চলতি মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই একের পর এক অভিবাসীবিরোধী পদক্ষেপ নিচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে এবার নতুন ভিসা স্কিম চালু করেছেন তিনি। যেটিকে গ্রিনকার্ডের চেয়েও শক্তিশালী আখ্যা দিয়েছেন এই মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
দেশটিতে বসবাসের জন্য 'ট্রাম্প গোল্ড কার্ড' ভিসা চালু করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ১০ লাখ ডলার খরচ করলেই মিলবে স্বপ্নের দেশে স্থায়ী বসবাসের সুযোগ। অর্থাৎ বাংলাদেশি টাকায় গুনতে হবে ১২ কোটি ১৪ লাখ ৬০ হাজার টাকার বেশি।
এছাড়াও মার্কিন প্রতিষ্ঠানে চাকুরিসহ দেশটিতে প্রবেশ করতে চাইলে গুনতে হবে এর দ্বিগুণ অর্থাৎ ২০ লাখ ডলার। বুধবার (১০ ডিসেম্বর) থেকে 'ট্রাম্প গোল্ড কার্ড' ভিসার জন্য আবেদনের ওয়েবসাইট চালু হয়েছে।
বুধবার হোয়াইট হাউসের রুজভেল্ট রুমে ব্যবসায়ীদের সাথে আলাপকালে 'ট্রাম্প গোল্ড কার্ড' ভিসার জন্য ওয়েবসাইট চালুর খবর দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিজেই। জানান, এই স্কিমের সুযোগসুবিধা সম্পর্কে। এই ভিসার আওতায় ১০ লাখ ডলারের বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ী বসবাসের সুযোগ পাবেন কোনো ব্যক্তি।
কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোকে এই সুবিধার জন্য দিতে হবে ২০ লাখ ডলার। ট্রাম্পের দাবি, এই ভিসার আওতায় যোগ্য ও মেধাবী কর্মীদের ধরে রাখতে পারবে মার্কিন কোম্পানিগুলো।
ট্রাম্প বলেন, এটা অনেকটা গ্রিনকার্ডের মতোই। কিন্তু আরও বেশি সুযোগসুবিধা থাকবে। কোম্পানিগুলো তাদের পছন্দের কর্মীকে রেখে দিতে পারবেন কার্ড কিনে। কারণ অন্যান্য সময় আপনারা যাকে নিয়োগ দিচ্ছেন তারা এই দেশে নাও থেকে যেতে পারে। এবার রাখার নিশ্চয়তা মিলবে।
গ্রিন কার্ডের সাথে ট্রাম্প গোল্ড কার্ডের তফাত ব্যাখ্যা করেন বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিক। জানান, শুরুতে আবেদনকারীকে ১৫ হাজার ডলার জমা দিতে হবে প্রসেসিং ফি বাবদ। আমেরিকার অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার দায়িত্বপ্রাপ্ত হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ পাবে এই অর্থ। যা ফেরতযোগ্য নয়। এরপর যাচাই করা হবে আবেদনকারীর নথিপত্র। যাচাইপ্রক্রিয়া শেষ হলে আবেদনকারীকে ১০ লাখ ডলার জমা করতে হবে মার্কিন কোষাগারে। বিশেষ পরিস্থিতিতে দিতে হতে পারে অতিরিক্ত ফি-ও।
এর আগে গত সেপ্টেম্বরে এইচ-ওয়ান বি ভিসা প্রোগ্রামের আওতায় দক্ষ বিদেশী কর্মীদের আবেদন ফি কয়েকগগুণ বাড়িয়ে এক লাখ ডলার নির্ধারণ করে একটি আদেশে স্বাক্ষর করেছিলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে পদোন্নতিতে অনিয়ম ও অসঙ্গতির অভিযোগে দায়ের করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে মহামান্য হাইকোর্ট রুল জারি করেছেন। একই সঙ্গে আদালত নির্দেশ দিয়েছেন, রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত পদোন্নতি সংক্রান্ত যেকোনো কার্যক্রম অবৈধ হিসেবে গণ্য হবে। দেশের বৃহত্তম রাষ্ট্রায়ত্ত বিশেষায়িত ব্যাংকটির ১০ম গ্রেডের পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন ধরে ন্যায্য পদোন্নতির দাবিতে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করে আসছিলেন। দাবি আদায়ে বারবার কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন ও মানববন্ধন করেও সাড়া না পেয়ে তারা শেষ পর্যন্ত আদালতের দ্বারস্থ হন। সূত্র জানায়, পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তারা গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর (শনিবার) ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে ছুটির দিনে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন করেন, যাতে গ্রাহকসেবা ব্যাহত না হয়। তাদের দাবির প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করে তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শওকত আলী খান দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন। তবে তিন মাস পার হলেও প্রতিশ্রুত আশ্বাস বাস্তবায়িত না হওয়ায় তারা পুনরায় ওই বছরের ৩০ নভেম্বর মানববন্ধনের আয়োজন করেন। এতে সারা দেশের শাখা থেকে ১২০০–এর বেশি কর্মকর্তা অংশ নেন। পরদিন (১ ডিসেম্বর) বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক সঞ্চিয়া বিনতে আলী পদোন্নতির বিষয়ে মৌখিক আশ্বাস দিলে আন্দোলনকারীরা কর্মস্থলে ফিরে যান। পরে কর্মকর্তাদের জানানো হয়, সুপারনিউমারারি পদ্ধতিতে মার্চের মধ্যে পদোন্নতির বিষয়টি সমাধান করা হবে। কিন্তু এখনো তা বাস্তবায়ন হয়নি। অন্যদিকে অগ্রণী, জনতা, রূপালী ও সোনালী ব্যাংকে ইতোমধ্যে মোট ৭,৩১৬ কর্মকর্তা এই পদ্ধতিতে পদোন্নতি পেয়েছেন, যা অর্থ মন্ত্রণালয়ও অনুমোদন করেছে। পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তাদের অভিযোগ, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের এই উদাসীনতা তাদের প্রতি কর্মীবান্ধবহীন মনোভাব ও কর্তৃপক্ষের অনীহারই প্রকাশ। তারা বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট স্বৈরাচার পতনের পর অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পরিবর্তন এলেও কৃষি ব্যাংকে আগের প্রশাসনিক কাঠামো অপরিবর্তিত রয়ে গেছে, যা ন্যায্য দাবি আদায়ের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের অভিযোগ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, মহাব্যবস্থাপক ও মানবসম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক জাহিদ হোসেন একাধিক বৈঠকে আশ্বাস দিলেও বাস্তব পদক্ষেপ না নিয়ে বরং আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী কর্মকর্তাদের হয়রানি ও নিপীড়ন করা হয়েছে। ফলে তারা বাধ্য হয়ে এ বছরের চলতি মাসে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন (রিট মামলা নং: ১৬৪২৮/২০২৫, মো. পনির হোসেন গং বনাম রাষ্ট্র ও অন্যান্য)। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৬ অক্টোবর হাইকোর্ট রুল জারি করে জানতে চেয়েছেন, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের পদোন্নতিতে দেখা দেওয়া অনিয়ম ও অসঙ্গতি কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না। পাশাপাশি আদালত নির্দেশ দিয়েছেন, রুল নিষ্পত্তির আগে কোনো পদোন্নতি কার্যক্রম শুরু করা হলে তা অবৈধ ও আদালত–অবমাননার শামিল হবে। রিটে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক পদোন্নতিতে ১০৭৩ জন কর্মকর্তা (ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা থেকে মূখ্য কর্মকর্তা) এবং ৫১ জন মূখ্য কর্মকর্তা (ঊর্ধ্বতন মূখ্য কর্মকর্তা পদে) অনিয়মের মাধ্যমে পদোন্নতি পেয়েছেন। এদিকে জানা গেছে, পূর্বে দুর্নীতির অভিযোগে আলোচিত মানবসম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক জাহিদ হোসেন এখনো পদোন্নতি কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তারা বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করে যদি পুনরায় অনিয়মের পথে যাওয়া হয়, তাহলে তা আদালতের অবমাননা ও রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল হবে। তারা আশা করছেন, এ বিষয়ে দ্রুত ন্যায়বিচার ও সমাধান মিলবে।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে সাম্প্রতিক সময়ে পদোন্নতি ও প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। পদোন্নতিবঞ্চিত কর্মকর্তাদের একটি অরাজনৈতিক সংগঠন ‘বৈষম্য বিরোধী অফিসার্স ফোরাম’ এর কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক মো. পনির হোসেন ও সদস্য সচিব এরশাদ হোসেনকে শৃঙ্খলাজনিত মোকদ্দমা এবং মুখ্য সংগঠক মো. আরিফ হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া মুখপাত্র তানভীর আহমদকে দুর্গম অঞ্চলে বদলি করা হয় এবং সারাদেশের দুই শতাধিক কর্মকর্তাকে ব্যাখ্যা তলব করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে যে, মো. আরিফ হোসেনকে বরখাস্ত করার নথিতে তাকে ‘ব্যাংক ও রাষ্ট্রবিরোধী’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে, অথচ ব্যাখ্যা তলবপত্রে বলা হয় তিনি ‘রাজনৈতিক কাজে তহবিল সংগ্রহ করেছেন।’ ফরেনসিক বিশ্লেষণ অনুযায়ী, তার ব্যাখ্যাতলবের জবাব প্রদানের পরও বরখাস্ত চিঠি আগেই তৈরি করা হয়েছিল, যা অনেক কর্মকর্তার মধ্যে প্রশ্ন তোলেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মহাব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, সরকারি কর্মকর্তারা যদি সংবিধান বা আইন অনুযায়ী দায়িত্ব না পালন করেন, হাইকোর্ট তাদের ক্ষমতা প্রয়োগ বা অপব্যবহার রোধের জন্য আদেশ দিতে পারে। অন্য একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, এ সিদ্ধান্তের পেছনে ব্যাংকের ফ্যাসিস্ট সরকারের সহযোগী একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা বলছেন, পদোন্নতি ও ন্যায়বিচারের জন্য আন্দোলন এবং আইনি লড়াই চলবে। ভুক্তভোগী কর্মকর্তারা শিগগিরই বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, অর্থ উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার কাছে এ বিষয়ে প্রতিকার চাইবেন। এ ব্যাপারে মো. আরিফ হোসেন ও পনির হোসেনের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে একটি ভুয়া কর্মচারী ইউনিয়নের সভায় জোরপূর্বক কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণ করানোর অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন ব্যাংকের ভিজিল্যান্স স্কোয়াডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা তাসলিমা আক্তার লিনা ও তার স্বামী মিরাজ হোসেন। গত ২০ অক্টোবর প্রধান কার্যালয়ের অডিটোরিয়ামে ‘বিশেষ সাধারণ সভা’ নামে একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের (সিবিএ) নামে তারা এটির আয়োজন করে। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির সহ-শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির খান ও উদ্বোধক হিসেবে জাতীয়তাবাদী শ্রমিকদলের সভাপতি আনোয়ার হোসাইনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তবে তারা প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে ভুয়া নেতাদের কার্যকলাপ সম্পর্কে অবগত হয়ে অনুষ্ঠানটি বয়কট করেন। অভিযোগ রয়েছে, তাসলিমা আক্তার লিনা হেড অফিসের বিভিন্ন দপ্তরের নারী কর্মকর্তা এবং তার স্বামী মিরাজ হোসেন পুরুষ কর্মকর্তাদের ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে ওই সভায় অংশগ্রহণে বাধ্য করেন। অংশগ্রহণে অস্বীকৃতি জানালে বদলি বা পদোন্নতি রোধের হুমকিও দেওয়া হয় বলে জানা গেছে। হেড অফিসের কয়েকজন কর্মকর্তার ভাষ্য অনুযায়ী, লিনা তার স্বামীর প্রভাব খাটিয়ে নারী সহকর্মীদের ওপর দীর্ঘদিন ধরে অনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে আসছেন। কেউ আপত্তি জানালে মিরাজের সহযোগীরা এসে অশালীন আচরণ ও গালিগালাজ করে থাকে বলেও অভিযোগ ওঠে। এ ছাড়া, লিনা ‘উইমেনস ফোরাম’ নামে একটি সংগঠন গড়ে মাসিক চাঁদা সংগ্রহ করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। তার এই কর্মকাণ্ডে অনেক নারী কর্মকর্তা বিব্রতবোধ করলেও চাকরির স্বার্থে নীরব থাকছেন। অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা গেছে, মানবসম্পদ বিভাগের ডিজিএম জাহিদ হোসেনের প্রত্যক্ষ সহায়তায় তাসলিমা আক্তার লিনা ও তার স্বামী মিরাজ ব্যাংকের অভ্যন্তরে প্রভাব বিস্তার করছেন। এ ঘটনায় নারী কর্মকর্তাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তারা কর্তৃপক্ষের কাছে তাসলিমা আক্তার লিনা ও মিরাজ হোসেনকে অবাঞ্ছিত ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন। এ বিষয়ে জানতে তাসলিমা আক্তার লিনার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি নিয়ম অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করছি, অভিযোগগুলো ভিত্তিহীন। অন্যদিকে, মিরাজ হোসেনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে সংঘটিত এজাহারভুক্ত হত্যা মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি ফয়েজ উদ্দিন আহমেদ ও মিরাজ হোসেন পলাতক রয়েছেন। ব্যাংক প্রশাসন বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। খুনের শিকার কৃষি ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী আব্দুল হালিম ছিলেন কৃষি ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের (সিবিএ) সভাপতি। তার গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলায়। পরিবারের ভাষ্য অনুযায়ী, তিনি স্থানীয়ভাবে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। মামলার বিবরণ অনুযায়ী, ১ নম্বর আসামি হিসেবে অবসরপ্রাপ্ত পিয়ন ফয়েজ উদ্দিন আহমেদ এবং ২ নম্বর আসামি মিরাজ হোসেনের নাম রয়েছে। তারা বর্তমানে নিজেদের সিবিএ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দাবি করে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে প্রভাব বিস্তার করছেন। ব্যাংক সূত্রে গেছে, তারা চাঁদাবাজি, ঘুষ আদায় ও নানা অনিয়মের সঙ্গে জড়িত। সূত্র জানায়, ব্যাংকের ভেতরে একটি সিন্ডিকেটের প্রভাবেই এসব আসামিরা এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছেন। এই সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে আছেন মানবসম্পদ বিভাগের ডিজিএম জাহিদ হোসেন। এতে আরও যুক্ত রয়েছেন ডিজিএম সৈয়দ লিয়াকত হোসেন, হাবিব উন নবী, ডিএমডি খালেকুজ্জামান জুয়েল ও ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সঞ্চিয়া বিনতে আলী। গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর রাতে মতিঝিলের বিমান অফিসের সামনে আব্দুল হালিমের মৃত্যু হয়। পরদিন সকালে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠায়। মতিঝিল থানার উপ-পরিদর্শক সজীব কুমার সিং সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে জানান, পুরনো সহকর্মীদের সঙ্গে বিরোধের জেরে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং রাত ১টা ৪০ মিনিটে হাসপাতালে মারা যান। হালিমের ছেলে ফয়সাল বলেন, তার বাবা ২০১৪ সাল থেকে কৃষি ব্যাংক সিবিএর সভাপতি ছিলেন এবং বোয়ালখালী উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করতেন। ইউনিয়নের নেতৃত্ব ও পদ নিয়ে সহকর্মীদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। এ নিয়ে গত নভেম্বরেই মতিঝিল থানায় একটি জিডি (নং ০৫/১১/২০২৪ - ৩৩৫) করেছিলেন তার বাবা। তিনি আরও বলেন, বুধবার রাতে আমার বাবাকে তার অফিসের সহকর্মীরা মারধর করে হত্যা করেছে। সিবিএর বর্তমান সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জানান, ২০১৪ সালে আমরা নির্বাচিত হই। এরপর আর কোনো নির্বাচন হয়নি। কিন্তু গত ৫ আগস্ট বিনা নির্বাচনে নতুন কমিটি ঘোষণা করে আমাদের অফিস দখল করে নেয় ফয়েজ ও মিরাজ। এ নিয়ে মামলা চলছে। মামলার তথ্য অনুযায়ী, আসামিরা অস্থায়ী জামিনে ছিলেন। সম্প্রতি তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। এছাড়া আরও কয়েকজন পলাতক রয়েছেন—যাদের মধ্যে আছেন ড্রাইভার সাইফুল, শাহেদ, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর মেহেদী ও অবসরপ্রাপ্ত ক্লিনার সিরাজ। এদিকে, মামলার ২ নম্বর আসামি মিরাজ হোসেন নৈমিত্তিক ছুটির আবেদন করে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। যদিও ওয়ারেন্টভুক্ত আসামির নৈমিত্তিক ছুটি পাওয়ার কোনো এখতিয়ার নেই। মানবসম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক এ বিষয়ে বলেন, তিনি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন এবং নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। কিন্তু স্থানীয় মুখ্য কার্যালয়ের প্রধান মহাব্যবস্থাপক জানান, তিনি কোনো মন্তব্য করতে চান না। কারণ ব্যবস্থাপনা পরিচালক মন্তব্য না করার নির্দেশ দিয়েছেন। ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। অভ্যন্তরীণ এই পরিস্থিতিতে কৃষি ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
অভিনব কায়দায় চাঁদাবাজিতে নেমেছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের একদল ভুয়া সিবিএ নেতা। অভিযোগ উঠেছে, তারা বিশেষ সাধারণ সভা আয়োজনের নামে সারা দেশের শাখাগুলো থেকে কোটি টাকারও বেশি চাঁদা আদায় করছে। তথ্যসূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন (সিবিএ), রেজি. নং বি-৯৮৫-এর নাম ব্যবহার করে আগামী ২০ অক্টোবর ‘বিশেষ সাধারণ সভা’ শিরোনামে একটি অনুষ্ঠান আয়োজনের ঘোষণা দেয় একদল ভুয়া নেতা। এ উপলক্ষে তারা ব্যাংকের প্রায় ১ হাজার ২৫০টি ইউনিট থেকে ১০-২০ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করে ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার উঠে। গোপন সূত্র জানায়, তাদের নিয়ন্ত্রিত লোকজন শাখা পর্যায়ে বদলি ও পদোন্নতির ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন উপ-মহাব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, তারা এসব কর্মকাণ্ডে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করলেও এ সিন্ডিকেটের ভয়ে কিছু বলার সাহস পাচ্ছেন না। এ ঘটনায় ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগের ডিজিএম জাহিদ হোসেনের প্রত্যক্ষ মদদ ও আস্কারায় চাঁদাবাজি চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রাপ্ত আমন্ত্রণপত্রে দেখা গেছে, ভুয়া সভাপতি দাবিকারী কৃষি ব্যাংকের সাবেক পিয়ন ফয়েজ আহমেদ ও ভুয়া সাধারণ সম্পাদক মিরাজ হোসেন স্বাক্ষরিত পত্রে প্রধান অতিথি হিসেবে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির, উদ্বোধক হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন এবং প্রধান বক্তা হিসেবে সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম খান নাসিমকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। কয়েকজন মহাব্যবস্থাপক জানান, তারা বিভিন্ন শাখা থেকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ পেয়েছেন এবং বিষয়টি ব্যবস্থাপনা পরিচালক অবগত আছেন বলে জানানো হয়েছে। অনুষ্ঠানটি কৃষি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত হওয়ায় তারা কার্যত কিছু করতে পারছেন না। অনুসন্ধানে জানা যায়, এর আগেও একই সিন্ডিকেট শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে প্রায় ৫০ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করেছিল। সেই টাকা তারা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, চাঁদাবাজ ও তাদের মদদদাতাদের সঙ্গে দলের কোনো সম্পর্ক নেই। তারা বহিরাগত অনুপ্রবেশকারী। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এসব ভুয়া সিবিএ নেতাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও অবাঞ্ছিত ঘোষণা দাবি করেছেন। তাদের আশঙ্কা, এসব কর্মকাণ্ডের নেতিবাচক প্রভাব আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে পড়তে পারে।
ফাইটার জেট ও বোমারু বিমানের যৌথ মহড়া চালিয়েছে জাপান ও যুক্তরাষ্ট্র। এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। বুধবার (১০ ডিসেম্বর) জাপান সাগরের ওপর মহড়া চালায় টোকিওর ৩টি 'এফ-৩৫' স্টিলথ ফাইটার জেট এবং ওয়াশিংটনের দুটি 'বি-৫২' বোমারু বিমান। মূলত জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার আশপাশে চীন-রাশিয়ার চালানো বিমান টহলের জবাব দিতেই দেশগুলোর এই সামরিক তৎপরতা। এক বিবৃতিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে জাপানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। এ সময় দেশটি জানায়, বলপ্রয়োগের মাধ্যমে কেউ অঞ্চলটির স্থিতিশীলতা নষ্ট করতে চাইলে তা প্রতিরোধে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ জাপান ও যুক্তরাষ্ট্র। এর আগে, মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) রাতে জাপানের চারপাশে রাশিয়া ও চীন যৌথভাবে বোমারু বিমানের টহল চালিয়েছে বলে জানায় দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রণালয়। এ ঘটনায় নজরদারি চালাতে নিজেদের যুদ্ধবিমান ওড়ায় জাপান। টোকিও ও বেইজিংয়ের মধ্যে উত্তেজনা বেড়ে যাওয়ার মধ্যে এসব ঘটনা ঘটছে।
আফ্রিকার দেশ তানজানিয়ায় নির্বাচনী সহিংসতায় মাত্র এক সপ্তাহে দুই হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন বলে বিরোধীরা দাবি করেছেন। এসব হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দেশটির সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে যুক্ত আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানিয়েছেন তারা। গত ২৯ অক্টোবর দেশটিতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ৯৮ শতাংশ ভোট পেয়ে প্রেসিডেন্ট সামিয়া সুলুহু হাসান বিজয়ী হয়েছেন। তবে নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগের পাশাপাশি সমালোচকদের হত্যা ও অপহরণের অভিযোগ উঠেছে। দেশজুড়ে নির্বাচনী সহিংসতায় ভয়াবহ দাঙার সৃষ্টি হয়। দেশটির বিরোধী দল চাদেমার উপ-চেয়ারম্যান জন হেচে সাংবাদিকদের বলেছেন, মাত্র এক সপ্তাহে দুই হাজারের বেশি মানুষ নিহত এবং পাঁচ হাজারের বেশি আহত হয়েছেন। তিনি বলেছেন, এসব সহিংসতায় রাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত এবং এটিকে ‘‘মানবতাবিরোধী অপরাধ’’ হিসেবে অভিহিত করেছেন তিনি। এর আগে, তানজানিয়ার এই বিরোধী দল নির্বাচনী সহিংসতায় এক হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছিল। যদিও দেশটির সরকার নির্বাচনী সহিংসতার ঘটনায় হতাহতের বিষয়ে কোনও তথ্য প্রকাশ করেনি। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়ে হেচে বলেছেন, এই অপরাধ পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হবে। নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধেও ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, সহিংসতার কারণে লোকজনের দেশত্যাগের সংখ্যা ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। বেসামরিক নাগরিকদের অপহরণ ও জোরপূর্বক গুমের ঘটনাও ঘটছে বলে অভিযোগ করেছেন হেচে। নির্বাচনী সহিংসতার সময় নিরাপত্তা বাহিনীর কিছু সদস্য ধর্ষণ, নির্যাতন, হত্যা, লুটপাট ও নির্বিচার আটকের মতো অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন বলে অভিযোগ করেছে দেশটির বিরোধীদল চাদেমা। নিহতদের মরদেহ পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ারও দাবি জানিয়েছে দলটি। নির্বাচনের দীর্ঘদিন পরও সরকার বিরোধীদের কঠোর হাতে দমন করছে বলে অভিযোগ করেছে চাদেমা। চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকে বিরোধীদের বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘিরে রাস্তাঘাট প্রায় ফাঁকা ছিল। ওই সময় দেশজুড়ে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। গত সপ্তাহে প্রেসিডেন্ট হাসান এসব হত্যাকাণ্ডের ঘটনাকে সঠিক হিসেবে দাবি করে বলেন, সরকার উৎখাতের প্রচেষ্টা ঠেকাতে এমন পদক্ষেপ প্রয়োজন ছিল। তিনি বলেন, পরিস্থিতি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় বলপ্রয়োগ করা হয়েছে। সহিংসতার ঘটনায় তিনি একটি তদন্ত কমিশন গঠন করেছেন। তবে বিরোধীদের দাবি, কমিশনে কেবল সরকারের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরাই রয়েছেন। তারা স্বাধীন তদন্তের দাবি জানিয়েছে। সূত্র: এএফপি।
বেলারুশ থেকে আসা 'স্মাগলার' বেলুনের কারণে আকাশপথে চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হওয়ায় জরুরি অবস্থা জারি করেছে লিথুয়ানিয়া সরকার। মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) দেশটির সরকার এ ঘোষণা দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী মোতায়েন নিয়ে আলোচনা চলছে পার্লামেন্টে। অনুমোদন পেলে দেশটির নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হবে। সন্দেহমাত্র যেকোনো ব্যক্তিকে তল্লাশি কিংবা গ্রেফতার করতে পারবে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। লিথুয়ানিয়া সরকারের অভিযোগ, প্রতিবেশী দেশ বেলারুশ থেকে এসব বেলুন তাদের দেশে আসছে। দেশটির সিগারেট পাচারকারী চোরাকারবারিরা এই বেলুন পাঠাচ্ছে। আর এতে মদদ দিচ্ছে বেলারুশের সরকার। এটিকে দেশটির তরফ থেকে একপ্রকার হাইব্রিড হামলা আখ্যা দিয়েছে লিথুয়ানিয়া। এই রহস্যময় বেলুনের ঘটনায় গেল দুমাসে ১৫ বারের মতো বন্ধ হয়েছে লিথুয়ানিয়ার ভিলিয়াস বিমানবন্দর। বাতিল হয়েছে কমপক্ষে সাড়ে ৩শ' ফ্লাইট।