খবর ৭১: ভারতের জায়ান্ট আদানি গ্রুপের অঙ্গসংস্থা আদানি পাওয়ারের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকার কয়েক বছর আগে যে বিদ্যুৎ ক্রয় সংক্রান্ত চুক্তিটি করেছে সেটি সংশোধন করতে চায় বাংলাদেশ। বাংলাদেশ মনে করছে, ওই চুক্তিতে কয়লার দাম অনেক বেশি চাওয়া হয়েছে। তাই খরচ কমাতে তৎপরতা শুরু করেছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)। তবে বাংলাদেশের সঙ্গে আদানি গোষ্ঠীর বিদ্যুৎ কেনাবেচার সঙ্গে ভারত সরকারের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই বলে জানিয়েছে দিল্লি।
শুক্রবার ভারতের সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, ‘ঝাড়খণ্ডের গোড্ডায় নির্মিত ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য ২০১৭ সালে আদানি পাওয়ারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয় বিপিডিবি। চুক্তি অনুযায়ী, বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে ব্যবহৃত কয়লার দাম পরিশোধ করবে বাংলাদেশ। তবে বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ এখন মনে করছে, চুক্তিতে কয়লার দাম অনেক বেশি উল্লেখ করা হয়েছে।’
বাংলাদেশি এক কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, ‘আমাদের দৃষ্টিকোণ থেকে কয়লার উল্লেখিত দাম (প্রতি মেট্রিক টন ৪০০ মার্কিন ডলার) অত্যাধিক। এটি প্রতি মেট্রিক টন ২৫০ ডলারের নিচে হওয়া উচিত, যেমনটি আমরা আমাদের অন্য তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে আমদানি করা কয়লার জন্য দিচ্ছি। আমরা চুক্তি পুনর্বিবেচনার জন্য ভারতীয় কোম্পানিটির সঙ্গে যোগাযোগ করেছি।’
এদিকে গত বৃহম্পতিবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে আদানি গোষ্ঠীর বিদ্যুৎ কেনাবেচার সঙ্গে ভারত সরকারের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। বাংলাদেশ ওই গোষ্ঠীর বিদ্যুতের দাম কমাতে তৎপর—এমন কোনো খবরও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জানা নেই।
অরিন্দম বাগচি জানান, চুক্তি নিয়ে সাম্প্রতিক সমস্যাগুলো ভারত-বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে কোনো প্রভাব ফেলবে না।
ডেকান হেরাল্ডের খবরে জানানো হয়, এদিন নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের কাছে আদানি পাওয়ারের কয়লার দাম নিয়ে বাংলাদেশের অভিযোগের বিষয়ে ভারতের অবস্থান কী জানতে চেয়েছিলেন সাংবাদিকরা।
জবাবে অরিন্দম বাগচি বলেন, ‘আপনি একটি সার্বভৌম সরকার এবং একটি ভারতীয় কোম্পানির মধ্যকার চুক্তির কথা বলছেন। আমার মনে হয় না, আমরা (ভারত সরকার) এতে জড়িত।’
অরিন্দম বাগচি আরও বলেন, ‘প্রতিবেশী প্রথম নীতি অনুযায়ী ভারত তার প্রতিবেশীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক সম্পর্ক ও যোগাযোগ স্থাপনে আগ্রহী, যা উন্নয়নের জন্য সহায়ক। ভারত চায় তার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সুফল প্রতিবেশীদেরও সমৃদ্ধ করুক। দুই দেশের মধ্যে সব ধরনের যোগাযোগ, বিদ্যুৎ ও জলসম্পদ ক্ষেত্রে এত সহযোগিতার লক্ষ্যও তা।’
ভারতীয় এ কর্মকর্তা বলেন, ‘এটি বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের ‘প্রতিবেশী প্রথম’ কৌশলের অংশ। এর অধীনে আমরা অবশ্যই বৃহত্তর অর্থনৈতিক আন্তঃসংযোগ, প্রকল্পগুলোর একীকরণ, বিনিয়োগ দেখতে চাই। তবে যদি একটি নির্দিষ্ট প্রকল্প আর্থিক বা অর্থনৈতিক কারণে কাজ না করে, আমার মনে হয় না সেটি সম্পর্কের প্রতিফলন হবে।’
অরিন্দম আরও বলেন, ‘অর্থনৈতিক কারণে কোনো বিশেষ প্রকল্প সুষ্ঠুভাবে হতে না পারা দুই দেশের সম্পর্কের প্রতিফলন হিসেবে গ্রাহ্য হতে পারে না। ব্যবসা–বাণিজ্য ও যোগাযোগ বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে দুই দেশকে আরও ঘনিষ্ঠ করার কাজ ভারত জারি রাখবে।’