যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোয় চাঞ্চল্যকর এক ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়েছে পুলিশ'সহ মোট ৩ জন। রোববার (৭ ডিসেম্বর) স্থানীয় সময় গভীর রাতে, জরুরি নাম্বারে কল করে শহরের সাউথ সাইডের একটি বাসায় গোলমালের তথ্য জানানো হয়।
খবর পেয়ে সেখানে পৌঁছায় নিরাপত্তা বাহিনী। গিয়ে দেখতে পায়, মারামারি চলছে দুই ব্যক্তির মাঝে। তা থামানোর চেষ্টার সময় হামলাকারীর বন্দুকে গুলিবিদ্ধ হন এক পুলিশ সদস্য ও ভুক্তভোগী।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আরেক পুলিশ কর্মকর্তা ছোড়েন পাল্টা গুলি। এতে সন্দেহভাজন হামলাকারী গুলিবিদ্ধ হয়। তবে ভুলবশত ভুক্তভোগীর গায়ে লাগে আরও একটি গুলি। এরপর আহত ৩ জনকেই হাসপাতালে নেয়া হয়। পুরো ঘটনায় শুরু হয়েছে তদন্ত।
পুলিশ জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে একজন শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী (৩০)। অন্য দুইজনের মধ্যে একজন ২০ বছর বয়সী যুবক এবং অপরজন একটি ভবনের নিরাপত্তাকর্মী (৪৬)। আর আহতদের মধ্যে দুইজন বৃদ্ধা, একজন নারী ও ১৫ বছরের এক কিশোরী রয়েছেন। তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছে পুলিশ।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে পদোন্নতিতে অনিয়ম ও অসঙ্গতির অভিযোগে দায়ের করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে মহামান্য হাইকোর্ট রুল জারি করেছেন। একই সঙ্গে আদালত নির্দেশ দিয়েছেন, রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত পদোন্নতি সংক্রান্ত যেকোনো কার্যক্রম অবৈধ হিসেবে গণ্য হবে। দেশের বৃহত্তম রাষ্ট্রায়ত্ত বিশেষায়িত ব্যাংকটির ১০ম গ্রেডের পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন ধরে ন্যায্য পদোন্নতির দাবিতে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করে আসছিলেন। দাবি আদায়ে বারবার কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন ও মানববন্ধন করেও সাড়া না পেয়ে তারা শেষ পর্যন্ত আদালতের দ্বারস্থ হন। সূত্র জানায়, পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তারা গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর (শনিবার) ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে ছুটির দিনে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন করেন, যাতে গ্রাহকসেবা ব্যাহত না হয়। তাদের দাবির প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করে তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শওকত আলী খান দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন। তবে তিন মাস পার হলেও প্রতিশ্রুত আশ্বাস বাস্তবায়িত না হওয়ায় তারা পুনরায় ওই বছরের ৩০ নভেম্বর মানববন্ধনের আয়োজন করেন। এতে সারা দেশের শাখা থেকে ১২০০–এর বেশি কর্মকর্তা অংশ নেন। পরদিন (১ ডিসেম্বর) বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক সঞ্চিয়া বিনতে আলী পদোন্নতির বিষয়ে মৌখিক আশ্বাস দিলে আন্দোলনকারীরা কর্মস্থলে ফিরে যান। পরে কর্মকর্তাদের জানানো হয়, সুপারনিউমারারি পদ্ধতিতে মার্চের মধ্যে পদোন্নতির বিষয়টি সমাধান করা হবে। কিন্তু এখনো তা বাস্তবায়ন হয়নি। অন্যদিকে অগ্রণী, জনতা, রূপালী ও সোনালী ব্যাংকে ইতোমধ্যে মোট ৭,৩১৬ কর্মকর্তা এই পদ্ধতিতে পদোন্নতি পেয়েছেন, যা অর্থ মন্ত্রণালয়ও অনুমোদন করেছে। পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তাদের অভিযোগ, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের এই উদাসীনতা তাদের প্রতি কর্মীবান্ধবহীন মনোভাব ও কর্তৃপক্ষের অনীহারই প্রকাশ। তারা বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট স্বৈরাচার পতনের পর অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পরিবর্তন এলেও কৃষি ব্যাংকে আগের প্রশাসনিক কাঠামো অপরিবর্তিত রয়ে গেছে, যা ন্যায্য দাবি আদায়ের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের অভিযোগ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, মহাব্যবস্থাপক ও মানবসম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক জাহিদ হোসেন একাধিক বৈঠকে আশ্বাস দিলেও বাস্তব পদক্ষেপ না নিয়ে বরং আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী কর্মকর্তাদের হয়রানি ও নিপীড়ন করা হয়েছে। ফলে তারা বাধ্য হয়ে এ বছরের চলতি মাসে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন (রিট মামলা নং: ১৬৪২৮/২০২৫, মো. পনির হোসেন গং বনাম রাষ্ট্র ও অন্যান্য)। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৬ অক্টোবর হাইকোর্ট রুল জারি করে জানতে চেয়েছেন, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের পদোন্নতিতে দেখা দেওয়া অনিয়ম ও অসঙ্গতি কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না। পাশাপাশি আদালত নির্দেশ দিয়েছেন, রুল নিষ্পত্তির আগে কোনো পদোন্নতি কার্যক্রম শুরু করা হলে তা অবৈধ ও আদালত–অবমাননার শামিল হবে। রিটে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক পদোন্নতিতে ১০৭৩ জন কর্মকর্তা (ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা থেকে মূখ্য কর্মকর্তা) এবং ৫১ জন মূখ্য কর্মকর্তা (ঊর্ধ্বতন মূখ্য কর্মকর্তা পদে) অনিয়মের মাধ্যমে পদোন্নতি পেয়েছেন। এদিকে জানা গেছে, পূর্বে দুর্নীতির অভিযোগে আলোচিত মানবসম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক জাহিদ হোসেন এখনো পদোন্নতি কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তারা বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করে যদি পুনরায় অনিয়মের পথে যাওয়া হয়, তাহলে তা আদালতের অবমাননা ও রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল হবে। তারা আশা করছেন, এ বিষয়ে দ্রুত ন্যায়বিচার ও সমাধান মিলবে।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে সাম্প্রতিক সময়ে পদোন্নতি ও প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। পদোন্নতিবঞ্চিত কর্মকর্তাদের একটি অরাজনৈতিক সংগঠন ‘বৈষম্য বিরোধী অফিসার্স ফোরাম’ এর কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক মো. পনির হোসেন ও সদস্য সচিব এরশাদ হোসেনকে শৃঙ্খলাজনিত মোকদ্দমা এবং মুখ্য সংগঠক মো. আরিফ হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া মুখপাত্র তানভীর আহমদকে দুর্গম অঞ্চলে বদলি করা হয় এবং সারাদেশের দুই শতাধিক কর্মকর্তাকে ব্যাখ্যা তলব করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে যে, মো. আরিফ হোসেনকে বরখাস্ত করার নথিতে তাকে ‘ব্যাংক ও রাষ্ট্রবিরোধী’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে, অথচ ব্যাখ্যা তলবপত্রে বলা হয় তিনি ‘রাজনৈতিক কাজে তহবিল সংগ্রহ করেছেন।’ ফরেনসিক বিশ্লেষণ অনুযায়ী, তার ব্যাখ্যাতলবের জবাব প্রদানের পরও বরখাস্ত চিঠি আগেই তৈরি করা হয়েছিল, যা অনেক কর্মকর্তার মধ্যে প্রশ্ন তোলেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মহাব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, সরকারি কর্মকর্তারা যদি সংবিধান বা আইন অনুযায়ী দায়িত্ব না পালন করেন, হাইকোর্ট তাদের ক্ষমতা প্রয়োগ বা অপব্যবহার রোধের জন্য আদেশ দিতে পারে। অন্য একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, এ সিদ্ধান্তের পেছনে ব্যাংকের ফ্যাসিস্ট সরকারের সহযোগী একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা বলছেন, পদোন্নতি ও ন্যায়বিচারের জন্য আন্দোলন এবং আইনি লড়াই চলবে। ভুক্তভোগী কর্মকর্তারা শিগগিরই বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, অর্থ উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার কাছে এ বিষয়ে প্রতিকার চাইবেন। এ ব্যাপারে মো. আরিফ হোসেন ও পনির হোসেনের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে একটি ভুয়া কর্মচারী ইউনিয়নের সভায় জোরপূর্বক কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণ করানোর অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন ব্যাংকের ভিজিল্যান্স স্কোয়াডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা তাসলিমা আক্তার লিনা ও তার স্বামী মিরাজ হোসেন। গত ২০ অক্টোবর প্রধান কার্যালয়ের অডিটোরিয়ামে ‘বিশেষ সাধারণ সভা’ নামে একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের (সিবিএ) নামে তারা এটির আয়োজন করে। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির সহ-শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির খান ও উদ্বোধক হিসেবে জাতীয়তাবাদী শ্রমিকদলের সভাপতি আনোয়ার হোসাইনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তবে তারা প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে ভুয়া নেতাদের কার্যকলাপ সম্পর্কে অবগত হয়ে অনুষ্ঠানটি বয়কট করেন। অভিযোগ রয়েছে, তাসলিমা আক্তার লিনা হেড অফিসের বিভিন্ন দপ্তরের নারী কর্মকর্তা এবং তার স্বামী মিরাজ হোসেন পুরুষ কর্মকর্তাদের ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে ওই সভায় অংশগ্রহণে বাধ্য করেন। অংশগ্রহণে অস্বীকৃতি জানালে বদলি বা পদোন্নতি রোধের হুমকিও দেওয়া হয় বলে জানা গেছে। হেড অফিসের কয়েকজন কর্মকর্তার ভাষ্য অনুযায়ী, লিনা তার স্বামীর প্রভাব খাটিয়ে নারী সহকর্মীদের ওপর দীর্ঘদিন ধরে অনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে আসছেন। কেউ আপত্তি জানালে মিরাজের সহযোগীরা এসে অশালীন আচরণ ও গালিগালাজ করে থাকে বলেও অভিযোগ ওঠে। এ ছাড়া, লিনা ‘উইমেনস ফোরাম’ নামে একটি সংগঠন গড়ে মাসিক চাঁদা সংগ্রহ করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। তার এই কর্মকাণ্ডে অনেক নারী কর্মকর্তা বিব্রতবোধ করলেও চাকরির স্বার্থে নীরব থাকছেন। অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা গেছে, মানবসম্পদ বিভাগের ডিজিএম জাহিদ হোসেনের প্রত্যক্ষ সহায়তায় তাসলিমা আক্তার লিনা ও তার স্বামী মিরাজ ব্যাংকের অভ্যন্তরে প্রভাব বিস্তার করছেন। এ ঘটনায় নারী কর্মকর্তাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তারা কর্তৃপক্ষের কাছে তাসলিমা আক্তার লিনা ও মিরাজ হোসেনকে অবাঞ্ছিত ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন। এ বিষয়ে জানতে তাসলিমা আক্তার লিনার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি নিয়ম অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করছি, অভিযোগগুলো ভিত্তিহীন। অন্যদিকে, মিরাজ হোসেনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে সংঘটিত এজাহারভুক্ত হত্যা মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি ফয়েজ উদ্দিন আহমেদ ও মিরাজ হোসেন পলাতক রয়েছেন। ব্যাংক প্রশাসন বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। খুনের শিকার কৃষি ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী আব্দুল হালিম ছিলেন কৃষি ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের (সিবিএ) সভাপতি। তার গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলায়। পরিবারের ভাষ্য অনুযায়ী, তিনি স্থানীয়ভাবে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। মামলার বিবরণ অনুযায়ী, ১ নম্বর আসামি হিসেবে অবসরপ্রাপ্ত পিয়ন ফয়েজ উদ্দিন আহমেদ এবং ২ নম্বর আসামি মিরাজ হোসেনের নাম রয়েছে। তারা বর্তমানে নিজেদের সিবিএ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দাবি করে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে প্রভাব বিস্তার করছেন। ব্যাংক সূত্রে গেছে, তারা চাঁদাবাজি, ঘুষ আদায় ও নানা অনিয়মের সঙ্গে জড়িত। সূত্র জানায়, ব্যাংকের ভেতরে একটি সিন্ডিকেটের প্রভাবেই এসব আসামিরা এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছেন। এই সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে আছেন মানবসম্পদ বিভাগের ডিজিএম জাহিদ হোসেন। এতে আরও যুক্ত রয়েছেন ডিজিএম সৈয়দ লিয়াকত হোসেন, হাবিব উন নবী, ডিএমডি খালেকুজ্জামান জুয়েল ও ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সঞ্চিয়া বিনতে আলী। গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর রাতে মতিঝিলের বিমান অফিসের সামনে আব্দুল হালিমের মৃত্যু হয়। পরদিন সকালে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠায়। মতিঝিল থানার উপ-পরিদর্শক সজীব কুমার সিং সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে জানান, পুরনো সহকর্মীদের সঙ্গে বিরোধের জেরে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং রাত ১টা ৪০ মিনিটে হাসপাতালে মারা যান। হালিমের ছেলে ফয়সাল বলেন, তার বাবা ২০১৪ সাল থেকে কৃষি ব্যাংক সিবিএর সভাপতি ছিলেন এবং বোয়ালখালী উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করতেন। ইউনিয়নের নেতৃত্ব ও পদ নিয়ে সহকর্মীদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। এ নিয়ে গত নভেম্বরেই মতিঝিল থানায় একটি জিডি (নং ০৫/১১/২০২৪ - ৩৩৫) করেছিলেন তার বাবা। তিনি আরও বলেন, বুধবার রাতে আমার বাবাকে তার অফিসের সহকর্মীরা মারধর করে হত্যা করেছে। সিবিএর বর্তমান সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জানান, ২০১৪ সালে আমরা নির্বাচিত হই। এরপর আর কোনো নির্বাচন হয়নি। কিন্তু গত ৫ আগস্ট বিনা নির্বাচনে নতুন কমিটি ঘোষণা করে আমাদের অফিস দখল করে নেয় ফয়েজ ও মিরাজ। এ নিয়ে মামলা চলছে। মামলার তথ্য অনুযায়ী, আসামিরা অস্থায়ী জামিনে ছিলেন। সম্প্রতি তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। এছাড়া আরও কয়েকজন পলাতক রয়েছেন—যাদের মধ্যে আছেন ড্রাইভার সাইফুল, শাহেদ, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর মেহেদী ও অবসরপ্রাপ্ত ক্লিনার সিরাজ। এদিকে, মামলার ২ নম্বর আসামি মিরাজ হোসেন নৈমিত্তিক ছুটির আবেদন করে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। যদিও ওয়ারেন্টভুক্ত আসামির নৈমিত্তিক ছুটি পাওয়ার কোনো এখতিয়ার নেই। মানবসম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক এ বিষয়ে বলেন, তিনি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন এবং নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। কিন্তু স্থানীয় মুখ্য কার্যালয়ের প্রধান মহাব্যবস্থাপক জানান, তিনি কোনো মন্তব্য করতে চান না। কারণ ব্যবস্থাপনা পরিচালক মন্তব্য না করার নির্দেশ দিয়েছেন। ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। অভ্যন্তরীণ এই পরিস্থিতিতে কৃষি ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
অভিনব কায়দায় চাঁদাবাজিতে নেমেছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের একদল ভুয়া সিবিএ নেতা। অভিযোগ উঠেছে, তারা বিশেষ সাধারণ সভা আয়োজনের নামে সারা দেশের শাখাগুলো থেকে কোটি টাকারও বেশি চাঁদা আদায় করছে। তথ্যসূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন (সিবিএ), রেজি. নং বি-৯৮৫-এর নাম ব্যবহার করে আগামী ২০ অক্টোবর ‘বিশেষ সাধারণ সভা’ শিরোনামে একটি অনুষ্ঠান আয়োজনের ঘোষণা দেয় একদল ভুয়া নেতা। এ উপলক্ষে তারা ব্যাংকের প্রায় ১ হাজার ২৫০টি ইউনিট থেকে ১০-২০ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করে ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার উঠে। গোপন সূত্র জানায়, তাদের নিয়ন্ত্রিত লোকজন শাখা পর্যায়ে বদলি ও পদোন্নতির ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন উপ-মহাব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, তারা এসব কর্মকাণ্ডে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করলেও এ সিন্ডিকেটের ভয়ে কিছু বলার সাহস পাচ্ছেন না। এ ঘটনায় ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগের ডিজিএম জাহিদ হোসেনের প্রত্যক্ষ মদদ ও আস্কারায় চাঁদাবাজি চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রাপ্ত আমন্ত্রণপত্রে দেখা গেছে, ভুয়া সভাপতি দাবিকারী কৃষি ব্যাংকের সাবেক পিয়ন ফয়েজ আহমেদ ও ভুয়া সাধারণ সম্পাদক মিরাজ হোসেন স্বাক্ষরিত পত্রে প্রধান অতিথি হিসেবে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির, উদ্বোধক হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন এবং প্রধান বক্তা হিসেবে সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম খান নাসিমকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। কয়েকজন মহাব্যবস্থাপক জানান, তারা বিভিন্ন শাখা থেকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ পেয়েছেন এবং বিষয়টি ব্যবস্থাপনা পরিচালক অবগত আছেন বলে জানানো হয়েছে। অনুষ্ঠানটি কৃষি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত হওয়ায় তারা কার্যত কিছু করতে পারছেন না। অনুসন্ধানে জানা যায়, এর আগেও একই সিন্ডিকেট শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে প্রায় ৫০ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করেছিল। সেই টাকা তারা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, চাঁদাবাজ ও তাদের মদদদাতাদের সঙ্গে দলের কোনো সম্পর্ক নেই। তারা বহিরাগত অনুপ্রবেশকারী। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এসব ভুয়া সিবিএ নেতাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও অবাঞ্ছিত ঘোষণা দাবি করেছেন। তাদের আশঙ্কা, এসব কর্মকাণ্ডের নেতিবাচক প্রভাব আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে পড়তে পারে।
পশ্চিম আফ্রিকার দেশ বেনিনে অভ্যুত্থানের চেষ্টা নস্যাৎ করে দেয়া হয়েছে বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে দেশটির সরকার। রোববার (৭ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে খবরটি নিশ্চিত করেছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি। বিবৃতিতে বেনিন সরকার জানায়, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের একটি অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দেয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলাসানে সেইদো টেলিভিশনে দেয়া ভাষণে বলেন, রোববার ভোরে সৈন্যদের একটি ছোট দল রাষ্ট্র এবং এর প্রতিষ্ঠানগুলোকে অস্থিতিশীল করার লক্ষ্যে একটি বিদ্রোহ শুরু করে। কিন্তু অনুগত সৈন্যরা পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে এবং তাদের প্রচেষ্টা ব্যর্থ করতে সক্ষম হয়েছিল। এ সময়, বেনিনের সশস্ত্র বাহিনী এবং তাদের নেতৃত্ব ও শপথের প্রতি অটল এবং প্রজাতন্ত্রের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিল বলেও উল্লেখ করেন তিনি। এর আগে, ভোরের দিকে একদল সৈন্য রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে জানায়, তারা রাষ্ট্রপতি প্যাট্রিস ট্যালনকে ক্ষমতাচ্যুত করেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, তারা গুলির শব্দ শুনেছেন এবং রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার সংস্থায় কর্মরত কিছু সাংবাদিককে জিম্মি করে রাখতে দেখেছেন। এছাড়া, হেলিকপ্টার উড়তে দেখা গেছে এবং বেশ কয়েকটি রাস্তায় ভারী সামরিক উপস্থিতিসহ রাস্তা অবরুদ্ধ করা হয়েছে। তবে রাষ্ট্রপতির একজন উপদেষ্টা জানান, তিনি নিরাপদ স্থানে রয়েছেন। ফ্রান্স ও রাশিয়ার দূতাবাস তাদের নাগরিকদের ঘরের ভেতরে থাকার আহ্বান জানিয়েছে। মার্কিন দূতাবাসের পরামর্শ ছিল কোটোনো, বিশেষ করে রাষ্ট্রপতি প্রাঙ্গণের আশেপাশের এলাকা থেকে দূরে থাকার জন্য। অপরদিকে, ইকোওয়াস এবং আফ্রিকান ইউনিয়ন অভ্যুত্থানের চেষ্টার নিন্দা জানিয়েছে। উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, বুরকিনা ফাসো, গিনি, মালি এবং নাইজারসহ পশ্চিম আফ্রিকায় বেশ কয়েকটি অভ্যুত্থান ঘটেছে। যা এই অঞ্চলের নিরাপত্তার অবনতি ঘটার আশঙ্কা বাড়িয়ে দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোয় চাঞ্চল্যকর এক ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়েছে পুলিশ'সহ মোট ৩ জন। রোববার (৭ ডিসেম্বর) স্থানীয় সময় গভীর রাতে, জরুরি নাম্বারে কল করে শহরের সাউথ সাইডের একটি বাসায় গোলমালের তথ্য জানানো হয়। খবর পেয়ে সেখানে পৌঁছায় নিরাপত্তা বাহিনী। গিয়ে দেখতে পায়, মারামারি চলছে দুই ব্যক্তির মাঝে। তা থামানোর চেষ্টার সময় হামলাকারীর বন্দুকে গুলিবিদ্ধ হন এক পুলিশ সদস্য ও ভুক্তভোগী। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আরেক পুলিশ কর্মকর্তা ছোড়েন পাল্টা গুলি। এতে সন্দেহভাজন হামলাকারী গুলিবিদ্ধ হয়। তবে ভুলবশত ভুক্তভোগীর গায়ে লাগে আরও একটি গুলি। এরপর আহত ৩ জনকেই হাসপাতালে নেয়া হয়। পুরো ঘটনায় শুরু হয়েছে তদন্ত। পুলিশ জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে একজন শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী (৩০)। অন্য দুইজনের মধ্যে একজন ২০ বছর বয়সী যুবক এবং অপরজন একটি ভবনের নিরাপত্তাকর্মী (৪৬)। আর আহতদের মধ্যে দুইজন বৃদ্ধা, একজন নারী ও ১৫ বছরের এক কিশোরী রয়েছেন। তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদের রেজিনগরে প্রস্তাবিত বাবরি মসজিদ নির্মাণকে ঘিরে বিপুল অনুদানের ফলে তৈরি হয়েছে নগদ অর্থের (রুপি) পাহাড়! ট্রাঙ্ক ভর্তি নগদ অর্থ এনে ঘরের মাঝে ঢালা হচ্ছে আর চারদিকে বসে থাকা মানুষ একটানা গুনে চলেছেন। এই বিপুল অর্থ গোনার জন্য আনা হয়েছে আধুনিক মেশিনও। জানা গেছে, অনুদান হিসেবে এসেছে ১১টি ট্রাঙ্ক ভর্তি নগদ রুপি। আর এগুলো গোনার জন্য নিয়োগ দেয়া হয়েছে ৩০ জন কর্মীকে। এই বিশাল কর্মযজ্ঞ চলছে মুর্শিদাবাদের রেজিনগরে তৃণমূল কংগ্রেস থেকে বহিষ্কৃত বিধায়ক হুমায়ুন কবীরের বাড়িতে। অনুদানের এই অর্থ জমা পড়েছে 'পশ্চিমবঙ্গ ইসলামিক ফাউন্ডেশন অব ইন্ডিয়া'র অধীনে। রোববার (৭ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা পর্যন্ত যত নগদ অর্থ জমা পড়েছে, তা আলেম-ওলামাদের উপস্থিতিতে গণনা শুরু হয়। রাত ১২টার পরও চলতে থাকে গণনার কাজ। তখন পর্যন্ত ৭টি ট্রাঙ্ক খোলা হয়, সেখান থেকে মেলে ৩৭ লাখ রুপি। পুরো অর্থ গণনার কাজ চলছে সিসিটিভির কড়া নজরদারিতে। হুমায়ুন কবীর জানান, বাবরি মসজিদ নির্মাণের আগেই তিনি কতটা জনপ্রিয়, তা এই বিপুল অনুদান দেখেই বোঝা যায়। তার দাবি, শুধুমাত্র ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের দিন কিউআর কোড স্ক্যান করেই জমা পড়েছে ৯৩ লাখ টাকা! এছাড়া, মসজিদ নির্মাণের জন্য ২ দিনেই দান হিসেবে জমা পড়েছে অন্তত ১৫ লাখ ইট। এর আগে, ৬ ডিসেম্বর (শনিবার) বাবরি মসজিদ ধ্বংসের দিন মুর্শিদাবাদে আবারও বাবরি মসজিদের নির্মাণের জন্য শিলান্যাস করেছেন তৃণমূল কংগ্রেস থেকে বহিষ্কৃত বিধায়ক হুমায়ুন কবীর। নিজে হাতে ইট নিয়ে তিনি হাজিরও হয়েছিলেন। সেখান থেকে তিনি জানিয়েছিলেন, বাবরি মসজিদ নির্মাণ করতে খরচ হবে আনুমানিক ৩০০ কোটি টাকা। তবে টাকা নিয়ে চিন্তা করছেন না হুমায়ুন। কারণ, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তিই নাকি বাবরি মসজিদ তৈরির জন্য ৮০ কোটি টাকা অনুদান দেবেন বলে জানিয়েছেন। আরও বহু মানুষ টাকা দিচ্ছেন। হুমায়ুন দাবি করেন– মুর্শিদাবাদের সঙ্গে বীরভূম ও মালদহ থেকে বাবরি মসজিদ তৈরির প্রস্তাব এসেছে। রামপুরহাট, সিউড়ি থেকে কিছু লোক এসে অনুরোধ করেছেন। বীরভূম ও মালদহতে বাবরি মসজিদের প্রস্তাব বিবেচনার আশ্বাসও দেন হুমায়ুন। বাবরি মসজিদ নির্মাণের জন্য যে আপাতত টাকার অভাব হবে না, তা এই বিপুল জমা অর্থ দেখে আন্দাজ করা যাচ্ছে। তবে এই নগদ অর্থ গণনার দৃশ্য সামনে আসতেই রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে জোর গুঞ্জন। সাধারণ মানুষের একাংশ হুমায়ুনের স্বচ্ছতা প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানালেও বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছে অনুদানের উৎস, হিসাব ও আইনি প্রক্রিয়া নিয়ে।