কক্সবাজারে অস্ট্রেলিয়ান পর্যটককে ধর্ষণচেষ্টা, মারমেইড পরিচালকের ভাইসহ আটক-৩

0
608
কক্সবাজারে অস্ট্রেলিয়ান পর্যটককে ধর্ষণচেষ্টা, মারমেইড পরিচালকের ভাইসহ আটক-৩

খবর৭১ঃ কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভ সড়কের হিমছড়ি মারমেইড বিচ রিসোর্ট লাগোয়া ‘গুড ভাইব কটেজে’ নিরাপত্তাকর্মীর সহযোগিতায় অস্ট্রেলিয়ান এক নারী পর্যটককে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় রামু থানায় মামলা করেছে পুলিশ। মামলায় মারমেইড ইকু ও বিচ রিসোর্টের পরিচালক আনিসুল হক সোহাগের ভাই শামিমুল হক স্যাম ও এজাহারভূক্ত অপরদুজনসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মামলাটি নথিভূক্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইকবাল হোসাইন।

গত রবিবার (১৫ ডিসেম্বর) রাতে ওই নারী জরুরী সেবা নম্বর ৯৯৯-এ কল করে সাহায্য চাইলে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে। শামিমুল হক স্যামের নিয়ন্ত্রণাধীন সরকারি অনুমোদনহীন ‘গুড ভাইব কটেজে’ এ নারী রাত্রিযাপনের জন্য উঠেছিলেন। তাই তাকে সন্দেহজনক আসামি হিসেবে আটক করা হয়েছে বলে দাবি করেছে পুলিশ।

গ্রেফতারকৃতরা হলো রামু উপজেলার পেঁচারদ্বীপ এলাকার কলিম উল্লাহ ছেলে আনচার উল্লাহ (২৪) ও আবদুল মুনাফের ছেলে আব্দুল গফুর (২০)। সন্দেহজনক আটক শামিমুল হক স্যাম মারমেইড ইকু ও বিচ রিসোর্টের পরিচালক আনিসুল ইসলাম সোহাগের ভাই। মামলায় ঘটনার সঙ্গে জড়িত হিসেবে বেলাল উদ্দিন (২৫) নামে আরও একজনকে নথিভূক্ত করা হয়েছে। সে পলাতক।

এ ঘটনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইকবাল হোসাইন জানান, অস্ট্রেলিয়ান ওই নারী পর্যটক অন অ্যারাইভাল ভিসায় গত ৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশে ঘুরতে আসেন। শনিবার অনলাইনে বুকিং দিয়ে রবিবার (১৫ ডিসেম্বর) তিনি মারমেইড বিচ রিসোর্ট সংলগ্ন ‘গুড ভাইব কটেজে’ ওঠেন। মাঝরাতে তার কক্ষে অনুপ্রবেশ করে দুই যুবক। যুবকরা জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি মুখ চেপে ধরে তাকে ধর্ষণের চেষ্টা চালায়। ধর্ষকদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি করে নারী পর্যটক কটেজ থেকে বের হয়ে চিৎকার শুরু করে। ওই সময় ধর্ষণের চেষ্টাকারিরা পালিয়ে যায়। ধস্তাধস্তিতে অস্ট্রেলিয়ান নারী আহত হন। পরে ওই পর্যটক জরুরি সেবা নাম্বার ৯৯৯ এ ফোন করে পুলিশের সহায়তা চান।

তিনি জানান, বিষয়টি জেনেই রামু থানার পুলিশ দ্রুত গিয়ে তাকে উদ্ধার করে কক্সবাজারে নিয়ে এসে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়। এ সময় কটেজের মালিক শামীমের এক ভাই ও নিরাপত্তাকর্মীসহ ৫ জনকেক আটক করে পুলিশ। পরে পুলিশ জানতে পারে, কটেজের নিরাপত্তাকর্মী নিজেই যুবক গফুর ও বেলালকে খবর দেয়। তারা সেখানে চুরি করার জন্য প্রবেশ করেছিল। এরপর ওই নারীর মুখ চেপে ধরে ধর্ষণের চেষ্টা করে। রাতেই পুলিশ গফুরকে আটক করেছে।

তিনি আরও জানান, এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে রামু থানায় মামলা করেছে। মামলায় তিনজনকে প্রত্যক্ষ এবং আরও বেশ কয়েকজনকে পরোক্ষ আসামি করা হয়েছে। মামলায় এজাহারভূক্ত ২ জন এবং সন্দিগ্ধ হিসেবে কটেজ মালিক স্যামকে আটক করা হয়। পলাতকদেরও ধরার চেষ্টা চলছে। ঘটনাটি যেহেতু পর্যটন সংশ্লিষ্ট, তাই অতিব গুরুত্ব সহকারে তদারক করা হচ্ছে। অস্ট্রেলিয়ান ওই নারী পর্যটকের ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত ভিসার মেয়াদ রয়েছে। মঙ্গলবার তিনি ঢাকায় ফিরে গেছেন বলে জেনেছি।

স্থানীয় সূত্র জানান, মেরিন ড্রাইভ সড়কের রামু হিমছড়ির মারমেইড ইকু রিসোর্ট হিসেবে দেশ ছাড়িয়ে সরাবিশ্বে পরিচিতি পাওয়ার পর এর আশপাশে বেশ কয়েকটি অনুমোদনহীন কটেজ গড়ে তোলেন মারমেইড পরিচালক আনিসুল হক সোহাগের ভাই শামিমুল হক স্যাম ও শাহীন। এগুলোকে মারমেইড বিচ রিসোর্টের অংশ হিসেবেই চেনেন পর্যটক এবং স্থানীয়রা। কাগজে কলমে এগুলো মারমেইডের অংশ না হলেও মারমেইড দ্বারা এসব পরিচালিত হতো। এসব কটেজের খাবার থেকে শুরু করে সবকিছু সরবরাহ হতো মারমেইড থেকে। ফলে পর্যটকদের কাছে এসব কটেজ মারমেইড হিসেবেই পরিচিত।

কিন্তু এসব কটেজের সঙ্গে মারমেইডের কোনও যোগসূত্র নেই বলে দাবি করেছেন মারমেইড বিচ রিসোর্টের কর্মকর্মা ইয়াছির আরাফাত রিশাদ। তিনি বলেন, ‘যে কেউ খাবার পারসেল চাইলে আমরা বিক্রি করি। এসব হোটেলে অবস্থানকারীদের চাহিদা মতো এখান থেকে খাবার নেওয়া হতো বলেই হয়তো এসব কটেজকে মারমেইডের অংশ বলে গণনা করা হচ্ছে।’

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, ‘পর্যটন এলাকায় আবাসন কিংবা খাবারের কোনও প্রতিষ্ঠান করতে গেলে জেলা প্রশাসন থেকে সনদ নেওয়া বাধ্যতামূলক। অস্ট্রেলিয়ান নারী পর্যটক অবস্থান করা ‘গুড ভাইব কটেজে’ নামে কোন প্রতিষ্ঠান আমরা অনুমোদন দিইনি।মারমেইড রিসোর্টের পরিচালক আনিসুল হক সোহাগের নেওয়া অনুমোদন কাগজের অনুবলে হয়তো তার ভাইয়েরা ভিন্ননামে কটেজ করে অবৈধভাবে ভাড়া দিয়ে আসছিল। বুধবার থেকে এসব বিষয়ে অভিযানে নামবে জেলা প্রশাসন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here