গত ছয় মাসের রাজস্ব আদায়ের চলমান ধারা পর্যবেক্ষণ করে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) ধারণা করছে, চলতি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে সরকারের রাজস্ব ঘাটতি হতে পারে ৮২ হাজার কোটি টাকা।
শনিবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে সিপিডি’র কার্যালয়ে ‘২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে সিপিডির সুপারিশ’ শীর্ষক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন এসব কথা বলেন।
ফাহমিদা খাতুন বলেন, এমন একটা সময় বাজেট প্রণয়ন হতে যাচ্ছে যখন সামষ্টিক অর্থনীতি নেতিবাচক ধারায় রয়েছে। দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ব্যাংকের তারল্য সংকট, বাজেট বাস্তবায়নে নিম্ন ও স্লথ গতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিম্নগামী এবং রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স নিচের দিকে। এই প্রেক্ষিতে আমাদের সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা যেটা আমরা দেখতে চাই বিশেষ করে উচ্চ প্রবৃদ্ধি ও নিম্ন মূল্যস্ফীতিসহ অন্যান্য সূচক যেখানে থাকার কথা সেটা নেই বরং চরমভাবে চাপের মুখে পড়েছে। এর কারণ আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ দুটোই।
তিনি বলেন, আগামী ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের মূল বাজেটই হবে- কীভাবে সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা যায়। ওই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করে কীভাবে অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করা যায়, সেটা বড় বিষয়। যেমন, গত ছয় মাসের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৬.৩ শতাংশ। কিন্তু ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রাপ্তি মাত্র ১৩.৯ শতাংশ। আমরা যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে চাই, তাহলে বাকি ৬ মাসে রাজস্ব আহরণে ৫৪.৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হবে, যা অত্যন্ত কঠিন বিষয়। বিগত দিনের ধারা লক্ষ্য করলে দেখা যায়, রাজস্ব ঘাটতি আগের মতোই চলমান থাকবে যার পরিমাণ ৮২ হাজার কোটি টাকা হবে বলে মনে করছি।
অন্যদিকে সরকারি ব্যয়ে সংযম লক্ষ্য করছি।
ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যয় ২৫.৫ শতাংশ দেখতে পাচ্ছি। গত বছর ২৭ শতাংশের মতো ছিল। যেখান থেকে আরও কমেছে। নিজস্ব আর্থিক ব্যবস্থা ও আইএমএফের পরামর্শে ব্যয় কমেছে। ওই সময় বাজেট ঘাটতি বেশ কমেছে, বাজেট ঘাটতি ৭ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা। যেখানে গত অর্থবছরের এই সময়ে ঘাটতি ছিল ২০ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। আর বাজেট ঘাটতি পূরণে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে ঋণ নেয়া হয়েছে। এর ফলে ব্যক্তিখাতে ঋণ প্রবাহ কমে গেছে।
মূল্যস্ফীতি প্রসঙ্গে ফাহমিদা বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা দেখতে পাচ্ছি মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের বেশি ছিল। যেখানে খাদ্য মূল্যস্ফীতি শহর ও গ্রামে দুটো জায়গায় বেশি ছিল। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংকের পদক্ষেপ খুব বেশি প্রভাব ফেলতে পারেনি।
সিপিডির সুপারিশের মধ্যে রয়েছে, অর্থপাচার রোধে এনবিআরকে শক্তিশালী ভূমিকা নেওয়া, অপ্রদর্শিত আয় বৈধ করার সুযোগ বন্ধ করা, করদাতাদের হয়রানি বন্ধ করা, ইএফডি যন্ত্র সহজলভ্য করা, ওষুধের ওপর ভ্যাট কমানো। এছাড়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, ইংরেজি মাধ্যম স্কুল ও আমদানি করা বই এসবে শুল্ক, ভ্যাট ও কর কমানোর প্রস্তাব দিয়েছে সিপিডি।
প্রস্তাবনায় সিপিডি বলছে, ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট এমন সময়ে উপস্থাপন করা হবে যখন দেশ নানাবিধ অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। সিপিডির মতে, সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনাই নীতিনির্ধারকদের প্রধান চ্যালেঞ্জ হবে। বৈদেশিক মুদ্রার হারকে স্থিতিশীল করা মূল্যস্ফীতি কমানোর দিকে নজর দিতে হবে। জিডিপি প্রবৃদ্ধির পরিবর্তে দুর্বল ও সুবিধাবঞ্চিত গোষ্ঠীর জন্য সুযোগ সুবিধা দিতে হবে।