আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) জানিয়েছেন, আগামী অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আনুমানিক ৫ শতাংশের কাছাকাছি হতে পারে। প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, দেশে ভোক্তা খরচ এবং রপ্তানি বাণিজ্য ধীরে হলেও স্থিতিশীল থাকার কারণে এই প্রবৃদ্ধি সম্ভব হবে।
আইএমএফের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশে অর্থনৈতিক কার্যক্রমে ধীরে ধীরে পুনরুদ্ধার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। যদিও কিছু ক্ষেত্রে চাপ অব্যাহত আছে—যেমন জ্বালানি ও খাদ্যমূল্যের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা এবং বৈদেশিক ঋণ পরিচালনার চ্যালেঞ্জ—তবুও মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ও বিনিয়োগে ধীরগতির বৃদ্ধি আশা করা যাচ্ছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, রপ্তানি খাত এবং প্রস্তুতপত্র শিল্পের উন্নতি দেশের জিডিপি বৃদ্ধিকে সহায়তা করবে। বিশেষ করে ready-made garments (RMG) খাতের স্থিতিশীল পারফরম্যান্স এবং তথ্য-প্রযুক্তি খাতের সম্প্রসারণ ভবিষ্যতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির একটি গুরুত্বপূর্ণ চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করবে।
আইএমএফের এই পূর্বাভাস দেশের অর্থনৈতিক পরিকল্পনাকারীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটি উল্লেখ করেছে, সরকারের উচিত অর্থনৈতিক নীতি আরও নমনীয় করা এবং বিনিয়োগ ও রপ্তানি বৃদ্ধির জন্য সুযোগ সৃষ্টি করা, যাতে প্রবৃদ্ধি আরও দৃঢ় ও স্থায়ী হয়।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে পদোন্নতিতে অনিয়ম ও অসঙ্গতির অভিযোগে দায়ের করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে মহামান্য হাইকোর্ট রুল জারি করেছেন। একই সঙ্গে আদালত নির্দেশ দিয়েছেন, রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত পদোন্নতি সংক্রান্ত যেকোনো কার্যক্রম অবৈধ হিসেবে গণ্য হবে। দেশের বৃহত্তম রাষ্ট্রায়ত্ত বিশেষায়িত ব্যাংকটির ১০ম গ্রেডের পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন ধরে ন্যায্য পদোন্নতির দাবিতে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করে আসছিলেন। দাবি আদায়ে বারবার কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন ও মানববন্ধন করেও সাড়া না পেয়ে তারা শেষ পর্যন্ত আদালতের দ্বারস্থ হন। সূত্র জানায়, পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তারা গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর (শনিবার) ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে ছুটির দিনে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন করেন, যাতে গ্রাহকসেবা ব্যাহত না হয়। তাদের দাবির প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করে তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শওকত আলী খান দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন। তবে তিন মাস পার হলেও প্রতিশ্রুত আশ্বাস বাস্তবায়িত না হওয়ায় তারা পুনরায় ওই বছরের ৩০ নভেম্বর মানববন্ধনের আয়োজন করেন। এতে সারা দেশের শাখা থেকে ১২০০–এর বেশি কর্মকর্তা অংশ নেন। পরদিন (১ ডিসেম্বর) বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক সঞ্চিয়া বিনতে আলী পদোন্নতির বিষয়ে মৌখিক আশ্বাস দিলে আন্দোলনকারীরা কর্মস্থলে ফিরে যান। পরে কর্মকর্তাদের জানানো হয়, সুপারনিউমারারি পদ্ধতিতে মার্চের মধ্যে পদোন্নতির বিষয়টি সমাধান করা হবে। কিন্তু এখনো তা বাস্তবায়ন হয়নি। অন্যদিকে অগ্রণী, জনতা, রূপালী ও সোনালী ব্যাংকে ইতোমধ্যে মোট ৭,৩১৬ কর্মকর্তা এই পদ্ধতিতে পদোন্নতি পেয়েছেন, যা অর্থ মন্ত্রণালয়ও অনুমোদন করেছে। পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তাদের অভিযোগ, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের এই উদাসীনতা তাদের প্রতি কর্মীবান্ধবহীন মনোভাব ও কর্তৃপক্ষের অনীহারই প্রকাশ। তারা বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট স্বৈরাচার পতনের পর অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পরিবর্তন এলেও কৃষি ব্যাংকে আগের প্রশাসনিক কাঠামো অপরিবর্তিত রয়ে গেছে, যা ন্যায্য দাবি আদায়ের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের অভিযোগ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, মহাব্যবস্থাপক ও মানবসম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক জাহিদ হোসেন একাধিক বৈঠকে আশ্বাস দিলেও বাস্তব পদক্ষেপ না নিয়ে বরং আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী কর্মকর্তাদের হয়রানি ও নিপীড়ন করা হয়েছে। ফলে তারা বাধ্য হয়ে এ বছরের চলতি মাসে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন (রিট মামলা নং: ১৬৪২৮/২০২৫, মো. পনির হোসেন গং বনাম রাষ্ট্র ও অন্যান্য)। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৬ অক্টোবর হাইকোর্ট রুল জারি করে জানতে চেয়েছেন, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের পদোন্নতিতে দেখা দেওয়া অনিয়ম ও অসঙ্গতি কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না। পাশাপাশি আদালত নির্দেশ দিয়েছেন, রুল নিষ্পত্তির আগে কোনো পদোন্নতি কার্যক্রম শুরু করা হলে তা অবৈধ ও আদালত–অবমাননার শামিল হবে। রিটে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক পদোন্নতিতে ১০৭৩ জন কর্মকর্তা (ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা থেকে মূখ্য কর্মকর্তা) এবং ৫১ জন মূখ্য কর্মকর্তা (ঊর্ধ্বতন মূখ্য কর্মকর্তা পদে) অনিয়মের মাধ্যমে পদোন্নতি পেয়েছেন। এদিকে জানা গেছে, পূর্বে দুর্নীতির অভিযোগে আলোচিত মানবসম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক জাহিদ হোসেন এখনো পদোন্নতি কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তারা বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করে যদি পুনরায় অনিয়মের পথে যাওয়া হয়, তাহলে তা আদালতের অবমাননা ও রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল হবে। তারা আশা করছেন, এ বিষয়ে দ্রুত ন্যায়বিচার ও সমাধান মিলবে।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে সাম্প্রতিক সময়ে পদোন্নতি ও প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। পদোন্নতিবঞ্চিত কর্মকর্তাদের একটি অরাজনৈতিক সংগঠন ‘বৈষম্য বিরোধী অফিসার্স ফোরাম’ এর কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক মো. পনির হোসেন ও সদস্য সচিব এরশাদ হোসেনকে শৃঙ্খলাজনিত মোকদ্দমা এবং মুখ্য সংগঠক মো. আরিফ হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া মুখপাত্র তানভীর আহমদকে দুর্গম অঞ্চলে বদলি করা হয় এবং সারাদেশের দুই শতাধিক কর্মকর্তাকে ব্যাখ্যা তলব করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে যে, মো. আরিফ হোসেনকে বরখাস্ত করার নথিতে তাকে ‘ব্যাংক ও রাষ্ট্রবিরোধী’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে, অথচ ব্যাখ্যা তলবপত্রে বলা হয় তিনি ‘রাজনৈতিক কাজে তহবিল সংগ্রহ করেছেন।’ ফরেনসিক বিশ্লেষণ অনুযায়ী, তার ব্যাখ্যাতলবের জবাব প্রদানের পরও বরখাস্ত চিঠি আগেই তৈরি করা হয়েছিল, যা অনেক কর্মকর্তার মধ্যে প্রশ্ন তোলেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মহাব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, সরকারি কর্মকর্তারা যদি সংবিধান বা আইন অনুযায়ী দায়িত্ব না পালন করেন, হাইকোর্ট তাদের ক্ষমতা প্রয়োগ বা অপব্যবহার রোধের জন্য আদেশ দিতে পারে। অন্য একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, এ সিদ্ধান্তের পেছনে ব্যাংকের ফ্যাসিস্ট সরকারের সহযোগী একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা বলছেন, পদোন্নতি ও ন্যায়বিচারের জন্য আন্দোলন এবং আইনি লড়াই চলবে। ভুক্তভোগী কর্মকর্তারা শিগগিরই বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, অর্থ উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার কাছে এ বিষয়ে প্রতিকার চাইবেন। এ ব্যাপারে মো. আরিফ হোসেন ও পনির হোসেনের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে একটি ভুয়া কর্মচারী ইউনিয়নের সভায় জোরপূর্বক কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণ করানোর অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন ব্যাংকের ভিজিল্যান্স স্কোয়াডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা তাসলিমা আক্তার লিনা ও তার স্বামী মিরাজ হোসেন। গত ২০ অক্টোবর প্রধান কার্যালয়ের অডিটোরিয়ামে ‘বিশেষ সাধারণ সভা’ নামে একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের (সিবিএ) নামে তারা এটির আয়োজন করে। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির সহ-শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির খান ও উদ্বোধক হিসেবে জাতীয়তাবাদী শ্রমিকদলের সভাপতি আনোয়ার হোসাইনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তবে তারা প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে ভুয়া নেতাদের কার্যকলাপ সম্পর্কে অবগত হয়ে অনুষ্ঠানটি বয়কট করেন। অভিযোগ রয়েছে, তাসলিমা আক্তার লিনা হেড অফিসের বিভিন্ন দপ্তরের নারী কর্মকর্তা এবং তার স্বামী মিরাজ হোসেন পুরুষ কর্মকর্তাদের ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে ওই সভায় অংশগ্রহণে বাধ্য করেন। অংশগ্রহণে অস্বীকৃতি জানালে বদলি বা পদোন্নতি রোধের হুমকিও দেওয়া হয় বলে জানা গেছে। হেড অফিসের কয়েকজন কর্মকর্তার ভাষ্য অনুযায়ী, লিনা তার স্বামীর প্রভাব খাটিয়ে নারী সহকর্মীদের ওপর দীর্ঘদিন ধরে অনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে আসছেন। কেউ আপত্তি জানালে মিরাজের সহযোগীরা এসে অশালীন আচরণ ও গালিগালাজ করে থাকে বলেও অভিযোগ ওঠে। এ ছাড়া, লিনা ‘উইমেনস ফোরাম’ নামে একটি সংগঠন গড়ে মাসিক চাঁদা সংগ্রহ করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। তার এই কর্মকাণ্ডে অনেক নারী কর্মকর্তা বিব্রতবোধ করলেও চাকরির স্বার্থে নীরব থাকছেন। অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা গেছে, মানবসম্পদ বিভাগের ডিজিএম জাহিদ হোসেনের প্রত্যক্ষ সহায়তায় তাসলিমা আক্তার লিনা ও তার স্বামী মিরাজ ব্যাংকের অভ্যন্তরে প্রভাব বিস্তার করছেন। এ ঘটনায় নারী কর্মকর্তাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তারা কর্তৃপক্ষের কাছে তাসলিমা আক্তার লিনা ও মিরাজ হোসেনকে অবাঞ্ছিত ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন। এ বিষয়ে জানতে তাসলিমা আক্তার লিনার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি নিয়ম অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করছি, অভিযোগগুলো ভিত্তিহীন। অন্যদিকে, মিরাজ হোসেনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে সংঘটিত এজাহারভুক্ত হত্যা মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি ফয়েজ উদ্দিন আহমেদ ও মিরাজ হোসেন পলাতক রয়েছেন। ব্যাংক প্রশাসন বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। খুনের শিকার কৃষি ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী আব্দুল হালিম ছিলেন কৃষি ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের (সিবিএ) সভাপতি। তার গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলায়। পরিবারের ভাষ্য অনুযায়ী, তিনি স্থানীয়ভাবে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। মামলার বিবরণ অনুযায়ী, ১ নম্বর আসামি হিসেবে অবসরপ্রাপ্ত পিয়ন ফয়েজ উদ্দিন আহমেদ এবং ২ নম্বর আসামি মিরাজ হোসেনের নাম রয়েছে। তারা বর্তমানে নিজেদের সিবিএ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দাবি করে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে প্রভাব বিস্তার করছেন। ব্যাংক সূত্রে গেছে, তারা চাঁদাবাজি, ঘুষ আদায় ও নানা অনিয়মের সঙ্গে জড়িত। সূত্র জানায়, ব্যাংকের ভেতরে একটি সিন্ডিকেটের প্রভাবেই এসব আসামিরা এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছেন। এই সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে আছেন মানবসম্পদ বিভাগের ডিজিএম জাহিদ হোসেন। এতে আরও যুক্ত রয়েছেন ডিজিএম সৈয়দ লিয়াকত হোসেন, হাবিব উন নবী, ডিএমডি খালেকুজ্জামান জুয়েল ও ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সঞ্চিয়া বিনতে আলী। গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর রাতে মতিঝিলের বিমান অফিসের সামনে আব্দুল হালিমের মৃত্যু হয়। পরদিন সকালে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠায়। মতিঝিল থানার উপ-পরিদর্শক সজীব কুমার সিং সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে জানান, পুরনো সহকর্মীদের সঙ্গে বিরোধের জেরে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং রাত ১টা ৪০ মিনিটে হাসপাতালে মারা যান। হালিমের ছেলে ফয়সাল বলেন, তার বাবা ২০১৪ সাল থেকে কৃষি ব্যাংক সিবিএর সভাপতি ছিলেন এবং বোয়ালখালী উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করতেন। ইউনিয়নের নেতৃত্ব ও পদ নিয়ে সহকর্মীদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। এ নিয়ে গত নভেম্বরেই মতিঝিল থানায় একটি জিডি (নং ০৫/১১/২০২৪ - ৩৩৫) করেছিলেন তার বাবা। তিনি আরও বলেন, বুধবার রাতে আমার বাবাকে তার অফিসের সহকর্মীরা মারধর করে হত্যা করেছে। সিবিএর বর্তমান সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জানান, ২০১৪ সালে আমরা নির্বাচিত হই। এরপর আর কোনো নির্বাচন হয়নি। কিন্তু গত ৫ আগস্ট বিনা নির্বাচনে নতুন কমিটি ঘোষণা করে আমাদের অফিস দখল করে নেয় ফয়েজ ও মিরাজ। এ নিয়ে মামলা চলছে। মামলার তথ্য অনুযায়ী, আসামিরা অস্থায়ী জামিনে ছিলেন। সম্প্রতি তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। এছাড়া আরও কয়েকজন পলাতক রয়েছেন—যাদের মধ্যে আছেন ড্রাইভার সাইফুল, শাহেদ, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর মেহেদী ও অবসরপ্রাপ্ত ক্লিনার সিরাজ। এদিকে, মামলার ২ নম্বর আসামি মিরাজ হোসেন নৈমিত্তিক ছুটির আবেদন করে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। যদিও ওয়ারেন্টভুক্ত আসামির নৈমিত্তিক ছুটি পাওয়ার কোনো এখতিয়ার নেই। মানবসম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক এ বিষয়ে বলেন, তিনি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন এবং নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। কিন্তু স্থানীয় মুখ্য কার্যালয়ের প্রধান মহাব্যবস্থাপক জানান, তিনি কোনো মন্তব্য করতে চান না। কারণ ব্যবস্থাপনা পরিচালক মন্তব্য না করার নির্দেশ দিয়েছেন। ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। অভ্যন্তরীণ এই পরিস্থিতিতে কৃষি ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
অভিনব কায়দায় চাঁদাবাজিতে নেমেছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের একদল ভুয়া সিবিএ নেতা। অভিযোগ উঠেছে, তারা বিশেষ সাধারণ সভা আয়োজনের নামে সারা দেশের শাখাগুলো থেকে কোটি টাকারও বেশি চাঁদা আদায় করছে। তথ্যসূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন (সিবিএ), রেজি. নং বি-৯৮৫-এর নাম ব্যবহার করে আগামী ২০ অক্টোবর ‘বিশেষ সাধারণ সভা’ শিরোনামে একটি অনুষ্ঠান আয়োজনের ঘোষণা দেয় একদল ভুয়া নেতা। এ উপলক্ষে তারা ব্যাংকের প্রায় ১ হাজার ২৫০টি ইউনিট থেকে ১০-২০ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করে ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার উঠে। গোপন সূত্র জানায়, তাদের নিয়ন্ত্রিত লোকজন শাখা পর্যায়ে বদলি ও পদোন্নতির ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন উপ-মহাব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, তারা এসব কর্মকাণ্ডে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করলেও এ সিন্ডিকেটের ভয়ে কিছু বলার সাহস পাচ্ছেন না। এ ঘটনায় ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগের ডিজিএম জাহিদ হোসেনের প্রত্যক্ষ মদদ ও আস্কারায় চাঁদাবাজি চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রাপ্ত আমন্ত্রণপত্রে দেখা গেছে, ভুয়া সভাপতি দাবিকারী কৃষি ব্যাংকের সাবেক পিয়ন ফয়েজ আহমেদ ও ভুয়া সাধারণ সম্পাদক মিরাজ হোসেন স্বাক্ষরিত পত্রে প্রধান অতিথি হিসেবে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির, উদ্বোধক হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন এবং প্রধান বক্তা হিসেবে সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম খান নাসিমকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। কয়েকজন মহাব্যবস্থাপক জানান, তারা বিভিন্ন শাখা থেকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ পেয়েছেন এবং বিষয়টি ব্যবস্থাপনা পরিচালক অবগত আছেন বলে জানানো হয়েছে। অনুষ্ঠানটি কৃষি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত হওয়ায় তারা কার্যত কিছু করতে পারছেন না। অনুসন্ধানে জানা যায়, এর আগেও একই সিন্ডিকেট শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে প্রায় ৫০ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করেছিল। সেই টাকা তারা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, চাঁদাবাজ ও তাদের মদদদাতাদের সঙ্গে দলের কোনো সম্পর্ক নেই। তারা বহিরাগত অনুপ্রবেশকারী। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এসব ভুয়া সিবিএ নেতাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও অবাঞ্ছিত ঘোষণা দাবি করেছেন। তাদের আশঙ্কা, এসব কর্মকাণ্ডের নেতিবাচক প্রভাব আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে পড়তে পারে।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সারাদেশে মোট ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ৪২ হাজার ৭৬১টি। এর মধ্যে পুলিশ ৮ হাজার ৭৪৬টি ভোটকেন্দ্রকে ‘অতি ঝুঁকিপূর্ণ’ এবং ১৬ হাজার ৩৫৯টি ভোটকেন্দ্রকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এসব কেন্দ্রকে ঘিরে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করাই এখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পুলিশের আশঙ্কা, কার্যক্রম নিষিদ্ধ রাজনৈতিক দল ও স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাম্প্রদায়িক উসকানি, ধর্মীয় অপপ্রচার এবং নির্বাচনসংক্রান্ত বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ছড়িয়ে নির্বাচন পরিবেশ বিঘ্নিত করার চেষ্টা করতে পারে। ভোটার সংখ্যা, থানা থেকে কেন্দ্রের দূরত্ব, রাজনৈতিক আধিপত্য, দুর্গম অঞ্চল, পাহাড়ি ও চরাঞ্চল বিবেচনায় নিয়ে পুলিশ সদর দপ্তর ভোটকেন্দ্রগুলোকে তিন ভাগে ভাগ করেছে—লাল (অতি ঝুঁকিপূর্ণ), হলুদ (ঝুঁকিপূর্ণ) ও সবুজ (সাধারণ)। এর আগে এক অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনের একজন কমিশনার মন্তব্য করেন, আসন্ন নির্বাচন বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ নির্বাচন হতে পারে। তবে সুষ্ঠু ও উৎসবমুখর নির্বাচন নিশ্চিত করতে সরকারের নির্দেশনায় পুলিশ সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। অতি ঝুঁকিপূর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েনের পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানানো হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্যমতে, ঝুঁকি নেই এমন সাধারণ ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ১৭ হাজার ৬৫৬টি। প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুযায়ী অতি ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে তিনজন, ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে দুইজন এবং সাধারণ কেন্দ্রে একজন পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে। প্রতিটি কেন্দ্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্যদের কাছে থাকবে অস্ত্র ও বডি ওয়ার্ন ক্যামেরা। পাশাপাশি প্রতিটি কেন্দ্রে ১৩ জন করে আনসার সদস্য এবং সার্বিক নিরাপত্তায় সেনাবাহিনী, বিজিবিসহ অন্যান্য বাহিনী নিয়োজিত থাকবে। পুলিশের গোপন মূল্যায়নে উঠে এসেছে, গত ৫ আগস্টের পর বিভিন্ন থানা ও পুলিশ লাইন্স থেকে লুণ্ঠিত অস্ত্র ও গোলাবারুদ এখনো পুরোপুরি উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। নির্বাচনকে সামনে রেখে এসব অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে বিশেষ অভিযান চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া জামিনে মুক্ত কিছু শীর্ষ সন্ত্রাসী আবার অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়েছে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে। নির্বাচনের সময় সীমান্তবর্তী এলাকা, চরমপন্থি অধ্যুষিত অঞ্চল, সংখ্যালঘু ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী অধ্যুষিত আসনগুলোতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে আলাদা নিরাপত্তা পরিকল্পনা গ্রহণ করা হতে পারে। গুজব, অপপ্রচার ও ভুয়া তথ্য ঠেকাতে সাইবার মনিটরিং সেল গঠন এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে ডিপফেক ভিডিও বা ভুয়া বক্তব্য শনাক্তের সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। নিরাপত্তা বিশ্লেষণে দেখা গেছে, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ও পার্বত্য তিন জেলায় সক্রিয় সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো নির্বাচনকালীন সময়ে সহিংসতা সৃষ্টি করতে পারে। দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১০ শতাংশ সংখ্যালঘু হওয়ায় ১১৩টি আসনে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টির ঝুঁকিও রয়েছে। এছাড়া অতীতে যেসব আসনে কম ভোটের ব্যবধানে ফল নির্ধারিত হয়েছে, সেসব এলাকায় সংঘর্ষ ও বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা বেশি। বিগত তিনটি জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক থাকায় আসন্ন নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে লটারির মাধ্যমে জেলা পুলিশ সুপার নিয়োগ, থানার ওসি পরিবর্তন এবং দেড় লাখ পুলিশ সদস্যের জন্য নির্বাচনকালীন করণীয় ও বর্জনীয় বিষয়ে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এর মধ্যে ৬০ হাজারের বেশি সদস্যের প্রশিক্ষণ শেষ হয়েছে। পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ঝুঁকিপূর্ণ ও অতি ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে সার্বক্ষণিক নজরদারি থাকবে। প্রয়োজনে কুইক রেসপন্স টিম ও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা হবে। কোনো পক্ষ পেশিশক্তি প্রদর্শনের চেষ্টা করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারের লক্ষ্য একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও উৎসবমুখর নির্বাচন আয়োজন। সে লক্ষ্যেই বাহিনীর সদস্যদের প্রশিক্ষণ ও প্রস্তুতি জোরদার করা হয়েছে, যাতে অতীতের বিতর্কের বাইরে গিয়ে দায়িত্ব পালন নিশ্চিত করা যায়।
ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদিকে গুলি করে হত্যাচেষ্টার মামলার মূল অভিযুক্ত শুটার ফয়সালের বাবা-মাকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১০। গ্রেফতারকৃতরা হলেন— ফয়সল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান ওরফে শুটার ফয়সলের বাবা মো. হুমায়ুন কবির (৭০) ও মা মোসা. হাসি বেগম (৬০)। মঙ্গলবার রাতে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক উইং কমান্ডার এম জেড এম ইন্তেখাব চৌধুরী বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, মঙ্গলবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে গোয়েন্দা তথ্য বিশ্লেষণ ও আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় র্যাব-১০-এর একটি দল ঢাকা জেলার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার হাসনাবাদ হাউসিং এলাকায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানে চাঞ্চল্যকর এ হত্যাচেষ্টা মামলার গুরুত্বপূর্ণ আসামি হিসেবে ফয়সালের বাবা ও মাকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি আরও জানান, গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদের সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হবে। এর আগে এ ঘটনায় ফয়সালের স্ত্রী, বান্ধবী, শ্যালক, হামলায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক সন্দেহে একজন, সহযোগী কবীর এবং তাকে পালাতে সহায়তার অভিযোগে সীমান্ত এলাকা থেকে দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। হাদিকে গুলি করে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় পরিবারের সম্মতিতে রোববার রাতে পল্টন থানায় একটি হত্যা চেষ্টা মামলা দায়ের করেন ইনকিলাব মঞ্চের সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ আল জাবের। গত ১২ ডিসেম্বর গণসংযোগের উদ্দেশ্যে বিজয়নগর এলাকায় গেলে শরিফ ওসমান হাদি হামলার শিকার হন। চলন্ত রিকশায় থাকা অবস্থায় চলন্ত মোটরসাইকেলের পেছনে বসে থাকা এক আততায়ী তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। গুলিটি হাদির মাথায় লাগে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে অস্ত্রোপচারের পর একই রাতে তাকে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকদের ভাষ্য অনুযায়ী, তার অবস্থা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক। পরবর্তীতে সোমবার দুপুরে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে উন্নত চিকিৎসার জন্য শরিফ ওসমান হাদিকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেছেন, আমাদের বোন ফেলানী কাঁটাতারে ঝুলন্ত অবস্থায় জীবন দিয়েছিল। তার প্রতি কী ধরনের নিষ্ঠুরতা চালানো হয়েছিল, সেটি প্রতিদিন মনে করিয়ে দিতেই গুলশান-২ থেকে প্রগতি সরণি পর্যন্ত সড়কটির নাম ‘ফেলানী এভিনিউ’ নামে নামকরণ করা হয়েছে। কারণ বাংলাদেশের মানুষ সীমান্ত হত্যা বন্ধ চায়। আজ মঙ্গলবার মহান বিজয় দিবসে গুলশান-২ গোলচত্বরে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) আয়োজিত সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত কিশোরী ফেলানীর স্মরণে গুলশান-২ থেকে প্রগতি সরণি পর্যন্ত সড়কটির নাম ‘ফেলানী এভিনিউ’ হিসেবে নামফলক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। এ সময় স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদী, পূর্ত সচিব মো. নজরুল ইসলাম, রাজউক চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মো. রিয়াজুল ইসলাম ও ডিএনসিসি প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজসহ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। নামফলক উন্মোচন শেষে দোয়া পরিচালনা করেন ডিএনসিসি মসজিদের ইমাম মাওলানা আনসার উল করিম। উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেন, একই সঙ্গে বিশ্ব বিবেকের কাছে তুলে ধরতেই আজকের এই উদ্যোগ। বাংলাদেশের সীমান্তে সীমান্ত হত্যার মতো একটি জঘন্য পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বর্তমান সরকার সব ধরনের সীমান্ত হত্যা বন্ধ করতে চায় বলেই বিজয় দিবসের দিনে ফেলানীর নামে এই সড়কের উদ্বোধন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদী বলেন, ফেলানী হত্যাকাণ্ড নিছক একটি হত্যাকাণ্ড নয়, এটি একটি সুস্পষ্ট মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা।