সারা দেশে ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল-ডেন্টাল কলেজের ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। রোববার (১৪ ডিসেম্বর) বিকেলে এই ফলাফল প্রকাশ করা হয়। এ বছর পাসের হার ৬৬.৫৭ শতাংশ।
শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) সকাল ১০টা থেকে ১১টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত দেশের ১৭টি কেন্দ্র ও ৪৯টি ভেন্যুতে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
উল্লিখিত শিক্ষাবর্ষে সরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজগুলোতে আসন সংখ্যা ৫৬৪৫ টি; যার মধ্যে এমবিবিএস ৫১০০ এবং বিডিএস ৫৪৫। বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজগুলোতে আসন সংখ্যা ৭৩৬১ টি; যার মধ্যে এমবিসিএস ৬০০১ এবং বিডিএস ১৩৬০। এমবিবিএস কোর্সে ১১১০১টি এবং বিডিএস কোর্স ১৯০৫টি, অর্থাৎ সর্বমোট ১৩০০৬টি আসনের বিপরীতে এ বছর মোট আবেদনকারী ১ লাখ ২২ হাজার ৬৩২ জন। তাদের মধ্যে ৪৯ হাজার ২৮ জন আবেদনকারী ছেলে এবং ৭৩ হাজার ৬০৪ জন মেয়ে।
ভর্তি পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর এবং এসএসসি/সমমান ও এইচএসসি/সমমান পরীক্ষায় প্রাপ্ত জিপিএ থেকে প্রাপ্ত নম্বর যোগ করে অর্জিত স্কোরের ভিত্তিতে মেধা ও পছন্দক্রম অনুযায়ী ৫৬৪৫ জন প্রার্থীকে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত করা হয়েছে।
এবার ভর্তি পরীক্ষায় বসেছেন ১ লাখ ২০ হাজার ৪৪০ জন (৯৮.২১ শতাংশ), অনুপস্থিত পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ২ হাজার ১৯২ (১.৭৯ শতাংশ) জন, বহিষ্কৃত পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ২। ভর্তি পরীক্ষায় মোট পাস করা পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৮১ হাজার ৬৪২ (৬৬.৫৭ শতাংশ) জন, যাদের মধ্যে পুরুষ পরীক্ষার্থী ৩১ হাজার ১২৮ জন (৩৮.১৩ শতাংশ) এবং নারী পরীক্ষার্থী ৫০ হাজার ৫১৪ জন (৬১.৮৭ শতাংশ)।
সরকারি ৩৭টি মেডিকেল কলেজ, ঢাকা ডেন্টাল কলেজ, ৮টি মেডিকেল কলেজ ডেন্টাল ইউনিটসমূহের ৫ হাজার ৬৪৫টি আসনের মধ্যে নির্বাচিত নারী পরীক্ষার্থী ৩ হাজার ৬০৩ জন (৬৩.৮০ শতাংশ) এবং পুরুষ পরীক্ষার্থী ২ হাজার ৪২ জন (৩৬.২০ শতাংশ)। ভর্তি পরীক্ষায় সর্বোচ্চ প্রাপ্ত নম্বর ৯১.২৫।
বেসরকারি মেডিকেল কলেজ, ডেন্টাল কলেজ/ইউনিটসমূহে আগ্রহী প্রার্থীদের অনলাইন আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল প্রণীত এমবিবিএস এবং বিডিএস কোর্সে শিক্ষার্থী ভর্তি নীতিমালা-২০২৬ অনুযায়ী পরবর্তীতে শিক্ষার্থী নির্বাচন করা হবে।
ফল দেখবেন যেভাবে
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে ভিজিট করে ‘MBBS Result 2025-2026’ লিংকে ক্লিক করে ভর্তি পরীক্ষার রোল নম্বর দিতে হবে। এরপর ‘Result’ বাটনে ক্লিক করলেই ফলাফল দেখা যাবে। ভর্তিচ্ছুরা এটি ডাউনলোড বা স্ক্রিনশট নিতে পারবেন। মেধাতালিকা ওয়েবসাইটে পিডিএফ আকারেও প্রকাশ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে পদোন্নতিতে অনিয়ম ও অসঙ্গতির অভিযোগে দায়ের করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে মহামান্য হাইকোর্ট রুল জারি করেছেন। একই সঙ্গে আদালত নির্দেশ দিয়েছেন, রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত পদোন্নতি সংক্রান্ত যেকোনো কার্যক্রম অবৈধ হিসেবে গণ্য হবে। দেশের বৃহত্তম রাষ্ট্রায়ত্ত বিশেষায়িত ব্যাংকটির ১০ম গ্রেডের পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন ধরে ন্যায্য পদোন্নতির দাবিতে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করে আসছিলেন। দাবি আদায়ে বারবার কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন ও মানববন্ধন করেও সাড়া না পেয়ে তারা শেষ পর্যন্ত আদালতের দ্বারস্থ হন। সূত্র জানায়, পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তারা গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর (শনিবার) ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে ছুটির দিনে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন করেন, যাতে গ্রাহকসেবা ব্যাহত না হয়। তাদের দাবির প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করে তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শওকত আলী খান দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন। তবে তিন মাস পার হলেও প্রতিশ্রুত আশ্বাস বাস্তবায়িত না হওয়ায় তারা পুনরায় ওই বছরের ৩০ নভেম্বর মানববন্ধনের আয়োজন করেন। এতে সারা দেশের শাখা থেকে ১২০০–এর বেশি কর্মকর্তা অংশ নেন। পরদিন (১ ডিসেম্বর) বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক সঞ্চিয়া বিনতে আলী পদোন্নতির বিষয়ে মৌখিক আশ্বাস দিলে আন্দোলনকারীরা কর্মস্থলে ফিরে যান। পরে কর্মকর্তাদের জানানো হয়, সুপারনিউমারারি পদ্ধতিতে মার্চের মধ্যে পদোন্নতির বিষয়টি সমাধান করা হবে। কিন্তু এখনো তা বাস্তবায়ন হয়নি। অন্যদিকে অগ্রণী, জনতা, রূপালী ও সোনালী ব্যাংকে ইতোমধ্যে মোট ৭,৩১৬ কর্মকর্তা এই পদ্ধতিতে পদোন্নতি পেয়েছেন, যা অর্থ মন্ত্রণালয়ও অনুমোদন করেছে। পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তাদের অভিযোগ, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের এই উদাসীনতা তাদের প্রতি কর্মীবান্ধবহীন মনোভাব ও কর্তৃপক্ষের অনীহারই প্রকাশ। তারা বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট স্বৈরাচার পতনের পর অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পরিবর্তন এলেও কৃষি ব্যাংকে আগের প্রশাসনিক কাঠামো অপরিবর্তিত রয়ে গেছে, যা ন্যায্য দাবি আদায়ের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের অভিযোগ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, মহাব্যবস্থাপক ও মানবসম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক জাহিদ হোসেন একাধিক বৈঠকে আশ্বাস দিলেও বাস্তব পদক্ষেপ না নিয়ে বরং আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী কর্মকর্তাদের হয়রানি ও নিপীড়ন করা হয়েছে। ফলে তারা বাধ্য হয়ে এ বছরের চলতি মাসে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন (রিট মামলা নং: ১৬৪২৮/২০২৫, মো. পনির হোসেন গং বনাম রাষ্ট্র ও অন্যান্য)। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৬ অক্টোবর হাইকোর্ট রুল জারি করে জানতে চেয়েছেন, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের পদোন্নতিতে দেখা দেওয়া অনিয়ম ও অসঙ্গতি কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না। পাশাপাশি আদালত নির্দেশ দিয়েছেন, রুল নিষ্পত্তির আগে কোনো পদোন্নতি কার্যক্রম শুরু করা হলে তা অবৈধ ও আদালত–অবমাননার শামিল হবে। রিটে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক পদোন্নতিতে ১০৭৩ জন কর্মকর্তা (ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা থেকে মূখ্য কর্মকর্তা) এবং ৫১ জন মূখ্য কর্মকর্তা (ঊর্ধ্বতন মূখ্য কর্মকর্তা পদে) অনিয়মের মাধ্যমে পদোন্নতি পেয়েছেন। এদিকে জানা গেছে, পূর্বে দুর্নীতির অভিযোগে আলোচিত মানবসম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক জাহিদ হোসেন এখনো পদোন্নতি কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তারা বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করে যদি পুনরায় অনিয়মের পথে যাওয়া হয়, তাহলে তা আদালতের অবমাননা ও রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল হবে। তারা আশা করছেন, এ বিষয়ে দ্রুত ন্যায়বিচার ও সমাধান মিলবে।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে সাম্প্রতিক সময়ে পদোন্নতি ও প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। পদোন্নতিবঞ্চিত কর্মকর্তাদের একটি অরাজনৈতিক সংগঠন ‘বৈষম্য বিরোধী অফিসার্স ফোরাম’ এর কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক মো. পনির হোসেন ও সদস্য সচিব এরশাদ হোসেনকে শৃঙ্খলাজনিত মোকদ্দমা এবং মুখ্য সংগঠক মো. আরিফ হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া মুখপাত্র তানভীর আহমদকে দুর্গম অঞ্চলে বদলি করা হয় এবং সারাদেশের দুই শতাধিক কর্মকর্তাকে ব্যাখ্যা তলব করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে যে, মো. আরিফ হোসেনকে বরখাস্ত করার নথিতে তাকে ‘ব্যাংক ও রাষ্ট্রবিরোধী’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে, অথচ ব্যাখ্যা তলবপত্রে বলা হয় তিনি ‘রাজনৈতিক কাজে তহবিল সংগ্রহ করেছেন।’ ফরেনসিক বিশ্লেষণ অনুযায়ী, তার ব্যাখ্যাতলবের জবাব প্রদানের পরও বরখাস্ত চিঠি আগেই তৈরি করা হয়েছিল, যা অনেক কর্মকর্তার মধ্যে প্রশ্ন তোলেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মহাব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, সরকারি কর্মকর্তারা যদি সংবিধান বা আইন অনুযায়ী দায়িত্ব না পালন করেন, হাইকোর্ট তাদের ক্ষমতা প্রয়োগ বা অপব্যবহার রোধের জন্য আদেশ দিতে পারে। অন্য একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, এ সিদ্ধান্তের পেছনে ব্যাংকের ফ্যাসিস্ট সরকারের সহযোগী একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা বলছেন, পদোন্নতি ও ন্যায়বিচারের জন্য আন্দোলন এবং আইনি লড়াই চলবে। ভুক্তভোগী কর্মকর্তারা শিগগিরই বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, অর্থ উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার কাছে এ বিষয়ে প্রতিকার চাইবেন। এ ব্যাপারে মো. আরিফ হোসেন ও পনির হোসেনের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে একটি ভুয়া কর্মচারী ইউনিয়নের সভায় জোরপূর্বক কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণ করানোর অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন ব্যাংকের ভিজিল্যান্স স্কোয়াডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা তাসলিমা আক্তার লিনা ও তার স্বামী মিরাজ হোসেন। গত ২০ অক্টোবর প্রধান কার্যালয়ের অডিটোরিয়ামে ‘বিশেষ সাধারণ সভা’ নামে একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের (সিবিএ) নামে তারা এটির আয়োজন করে। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির সহ-শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির খান ও উদ্বোধক হিসেবে জাতীয়তাবাদী শ্রমিকদলের সভাপতি আনোয়ার হোসাইনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তবে তারা প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে ভুয়া নেতাদের কার্যকলাপ সম্পর্কে অবগত হয়ে অনুষ্ঠানটি বয়কট করেন। অভিযোগ রয়েছে, তাসলিমা আক্তার লিনা হেড অফিসের বিভিন্ন দপ্তরের নারী কর্মকর্তা এবং তার স্বামী মিরাজ হোসেন পুরুষ কর্মকর্তাদের ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে ওই সভায় অংশগ্রহণে বাধ্য করেন। অংশগ্রহণে অস্বীকৃতি জানালে বদলি বা পদোন্নতি রোধের হুমকিও দেওয়া হয় বলে জানা গেছে। হেড অফিসের কয়েকজন কর্মকর্তার ভাষ্য অনুযায়ী, লিনা তার স্বামীর প্রভাব খাটিয়ে নারী সহকর্মীদের ওপর দীর্ঘদিন ধরে অনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে আসছেন। কেউ আপত্তি জানালে মিরাজের সহযোগীরা এসে অশালীন আচরণ ও গালিগালাজ করে থাকে বলেও অভিযোগ ওঠে। এ ছাড়া, লিনা ‘উইমেনস ফোরাম’ নামে একটি সংগঠন গড়ে মাসিক চাঁদা সংগ্রহ করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। তার এই কর্মকাণ্ডে অনেক নারী কর্মকর্তা বিব্রতবোধ করলেও চাকরির স্বার্থে নীরব থাকছেন। অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা গেছে, মানবসম্পদ বিভাগের ডিজিএম জাহিদ হোসেনের প্রত্যক্ষ সহায়তায় তাসলিমা আক্তার লিনা ও তার স্বামী মিরাজ ব্যাংকের অভ্যন্তরে প্রভাব বিস্তার করছেন। এ ঘটনায় নারী কর্মকর্তাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তারা কর্তৃপক্ষের কাছে তাসলিমা আক্তার লিনা ও মিরাজ হোসেনকে অবাঞ্ছিত ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন। এ বিষয়ে জানতে তাসলিমা আক্তার লিনার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি নিয়ম অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করছি, অভিযোগগুলো ভিত্তিহীন। অন্যদিকে, মিরাজ হোসেনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে সংঘটিত এজাহারভুক্ত হত্যা মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি ফয়েজ উদ্দিন আহমেদ ও মিরাজ হোসেন পলাতক রয়েছেন। ব্যাংক প্রশাসন বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। খুনের শিকার কৃষি ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী আব্দুল হালিম ছিলেন কৃষি ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের (সিবিএ) সভাপতি। তার গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলায়। পরিবারের ভাষ্য অনুযায়ী, তিনি স্থানীয়ভাবে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। মামলার বিবরণ অনুযায়ী, ১ নম্বর আসামি হিসেবে অবসরপ্রাপ্ত পিয়ন ফয়েজ উদ্দিন আহমেদ এবং ২ নম্বর আসামি মিরাজ হোসেনের নাম রয়েছে। তারা বর্তমানে নিজেদের সিবিএ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দাবি করে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে প্রভাব বিস্তার করছেন। ব্যাংক সূত্রে গেছে, তারা চাঁদাবাজি, ঘুষ আদায় ও নানা অনিয়মের সঙ্গে জড়িত। সূত্র জানায়, ব্যাংকের ভেতরে একটি সিন্ডিকেটের প্রভাবেই এসব আসামিরা এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছেন। এই সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে আছেন মানবসম্পদ বিভাগের ডিজিএম জাহিদ হোসেন। এতে আরও যুক্ত রয়েছেন ডিজিএম সৈয়দ লিয়াকত হোসেন, হাবিব উন নবী, ডিএমডি খালেকুজ্জামান জুয়েল ও ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সঞ্চিয়া বিনতে আলী। গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর রাতে মতিঝিলের বিমান অফিসের সামনে আব্দুল হালিমের মৃত্যু হয়। পরদিন সকালে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠায়। মতিঝিল থানার উপ-পরিদর্শক সজীব কুমার সিং সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে জানান, পুরনো সহকর্মীদের সঙ্গে বিরোধের জেরে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং রাত ১টা ৪০ মিনিটে হাসপাতালে মারা যান। হালিমের ছেলে ফয়সাল বলেন, তার বাবা ২০১৪ সাল থেকে কৃষি ব্যাংক সিবিএর সভাপতি ছিলেন এবং বোয়ালখালী উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করতেন। ইউনিয়নের নেতৃত্ব ও পদ নিয়ে সহকর্মীদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। এ নিয়ে গত নভেম্বরেই মতিঝিল থানায় একটি জিডি (নং ০৫/১১/২০২৪ - ৩৩৫) করেছিলেন তার বাবা। তিনি আরও বলেন, বুধবার রাতে আমার বাবাকে তার অফিসের সহকর্মীরা মারধর করে হত্যা করেছে। সিবিএর বর্তমান সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জানান, ২০১৪ সালে আমরা নির্বাচিত হই। এরপর আর কোনো নির্বাচন হয়নি। কিন্তু গত ৫ আগস্ট বিনা নির্বাচনে নতুন কমিটি ঘোষণা করে আমাদের অফিস দখল করে নেয় ফয়েজ ও মিরাজ। এ নিয়ে মামলা চলছে। মামলার তথ্য অনুযায়ী, আসামিরা অস্থায়ী জামিনে ছিলেন। সম্প্রতি তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। এছাড়া আরও কয়েকজন পলাতক রয়েছেন—যাদের মধ্যে আছেন ড্রাইভার সাইফুল, শাহেদ, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর মেহেদী ও অবসরপ্রাপ্ত ক্লিনার সিরাজ। এদিকে, মামলার ২ নম্বর আসামি মিরাজ হোসেন নৈমিত্তিক ছুটির আবেদন করে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। যদিও ওয়ারেন্টভুক্ত আসামির নৈমিত্তিক ছুটি পাওয়ার কোনো এখতিয়ার নেই। মানবসম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক এ বিষয়ে বলেন, তিনি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন এবং নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। কিন্তু স্থানীয় মুখ্য কার্যালয়ের প্রধান মহাব্যবস্থাপক জানান, তিনি কোনো মন্তব্য করতে চান না। কারণ ব্যবস্থাপনা পরিচালক মন্তব্য না করার নির্দেশ দিয়েছেন। ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। অভ্যন্তরীণ এই পরিস্থিতিতে কৃষি ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
অভিনব কায়দায় চাঁদাবাজিতে নেমেছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের একদল ভুয়া সিবিএ নেতা। অভিযোগ উঠেছে, তারা বিশেষ সাধারণ সভা আয়োজনের নামে সারা দেশের শাখাগুলো থেকে কোটি টাকারও বেশি চাঁদা আদায় করছে। তথ্যসূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন (সিবিএ), রেজি. নং বি-৯৮৫-এর নাম ব্যবহার করে আগামী ২০ অক্টোবর ‘বিশেষ সাধারণ সভা’ শিরোনামে একটি অনুষ্ঠান আয়োজনের ঘোষণা দেয় একদল ভুয়া নেতা। এ উপলক্ষে তারা ব্যাংকের প্রায় ১ হাজার ২৫০টি ইউনিট থেকে ১০-২০ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করে ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার উঠে। গোপন সূত্র জানায়, তাদের নিয়ন্ত্রিত লোকজন শাখা পর্যায়ে বদলি ও পদোন্নতির ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন উপ-মহাব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, তারা এসব কর্মকাণ্ডে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করলেও এ সিন্ডিকেটের ভয়ে কিছু বলার সাহস পাচ্ছেন না। এ ঘটনায় ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগের ডিজিএম জাহিদ হোসেনের প্রত্যক্ষ মদদ ও আস্কারায় চাঁদাবাজি চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রাপ্ত আমন্ত্রণপত্রে দেখা গেছে, ভুয়া সভাপতি দাবিকারী কৃষি ব্যাংকের সাবেক পিয়ন ফয়েজ আহমেদ ও ভুয়া সাধারণ সম্পাদক মিরাজ হোসেন স্বাক্ষরিত পত্রে প্রধান অতিথি হিসেবে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির, উদ্বোধক হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন এবং প্রধান বক্তা হিসেবে সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম খান নাসিমকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। কয়েকজন মহাব্যবস্থাপক জানান, তারা বিভিন্ন শাখা থেকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ পেয়েছেন এবং বিষয়টি ব্যবস্থাপনা পরিচালক অবগত আছেন বলে জানানো হয়েছে। অনুষ্ঠানটি কৃষি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত হওয়ায় তারা কার্যত কিছু করতে পারছেন না। অনুসন্ধানে জানা যায়, এর আগেও একই সিন্ডিকেট শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে প্রায় ৫০ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করেছিল। সেই টাকা তারা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, চাঁদাবাজ ও তাদের মদদদাতাদের সঙ্গে দলের কোনো সম্পর্ক নেই। তারা বহিরাগত অনুপ্রবেশকারী। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এসব ভুয়া সিবিএ নেতাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও অবাঞ্ছিত ঘোষণা দাবি করেছেন। তাদের আশঙ্কা, এসব কর্মকাণ্ডের নেতিবাচক প্রভাব আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে পড়তে পারে।
দেশের চলমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এখন এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। একই সঙ্গে তিনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুকে কেন্দ্র করে সর্বোচ্চ মনোযোগ দিয়ে কাজ করছে দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব। দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতা ও চিকিৎসা, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্বিঘ্ন দেশে প্রত্যাবর্তন এবং আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয় নিশ্চিত করা এই তিনটি বিষয়ই বর্তমানে বিএনপির রাজনীতি ও কর্মকৌশলের মূল কেন্দ্রবিন্দু। এসব ইস্যু ঘিরে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা ব্যস্ত ও সক্রিয় সময় পার করছেন। এই প্রেক্ষাপটে বিএনপি সাংগঠনিক শক্তি সুসংহত করা, জনসম্পৃক্ততা বাড়ানো এবং সময়োপযোগী রাজনৈতিক কৌশল নির্ধারণে একটি সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে। এর অংশ হিসেবে সম্প্রতি বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনগুলো ছয় দিনের টানা কর্মশালা সম্পন্ন করেছে। সেখানে রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা রূপরেখার মধ্য থেকে জনগণের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত বিষয়গুলো সহজ ভাষায় মানুষের কাছে পৌঁছানো এবং ভবিষ্যতে সরকার গঠন করলে সেগুলো কীভাবে কার্যকর করা হবে—সে বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়। একদিকে বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে গভীর উদ্বেগ, অন্যদিকে দীর্ঘ ১৮ বছর পর তারেক রহমানের দেশে ফেরার ঘোষণায় দলের ভেতরে নতুন উদ্দীপনা ও আশাবাদ তৈরি হয়েছে। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দীর্ঘ নির্বাসন শেষে আগামী ২৫ ডিসেম্বর তারেক রহমানের দেশে প্রত্যাবর্তন বিএনপির জন্য এক বড় অনুপ্রেরণা। তিনি নেতাকর্মীদের আহ্বান জানিয়েছেন, ওই দিন তারেক রহমানকে এমনভাবে বরণ করে নিতে, যা রাজনৈতিক ইতিহাসে বিরল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। তার বক্তব্যে উঠে আসে, যখন দলের চেয়ারপারসন গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় চিকিৎসাধীন, ঠিক সেই অনিশ্চয়তার মধ্যেই তারেক রহমানের দেশে ফেরার খবর বিএনপির জন্য আশার আলো হিসেবে কাজ করছে। নেতাকর্মীদের বিশ্বাস, তারেক রহমানের সরাসরি উপস্থিতি দলীয় সাংগঠনিক দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে সহায়ক হবে এবং নির্বাচনী প্রস্তুতিতে নতুন গতি সঞ্চার করবে। বিএনপির আরেকটি বড় উদ্বেগের জায়গা হলো দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা। ৮০ বছর বয়সী সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী দীর্ঘদিন ধরে একাধিক জটিল রোগে ভুগছেন এবং বর্তমানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। চিকিৎসকদের ভাষ্য অনুযায়ী, তার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল থাকলেও উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়নি। দেশি ও বিদেশি বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ড নিয়মিত তার চিকিৎসা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। খালেদা জিয়ার অসুস্থতাকে কেন্দ্র করে বিএনপির ভেতরে ও বাইরে এক ধরনের রাজনৈতিক সংহতি ও আবেগী ঐক্য লক্ষ করা যাচ্ছে। তার আরোগ্য কামনায় দেশ-বিদেশে দোয়া মাহফিল, বিশেষ ইবাদত ও বিভিন্ন মানবিক কর্মসূচি পালন করছেন নেতাকর্মী ও সমর্থকেরা। এটি দলীয় ঐক্যকে আরও দৃঢ় করেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে বিএনপি ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের চূড়ান্ত লড়াই’ হিসেবে দেখছে। দলটি ইতোমধ্যে দেশের অধিকাংশ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছে। বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতা, জনসমর্থন এবং আন্তর্জাতিক মহলের ইতিবাচক মনোভাবকে সামনে রেখে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব মনে করছে, এবারের নির্বাচন বিজয়ের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ। সাধারণ ভোটার, বিশেষ করে নতুন ভোটার ও তরুণ সমাজকে আকৃষ্ট করতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। পাশাপাশি একটি যুগোপযোগী ও জনকল্যাণমুখী নির্বাচনী ইশতেহার চূড়ান্ত করার কাজ চলছে, যেখানে গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ, সুশাসন, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং সবার জন্য সমান সুযোগের বিষয়গুলো গুরুত্ব পাবে। তবে নির্বাচন সামনে রেখে যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দলগুলোর সঙ্গে আসন সমঝোতা নিয়ে কিছুটা টানাপোড়েনও তৈরি হয়েছে। শরিকদের ক্ষোভ ও মতপার্থক্যের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে বিএনপি আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের উদ্যোগ নিয়েছে। দলীয় সূত্রগুলোর প্রত্যাশা, এই আলোচনার মধ্য দিয়ে একটি সন্তোষজনক সমঝোতা হবে এবং বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক জোট গড়ে উঠবে। বিএনপির নেতারা মনে করছেন, বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বের ঐতিহ্য, তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনে সৃষ্ট নতুন সাংগঠনিক শক্তি এবং জনগণের প্রত্যাশাকে একত্রিত করতে পারলে বিএনপি আগামী দিনে একটি কার্যকর ও শক্তিশালী রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারবে। বর্তমান এই ত্রিমুখী ব্যস্ততা প্রমাণ করে, বিএনপি এখন আর কেবল একটি প্রতিবাদী দল নয়; বরং একটি সুসংগঠিত, ক্ষমতাপ্রত্যাশী এবং রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য প্রস্তুত রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
লন্ডন থেকে ঢাকায় ফিরলে তারেক রহমানকে এমন সংবর্ধনা জানানো হবে, যা অতীতে কখনো কোনো নেতা পাননি এমন মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। রোববার (১৪ ডিসেম্বর) দুপুরে এক আলোচনা সভায় ১৮ বছর পর তারেক রহমানের নির্বাসিত জীবনের অবসান প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে তিনি দলের এই প্রস্তুতির কথা জানান। বিজয় দিবস উপলক্ষে ‘জাতির ক্রান্তিলগ্নে গণতন্ত্র রক্ষায় জাতীয় সংসদ নির্বাচন অপরিহার্য’ শীর্ষক এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয় রাজধানীর কাকরাইল এলাকায় ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে। সভার আয়োজন করে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল ও জাতীয়তাবাদী মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম। মির্জা ফখরুল বলেন, আল্লাহর কাছে অশেষ শুকরিয়া আদায় করি আমাদের নেতা দীর্ঘ ১৮ বছর নির্বাসনে থাকার পর ইনশাআল্লাহ আগামী ২৫ ডিসেম্বর আমাদের মাঝে ফিরে আসবেন। এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত অনুপ্রেরণার বিষয়। তিনি আরও বলেন, আসুন, আমরা ২৫ ডিসেম্বর তাকে এমন এক সংবর্ধনা জানাই, যা অতীতে বাংলাদেশের ইতিহাসে কোনো নেতা পাননি। আমরা সবাই সেই প্রস্তুতি নিয়েছি, ইনশাআল্লাহ। তারেক রহমানের দেশে ফেরা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই সংবাদ আমাদের জন্য একদিকে স্বস্তি, অন্যদিকে আবেগের। একদিকে আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে রয়েছেন, অন্যদিকে অনিশ্চয়তার মধ্যে যিনি আমাদের পথ দেখাচ্ছেন, যিনি আমাদের আশার আলো সেই নেতা আগামী ২৫ ডিসেম্বর দেশে ফিরে আসছেন। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন ইশতিয়াক আজিজ উলফাত। এতে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল জয়নুল আবেদিন, জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের অবসরপ্রাপ্ত মিজানুর রহমান, নজরুল ইসলাম, এম এ হালিম, এম এ হাকিম খান এবং জাতীয়তাবাদী মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্মের সদস্য সচিব কেএম কামরুজ্জামান নান্নু।
ব্রেন ডেথ’ বা মস্তিষ্কমৃত্যু শব্দটি অনেকের কাছেই বিভ্রান্তিকর। কারণ বাইরে থেকে দেখলে মনে হতে পারে, রোগী এখনো শ্বাস নিচ্ছেন, হৃদ্স্পন্দন চলছে। কিন্তু চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায়, ব্রেন ডেথ মানেই মৃত্যু। এটি একই সঙ্গে একটি চিকিৎসাগত ও আইনগত পরিভাষা। ব্রেন ডেথ বলতে কী বোঝায় ব্রেন ডেথ ঘটে তখনই, যখন আঘাত বা রোগের কারণে মানুষের সম্পূর্ণ মস্তিষ্ক এবং ব্রেনস্টেম স্থায়ীভাবে কাজ করা বন্ধ করে দেয়। ব্রেনস্টেম শরীরের শ্বাসপ্রশ্বাস ও হৃদ্স্পন্দন নিয়ন্ত্রণ করে। আর মস্তিষ্ক নিয়ন্ত্রণ করে দেখা, শোনা, স্পর্শ অনুভব করা এবং নড়াচড়ার মতো মৌলিক ক্ষমতাগুলো। এই সব কাজ বন্ধ হয়ে গেলে চিকিৎসা ও আইনের দৃষ্টিতে সেই ব্যক্তি মৃত হিসেবে গণ্য হন। তাই চিকিৎসকেরা নির্দিষ্ট ও কঠোর চিকিৎসা নির্দেশিকা অনুসরণ করেই ব্রেন ডেথ নির্ণয় করেন। ব্রেন ডেথ ঘোষণা করার আগে সম্ভাব্য সব বিকল্প কারণ বাতিল করা হয় এবং একাধিক পরীক্ষা করা হয়। ব্রেন ডেথ কি খুব সাধারণ ঘটনা? না। ব্রেন ডেথ খুবই বিরল। এক গবেষণা বিশ্লেষণে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রে প্রাপ্তবয়স্কদের হাসপাতালে মৃত্যুর মোট ঘটনার মাত্র ২ শতাংশ ব্রেন ডেথের কারণে ঘটে। ব্রেন ডেথের প্রধান কারণ কী মস্তিষ্ক স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে রক্ত ও অক্সিজেনের ওপর নির্ভরশীল। তাই যেকোনো গুরুতর আঘাত বা রোগ, যা মস্তিষ্কে রক্ত ও অক্সিজেনের প্রবাহ বন্ধ করে দেয়, তা ব্রেন ডেথের কারণ হতে পারে। আবার মস্তিষ্কের রক্তনালি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে রক্তক্ষরণ হলেও একই পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। সম্ভাব্য কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে ১. গুরুতর মাথায় আঘাত (ট্রমাটিক ব্রেন ইনজুরি) ২. মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ (ইন্ট্রাসেরিব্রাল হেমোরেজ) ৩. সাবঅ্যারাকনয়েড হেমোরেজ ৪. ইস্কেমিক স্ট্রোক ৫. হার্ট অ্যাটাক ৬. অক্সিজেনের অভাবে মস্তিষ্কের ক্ষতি (হাইপক্সিক ইস্কেমিক ব্রেন ইনজুরি) ৭. মেনিনজাইটিস বা এনসেফালাইটিসের মতো মস্তিষ্কের সংক্রমণ কীভাবে ব্রেন ডেথ নির্ণয় করা হয় ‘মেডিক্যাল ক্রাইটেরিয়া’ বলতে বোঝায়, ব্রেন ডেথ নির্ণয়ে চিকিৎসকদের অনুসরণ করতে হওয়া নির্দিষ্ট ধাপগুলো। যুক্তরাষ্ট্রে এ ক্ষেত্রে তিনটি চিকিৎসা সংস্থা একসঙ্গে নির্দেশিকা প্রণয়ন করেছে। ১. পরীক্ষা শুরুর আগে চিকিৎসকেরা মস্তিষ্কের মারাত্মক ক্ষতির মূল কারণ শনাক্ত ও চিকিৎসা করেন। ২. যেসব সমস্যা বা অবস্থা ব্রেন ডেথের মতো উপসর্গ তৈরি করতে পারে, সেগুলো বাতিল করেন। ৩. ব্রেন ডেথের অনুকরণ করতে পারে, এমন সব পরিস্থিতি বাদ দেন। এরপর প্রশিক্ষিত চিকিৎসকেরা একাধিক পরীক্ষা করেন। প্রাথমিক ফল নিশ্চিত করতে এসব পরীক্ষা একাধিকবারও করা হতে পারে। ব্রেন ডেথ সন্দেহ হলে রোগীর পরিবারের সদস্যদের আগে থেকেই জানানো হয় এবং প্রতিটি পরীক্ষার অর্থ ব্যাখ্যা করা হয়। পরীক্ষার মধ্যে থাকে শারীরিক পরীক্ষা, ব্রেন এমআরআইয়ের মতো ইমেজিং টেস্ট, বিস্তৃত স্নায়বিক পরীক্ষা এবং অ্যাপনিয়া টেস্ট। স্নায়বিক পরীক্ষা কীভাবে করা হয় ব্রেন ডেথ হলে মানুষ শব্দ, আলো বা স্পর্শে স্বাভাবিক কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায় না। কোনো নড়াচড়া হলেও তা ইচ্ছাকৃত নয়। স্নায়বিক পরীক্ষার সময় চিকিৎসকেরা গলার পেছনে স্পর্শ করে গ্যাগ বা বমিভাবের প্রতিক্রিয়া দেখেন। তুলার সাহায্যে চোখে স্পর্শ করে পলক ফেলা বা চোখ বন্ধের প্রতিক্রিয়া পরীক্ষা করেন এবং আলো ফেলিয়ে চোখের মণির প্রতিক্রিয়া যাচাই করেন। অ্যাপনিয়া টেস্ট কী মারাত্মক মস্তিষ্ক আঘাতের ক্ষেত্রে রোগী নিজে শ্বাস নিতে পারেন না এবং ভেন্টিলেটরের ওপর নির্ভরশীল হন। অ্যাপনিয়া টেস্টে কিছুক্ষণের জন্য ভেন্টিলেটর বন্ধ রেখে দেখা হয়, রোগী নিজে শ্বাস নেওয়ার চেষ্টা করেন কি না। যদি পরীক্ষায় ব্রেন ডেথ ধরা পড়ে এরপর কী হয় সব পরীক্ষার ফলাফল পরিবারের সদস্যদের বিস্তারিতভাবে জানানো হয় এবং স্পষ্ট করে বলা হয়, ব্রেন ডেথ মানেই মৃত্যু। চিকিৎসকেরা জানেন, এ খবর গ্রহণ করা অত্যন্ত কঠিন। তাই পরিবারকে সময় দেওয়া হয়, প্রশ্ন করার সুযোগ দেওয়া হয়। এরপর পরবর্তী করণীয় নিয়ে আলোচনা করা হয়। যেমন-ভেন্টিলেটর খুলে নেওয়া। প্রয়োজনে পরিবারের সদস্যরা ভেন্টিলেটর খুলে নেওয়ার আগে রোগীর পাশে কিছু সময় কাটানোর সুযোগও পান। কোমা আর ব্রেন ডেথের পার্থক্য কী কোমায় থাকা ব্যক্তি অচেতন থাকলেও কিছু প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারেন। যেমন- চোখে আলো ফেললে পলক ফেলা বা মাথা ঘোরানো। কোমা সব সময় স্থায়ী নয়; বেশিভাগ মানুষ দুই সপ্তাহের মধ্যেই কোমা থেকে বেরিয়ে আসেন। কিন্তু ব্রেন ডেথে কোনো প্রতিক্রিয়াই থাকে না। এটি সম্পূর্ণ ও স্থায়ী অবস্থা। ব্রেন ডেথ হলে আর কখনোই চেতনা ফিরে আসে না। কেউ কি কখনো ব্রেন ডেথ থেকে সেরে উঠেছে? না। চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে, ব্রেন ডেথ থেকে কেউ কখনো সেরে ওঠে না। কঠোর নির্দেশিকা মেনে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরই ব্রেন ডেথ ঘোষণা করা হয়। একবার ব্রেন ডেথ নিশ্চিত হলে সেই ব্যক্তি চিকিৎসাগতভাবে মৃত। ব্রেন ডেথ কি প্রতিরোধ করা সম্ভব? না। কারণ যেসব গুরুতর অসুস্থতা বা আঘাত ব্রেন ডেথের দিকে নিয়ে যায়, সেগুলো অনেক সময় প্রতিরোধের বাইরে থাকে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসা পেলে ব্রেন ডেথ ঠেকানো যেতে পারে। তবে একবার মস্তিষ্ক সম্পূর্ণভাবে কাজ করা বন্ধ করে দিলে, তা আর ফিরিয়ে আনার কোনো চিকিৎসা নেই। কঠিন বাস্তবতা সাধারণভাবে আমরা মৃত্যু বলতে বুঝি শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়া, হৃদ্স্পন্দন থেমে যাওয়া। কিন্তু আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থায় ভেন্টিলেটরের মতো যন্ত্র সাময়িকভাবে শ্বাস ও হৃদ্স্পন্দন চালু রাখতে পারে। এতে করে অনেক সময় বুঝে ওঠা কঠিন হয় যে ব্যক্তি দেখতে জীবিত, তিনি আসলে মৃত। চিকিৎসকেরা এই বাস্তবতা ভালোভাবেই বোঝেন। তাই ব্রেন ডেথ ঘোষণা করার আগে তারা সব পরীক্ষানিরীক্ষা অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে করেন এবং পরিবারের সদস্যদের প্রতিটি ধাপ বিস্তারিতভাবে বুঝিয়ে বলেন।