছাড়িয়ে ইতিহাসের এক নম্বরে তুলেছে তাকে। এর আগে থেকেই ছেলেদের টেনিসে সর্বাধিক ২৪টি গ্র্যান্ড স্লাম, ৩৭টি ফাইনাল, ৫৩টি সেমিফাইনাল ও ৬৪টি কোয়ার্টার ফাইনাল খেলার রেকর্ডও তার দখলে। ম্যাচ জয়ের পর জোকোভিচ জানান, আগামী এটিপি ফাইনালসে খেলবেন না— কাঁধের ইনজুরির কারণে বিশ্রামে থাকবেন তিনি। তিনি বলেন, “তিন ঘণ্টার লড়াই ছিল কঠিন ও রোমাঞ্চকর। লরেঞ্জোর দারুণ পারফরম্যান্সের জন্য ধন্যবাদ। এই জয়ে আমি গর্বিত।”
আগামীকাল ৩০ অক্টোবর থেকে ধানমন্ডির রিয়া গোপ মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্সে শুরু হবে ষষ্ঠ জাতীয় নারী বেসবল চ্যাম্পিয়নশিপ। তিন দিনব্যাপী এই প্রতিযোগিতায় প্রথমবারের মতো ঢাকার বাইরে দল নিয়ে হচ্ছে জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ। দুটি সার্ভিসেস দল (বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি এবং বাংলাদেশ পুলিশ), ঢাকা ও ঢাকার বাইরের চারটি ক্লাব (চট্টগ্রাম বেসবল ক্লাব, স্যান্ড এঞ্জেলস বেসবল ক্লাব, সাভার কমিউনিটি ক্লাব ও জয়পুরহাট বেসবল-সফটবল ক্লাব) ও ঢাকাসহ ছয়টি জেলা দল (ঢাকা, জয়পুরহাট, নারায়ণগঞ্জ, সিলেট, চাঁদপুর ও কুষ্টিয়া) প্রতিযোগিতায় অংশ নেবে। জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে কোনো প্রাইজমানি রাখেনি ফেডারেশন। সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের প্রেক্ষিতে এসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি অনুপম সভাপতির সঙ্গে আলোচনা করে আর্থিক পুরস্কার প্রদানের বিষয়টি বিবেচনা করার কথা জানান। তৃণমূলে বেসবলকে ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে প্রতিযোগিতার বিস্তৃতি বাড়িয়েছে বাংলাদেশ বেসবল-সফটবল অ্যাসোসিয়েশন। নারী চ্যাম্পিয়নশিপ আয়োজন উপলক্ষ্যে বুধবার (২৯ অক্টোরব) জাতীয় স্টেডিয়ামে সংবাদ সম্মেলনে বেসবল-সফটবল এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক তালহা জুবায়ের বলেন, 'নতুন দায়িত্ব পাওয়ার পর এটিই আমাদের প্রথম প্রতিযোগিতার আয়োজন। তবে এখনো নারী বেসবল দেশে সেভাবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারেনি। যে কারণে স্পন্সর পাওয়া কঠিন। নিজেদের উদ্যোগেই প্রতিযোগিতাটি আয়োজন হচ্ছে। নারী চ্যাম্পিয়নশিপের পর জাতীয় পুরুষ চ্যাম্পিয়নশিপের খেলার দিণক্ষণ ঘোষণা করবে অ্যাসোসিয়েশন।' ফুটবল-ক্রিকেটের বাইরে প্রায় সকল ফেডারেশন/এসোসিয়েশন আর্থিক, অবকাঠামো সহ নানা সমস্যায় ভুগে। বেসবল এসোসিয়েশনের বর্তমান কমিটি ফান্ডে কোনো অর্থ পাননি। নতুন কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইমাম হোসেন সোহাগ বলেন, ‘আগের কমিটি শুধু আমাদের চাবিটাই দিয়ে গেছেন। আমরা নতুন শুরু করেছি।’
সেন্ট্রাল এশিয়া ভলিবল অ্যাসোসিয়েশন (কাভা) কাপের ফাইনালে উঠতে ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় ভলিবল দল। রাউন্ড রবিন লিগ পর্বের শেষ এবং গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে আফগানিস্তানের কাছে ৩-১ সেটে পরাজিত হয়ে শিরোপার দৌড় থেকে ছিটকে গেছে স্বাগতিকরা। এই জয়ের ফলে ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে আফগানিস্তান, যেখানে তাদের প্রতিপক্ষ হবে তুর্কমেনিস্তান। মিরপুরের শহীদ সোহরাওয়ার্দী ইনডোর স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ম্যাচটি ছিল কার্যত অঘোষিত সেমিফাইনাল। প্রথম তিন ম্যাচে জয় পাওয়া বাংলাদেশ তুর্কমেনিস্তানের বিপক্ষে হেরে যাওয়ায় এই ম্যাচটি হয়ে ওঠে বাঁচা-মরার লড়াই। প্রথম সেটে ২৫-২৩ পয়েন্টে জয় পেয়ে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। গ্যালারিতে উপস্থিত দর্শকদের উল্লাসে তখন মুখর ছিল স্টেডিয়াম। তবে দ্বিতীয় সেট থেকে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেয় আফগানিস্তান। ২৫-২০ পয়েন্টে জয় তুলে সমতায় ফেরার পর তৃতীয় সেটে ২৫-২৩ পয়েন্টে আবারও জেতে আফগানরা। ম্যাচে টিকে থাকতে চতুর্থ সেটে বাংলাদেশের জয়ের বিকল্প ছিল না। কিন্তু সেই সেটেও ২৫-১৯ পয়েন্টে হেরে যায় স্বাগতিকরা। ফলাফল—৩-১ সেটে পরাজিত হয়ে ফাইনালের স্বপ্নভঙ্গ বাংলাদেশের। বাংলাদেশ, আফগানিস্তান ও শ্রীলঙ্কা তিনটি করে ম্যাচ জিতলেও গেম পয়েন্টের ব্যবধানে এগিয়ে থেকে ফাইনাল নিশ্চিত করে আফগানিস্তান। আগামীকাল ফাইনালে আফগানিস্তান মুখোমুখি হবে তুর্কমেনিস্তানের। অন্যদিকে তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে বাংলাদেশ লড়বে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে।
বহু বাধা ও সামাজিক প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে বাংলাদেশের প্রথম নারী ট্রায়াথলেট মারিয়া ফেরদৌসী আক্তার আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন ইতিহাস গড়েছেন। সম্প্রতি মালয়েশিয়ার লাংকাউইতে আয়রনম্যান ৭০.৩ প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে তিনি প্রথম বাংলাদেশি নারী হিসেবে আয়রনম্যান চ্যাম্পিয়নশিপে কোয়ালিফাই করেছেন। ৮ ঘণ্টা ১৮ মিনিট ২৬ সেকেন্ড সময় নিয়ে ১.৯ কিলোমিটার সাঁতার, ৯০ কিলোমিটার সাইক্লিং ও ২১.১ কিলোমিটার দৌড় সম্পন্ন করে বয়সভিত্তিক গ্রুপে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেন তিনি। এবার তিনি অংশ নিতে যাচ্ছেন আগামী নভেম্বরে স্পেনে অনুষ্ঠিতব্য আয়রনম্যান ৭০.৩ চ্যাম্পিয়নশিপে। মারিয়ার এই যাত্রায় টাইটেল স্পন্সর হিসেবে পাশে রয়েছে বিটোপিয়া গ্রুপ। রোববার (২৭ অক্টোবর) বিটোপিয়া কার্যালয়ে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান সাবিনা আক্তার ও মারিয়া ফেরদৌসীর মধ্যে এক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে বিটোপিয়া গ্রুপের সিইও মোহাম্মদ মনির হোসেন বলেন, মারিয়ার গল্প আমাদের জন্য প্রেরণা। সীমিত সুযোগেও কঠোর পরিশ্রম ও সংকল্প কত বড় সাফল্য আনতে পারে, তিনি তা প্রমাণ করেছেন। আমরা তার পাশে আছি, যেন তিনি দেশের পতাকাকে আরও উঁচুতে তুলে ধরতে পারেন। চেয়ারম্যান সাবিনা আক্তার বলেন, মারিয়া শুধু একজন ক্রীড়াবিদ নন; তিনি দেশের মেয়েদের জন্য এক অনুপ্রেরণার প্রতীক। তার সাহস ও অধ্যবসায়ের গল্প আরও ছড়িয়ে দিতে আমাদের সমর্থন অব্যাহত থাকবে। মারিয়া জানান, আয়রনম্যান প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে বুঝেছি, সীমাবদ্ধতা নয়, সংকল্পই বড় শক্তি। এবার আমার লক্ষ্য স্পেনে দেশের পতাকা উঁচুতে তোলা।
তৃতীয় এশিয়ান যুব গেমসে প্রথমবারের মতো পদক জিতেছে বাংলাদেশ। আজ (সোমবার) বাহরাইনের ঈসা স্পোর্টস সিটিতে অনুষ্ঠিত নারী কাবাডি ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে ৪৭-৪০ পয়েন্টে হারিয়ে ব্রোঞ্জ পদক নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৮ নারী কাবাডি দল। এর আগে প্রথম দুই আসরে কোনো পদক পায়নি বাংলাদেশ। এবারের প্রতিযোগিতায় নারী কাবাডিতে অংশ নেয় পাঁচটি দেশ—ইরান, ভারত, থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশ। নিয়ম অনুযায়ী শীর্ষ চারটি দল পদক পায়। ফলে আজকের ম্যাচে জয় মানেই বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম পদক। প্রথমার্ধে বাংলাদেশ এগিয়ে ছিল ২৫-১৮ পয়েন্টে। দ্বিতীয়ার্ধে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে দুই দলই ২২ পয়েন্ট করে অর্জন করে। ফলে মোট ৪৭-৪০ পয়েন্টে জয় পায় বাংলাদেশ। ম্যাচের শেষ বাঁশি বাজতেই উল্লাসে মেতে ওঠে বাংলাদেশের মেয়েরা। কারণ, এশিয়ান যুব গেমসের ইতিহাসে এই প্রথমবার দেশের অনূর্ধ্ব-১৮ নারী কাবাডি দল এনে দিল পদক। অন্যদিকে, পুরুষ বিভাগে সাতটি দল অংশ নিচ্ছে। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে শ্রীলঙ্কা ও ইরানকে হারিয়েছে। আজ রাতেই থাইল্যান্ডের বিপক্ষে খেলবে পুরুষ দল। জয় পেলে তারাও পদকের দৌড়ে টিকে থাকবে। এক যুগ পর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া যুব এশিয়ান গেমসের তৃতীয় আসরের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হবে আগামীকাল। এবারের আসরে ২৫ ডিসিপ্লিনের মধ্যে বাংলাদেশ অংশ নিচ্ছে ১৩টিতে।
প্রায় দুই দশক এশিয়ান গেমসে পদকশূন্য বাংলাদেশের পুরুষ কাবাডি দল। মেয়েদের ক্ষেত্রেও একই হতাশা—১১ বছর ধরে আন্তর্জাতিক মঞ্চে কোনো পদক নেই। অথচ ঘরোয়া কাবাডিতে অর্থ ও আয়োজনের ঘাটতি নেই। এবার সেই স্থবিরতা ভাঙার প্রত্যাশায় সামনে এসেছে মেয়েদের কাবাডি বিশ্বকাপ আয়োজনের উদ্যোগ। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের (বিওএ) সভাকক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ কাবাডি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক এসএম নেওয়াজ সোহাগ বলেন, “কাবাডির উন্নতি দৃশ্যমান। দেশজুড়ে চলছে জাতীয় কাবাডি প্রতিযোগিতা। মেয়েদের বিশ্বকাপ কাবাডি আয়োজনের মধ্য দিয়ে আমরা আরও একধাপ এগোব।” আগস্টে ভারতের মাটিতে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল এই আসরটি। তবে বিশ্ব কাবাডি ফেডারেশন ও আন্তর্জাতিক কাবাডি ফেডারেশনের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে তা বাতিল হয়। এরপরই বিশ্বকাপ আয়োজনের দায়িত্ব নেয় বাংলাদেশ। নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী, ১৫ থেকে ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত ঢাকার মিরপুর শহীদ সোহরাওয়ার্দী ইনডোর স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে মেয়েদের কাবাডি বিশ্বকাপ। ১৪টি দেশ অংশ নিচ্ছে এবারের আসরে। বাংলাদেশ ছাড়াও অংশ নেবে—আর্জেন্টিনা, চাইনিজ তাইপে, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, ইরান, ভারত, জাপান, কেনিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, নেপাল, থাইল্যান্ড, উগান্ডা ও জাঞ্জিবার। স্ট্যান্ডবাই হিসেবে রাখা হয়েছে পাকিস্তান ও পোল্যান্ডকে। বিশ্বকাপ আয়োজনে বাজেট ধরা হয়েছে ১০ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকার প্রদান করবে পাঁচ কোটি টাকা, আর বাকি অর্থ স্পন্সরদের সহযোগিতায় সংগ্রহের চেষ্টা করছে ফেডারেশন। দীর্ঘদিন ধরে আন্তর্জাতিক সাফল্যের বাইরে থাকা বাংলাদেশের কাবাডি পরিবার এই টুর্নামেন্টকে নতুন দিগন্ত হিসেবে দেখছে। মেয়েদের দল এবার স্বাগতিক হিসেবে খেলবে, তাই প্রত্যাশা—নিজ মাটিতে ফিরবে কাঙ্ক্ষিত পদক।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) নির্বাচনের পর এবার দেশের আরেক শীর্ষ ক্রীড়া সংস্থা বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন (বিওএ) নির্বাচনের দিনক্ষণ নির্ধারিত হয়েছে। রাজধানীর কুর্মিটোলায় গলফ ক্লাবে অনুষ্ঠিত বিশেষ সাধারণ সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে, আগামী ২৯ নভেম্বর বিওএ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সভায় সভাপতিত্ব করেন বিওএ সভাপতি জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। সেখানে কার্যনির্বাহী কমিটি ও সাধারণ পরিষদের মোট ৮৫ জন সদস্য উপস্থিত ছিলেন। সভায় দুটি আলোচ্যসূচি ছিল— (১) বিওএ নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ এবং (২) সংশোধিত গঠনতন্ত্র অনুমোদন। প্রথম বিশেষ সাধারণ সভায় প্রস্তাবিত গঠনতন্ত্র অনুমোদন করা হয়, যা অনুমোদনের পর আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি (আইওসি)-এর কাছে পাঠানো হবে। নতুন গঠনতন্ত্র অনুযায়ী— কোনো ব্যক্তি একই পদে দুই মেয়াদের বেশি থাকতে পারবেন না। নির্বাচনে অংশ নিতে হলে প্রার্থীর বয়স ৭৫ বছরের নিচে হতে হবে। সহ-সভাপতির পদ পাঁচটি থেকে কমে তিনটিতে নামানো হয়েছে, যার মধ্যে দুটি অলিম্পিকভুক্ত ও একটি নন-অলিম্পিক ফেডারেশন থেকে হবে। বিওএর পূর্ববর্তী গঠনতন্ত্রটি ২০০০ সালে আইওসি কর্তৃক অনুমোদিত হয়েছিল। সময়ের প্রেক্ষিতে সেটি সংশোধনের প্রয়োজন হওয়ায় ৫ সদস্যের একটি কমিটি নতুন খসড়া গঠনতন্ত্র তৈরি করে, যা পরে নির্বাহী কমিটির পর্যালোচনার পর সাধারণ সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়।
নরসিংদীর রায়পুরায় আয়োজন করা হলো এক বর্ণাঢ্য ম্যারাথন প্রতিযোগিতা। এতে দেশ-বিদেশ থেকে আসা প্রায় ৭০০ দৌড়বিদ অংশ নেন। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক দৌড়বিদদের অংশগ্রহণে পুরো এলাকা যেন উৎসবে পরিণত হয়। আয়োজক সূত্রে জানা গেছে, প্রতিযোগিতায় বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ অংশ নেন। সকাল থেকে শুরু হওয়া দৌড় প্রতিযোগিতায় রাস্তাজুড়ে দাঁড়িয়ে দর্শনার্থীরা দৌড়বিদদের উৎসাহ দেন। আয়োজকরা বলেন, তরুণ সমাজকে খেলাধুলায় উদ্বুদ্ধ করা এবং স্বাস্থ্যসচেতনতা বাড়ানোই এ ম্যারাথনের মূল লক্ষ্য। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন ও ক্রীড়াবিদরা এ আয়োজনকে প্রশংসা করেন। তাদের মতে, নিয়মিত এমন আয়োজন হলে তরুণরা মাদক ও অসামাজিক কার্যকলাপ থেকে দূরে থেকে সুস্থ জীবনযাপনে অনুপ্রাণিত হবে।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে পদোন্নতিতে অনিয়ম ও অসঙ্গতির অভিযোগে দায়ের করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে মহামান্য হাইকোর্ট রুল জারি করেছেন। একই সঙ্গে আদালত নির্দেশ দিয়েছেন, রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত পদোন্নতি সংক্রান্ত যেকোনো কার্যক্রম অবৈধ হিসেবে গণ্য হবে। দেশের বৃহত্তম রাষ্ট্রায়ত্ত বিশেষায়িত ব্যাংকটির ১০ম গ্রেডের পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন ধরে ন্যায্য পদোন্নতির দাবিতে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করে আসছিলেন। দাবি আদায়ে বারবার কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন ও মানববন্ধন করেও সাড়া না পেয়ে তারা শেষ পর্যন্ত আদালতের দ্বারস্থ হন। সূত্র জানায়, পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তারা গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর (শনিবার) ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে ছুটির দিনে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন করেন, যাতে গ্রাহকসেবা ব্যাহত না হয়। তাদের দাবির প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করে তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শওকত আলী খান দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন। তবে তিন মাস পার হলেও প্রতিশ্রুত আশ্বাস বাস্তবায়িত না হওয়ায় তারা পুনরায় ওই বছরের ৩০ নভেম্বর মানববন্ধনের আয়োজন করেন। এতে সারা দেশের শাখা থেকে ১২০০–এর বেশি কর্মকর্তা অংশ নেন। পরদিন (১ ডিসেম্বর) বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক সঞ্চিয়া বিনতে আলী পদোন্নতির বিষয়ে মৌখিক আশ্বাস দিলে আন্দোলনকারীরা কর্মস্থলে ফিরে যান। পরে কর্মকর্তাদের জানানো হয়, সুপারনিউমারারি পদ্ধতিতে মার্চের মধ্যে পদোন্নতির বিষয়টি সমাধান করা হবে। কিন্তু এখনো তা বাস্তবায়ন হয়নি। অন্যদিকে অগ্রণী, জনতা, রূপালী ও সোনালী ব্যাংকে ইতোমধ্যে মোট ৭,৩১৬ কর্মকর্তা এই পদ্ধতিতে পদোন্নতি পেয়েছেন, যা অর্থ মন্ত্রণালয়ও অনুমোদন করেছে। পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তাদের অভিযোগ, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের এই উদাসীনতা তাদের প্রতি কর্মীবান্ধবহীন মনোভাব ও কর্তৃপক্ষের অনীহারই প্রকাশ। তারা বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট স্বৈরাচার পতনের পর অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পরিবর্তন এলেও কৃষি ব্যাংকে আগের প্রশাসনিক কাঠামো অপরিবর্তিত রয়ে গেছে, যা ন্যায্য দাবি আদায়ের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের অভিযোগ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, মহাব্যবস্থাপক ও মানবসম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক জাহিদ হোসেন একাধিক বৈঠকে আশ্বাস দিলেও বাস্তব পদক্ষেপ না নিয়ে বরং আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী কর্মকর্তাদের হয়রানি ও নিপীড়ন করা হয়েছে। ফলে তারা বাধ্য হয়ে এ বছরের চলতি মাসে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন (রিট মামলা নং: ১৬৪২৮/২০২৫, মো. পনির হোসেন গং বনাম রাষ্ট্র ও অন্যান্য)। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৬ অক্টোবর হাইকোর্ট রুল জারি করে জানতে চেয়েছেন, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের পদোন্নতিতে দেখা দেওয়া অনিয়ম ও অসঙ্গতি কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না। পাশাপাশি আদালত নির্দেশ দিয়েছেন, রুল নিষ্পত্তির আগে কোনো পদোন্নতি কার্যক্রম শুরু করা হলে তা অবৈধ ও আদালত–অবমাননার শামিল হবে। রিটে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক পদোন্নতিতে ১০৭৩ জন কর্মকর্তা (ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা থেকে মূখ্য কর্মকর্তা) এবং ৫১ জন মূখ্য কর্মকর্তা (ঊর্ধ্বতন মূখ্য কর্মকর্তা পদে) অনিয়মের মাধ্যমে পদোন্নতি পেয়েছেন। এদিকে জানা গেছে, পূর্বে দুর্নীতির অভিযোগে আলোচিত মানবসম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক জাহিদ হোসেন এখনো পদোন্নতি কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তারা বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করে যদি পুনরায় অনিয়মের পথে যাওয়া হয়, তাহলে তা আদালতের অবমাননা ও রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল হবে। তারা আশা করছেন, এ বিষয়ে দ্রুত ন্যায়বিচার ও সমাধান মিলবে।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে সাম্প্রতিক সময়ে পদোন্নতি ও প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। পদোন্নতিবঞ্চিত কর্মকর্তাদের একটি অরাজনৈতিক সংগঠন ‘বৈষম্য বিরোধী অফিসার্স ফোরাম’ এর কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক মো. পনির হোসেন ও সদস্য সচিব এরশাদ হোসেনকে শৃঙ্খলাজনিত মোকদ্দমা এবং মুখ্য সংগঠক মো. আরিফ হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া মুখপাত্র তানভীর আহমদকে দুর্গম অঞ্চলে বদলি করা হয় এবং সারাদেশের দুই শতাধিক কর্মকর্তাকে ব্যাখ্যা তলব করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে যে, মো. আরিফ হোসেনকে বরখাস্ত করার নথিতে তাকে ‘ব্যাংক ও রাষ্ট্রবিরোধী’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে, অথচ ব্যাখ্যা তলবপত্রে বলা হয় তিনি ‘রাজনৈতিক কাজে তহবিল সংগ্রহ করেছেন।’ ফরেনসিক বিশ্লেষণ অনুযায়ী, তার ব্যাখ্যাতলবের জবাব প্রদানের পরও বরখাস্ত চিঠি আগেই তৈরি করা হয়েছিল, যা অনেক কর্মকর্তার মধ্যে প্রশ্ন তোলেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মহাব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, সরকারি কর্মকর্তারা যদি সংবিধান বা আইন অনুযায়ী দায়িত্ব না পালন করেন, হাইকোর্ট তাদের ক্ষমতা প্রয়োগ বা অপব্যবহার রোধের জন্য আদেশ দিতে পারে। অন্য একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, এ সিদ্ধান্তের পেছনে ব্যাংকের ফ্যাসিস্ট সরকারের সহযোগী একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা বলছেন, পদোন্নতি ও ন্যায়বিচারের জন্য আন্দোলন এবং আইনি লড়াই চলবে। ভুক্তভোগী কর্মকর্তারা শিগগিরই বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, অর্থ উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার কাছে এ বিষয়ে প্রতিকার চাইবেন। এ ব্যাপারে মো. আরিফ হোসেন ও পনির হোসেনের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে একটি ভুয়া কর্মচারী ইউনিয়নের সভায় জোরপূর্বক কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণ করানোর অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন ব্যাংকের ভিজিল্যান্স স্কোয়াডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা তাসলিমা আক্তার লিনা ও তার স্বামী মিরাজ হোসেন। গত ২০ অক্টোবর প্রধান কার্যালয়ের অডিটোরিয়ামে ‘বিশেষ সাধারণ সভা’ নামে একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের (সিবিএ) নামে তারা এটির আয়োজন করে। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির সহ-শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির খান ও উদ্বোধক হিসেবে জাতীয়তাবাদী শ্রমিকদলের সভাপতি আনোয়ার হোসাইনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তবে তারা প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে ভুয়া নেতাদের কার্যকলাপ সম্পর্কে অবগত হয়ে অনুষ্ঠানটি বয়কট করেন। অভিযোগ রয়েছে, তাসলিমা আক্তার লিনা হেড অফিসের বিভিন্ন দপ্তরের নারী কর্মকর্তা এবং তার স্বামী মিরাজ হোসেন পুরুষ কর্মকর্তাদের ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে ওই সভায় অংশগ্রহণে বাধ্য করেন। অংশগ্রহণে অস্বীকৃতি জানালে বদলি বা পদোন্নতি রোধের হুমকিও দেওয়া হয় বলে জানা গেছে। হেড অফিসের কয়েকজন কর্মকর্তার ভাষ্য অনুযায়ী, লিনা তার স্বামীর প্রভাব খাটিয়ে নারী সহকর্মীদের ওপর দীর্ঘদিন ধরে অনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে আসছেন। কেউ আপত্তি জানালে মিরাজের সহযোগীরা এসে অশালীন আচরণ ও গালিগালাজ করে থাকে বলেও অভিযোগ ওঠে। এ ছাড়া, লিনা ‘উইমেনস ফোরাম’ নামে একটি সংগঠন গড়ে মাসিক চাঁদা সংগ্রহ করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। তার এই কর্মকাণ্ডে অনেক নারী কর্মকর্তা বিব্রতবোধ করলেও চাকরির স্বার্থে নীরব থাকছেন। অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা গেছে, মানবসম্পদ বিভাগের ডিজিএম জাহিদ হোসেনের প্রত্যক্ষ সহায়তায় তাসলিমা আক্তার লিনা ও তার স্বামী মিরাজ ব্যাংকের অভ্যন্তরে প্রভাব বিস্তার করছেন। এ ঘটনায় নারী কর্মকর্তাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তারা কর্তৃপক্ষের কাছে তাসলিমা আক্তার লিনা ও মিরাজ হোসেনকে অবাঞ্ছিত ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন। এ বিষয়ে জানতে তাসলিমা আক্তার লিনার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি নিয়ম অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করছি, অভিযোগগুলো ভিত্তিহীন। অন্যদিকে, মিরাজ হোসেনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে সংঘটিত এজাহারভুক্ত হত্যা মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি ফয়েজ উদ্দিন আহমেদ ও মিরাজ হোসেন পলাতক রয়েছেন। ব্যাংক প্রশাসন বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। খুনের শিকার কৃষি ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী আব্দুল হালিম ছিলেন কৃষি ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের (সিবিএ) সভাপতি। তার গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলায়। পরিবারের ভাষ্য অনুযায়ী, তিনি স্থানীয়ভাবে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। মামলার বিবরণ অনুযায়ী, ১ নম্বর আসামি হিসেবে অবসরপ্রাপ্ত পিয়ন ফয়েজ উদ্দিন আহমেদ এবং ২ নম্বর আসামি মিরাজ হোসেনের নাম রয়েছে। তারা বর্তমানে নিজেদের সিবিএ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দাবি করে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে প্রভাব বিস্তার করছেন। ব্যাংক সূত্রে গেছে, তারা চাঁদাবাজি, ঘুষ আদায় ও নানা অনিয়মের সঙ্গে জড়িত। সূত্র জানায়, ব্যাংকের ভেতরে একটি সিন্ডিকেটের প্রভাবেই এসব আসামিরা এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছেন। এই সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে আছেন মানবসম্পদ বিভাগের ডিজিএম জাহিদ হোসেন। এতে আরও যুক্ত রয়েছেন ডিজিএম সৈয়দ লিয়াকত হোসেন, হাবিব উন নবী, ডিএমডি খালেকুজ্জামান জুয়েল ও ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সঞ্চিয়া বিনতে আলী। গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর রাতে মতিঝিলের বিমান অফিসের সামনে আব্দুল হালিমের মৃত্যু হয়। পরদিন সকালে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠায়। মতিঝিল থানার উপ-পরিদর্শক সজীব কুমার সিং সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে জানান, পুরনো সহকর্মীদের সঙ্গে বিরোধের জেরে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং রাত ১টা ৪০ মিনিটে হাসপাতালে মারা যান। হালিমের ছেলে ফয়সাল বলেন, তার বাবা ২০১৪ সাল থেকে কৃষি ব্যাংক সিবিএর সভাপতি ছিলেন এবং বোয়ালখালী উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করতেন। ইউনিয়নের নেতৃত্ব ও পদ নিয়ে সহকর্মীদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। এ নিয়ে গত নভেম্বরেই মতিঝিল থানায় একটি জিডি (নং ০৫/১১/২০২৪ - ৩৩৫) করেছিলেন তার বাবা। তিনি আরও বলেন, বুধবার রাতে আমার বাবাকে তার অফিসের সহকর্মীরা মারধর করে হত্যা করেছে। সিবিএর বর্তমান সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জানান, ২০১৪ সালে আমরা নির্বাচিত হই। এরপর আর কোনো নির্বাচন হয়নি। কিন্তু গত ৫ আগস্ট বিনা নির্বাচনে নতুন কমিটি ঘোষণা করে আমাদের অফিস দখল করে নেয় ফয়েজ ও মিরাজ। এ নিয়ে মামলা চলছে। মামলার তথ্য অনুযায়ী, আসামিরা অস্থায়ী জামিনে ছিলেন। সম্প্রতি তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। এছাড়া আরও কয়েকজন পলাতক রয়েছেন—যাদের মধ্যে আছেন ড্রাইভার সাইফুল, শাহেদ, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর মেহেদী ও অবসরপ্রাপ্ত ক্লিনার সিরাজ। এদিকে, মামলার ২ নম্বর আসামি মিরাজ হোসেন নৈমিত্তিক ছুটির আবেদন করে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। যদিও ওয়ারেন্টভুক্ত আসামির নৈমিত্তিক ছুটি পাওয়ার কোনো এখতিয়ার নেই। মানবসম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক এ বিষয়ে বলেন, তিনি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন এবং নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। কিন্তু স্থানীয় মুখ্য কার্যালয়ের প্রধান মহাব্যবস্থাপক জানান, তিনি কোনো মন্তব্য করতে চান না। কারণ ব্যবস্থাপনা পরিচালক মন্তব্য না করার নির্দেশ দিয়েছেন। ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। অভ্যন্তরীণ এই পরিস্থিতিতে কৃষি ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
অভিনব কায়দায় চাঁদাবাজিতে নেমেছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের একদল ভুয়া সিবিএ নেতা। অভিযোগ উঠেছে, তারা বিশেষ সাধারণ সভা আয়োজনের নামে সারা দেশের শাখাগুলো থেকে কোটি টাকারও বেশি চাঁদা আদায় করছে। তথ্যসূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন (সিবিএ), রেজি. নং বি-৯৮৫-এর নাম ব্যবহার করে আগামী ২০ অক্টোবর ‘বিশেষ সাধারণ সভা’ শিরোনামে একটি অনুষ্ঠান আয়োজনের ঘোষণা দেয় একদল ভুয়া নেতা। এ উপলক্ষে তারা ব্যাংকের প্রায় ১ হাজার ২৫০টি ইউনিট থেকে ১০-২০ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করে ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার উঠে। গোপন সূত্র জানায়, তাদের নিয়ন্ত্রিত লোকজন শাখা পর্যায়ে বদলি ও পদোন্নতির ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন উপ-মহাব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, তারা এসব কর্মকাণ্ডে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করলেও এ সিন্ডিকেটের ভয়ে কিছু বলার সাহস পাচ্ছেন না। এ ঘটনায় ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগের ডিজিএম জাহিদ হোসেনের প্রত্যক্ষ মদদ ও আস্কারায় চাঁদাবাজি চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রাপ্ত আমন্ত্রণপত্রে দেখা গেছে, ভুয়া সভাপতি দাবিকারী কৃষি ব্যাংকের সাবেক পিয়ন ফয়েজ আহমেদ ও ভুয়া সাধারণ সম্পাদক মিরাজ হোসেন স্বাক্ষরিত পত্রে প্রধান অতিথি হিসেবে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির, উদ্বোধক হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন এবং প্রধান বক্তা হিসেবে সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম খান নাসিমকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। কয়েকজন মহাব্যবস্থাপক জানান, তারা বিভিন্ন শাখা থেকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ পেয়েছেন এবং বিষয়টি ব্যবস্থাপনা পরিচালক অবগত আছেন বলে জানানো হয়েছে। অনুষ্ঠানটি কৃষি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত হওয়ায় তারা কার্যত কিছু করতে পারছেন না। অনুসন্ধানে জানা যায়, এর আগেও একই সিন্ডিকেট শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে প্রায় ৫০ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করেছিল। সেই টাকা তারা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, চাঁদাবাজ ও তাদের মদদদাতাদের সঙ্গে দলের কোনো সম্পর্ক নেই। তারা বহিরাগত অনুপ্রবেশকারী। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এসব ভুয়া সিবিএ নেতাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও অবাঞ্ছিত ঘোষণা দাবি করেছেন। তাদের আশঙ্কা, এসব কর্মকাণ্ডের নেতিবাচক প্রভাব আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে পড়তে পারে।