সরকারি এক অনুষ্ঠানে সার্টিফিকেট গ্রহণ করতে আসা এক মুসলিম নারী চিকিৎসকের হিজাব টেনে খুলে দেওয়ার ঘটনায় ভারতের বিহার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নিতিশ কুমারকে ঘিরে দেশজুড়ে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়েছে।
সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) পাটনায় আয়োজিত একটি সরকারি অনুষ্ঠানে এ ঘটনা ঘটে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, আয়ুষ (আয়ুর্বেদ, যোগ, ন্যাচারোপ্যাথি, ইউনানি, সিদ্ধা ও হোমিওপ্যাথি) বিভাগের এক নারী চিকিৎসকের হাতে নিয়োগপত্র তুলে দিচ্ছিলেন নিতিশ কুমার। এ সময় তিনি ওই নারী চিকিৎসককে ইশারায় হিজাব সরাতে বলেন। তিনি কিছু বুঝে ওঠার আগেই নিতিশ কুমার নিজেই হাত বাড়িয়ে তার হিজাব টেনে খুলে দেন, ফলে তার মুখ ও থুতনি দৃশ্যমান হয়ে পড়ে।
ভিডিওতে মঞ্চের পেছনে উপস্থিত কয়েকজনকে হাসতে দেখা যায়। একই সঙ্গে বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী সম্রাট চৌধুরীকেও পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করতে দেখা গেছে।
সরকারি অনুষ্ঠানে একজন নারীর ব্যক্তিগত ও ধর্মীয় পোশাকের প্রতি এমন আচরণে মুখ্যমন্ত্রীর মানসিক অবস্থা নিয়েও প্রকাশ্যে প্রশ্ন তুলেছে বিরোধী দলগুলো। ঘটনাটিকে ‘জঘন্য’ ও ‘লজ্জাজনক’ আখ্যা দিয়ে তার পদত্যাগের দাবি জানানো হয়েছে।
বিরোধীদের অভিযোগ, নারীর ক্ষমতায়নের কথা বলা হলেও বাস্তবে পর্দাশীল মুসলিম নারীর হিজাব প্রকাশ্যে খুলে দেওয়া নারীর মর্যাদা ও নিরাপত্তার প্রতি চরম অবহেলারই বহিঃপ্রকাশ। কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রশ্ন তুলেছেন—রাজ্যের সর্বোচ্চ পদে থাকা একজন ব্যক্তি প্রকাশ্যে এমন আচরণ করলে সাধারণ নারীদের নিরাপত্তা কোথায় দাঁড়ায়?
এটাই প্রথম নয়, এর আগেও নিতিশ কুমার একাধিকবার বিতর্কে জড়িয়েছেন। গত নভেম্বরে বিধানসভা নির্বাচনের আগে এক জনসভায় এক নারীর সঙ্গে তার আচরণ নিয়ে ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল তাকে। সে সময় দলের এক সংসদ সদস্য তাকে থামানোর চেষ্টা করলে তিনি উল্টো তাকে ধমক দেন।
সাম্প্রতিক এই ঘটনায় নতুন করে রাজনৈতিক বিতর্কের পাশাপাশি নারী মর্যাদা, ধর্মীয় স্বাধীনতা ও ক্ষমতার আচরণ নিয়ে দেশজুড়ে আলোচনা আরও তীব্র হয়েছে।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে পদোন্নতিতে অনিয়ম ও অসঙ্গতির অভিযোগে দায়ের করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে মহামান্য হাইকোর্ট রুল জারি করেছেন। একই সঙ্গে আদালত নির্দেশ দিয়েছেন, রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত পদোন্নতি সংক্রান্ত যেকোনো কার্যক্রম অবৈধ হিসেবে গণ্য হবে। দেশের বৃহত্তম রাষ্ট্রায়ত্ত বিশেষায়িত ব্যাংকটির ১০ম গ্রেডের পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন ধরে ন্যায্য পদোন্নতির দাবিতে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করে আসছিলেন। দাবি আদায়ে বারবার কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন ও মানববন্ধন করেও সাড়া না পেয়ে তারা শেষ পর্যন্ত আদালতের দ্বারস্থ হন। সূত্র জানায়, পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তারা গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর (শনিবার) ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে ছুটির দিনে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন করেন, যাতে গ্রাহকসেবা ব্যাহত না হয়। তাদের দাবির প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করে তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শওকত আলী খান দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন। তবে তিন মাস পার হলেও প্রতিশ্রুত আশ্বাস বাস্তবায়িত না হওয়ায় তারা পুনরায় ওই বছরের ৩০ নভেম্বর মানববন্ধনের আয়োজন করেন। এতে সারা দেশের শাখা থেকে ১২০০–এর বেশি কর্মকর্তা অংশ নেন। পরদিন (১ ডিসেম্বর) বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক সঞ্চিয়া বিনতে আলী পদোন্নতির বিষয়ে মৌখিক আশ্বাস দিলে আন্দোলনকারীরা কর্মস্থলে ফিরে যান। পরে কর্মকর্তাদের জানানো হয়, সুপারনিউমারারি পদ্ধতিতে মার্চের মধ্যে পদোন্নতির বিষয়টি সমাধান করা হবে। কিন্তু এখনো তা বাস্তবায়ন হয়নি। অন্যদিকে অগ্রণী, জনতা, রূপালী ও সোনালী ব্যাংকে ইতোমধ্যে মোট ৭,৩১৬ কর্মকর্তা এই পদ্ধতিতে পদোন্নতি পেয়েছেন, যা অর্থ মন্ত্রণালয়ও অনুমোদন করেছে। পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তাদের অভিযোগ, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের এই উদাসীনতা তাদের প্রতি কর্মীবান্ধবহীন মনোভাব ও কর্তৃপক্ষের অনীহারই প্রকাশ। তারা বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট স্বৈরাচার পতনের পর অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পরিবর্তন এলেও কৃষি ব্যাংকে আগের প্রশাসনিক কাঠামো অপরিবর্তিত রয়ে গেছে, যা ন্যায্য দাবি আদায়ের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের অভিযোগ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, মহাব্যবস্থাপক ও মানবসম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক জাহিদ হোসেন একাধিক বৈঠকে আশ্বাস দিলেও বাস্তব পদক্ষেপ না নিয়ে বরং আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী কর্মকর্তাদের হয়রানি ও নিপীড়ন করা হয়েছে। ফলে তারা বাধ্য হয়ে এ বছরের চলতি মাসে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন (রিট মামলা নং: ১৬৪২৮/২০২৫, মো. পনির হোসেন গং বনাম রাষ্ট্র ও অন্যান্য)। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৬ অক্টোবর হাইকোর্ট রুল জারি করে জানতে চেয়েছেন, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের পদোন্নতিতে দেখা দেওয়া অনিয়ম ও অসঙ্গতি কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না। পাশাপাশি আদালত নির্দেশ দিয়েছেন, রুল নিষ্পত্তির আগে কোনো পদোন্নতি কার্যক্রম শুরু করা হলে তা অবৈধ ও আদালত–অবমাননার শামিল হবে। রিটে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক পদোন্নতিতে ১০৭৩ জন কর্মকর্তা (ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা থেকে মূখ্য কর্মকর্তা) এবং ৫১ জন মূখ্য কর্মকর্তা (ঊর্ধ্বতন মূখ্য কর্মকর্তা পদে) অনিয়মের মাধ্যমে পদোন্নতি পেয়েছেন। এদিকে জানা গেছে, পূর্বে দুর্নীতির অভিযোগে আলোচিত মানবসম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক জাহিদ হোসেন এখনো পদোন্নতি কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তারা বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করে যদি পুনরায় অনিয়মের পথে যাওয়া হয়, তাহলে তা আদালতের অবমাননা ও রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল হবে। তারা আশা করছেন, এ বিষয়ে দ্রুত ন্যায়বিচার ও সমাধান মিলবে।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে সাম্প্রতিক সময়ে পদোন্নতি ও প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। পদোন্নতিবঞ্চিত কর্মকর্তাদের একটি অরাজনৈতিক সংগঠন ‘বৈষম্য বিরোধী অফিসার্স ফোরাম’ এর কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক মো. পনির হোসেন ও সদস্য সচিব এরশাদ হোসেনকে শৃঙ্খলাজনিত মোকদ্দমা এবং মুখ্য সংগঠক মো. আরিফ হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া মুখপাত্র তানভীর আহমদকে দুর্গম অঞ্চলে বদলি করা হয় এবং সারাদেশের দুই শতাধিক কর্মকর্তাকে ব্যাখ্যা তলব করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে যে, মো. আরিফ হোসেনকে বরখাস্ত করার নথিতে তাকে ‘ব্যাংক ও রাষ্ট্রবিরোধী’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে, অথচ ব্যাখ্যা তলবপত্রে বলা হয় তিনি ‘রাজনৈতিক কাজে তহবিল সংগ্রহ করেছেন।’ ফরেনসিক বিশ্লেষণ অনুযায়ী, তার ব্যাখ্যাতলবের জবাব প্রদানের পরও বরখাস্ত চিঠি আগেই তৈরি করা হয়েছিল, যা অনেক কর্মকর্তার মধ্যে প্রশ্ন তোলেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মহাব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, সরকারি কর্মকর্তারা যদি সংবিধান বা আইন অনুযায়ী দায়িত্ব না পালন করেন, হাইকোর্ট তাদের ক্ষমতা প্রয়োগ বা অপব্যবহার রোধের জন্য আদেশ দিতে পারে। অন্য একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, এ সিদ্ধান্তের পেছনে ব্যাংকের ফ্যাসিস্ট সরকারের সহযোগী একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা বলছেন, পদোন্নতি ও ন্যায়বিচারের জন্য আন্দোলন এবং আইনি লড়াই চলবে। ভুক্তভোগী কর্মকর্তারা শিগগিরই বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, অর্থ উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার কাছে এ বিষয়ে প্রতিকার চাইবেন। এ ব্যাপারে মো. আরিফ হোসেন ও পনির হোসেনের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে একটি ভুয়া কর্মচারী ইউনিয়নের সভায় জোরপূর্বক কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণ করানোর অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন ব্যাংকের ভিজিল্যান্স স্কোয়াডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা তাসলিমা আক্তার লিনা ও তার স্বামী মিরাজ হোসেন। গত ২০ অক্টোবর প্রধান কার্যালয়ের অডিটোরিয়ামে ‘বিশেষ সাধারণ সভা’ নামে একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের (সিবিএ) নামে তারা এটির আয়োজন করে। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির সহ-শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির খান ও উদ্বোধক হিসেবে জাতীয়তাবাদী শ্রমিকদলের সভাপতি আনোয়ার হোসাইনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তবে তারা প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে ভুয়া নেতাদের কার্যকলাপ সম্পর্কে অবগত হয়ে অনুষ্ঠানটি বয়কট করেন। অভিযোগ রয়েছে, তাসলিমা আক্তার লিনা হেড অফিসের বিভিন্ন দপ্তরের নারী কর্মকর্তা এবং তার স্বামী মিরাজ হোসেন পুরুষ কর্মকর্তাদের ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে ওই সভায় অংশগ্রহণে বাধ্য করেন। অংশগ্রহণে অস্বীকৃতি জানালে বদলি বা পদোন্নতি রোধের হুমকিও দেওয়া হয় বলে জানা গেছে। হেড অফিসের কয়েকজন কর্মকর্তার ভাষ্য অনুযায়ী, লিনা তার স্বামীর প্রভাব খাটিয়ে নারী সহকর্মীদের ওপর দীর্ঘদিন ধরে অনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে আসছেন। কেউ আপত্তি জানালে মিরাজের সহযোগীরা এসে অশালীন আচরণ ও গালিগালাজ করে থাকে বলেও অভিযোগ ওঠে। এ ছাড়া, লিনা ‘উইমেনস ফোরাম’ নামে একটি সংগঠন গড়ে মাসিক চাঁদা সংগ্রহ করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। তার এই কর্মকাণ্ডে অনেক নারী কর্মকর্তা বিব্রতবোধ করলেও চাকরির স্বার্থে নীরব থাকছেন। অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা গেছে, মানবসম্পদ বিভাগের ডিজিএম জাহিদ হোসেনের প্রত্যক্ষ সহায়তায় তাসলিমা আক্তার লিনা ও তার স্বামী মিরাজ ব্যাংকের অভ্যন্তরে প্রভাব বিস্তার করছেন। এ ঘটনায় নারী কর্মকর্তাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তারা কর্তৃপক্ষের কাছে তাসলিমা আক্তার লিনা ও মিরাজ হোসেনকে অবাঞ্ছিত ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন। এ বিষয়ে জানতে তাসলিমা আক্তার লিনার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি নিয়ম অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করছি, অভিযোগগুলো ভিত্তিহীন। অন্যদিকে, মিরাজ হোসেনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে সংঘটিত এজাহারভুক্ত হত্যা মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি ফয়েজ উদ্দিন আহমেদ ও মিরাজ হোসেন পলাতক রয়েছেন। ব্যাংক প্রশাসন বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। খুনের শিকার কৃষি ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী আব্দুল হালিম ছিলেন কৃষি ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের (সিবিএ) সভাপতি। তার গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলায়। পরিবারের ভাষ্য অনুযায়ী, তিনি স্থানীয়ভাবে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। মামলার বিবরণ অনুযায়ী, ১ নম্বর আসামি হিসেবে অবসরপ্রাপ্ত পিয়ন ফয়েজ উদ্দিন আহমেদ এবং ২ নম্বর আসামি মিরাজ হোসেনের নাম রয়েছে। তারা বর্তমানে নিজেদের সিবিএ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দাবি করে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে প্রভাব বিস্তার করছেন। ব্যাংক সূত্রে গেছে, তারা চাঁদাবাজি, ঘুষ আদায় ও নানা অনিয়মের সঙ্গে জড়িত। সূত্র জানায়, ব্যাংকের ভেতরে একটি সিন্ডিকেটের প্রভাবেই এসব আসামিরা এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছেন। এই সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে আছেন মানবসম্পদ বিভাগের ডিজিএম জাহিদ হোসেন। এতে আরও যুক্ত রয়েছেন ডিজিএম সৈয়দ লিয়াকত হোসেন, হাবিব উন নবী, ডিএমডি খালেকুজ্জামান জুয়েল ও ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সঞ্চিয়া বিনতে আলী। গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর রাতে মতিঝিলের বিমান অফিসের সামনে আব্দুল হালিমের মৃত্যু হয়। পরদিন সকালে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠায়। মতিঝিল থানার উপ-পরিদর্শক সজীব কুমার সিং সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে জানান, পুরনো সহকর্মীদের সঙ্গে বিরোধের জেরে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং রাত ১টা ৪০ মিনিটে হাসপাতালে মারা যান। হালিমের ছেলে ফয়সাল বলেন, তার বাবা ২০১৪ সাল থেকে কৃষি ব্যাংক সিবিএর সভাপতি ছিলেন এবং বোয়ালখালী উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করতেন। ইউনিয়নের নেতৃত্ব ও পদ নিয়ে সহকর্মীদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। এ নিয়ে গত নভেম্বরেই মতিঝিল থানায় একটি জিডি (নং ০৫/১১/২০২৪ - ৩৩৫) করেছিলেন তার বাবা। তিনি আরও বলেন, বুধবার রাতে আমার বাবাকে তার অফিসের সহকর্মীরা মারধর করে হত্যা করেছে। সিবিএর বর্তমান সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জানান, ২০১৪ সালে আমরা নির্বাচিত হই। এরপর আর কোনো নির্বাচন হয়নি। কিন্তু গত ৫ আগস্ট বিনা নির্বাচনে নতুন কমিটি ঘোষণা করে আমাদের অফিস দখল করে নেয় ফয়েজ ও মিরাজ। এ নিয়ে মামলা চলছে। মামলার তথ্য অনুযায়ী, আসামিরা অস্থায়ী জামিনে ছিলেন। সম্প্রতি তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। এছাড়া আরও কয়েকজন পলাতক রয়েছেন—যাদের মধ্যে আছেন ড্রাইভার সাইফুল, শাহেদ, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর মেহেদী ও অবসরপ্রাপ্ত ক্লিনার সিরাজ। এদিকে, মামলার ২ নম্বর আসামি মিরাজ হোসেন নৈমিত্তিক ছুটির আবেদন করে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। যদিও ওয়ারেন্টভুক্ত আসামির নৈমিত্তিক ছুটি পাওয়ার কোনো এখতিয়ার নেই। মানবসম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক এ বিষয়ে বলেন, তিনি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন এবং নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। কিন্তু স্থানীয় মুখ্য কার্যালয়ের প্রধান মহাব্যবস্থাপক জানান, তিনি কোনো মন্তব্য করতে চান না। কারণ ব্যবস্থাপনা পরিচালক মন্তব্য না করার নির্দেশ দিয়েছেন। ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। অভ্যন্তরীণ এই পরিস্থিতিতে কৃষি ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
অভিনব কায়দায় চাঁদাবাজিতে নেমেছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের একদল ভুয়া সিবিএ নেতা। অভিযোগ উঠেছে, তারা বিশেষ সাধারণ সভা আয়োজনের নামে সারা দেশের শাখাগুলো থেকে কোটি টাকারও বেশি চাঁদা আদায় করছে। তথ্যসূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন (সিবিএ), রেজি. নং বি-৯৮৫-এর নাম ব্যবহার করে আগামী ২০ অক্টোবর ‘বিশেষ সাধারণ সভা’ শিরোনামে একটি অনুষ্ঠান আয়োজনের ঘোষণা দেয় একদল ভুয়া নেতা। এ উপলক্ষে তারা ব্যাংকের প্রায় ১ হাজার ২৫০টি ইউনিট থেকে ১০-২০ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করে ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার উঠে। গোপন সূত্র জানায়, তাদের নিয়ন্ত্রিত লোকজন শাখা পর্যায়ে বদলি ও পদোন্নতির ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন উপ-মহাব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, তারা এসব কর্মকাণ্ডে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করলেও এ সিন্ডিকেটের ভয়ে কিছু বলার সাহস পাচ্ছেন না। এ ঘটনায় ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগের ডিজিএম জাহিদ হোসেনের প্রত্যক্ষ মদদ ও আস্কারায় চাঁদাবাজি চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রাপ্ত আমন্ত্রণপত্রে দেখা গেছে, ভুয়া সভাপতি দাবিকারী কৃষি ব্যাংকের সাবেক পিয়ন ফয়েজ আহমেদ ও ভুয়া সাধারণ সম্পাদক মিরাজ হোসেন স্বাক্ষরিত পত্রে প্রধান অতিথি হিসেবে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির, উদ্বোধক হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন এবং প্রধান বক্তা হিসেবে সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম খান নাসিমকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। কয়েকজন মহাব্যবস্থাপক জানান, তারা বিভিন্ন শাখা থেকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ পেয়েছেন এবং বিষয়টি ব্যবস্থাপনা পরিচালক অবগত আছেন বলে জানানো হয়েছে। অনুষ্ঠানটি কৃষি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত হওয়ায় তারা কার্যত কিছু করতে পারছেন না। অনুসন্ধানে জানা যায়, এর আগেও একই সিন্ডিকেট শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে প্রায় ৫০ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করেছিল। সেই টাকা তারা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, চাঁদাবাজ ও তাদের মদদদাতাদের সঙ্গে দলের কোনো সম্পর্ক নেই। তারা বহিরাগত অনুপ্রবেশকারী। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এসব ভুয়া সিবিএ নেতাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও অবাঞ্ছিত ঘোষণা দাবি করেছেন। তাদের আশঙ্কা, এসব কর্মকাণ্ডের নেতিবাচক প্রভাব আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে পড়তে পারে।
রাজশাহীতে এক সভায় বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, দ্বিপাক্ষিক সমন্বয় ও বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্তই খরা-প্রবণ বরেন্দ্র অঞ্চলে পানি ব্যবস্থাপনা ও কৃষি উৎপাদনের টেকসই সমাধানের গুরুত্বপূর্ণ উপায় হতে পারে। তারা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব পানি-সংকটাপন্ন এলাকার মানুষের জীবনযাপন ও জীবিকাকে মারাত্মক হুমকির মুখে ফেলেছে। তাই পরিস্থিতি মোকাবিলায় সমন্বিত প্রচেষ্টার বিকল্প নেই। গতকাল সোমবার বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে পানি সম্পদ পরিকল্পনা সংস্থা (ওয়ারপো) ও বিএমডিএ কর্মকর্তাদের মধ্যে অনুষ্ঠিত এক সভায় এসব কথা বলা হয়। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব খোন্দকার আজিম আহমেদ, ওয়ারপো মহাপরিচালক মোহাম্মদ লুৎফর রহমান সভায় রিসোর্স পারসন হিসেবে বক্তব্য রাখেন। এতে বিএমডিএ নির্বাহী পরিচালক তরিকুল আলম সভাপতিত্ব করেন। বিএমডিএ অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ড. আবুল কাসেম এবং তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ইকবাল হোসেন, নাজিরুল ইসলাম ও আব্দুল লতিফও বক্তব্য দেন। ওয়ারপো মহাপরিচালক মোহাম্মদ লুৎফর রহমান বলেন, ওয়ারপো’র লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো সমন্বিত পরিকল্পনা ও টেকসই ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা। বরেন্দ্র অঞ্চলের পানি সংকট মোকাবিলায় বিভাগগুলোর মধ্যে আরো ভালো সমন্বয় প্রয়োজন। সভায় জানানো হয়, সম্প্রতি প্রকাশিত এক গেজেটে রাজশাহী, নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ২৫টি উপজেলার ৪ হাজার ৯১১টি গ্রামকে পানি-সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। জাতীয় পানি সম্পদ কাউন্সিলের (এনডব্লিউআরসি) ১৮তম সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এই অঞ্চলকে ১০ বছরের জন্য পানি-সংকটাপন্ন ঘোষণা করা হয়েছে। পানীয় জল ছাড়া অন্য কোনো উদ্দেশ্যে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। গেজেট অনুযায়ী, নিষিদ্ধ এলাকায় সেচ ও অন্যান্য শিল্পকারখানার কাজে আর উত্তোলিত পানি ব্যবহার করা যাবে না। বিএমডিএ নির্বাহী পরিচালক তরিকুল আলম তার বক্তব্যে বলেন, বিএমডিএর বহুমুখী অবদান কৃষি উৎপাদন, পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা এবং সামগ্রিক সামাজিক-অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি এনেছে। রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ১৬ জেলার ১৩৫টি উপজেলায় কৃষি উন্নয়ন ও পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন উদ্যোগের মাধ্যমে বিএমডিএ উল্লেখযোগ্য সামাজিক-অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধন করেছে। বিএমডিএর কার্যক্রম অঞ্চলটিকে আরো উৎপাদনশীল কৃষি এলাকায় রূপান্তর করতে এবং মানুষের জীবনমান উন্নত করতে সহায়তা করেছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটি ১২২ কিলোমিটার খাল ও ৫৬টি পুকুর পুনঃখনন করেছে, পাশাপাশি ২২টি ক্রস-ড্যাম নির্মাণ, দু’টি রিভার পন্টুন স্থাপন এবং সৌরবিদ্যুতচালিত ৫৬টি সেচযন্ত্র স্থাপন করেছে। বিএমডিএ নির্বাহী পরিচালক তরিকুল আলম বলেন, আমরা ৪৫০টি গভীর নলকূপ, ১ হাজার ৩০৫ কিলোমিটার ভূগর্ভস্থ পাইপলাইন এবং ছয়টি ফুটওভার ব্রিজ স্থাপন করেছি, পাশাপাশি ৫০০ টন বীজ উৎপাদন করেছি এবং ৫৫০ জন কৃষককে প্রশিক্ষণ দিয়েছি। ১৯৮৭ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে সংস্থাটি ২ হাজার ৬৪৯ কিলোমিটার খাল ও ৪ হাজার ৩১৩টি পুকুর পুনঃখনন, ৮০০টি ক্রস-ড্যাম এবং ১৫ হাজার ৩৪৮টি ভূগর্ভস্থ পাইপলাইন নির্মাণ, ৪ হাজার ৭৯০টি গভীর নলকূপ পুনারায় বসানো হয়েছে, ৮ হাজার ৫০০ টন বীজ উৎপাদন এবং ১ লাখ ৫৮ হাজার ৩০২ জন কৃষককে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। বর্তমানে বিএমডিএ ১৫ হাজার ৫৬০টি ডিটিডব্লিউ এবং ৯৯১টি লো-লিফট পাম্প পরিচালনার মাধ্যমে ৬ লাখ ২৮ হাজার ৫৬৭ হেক্টর জমিতে সেচ দিচ্ছে, যার মাধ্যমে বছরে প্রায় ৭০ দশমিক ৬০ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য উৎপাদন হচ্ছে। বিএমডিএ বিশেষ করে গভীর নলকূপ স্থাপন এবং পুকুর-খাল পুনঃখননের মাধ্যমে সেচ অবকাঠামো উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। শুষ্ক মৌসুমে সেচের জন্য পানি সরবরাহ করে এটি কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠন যুবলীগের পাঁচ নেতাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) দুপুরে তাদেরকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। এর আগে, গত সোমবার রাতভর উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২ অভিযানে উপজেলার নোয়াপাড়া এলাকার ইসমাইল ভূইয়া (৪৫) ও রাব্বী খান (২৬), নয়াদিলের নান্নু মিয়া (৫১), দূর্গাপুর মধ্যপাড়ার বাহাউদ্দিন বাবুল (৫২) এবং ধর্মনগর গ্রামের মামুন চৌধুরী (৪০)কে গ্রেফতার করে পুলিশ। আখাউড়া থানার ওসি মো. জাবেদ উল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, গ্রেফতারকৃত আসামীদেরকে আদালতের মাধ্যমে ব্রাহ্মণবাড়িয়া কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
রক্তক্ষয়ী নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার সূর্যসন্তানদের স্মরণে মহান বিজয় দিবসে জাতীয় স্মৃতিসৌধে নেমেছে সর্বস্তরের মানুষের ঢল। যাদের আত্মত্যাগে বাংলার বুকে জন্ম নিয়েছে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র—সেই বীর শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাতে ভোর থেকেই মানুষের স্রোত এসে মিলেছে স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে। মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) সকাল থেকেই দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে হাজার হাজার মানুষ জাতীয় স্মৃতিসৌধে সমবেত হন। বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবার, শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ হাতে ফুল, ব্যানার ও ফেস্টুন নিয়ে শহীদ বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। সরেজমিনে দেখা যায়, মানুষের শ্রদ্ধা আর ফুলের ভালোবাসায় বীর শহীদদের বেদী ভরে উঠেছে। স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ স্লোগান ও দেশপ্রেমের গান। তরুণ প্রজন্মের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে পুরো এলাকা হয়ে ওঠে উৎসবমুখর ও আবেগঘন। কুমিল্লার গৌরিপুর থেকে আসা কলেজ শিক্ষার্থী কায়ছার বলেন, ‘আমি মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি, তবে বইয়ে পড়েছি। আজ জাতীয় স্মৃতিসৌধে এসে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পেরে নিজেকে গর্বিত মনে হচ্ছে।’ গাজীপুর থেকে আগত শরিফ ইসলাম বলেন, ‘যাদের আত্মত্যাগে দেশ স্বাধীন হয়েছে, তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে প্রতি বছরই জাতীয় স্মৃতিসৌধে আসি। এবারও ফুল দিয়ে বীর শহীদদের স্মরণ করেছি।’ এ সময় জিনজিরা থেকে আসা তরুণ শহিদুল বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়েই আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। এই দিনটি আমাদের গৌরবের দিন। দেশের জন্য আত্মদানকারী বীর শহীদদের প্রতি জাতীয় স্মৃতিসৌধে এসে বিনম্র শ্রদ্ধা জানাতে পেরে আমি গর্বিত।’ দিনভর মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে মহান বিজয় দিবসের চেতনায় মুখরিত হয়ে ওঠে জাতীয় স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণ। এর আগে, ভোর ৬টা ৩৩ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। পরে সকাল ৬টা ৫৪ মিনিটের দিকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বীর শহীদদের প্রতি ফুলেল শ্রদ্ধা জানান।