অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, আগামী তিন-চার মাসের মধ্যে আমাদের জন্য আরও চ্যালেঞ্জ আসবে। আমাদের অন্তত চেষ্টা করতে হবে যাতে পরবর্তী সরকারের জন্য একটি কার্যকর পদচিহ্ন রেখে যাওয়া যায়। যদি আপনারা নিজেরাই পদচিহ্ন অনুসরণ না করেন তাহলে জনগণই আপনাদের রাস্তায় নামিয়ে আনবে। ইতিহাসের আবারও পুনরাবৃত্তি হতে পারে।
শনিবার রাজধানীর একটি হোটেলে ফিন্যান্সিয়াল এক্সিলেন্স লিমিটেডের ১৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন তিনি।
সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ব্যাংক খাতের কর্মকর্তাদের শুধু প্রশিক্ষণ যথেষ্ট নয়। তাদের মনের প্রশিক্ষণও খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ প্রশিক্ষিত কিন্তু অসৎ মানুষ অনেক সময় অপ্রশিক্ষিত মানুষের চেয়ে বেশি ক্ষতি করতে পারে।
নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও নীতিনির্ধারণে কিছু ঘাটতি আছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, মাত্র ১৪ মাসে আগের সব ভুল শুধরে ফেলা কঠিন। তাই জনগণের ধৈর্য দরকার। আমরা চেষ্টা করছি আগামী কয়েক মাসে কিছু মৌলিক সংস্কার কার্যকর করতে।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ফিন্যান্সিয়াল এক্সিলেন্স লিমিটেডের চেয়ারম্যান মামুন রশীদ এবং সমাপনী বক্তব্য রাখেন অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ফিন্যান্সিয়াল এক্সিলেন্স লিমিটেডের পরিচালক সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বহুজাতিক ব্যাংক স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশের (এসসিবি) সিইও নাসের এজাজ বিজয়, অনন্ত গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) চেয়ারম্যান শরীফ জহির, মাস্টারকার্ড বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর নূরুন নাহার ও হাবিবুর রহমান, গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন প্রমুখ।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে পদোন্নতিতে অনিয়ম ও অসঙ্গতির অভিযোগে দায়ের করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে মহামান্য হাইকোর্ট রুল জারি করেছেন। একই সঙ্গে আদালত নির্দেশ দিয়েছেন, রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত পদোন্নতি সংক্রান্ত যেকোনো কার্যক্রম অবৈধ হিসেবে গণ্য হবে। দেশের বৃহত্তম রাষ্ট্রায়ত্ত বিশেষায়িত ব্যাংকটির ১০ম গ্রেডের পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন ধরে ন্যায্য পদোন্নতির দাবিতে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করে আসছিলেন। দাবি আদায়ে বারবার কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন ও মানববন্ধন করেও সাড়া না পেয়ে তারা শেষ পর্যন্ত আদালতের দ্বারস্থ হন। সূত্র জানায়, পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তারা গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর (শনিবার) ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে ছুটির দিনে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন করেন, যাতে গ্রাহকসেবা ব্যাহত না হয়। তাদের দাবির প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করে তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শওকত আলী খান দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন। তবে তিন মাস পার হলেও প্রতিশ্রুত আশ্বাস বাস্তবায়িত না হওয়ায় তারা পুনরায় ওই বছরের ৩০ নভেম্বর মানববন্ধনের আয়োজন করেন। এতে সারা দেশের শাখা থেকে ১২০০–এর বেশি কর্মকর্তা অংশ নেন। পরদিন (১ ডিসেম্বর) বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক সঞ্চিয়া বিনতে আলী পদোন্নতির বিষয়ে মৌখিক আশ্বাস দিলে আন্দোলনকারীরা কর্মস্থলে ফিরে যান। পরে কর্মকর্তাদের জানানো হয়, সুপারনিউমারারি পদ্ধতিতে মার্চের মধ্যে পদোন্নতির বিষয়টি সমাধান করা হবে। কিন্তু এখনো তা বাস্তবায়ন হয়নি। অন্যদিকে অগ্রণী, জনতা, রূপালী ও সোনালী ব্যাংকে ইতোমধ্যে মোট ৭,৩১৬ কর্মকর্তা এই পদ্ধতিতে পদোন্নতি পেয়েছেন, যা অর্থ মন্ত্রণালয়ও অনুমোদন করেছে। পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তাদের অভিযোগ, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের এই উদাসীনতা তাদের প্রতি কর্মীবান্ধবহীন মনোভাব ও কর্তৃপক্ষের অনীহারই প্রকাশ। তারা বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট স্বৈরাচার পতনের পর অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পরিবর্তন এলেও কৃষি ব্যাংকে আগের প্রশাসনিক কাঠামো অপরিবর্তিত রয়ে গেছে, যা ন্যায্য দাবি আদায়ের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের অভিযোগ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, মহাব্যবস্থাপক ও মানবসম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক জাহিদ হোসেন একাধিক বৈঠকে আশ্বাস দিলেও বাস্তব পদক্ষেপ না নিয়ে বরং আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী কর্মকর্তাদের হয়রানি ও নিপীড়ন করা হয়েছে। ফলে তারা বাধ্য হয়ে এ বছরের চলতি মাসে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন (রিট মামলা নং: ১৬৪২৮/২০২৫, মো. পনির হোসেন গং বনাম রাষ্ট্র ও অন্যান্য)। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৬ অক্টোবর হাইকোর্ট রুল জারি করে জানতে চেয়েছেন, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের পদোন্নতিতে দেখা দেওয়া অনিয়ম ও অসঙ্গতি কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না। পাশাপাশি আদালত নির্দেশ দিয়েছেন, রুল নিষ্পত্তির আগে কোনো পদোন্নতি কার্যক্রম শুরু করা হলে তা অবৈধ ও আদালত–অবমাননার শামিল হবে। রিটে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক পদোন্নতিতে ১০৭৩ জন কর্মকর্তা (ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা থেকে মূখ্য কর্মকর্তা) এবং ৫১ জন মূখ্য কর্মকর্তা (ঊর্ধ্বতন মূখ্য কর্মকর্তা পদে) অনিয়মের মাধ্যমে পদোন্নতি পেয়েছেন। এদিকে জানা গেছে, পূর্বে দুর্নীতির অভিযোগে আলোচিত মানবসম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক জাহিদ হোসেন এখনো পদোন্নতি কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তারা বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করে যদি পুনরায় অনিয়মের পথে যাওয়া হয়, তাহলে তা আদালতের অবমাননা ও রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল হবে। তারা আশা করছেন, এ বিষয়ে দ্রুত ন্যায়বিচার ও সমাধান মিলবে।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে সাম্প্রতিক সময়ে পদোন্নতি ও প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। পদোন্নতিবঞ্চিত কর্মকর্তাদের একটি অরাজনৈতিক সংগঠন ‘বৈষম্য বিরোধী অফিসার্স ফোরাম’ এর কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক মো. পনির হোসেন ও সদস্য সচিব এরশাদ হোসেনকে শৃঙ্খলাজনিত মোকদ্দমা এবং মুখ্য সংগঠক মো. আরিফ হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া মুখপাত্র তানভীর আহমদকে দুর্গম অঞ্চলে বদলি করা হয় এবং সারাদেশের দুই শতাধিক কর্মকর্তাকে ব্যাখ্যা তলব করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে যে, মো. আরিফ হোসেনকে বরখাস্ত করার নথিতে তাকে ‘ব্যাংক ও রাষ্ট্রবিরোধী’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে, অথচ ব্যাখ্যা তলবপত্রে বলা হয় তিনি ‘রাজনৈতিক কাজে তহবিল সংগ্রহ করেছেন।’ ফরেনসিক বিশ্লেষণ অনুযায়ী, তার ব্যাখ্যাতলবের জবাব প্রদানের পরও বরখাস্ত চিঠি আগেই তৈরি করা হয়েছিল, যা অনেক কর্মকর্তার মধ্যে প্রশ্ন তোলেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মহাব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, সরকারি কর্মকর্তারা যদি সংবিধান বা আইন অনুযায়ী দায়িত্ব না পালন করেন, হাইকোর্ট তাদের ক্ষমতা প্রয়োগ বা অপব্যবহার রোধের জন্য আদেশ দিতে পারে। অন্য একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, এ সিদ্ধান্তের পেছনে ব্যাংকের ফ্যাসিস্ট সরকারের সহযোগী একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা বলছেন, পদোন্নতি ও ন্যায়বিচারের জন্য আন্দোলন এবং আইনি লড়াই চলবে। ভুক্তভোগী কর্মকর্তারা শিগগিরই বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, অর্থ উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার কাছে এ বিষয়ে প্রতিকার চাইবেন। এ ব্যাপারে মো. আরিফ হোসেন ও পনির হোসেনের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে একটি ভুয়া কর্মচারী ইউনিয়নের সভায় জোরপূর্বক কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণ করানোর অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন ব্যাংকের ভিজিল্যান্স স্কোয়াডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা তাসলিমা আক্তার লিনা ও তার স্বামী মিরাজ হোসেন। গত ২০ অক্টোবর প্রধান কার্যালয়ের অডিটোরিয়ামে ‘বিশেষ সাধারণ সভা’ নামে একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের (সিবিএ) নামে তারা এটির আয়োজন করে। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির সহ-শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির খান ও উদ্বোধক হিসেবে জাতীয়তাবাদী শ্রমিকদলের সভাপতি আনোয়ার হোসাইনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তবে তারা প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে ভুয়া নেতাদের কার্যকলাপ সম্পর্কে অবগত হয়ে অনুষ্ঠানটি বয়কট করেন। অভিযোগ রয়েছে, তাসলিমা আক্তার লিনা হেড অফিসের বিভিন্ন দপ্তরের নারী কর্মকর্তা এবং তার স্বামী মিরাজ হোসেন পুরুষ কর্মকর্তাদের ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে ওই সভায় অংশগ্রহণে বাধ্য করেন। অংশগ্রহণে অস্বীকৃতি জানালে বদলি বা পদোন্নতি রোধের হুমকিও দেওয়া হয় বলে জানা গেছে। হেড অফিসের কয়েকজন কর্মকর্তার ভাষ্য অনুযায়ী, লিনা তার স্বামীর প্রভাব খাটিয়ে নারী সহকর্মীদের ওপর দীর্ঘদিন ধরে অনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে আসছেন। কেউ আপত্তি জানালে মিরাজের সহযোগীরা এসে অশালীন আচরণ ও গালিগালাজ করে থাকে বলেও অভিযোগ ওঠে। এ ছাড়া, লিনা ‘উইমেনস ফোরাম’ নামে একটি সংগঠন গড়ে মাসিক চাঁদা সংগ্রহ করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। তার এই কর্মকাণ্ডে অনেক নারী কর্মকর্তা বিব্রতবোধ করলেও চাকরির স্বার্থে নীরব থাকছেন। অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা গেছে, মানবসম্পদ বিভাগের ডিজিএম জাহিদ হোসেনের প্রত্যক্ষ সহায়তায় তাসলিমা আক্তার লিনা ও তার স্বামী মিরাজ ব্যাংকের অভ্যন্তরে প্রভাব বিস্তার করছেন। এ ঘটনায় নারী কর্মকর্তাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তারা কর্তৃপক্ষের কাছে তাসলিমা আক্তার লিনা ও মিরাজ হোসেনকে অবাঞ্ছিত ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন। এ বিষয়ে জানতে তাসলিমা আক্তার লিনার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি নিয়ম অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করছি, অভিযোগগুলো ভিত্তিহীন। অন্যদিকে, মিরাজ হোসেনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে সংঘটিত এজাহারভুক্ত হত্যা মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি ফয়েজ উদ্দিন আহমেদ ও মিরাজ হোসেন পলাতক রয়েছেন। ব্যাংক প্রশাসন বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। খুনের শিকার কৃষি ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী আব্দুল হালিম ছিলেন কৃষি ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের (সিবিএ) সভাপতি। তার গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলায়। পরিবারের ভাষ্য অনুযায়ী, তিনি স্থানীয়ভাবে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। মামলার বিবরণ অনুযায়ী, ১ নম্বর আসামি হিসেবে অবসরপ্রাপ্ত পিয়ন ফয়েজ উদ্দিন আহমেদ এবং ২ নম্বর আসামি মিরাজ হোসেনের নাম রয়েছে। তারা বর্তমানে নিজেদের সিবিএ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দাবি করে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে প্রভাব বিস্তার করছেন। ব্যাংক সূত্রে গেছে, তারা চাঁদাবাজি, ঘুষ আদায় ও নানা অনিয়মের সঙ্গে জড়িত। সূত্র জানায়, ব্যাংকের ভেতরে একটি সিন্ডিকেটের প্রভাবেই এসব আসামিরা এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছেন। এই সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে আছেন মানবসম্পদ বিভাগের ডিজিএম জাহিদ হোসেন। এতে আরও যুক্ত রয়েছেন ডিজিএম সৈয়দ লিয়াকত হোসেন, হাবিব উন নবী, ডিএমডি খালেকুজ্জামান জুয়েল ও ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সঞ্চিয়া বিনতে আলী। গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর রাতে মতিঝিলের বিমান অফিসের সামনে আব্দুল হালিমের মৃত্যু হয়। পরদিন সকালে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠায়। মতিঝিল থানার উপ-পরিদর্শক সজীব কুমার সিং সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে জানান, পুরনো সহকর্মীদের সঙ্গে বিরোধের জেরে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং রাত ১টা ৪০ মিনিটে হাসপাতালে মারা যান। হালিমের ছেলে ফয়সাল বলেন, তার বাবা ২০১৪ সাল থেকে কৃষি ব্যাংক সিবিএর সভাপতি ছিলেন এবং বোয়ালখালী উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করতেন। ইউনিয়নের নেতৃত্ব ও পদ নিয়ে সহকর্মীদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। এ নিয়ে গত নভেম্বরেই মতিঝিল থানায় একটি জিডি (নং ০৫/১১/২০২৪ - ৩৩৫) করেছিলেন তার বাবা। তিনি আরও বলেন, বুধবার রাতে আমার বাবাকে তার অফিসের সহকর্মীরা মারধর করে হত্যা করেছে। সিবিএর বর্তমান সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জানান, ২০১৪ সালে আমরা নির্বাচিত হই। এরপর আর কোনো নির্বাচন হয়নি। কিন্তু গত ৫ আগস্ট বিনা নির্বাচনে নতুন কমিটি ঘোষণা করে আমাদের অফিস দখল করে নেয় ফয়েজ ও মিরাজ। এ নিয়ে মামলা চলছে। মামলার তথ্য অনুযায়ী, আসামিরা অস্থায়ী জামিনে ছিলেন। সম্প্রতি তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। এছাড়া আরও কয়েকজন পলাতক রয়েছেন—যাদের মধ্যে আছেন ড্রাইভার সাইফুল, শাহেদ, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর মেহেদী ও অবসরপ্রাপ্ত ক্লিনার সিরাজ। এদিকে, মামলার ২ নম্বর আসামি মিরাজ হোসেন নৈমিত্তিক ছুটির আবেদন করে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। যদিও ওয়ারেন্টভুক্ত আসামির নৈমিত্তিক ছুটি পাওয়ার কোনো এখতিয়ার নেই। মানবসম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক এ বিষয়ে বলেন, তিনি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন এবং নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। কিন্তু স্থানীয় মুখ্য কার্যালয়ের প্রধান মহাব্যবস্থাপক জানান, তিনি কোনো মন্তব্য করতে চান না। কারণ ব্যবস্থাপনা পরিচালক মন্তব্য না করার নির্দেশ দিয়েছেন। ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। অভ্যন্তরীণ এই পরিস্থিতিতে কৃষি ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
অভিনব কায়দায় চাঁদাবাজিতে নেমেছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের একদল ভুয়া সিবিএ নেতা। অভিযোগ উঠেছে, তারা বিশেষ সাধারণ সভা আয়োজনের নামে সারা দেশের শাখাগুলো থেকে কোটি টাকারও বেশি চাঁদা আদায় করছে। তথ্যসূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন (সিবিএ), রেজি. নং বি-৯৮৫-এর নাম ব্যবহার করে আগামী ২০ অক্টোবর ‘বিশেষ সাধারণ সভা’ শিরোনামে একটি অনুষ্ঠান আয়োজনের ঘোষণা দেয় একদল ভুয়া নেতা। এ উপলক্ষে তারা ব্যাংকের প্রায় ১ হাজার ২৫০টি ইউনিট থেকে ১০-২০ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করে ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার উঠে। গোপন সূত্র জানায়, তাদের নিয়ন্ত্রিত লোকজন শাখা পর্যায়ে বদলি ও পদোন্নতির ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন উপ-মহাব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, তারা এসব কর্মকাণ্ডে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করলেও এ সিন্ডিকেটের ভয়ে কিছু বলার সাহস পাচ্ছেন না। এ ঘটনায় ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগের ডিজিএম জাহিদ হোসেনের প্রত্যক্ষ মদদ ও আস্কারায় চাঁদাবাজি চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রাপ্ত আমন্ত্রণপত্রে দেখা গেছে, ভুয়া সভাপতি দাবিকারী কৃষি ব্যাংকের সাবেক পিয়ন ফয়েজ আহমেদ ও ভুয়া সাধারণ সম্পাদক মিরাজ হোসেন স্বাক্ষরিত পত্রে প্রধান অতিথি হিসেবে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির, উদ্বোধক হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন এবং প্রধান বক্তা হিসেবে সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম খান নাসিমকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। কয়েকজন মহাব্যবস্থাপক জানান, তারা বিভিন্ন শাখা থেকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ পেয়েছেন এবং বিষয়টি ব্যবস্থাপনা পরিচালক অবগত আছেন বলে জানানো হয়েছে। অনুষ্ঠানটি কৃষি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত হওয়ায় তারা কার্যত কিছু করতে পারছেন না। অনুসন্ধানে জানা যায়, এর আগেও একই সিন্ডিকেট শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে প্রায় ৫০ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করেছিল। সেই টাকা তারা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, চাঁদাবাজ ও তাদের মদদদাতাদের সঙ্গে দলের কোনো সম্পর্ক নেই। তারা বহিরাগত অনুপ্রবেশকারী। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এসব ভুয়া সিবিএ নেতাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও অবাঞ্ছিত ঘোষণা দাবি করেছেন। তাদের আশঙ্কা, এসব কর্মকাণ্ডের নেতিবাচক প্রভাব আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে পড়তে পারে।
বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে যোগান–চাহিদার ভারসাম্য বজায় রাখতে নিয়মিত হস্তক্ষেপ অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর অংশ হিসেবে মাল্টিপল প্রাইস অকশন (এমপিএ) পদ্ধতিতে ১৩টি বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ২০২ মিলিয়ন ডলার কিনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ ক্রয়ে প্রতি ডলারের বিনিময় হার ছিল ১২২ টাকা ২৭ পয়সা থেকে ১২২ টাকা ২৯ পয়সা। এ নিয়ে চলতি ২০২৫–২৬ অর্থবছরে মোট ডলার ক্রয়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৫১৪ মিলিয়ন (প্রায় আড়াই বিলিয়ন) ডলার। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বাজারে ডলারের সরবরাহ বাড়লেও চাহিদা কমে যাওয়ায় দামের ওপর নিম্নচাপ তৈরি হয়েছে। দাম অতিমাত্রায় নিচে নেমে গেলে রপ্তানিকারক ও প্রবাসী আয়ের প্রেরণকারীরা নিরুৎসাহিত হতে পারেন। তাই একটি নির্দিষ্ট সীমার নিচে দাম নেমে না যাওয়ার লক্ষ্যে বাজারে হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে। আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী গত মে মাসে চালু হওয়া বাজারভিত্তিক এক্সচেঞ্জ রেট এখন ব্যাংকগুলোকে সরবরাহ–চাহিদার ভিত্তিতে দাম নির্ধারণের সুযোগ দিচ্ছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে এলসি খোলার প্রবণতা বৃদ্ধি, রমজানকে সামনে রেখে পণ্য আমদানি এবং আমদানিতে বিধিনিষেধ কিছুটা শিথিল হওয়ায় ডলারের চাহিদা আবারও বেড়েছে। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, রমজানের আগে ডলারের চাহিদা স্বাভাবিকভাবেই বাড়ে, কিন্তু সেই সময়েই বাংলাদেশ ব্যাংকের ডলার কেনা বাজারে বাড়তি চাপ সৃষ্টি করছে। বছরের শেষ দিকে অনেক ব্যাংক অতিরিক্ত মুনাফার জন্য ডলারের দাম বাড়ায়, যা আমদানিকারকদের জন্য নতুন আর্থিক চাপ তৈরি করে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র জানিয়েছেন ডলার কেনা হচ্ছে শুধুমাত্র অতিরিক্ত ডলারধারী ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে নিলামের মাধ্যমে। এটা কোনো কৃত্রিম হস্তক্ষেপ নয়। সাম্প্রতিক সময়ে রপ্তানি ও প্রবাসী আয়ে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে, যার ফলে বাজারে সরবরাহও বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী নভেম্বর মাসে এলসি খোলা হয়েছে ৫৫৬ কোটি ৬৬ লাখ ডলার এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে ৪৮৬ কোটি ৯৯ লাখ ডলার জুলাই–নভেম্বর (প্রথম পাঁচ মাস) এলসি খোলা হয়েছে ২,৯৪১ কোটি ডলার গত বছরের তুলনায় ৪.৫৯% বেশি এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে ২,৭১৯ কোটি ৪৫ লাখ ডলার গত বছরের তুলনায় ২.৬৬% কম প্রবাসী আয় চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে দেশে এসেছে ১৩.০৩ বিলিয়ন ডলার প্রবাসী আয়, টাকায় যার পরিমাণ প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা।
দেশের বৈদেশিক মুদ্রার যোগান-চাহিদার ভারসাম্য ঠিক রাখতে ডলারের বাজারে নিয়মিত হস্তক্ষেপ করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরই অংশ হিসেবে আজ ১৩টি বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ২০২ মিলিয়ন ডলার কিনেছে নিয়ন্ত্রণ সংস্থাটি। মাল্টিপল প্রাইস অকশন (এমপিএ) পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত এ ক্রয়ে ডলারের এক্সচেঞ্জ রেট ছিল প্রতি ডলার ১২২ টাকা ২৭ থেকে ১২২ টাকা ২৯ পয়সা। সব মিলিয়ে চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে এখন পর্যন্ত মোট ডলার ক্রয়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৫১৪ মিলিয়ন বা আড়াই বিলিয়ন ডলার। আজ (মঙ্গলবার) বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, একদিকে বাজারে ডলারের সরবরাহ বেড়েছে এবং অন্যদিকে চাহিদা কমে আসায় দামের ওপর নিম্নমুখী চাপ রয়েছে। এতে ডলারের দাম বেশি কমে গেলে রপ্তানিকারক ও প্রবাসী আয় প্রেরণকারীরা অনুপ্রাণিত না-ও হতে পারেন। এই পরিস্থিতি এড়াতে এবং ডলারের মূল্যকে একটি নির্দিষ্ট সীমার নিচে নেমে যেতে না দেওয়ার উদ্দেশ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজারে হস্তক্ষেপ করছে। আইএমএফের ঋণচুক্তির শর্ত অনুযায়ী গত মে মাসে বাজারভিত্তিক বিনিময় হার পদ্ধতি চালু করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর পর থেকে ব্যাংকগুলো চাহিদা ও সরবরাহের ভিত্তিতে ডলারের দাম নির্ধারণ করছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে এলসি খোলার প্রবণতা বৃদ্ধি, রমজান সামনে রেখে প্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি এবং আমদানি সংক্রান্ত বিধিনিষেধ কিছুটা শিথিল হওয়ায় ডলারের চাহিদা বেড়েছে। আমদানি ও রপ্তানির সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীরা জানান, রমজানের আগে চাহিদা বাড়া স্বাভাবিক, কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংক যখন একই সময়ে বাজার থেকে ডলার কিনছে, তখন দাম বাড়ার চাপ আরও বেড়ে যাচ্ছে। বছরের শেষের দিকে ব্যাংকগুলো অতিরিক্ত মুনাফা নিতে প্রায়ই ডলারের দাম বাড়ায়। এতে আমদানির খরচ বৃদ্ধি পায় এবং ব্যবসায়ীদের জন্য আর্থিক চাপ তৈরি হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. আরিফ হোসেন খান বলেন, বাজারে কৃত্রিম হস্তক্ষেপ নয়; ডলার কেনা হচ্ছে শুধুমাত্র অতিরিক্ত ডলারধারী ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে নিলামের মাধ্যমে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে রপ্তানি আয় এবং প্রবাসী আয় উভয় ক্ষেত্রেই ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে। এর ফলে বাজারে ডলারের সরবরাহ বেড়েছে এবং নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে কেনা হচ্ছে যাতে বাজার স্থিতিশীল থাকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত নভেম্বর মাসে বিভিন্ন পণ্যের ৫৫৬ কোটি ৬৬ লাখ ডলারের আমদানি ঋণপত্র (এলসি) খোলা হয়েছে। একই মাসে এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে ৪৮৬ কোটি ৯৯ লাখ ডলার। সব মিলে চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) এলসি খোলা হয় ২ হাজার ৯৪১ কোটি ডলার। এটি গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১২৯ কোটি ২৬ লাখ ডলার বা ৪ দশমিক ৫৯ শতাংশ। তবে প্রথম পাঁচ মাসের হিসাবে এলসি নিষ্পত্তি কমেছে প্রায় ৭৪ কোটি ডলার বা ২ দশমিক ৬৬ শতাংশ কম। এ সময়ে বিভিন্ন পণ্যের এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে ২ হাজার ৭১৯ কোটি ৪৫ লাখ ডলার। চলতি অর্থবছরে প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বরে) এক হাজার ৩০৩ কোটি ৪৩ লাখ মার্কিন ডলারের (১৩ দশমিক ০৩ বিলিয়ন) সমপরিমাণ বৈদেশিক অর্থ দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় এক লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা।
দেশের পণ্য রপ্তানি টানা চার মাস ধরে কমছে। সদ্যসমাপ্ত নভেম্বর মাসে রপ্তানি হয়েছে ৩৮৯ কোটি ডলারের পণ্য, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ কম। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সর্বশেষ পরিসংখ্যানে দেখা যায়, শীর্ষ পাঁচ রপ্তানি খাতের মধ্যে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য ছাড়া সব খাতেই রপ্তানি কমেছে। এগুলো হলো তৈরি পোশাক, পাট ও পাটজাত পণ্য, কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, এবং হোম টেক্সটাইল। একই সঙ্গে কমেছে চামড়াবিহীন জুতা, হিমায়িত খাদ্য এবং প্লাস্টিক পণ্যের রপ্তানিও। নভেম্বর মাসে তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে ৩১৪ কোটি ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ৫ শতাংশ কম। যদিও জুলাই-নভেম্বর সময়ের মোট হিসেবে তৈরি পোশাক রপ্তানি এখনো ইতিবাচক রপ্তানি হয়েছে ১ হাজার ৬১৩ কোটি ডলার, যা গত বছরের তুলনায় শূন্য দশমিক ৯ শতাংশ বেশি। দ্বিতীয় শীর্ষ খাত চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যে নভেম্বরে রপ্তানি হয়েছে ৯ কোটি ৮৯ লাখ ডলার, যা গত বছরের তুলনায় ৫ দশমিক ১৪ শতাংশ বেশি। জুলাই-নভেম্বর সময়ে রপ্তানি দাঁড়িয়েছে ৫১ কোটি ডলারে; প্রবৃদ্ধি ৯ দশমিক ৮৮ শতাংশ। তৃতীয় শীর্ষ খাত কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাদ্য রপ্তানিতে বড় ধরনের ধস নেমেছে। গত নভেম্বরে রপ্তানি হয়েছে ৮ কোটি ২৮ লাখ ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ২৫ শতাংশ কম। চলতি অর্থবছরের পাঁচ মাসে মোট রপ্তানি ৪৬ কোটি ডলার প্রবৃদ্ধি ঋণাত্মক ৬ দশমিক ৮১ শতাংশ। পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি নভেম্বরে কমেছে ১০ দশমিক ৫ শতাংশ। রপ্তানি হয়েছে ৬ কোটি ৮৯ লাখ ডলার। যদিও জুলাই-নভেম্বর সময়ে মোট রপ্তানি ৩৫ কোটি ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ১ দশমিক ৩৬ শতাংশ বেশি। হোম টেক্সটাইল রপ্তানিও গত নভেম্বরে কমেছে ৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এ সময়ে রপ্তানি হয়েছে ৬ কোটি ৬৩ লাখ ডলার। তবে পাঁচ মাসের হিসাবে রপ্তানি এখনো ইতিবাচক—৩৪ কোটি ৫৪ লাখ ডলারের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৬৮ শতাংশ।