ভূমিকম্পের ভয়াবহ ঝুঁকির মধ্যে বাস করছেন ঢাকাবাসী। সুউচ্চ ভবন ও কংক্রিটের এই নগরীতে অপরিকল্পিত নগরায়ণের কারণে খোলা জায়গা তেমন নেই বললেই চলে। ঢাকায় ভবনগুলো একটির গায়ে আরেকটি লেগে আছে। বড় ভূমিকম্পে এই শহরে খোলা জায়গায় নিরাপদ আশ্রয় নেওয়ার সুযোগ নেই।
একইভাবে ভূমিকম্প-পরবর্তী উদ্ধার কাজেও হতাহতদের উদ্ধারে বেশ বেগ পেতে হবে। ঢাকার কমবেশি বেশির ভাগ এলাকাই ভূমিকম্পের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। তবে এর মধ্যে ১৫টি এলাকা বিশেষভাবে ভয়ংকর ঝুঁকিতে আছে।
বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণাধর্মী প্ল্যাটফর্ম সায়েন্স ডাইরেক্টে প্রকাশিত ‘এন এসেসমেন্ট অব ফিজিক্যাল এসপেক্টস ফর সিসমিক রেসপন্স ক্যাপাসিটি ইন ঢাকা বাংলাদেশ’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণায় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের জিআইএস ডাটাবেজের তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে।
গবেষণায় ঢাকার যে ১৫ এলাকাকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, সেগুলো হলো: সবুজবাগ, কামরাঙ্গীরচর, হাজারীবাগ, কাফরুল, ইব্রাহিমপুর, কল্যাণপুর, গাবতলী, উত্তরা, সূত্রাপুর, শ্যামপুর, মানিকদী, মোহাম্মদপুর, পল্লবী ও খিলগাঁও।
ভবন নির্মাণে বিল্ডিং কোড না মানা, পুরোনো জরাজীর্ণ ভবন, অতিরিক্ত মানুষের বাস, একটির সঙ্গে আরেকটি ভবন সংযুক্ত থাকা, এলাকায় বিপজ্জনক দাহ্য পদার্থের গোডাউন, ভালো যোগাযোগব্যবস্থার অভাব, পর্যাপ্ত খোলা স্থানের অভাব, হাসপাতাল না থাকা এবং ভূমিকম্পের পরে সহজে উদ্ধার কাজ করতে না পারার বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিয়ে এই তালিকা তৈরি করা হয়েছে। গবেষণাটি বলছে, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের নির্মিত ভবনগুলোর নির্মাণসামগ্রী ঢাকা দক্ষিণ সিটির নির্মিত ভবনের তুলনায় বেশি মজবুত।
ঢাকার মোট ৩২টি এলাকার ওপর জরিপ চালানো হয়েছে। এগুলো হলো: উত্তরা, বোটানিক্যাল গার্ডেন, পল্লবী, মানিকদী, মিরপুর, খিলক্ষেত, কল্যাণপুর, গাবতলী, কাফরুল, ইব্রাহিমপুর, গুলশান, মোহাম্মদপুর, শেরেবাংলা নগর, মহাখালী, বাড্ডা, তেজগাঁও, রামপুরা, ধানমন্ডি, মগবাজার, খিলগাঁও, হাজারীবাগ, নিউমার্কেট, আজিমপুর, শাহবাগ, রমনা, পল্টন, মতিঝিল, সবুজবাগ, কামরাঙ্গীরচর, লালবাগ, বংশাল, যাত্রাবাড়ী, সূত্রাপুর ও শ্যামপুর।
ঢাকার দক্ষিণ অংশের কামরাঙ্গীরচর, হাজারীবাগ এবং সবুজবাগ এলাকাগুলো বেশ পুরোনো। এসব এলাকার রাস্তাঘাট সংকীর্ণ, ভবনগুলোও পুরোনো, ঘনবসতিও বেশি। ভূমিকম্পে এসব এলাকায় ক্ষয়ক্ষতিও বেশি হবে বলে আশঙ্কা রয়েছে। এমনকি ভূমিকম্প-পরবর্তী উদ্ধার কার্যক্রম চালাতেও এসব এলাকায় হিমশিম খেতে হবে।
সূত্রাপুর ও শ্যামপুর এলাকা ভূমিকম্পের জন্য উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ। এখানে মানুষের বসতি বেশি এবং খোলা জায়গা কম। এছাড়া ভবন ও অবকাঠামোগুলোও বেশ পুরোনো।
ঢাকার উত্তরে কাফরুল, ইব্রাহিমপুর, কল্যাণপুর, গাবতলী ও মানিকদী ভয়াবহ ঝুঁকিতে আছে। এসব এলাকার রাস্তাঘাট সংকীর্ণ এবং খোলা জায়গা কম। পল্লবী এলাকায় কম হাসপাতাল থাকার কারণে এটি ভূমিকম্পের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। মোহাম্মদপুর ও উত্তরা এলাকায় খোলা জায়গার অভাব ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। খিলগাঁও এলাকা ও ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
পরিকল্পিত নগরায়ণের কারণে গুলশান এলাকায় ভূমিকম্পের ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে কম। এখানে রাস্তাঘাট প্রশস্ত। রমনা, শাহবাগ, আজিমপুরেও ঝুঁকি কম, কারণ এখানে রমনা পার্ক ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মতো খোলা জায়গা রয়েছে। লালবাগ এলাকায় লালবাগ কেল্লা থাকায় ঝুঁকিও কম। ধানমন্ডি, শাহবাগ ও শেরেবাংলানগর এলাকাগুলিতেও ঝুঁকি কম, কারণ সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল সহজে সেবা দিতে পারে। মতিঝিল ও আজিমপুরেও ঝুঁকি কম, কারণ এগুলো পরিকল্পিত এলাকা। নিউমার্কেটের আশপাশে বিশ্ববিদ্যালয় ও খোলা জায়গা থাকায় ঝুঁকিও কম।
নগর-পরিকল্পনাবিদদের সংগঠন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সভাপতি অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান জানিয়েছেন, ঢাকার কোন এলাকা ঝুঁকিপূর্ণ তা মূলত নির্ভর করে দুটি বিষয়ের ওপর ভবন কোথায় অবস্থিত এবং ভবনটি নিয়ম মেনে নিরাপদে নির্মিত হয়েছে কি না। মাটি ভালো হলেও ভবন জরাজীর্ণ বা অনিয়মিতভাবে নির্মিত হলে ভূমিকম্পের কারণে এলাকা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে পদোন্নতিতে অনিয়ম ও অসঙ্গতির অভিযোগে দায়ের করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে মহামান্য হাইকোর্ট রুল জারি করেছেন। একই সঙ্গে আদালত নির্দেশ দিয়েছেন, রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত পদোন্নতি সংক্রান্ত যেকোনো কার্যক্রম অবৈধ হিসেবে গণ্য হবে। দেশের বৃহত্তম রাষ্ট্রায়ত্ত বিশেষায়িত ব্যাংকটির ১০ম গ্রেডের পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন ধরে ন্যায্য পদোন্নতির দাবিতে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করে আসছিলেন। দাবি আদায়ে বারবার কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন ও মানববন্ধন করেও সাড়া না পেয়ে তারা শেষ পর্যন্ত আদালতের দ্বারস্থ হন। সূত্র জানায়, পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তারা গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর (শনিবার) ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে ছুটির দিনে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন করেন, যাতে গ্রাহকসেবা ব্যাহত না হয়। তাদের দাবির প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করে তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শওকত আলী খান দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন। তবে তিন মাস পার হলেও প্রতিশ্রুত আশ্বাস বাস্তবায়িত না হওয়ায় তারা পুনরায় ওই বছরের ৩০ নভেম্বর মানববন্ধনের আয়োজন করেন। এতে সারা দেশের শাখা থেকে ১২০০–এর বেশি কর্মকর্তা অংশ নেন। পরদিন (১ ডিসেম্বর) বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক সঞ্চিয়া বিনতে আলী পদোন্নতির বিষয়ে মৌখিক আশ্বাস দিলে আন্দোলনকারীরা কর্মস্থলে ফিরে যান। পরে কর্মকর্তাদের জানানো হয়, সুপারনিউমারারি পদ্ধতিতে মার্চের মধ্যে পদোন্নতির বিষয়টি সমাধান করা হবে। কিন্তু এখনো তা বাস্তবায়ন হয়নি। অন্যদিকে অগ্রণী, জনতা, রূপালী ও সোনালী ব্যাংকে ইতোমধ্যে মোট ৭,৩১৬ কর্মকর্তা এই পদ্ধতিতে পদোন্নতি পেয়েছেন, যা অর্থ মন্ত্রণালয়ও অনুমোদন করেছে। পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তাদের অভিযোগ, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের এই উদাসীনতা তাদের প্রতি কর্মীবান্ধবহীন মনোভাব ও কর্তৃপক্ষের অনীহারই প্রকাশ। তারা বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট স্বৈরাচার পতনের পর অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পরিবর্তন এলেও কৃষি ব্যাংকে আগের প্রশাসনিক কাঠামো অপরিবর্তিত রয়ে গেছে, যা ন্যায্য দাবি আদায়ের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের অভিযোগ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, মহাব্যবস্থাপক ও মানবসম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক জাহিদ হোসেন একাধিক বৈঠকে আশ্বাস দিলেও বাস্তব পদক্ষেপ না নিয়ে বরং আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী কর্মকর্তাদের হয়রানি ও নিপীড়ন করা হয়েছে। ফলে তারা বাধ্য হয়ে এ বছরের চলতি মাসে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন (রিট মামলা নং: ১৬৪২৮/২০২৫, মো. পনির হোসেন গং বনাম রাষ্ট্র ও অন্যান্য)। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৬ অক্টোবর হাইকোর্ট রুল জারি করে জানতে চেয়েছেন, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের পদোন্নতিতে দেখা দেওয়া অনিয়ম ও অসঙ্গতি কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না। পাশাপাশি আদালত নির্দেশ দিয়েছেন, রুল নিষ্পত্তির আগে কোনো পদোন্নতি কার্যক্রম শুরু করা হলে তা অবৈধ ও আদালত–অবমাননার শামিল হবে। রিটে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক পদোন্নতিতে ১০৭৩ জন কর্মকর্তা (ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা থেকে মূখ্য কর্মকর্তা) এবং ৫১ জন মূখ্য কর্মকর্তা (ঊর্ধ্বতন মূখ্য কর্মকর্তা পদে) অনিয়মের মাধ্যমে পদোন্নতি পেয়েছেন। এদিকে জানা গেছে, পূর্বে দুর্নীতির অভিযোগে আলোচিত মানবসম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক জাহিদ হোসেন এখনো পদোন্নতি কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তারা বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করে যদি পুনরায় অনিয়মের পথে যাওয়া হয়, তাহলে তা আদালতের অবমাননা ও রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল হবে। তারা আশা করছেন, এ বিষয়ে দ্রুত ন্যায়বিচার ও সমাধান মিলবে।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে সাম্প্রতিক সময়ে পদোন্নতি ও প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। পদোন্নতিবঞ্চিত কর্মকর্তাদের একটি অরাজনৈতিক সংগঠন ‘বৈষম্য বিরোধী অফিসার্স ফোরাম’ এর কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক মো. পনির হোসেন ও সদস্য সচিব এরশাদ হোসেনকে শৃঙ্খলাজনিত মোকদ্দমা এবং মুখ্য সংগঠক মো. আরিফ হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া মুখপাত্র তানভীর আহমদকে দুর্গম অঞ্চলে বদলি করা হয় এবং সারাদেশের দুই শতাধিক কর্মকর্তাকে ব্যাখ্যা তলব করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে যে, মো. আরিফ হোসেনকে বরখাস্ত করার নথিতে তাকে ‘ব্যাংক ও রাষ্ট্রবিরোধী’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে, অথচ ব্যাখ্যা তলবপত্রে বলা হয় তিনি ‘রাজনৈতিক কাজে তহবিল সংগ্রহ করেছেন।’ ফরেনসিক বিশ্লেষণ অনুযায়ী, তার ব্যাখ্যাতলবের জবাব প্রদানের পরও বরখাস্ত চিঠি আগেই তৈরি করা হয়েছিল, যা অনেক কর্মকর্তার মধ্যে প্রশ্ন তোলেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মহাব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, সরকারি কর্মকর্তারা যদি সংবিধান বা আইন অনুযায়ী দায়িত্ব না পালন করেন, হাইকোর্ট তাদের ক্ষমতা প্রয়োগ বা অপব্যবহার রোধের জন্য আদেশ দিতে পারে। অন্য একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, এ সিদ্ধান্তের পেছনে ব্যাংকের ফ্যাসিস্ট সরকারের সহযোগী একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা বলছেন, পদোন্নতি ও ন্যায়বিচারের জন্য আন্দোলন এবং আইনি লড়াই চলবে। ভুক্তভোগী কর্মকর্তারা শিগগিরই বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, অর্থ উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার কাছে এ বিষয়ে প্রতিকার চাইবেন। এ ব্যাপারে মো. আরিফ হোসেন ও পনির হোসেনের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে একটি ভুয়া কর্মচারী ইউনিয়নের সভায় জোরপূর্বক কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণ করানোর অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন ব্যাংকের ভিজিল্যান্স স্কোয়াডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা তাসলিমা আক্তার লিনা ও তার স্বামী মিরাজ হোসেন। গত ২০ অক্টোবর প্রধান কার্যালয়ের অডিটোরিয়ামে ‘বিশেষ সাধারণ সভা’ নামে একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের (সিবিএ) নামে তারা এটির আয়োজন করে। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির সহ-শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির খান ও উদ্বোধক হিসেবে জাতীয়তাবাদী শ্রমিকদলের সভাপতি আনোয়ার হোসাইনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তবে তারা প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে ভুয়া নেতাদের কার্যকলাপ সম্পর্কে অবগত হয়ে অনুষ্ঠানটি বয়কট করেন। অভিযোগ রয়েছে, তাসলিমা আক্তার লিনা হেড অফিসের বিভিন্ন দপ্তরের নারী কর্মকর্তা এবং তার স্বামী মিরাজ হোসেন পুরুষ কর্মকর্তাদের ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে ওই সভায় অংশগ্রহণে বাধ্য করেন। অংশগ্রহণে অস্বীকৃতি জানালে বদলি বা পদোন্নতি রোধের হুমকিও দেওয়া হয় বলে জানা গেছে। হেড অফিসের কয়েকজন কর্মকর্তার ভাষ্য অনুযায়ী, লিনা তার স্বামীর প্রভাব খাটিয়ে নারী সহকর্মীদের ওপর দীর্ঘদিন ধরে অনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে আসছেন। কেউ আপত্তি জানালে মিরাজের সহযোগীরা এসে অশালীন আচরণ ও গালিগালাজ করে থাকে বলেও অভিযোগ ওঠে। এ ছাড়া, লিনা ‘উইমেনস ফোরাম’ নামে একটি সংগঠন গড়ে মাসিক চাঁদা সংগ্রহ করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। তার এই কর্মকাণ্ডে অনেক নারী কর্মকর্তা বিব্রতবোধ করলেও চাকরির স্বার্থে নীরব থাকছেন। অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা গেছে, মানবসম্পদ বিভাগের ডিজিএম জাহিদ হোসেনের প্রত্যক্ষ সহায়তায় তাসলিমা আক্তার লিনা ও তার স্বামী মিরাজ ব্যাংকের অভ্যন্তরে প্রভাব বিস্তার করছেন। এ ঘটনায় নারী কর্মকর্তাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তারা কর্তৃপক্ষের কাছে তাসলিমা আক্তার লিনা ও মিরাজ হোসেনকে অবাঞ্ছিত ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন। এ বিষয়ে জানতে তাসলিমা আক্তার লিনার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি নিয়ম অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করছি, অভিযোগগুলো ভিত্তিহীন। অন্যদিকে, মিরাজ হোসেনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে সংঘটিত এজাহারভুক্ত হত্যা মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি ফয়েজ উদ্দিন আহমেদ ও মিরাজ হোসেন পলাতক রয়েছেন। ব্যাংক প্রশাসন বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। খুনের শিকার কৃষি ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী আব্দুল হালিম ছিলেন কৃষি ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের (সিবিএ) সভাপতি। তার গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলায়। পরিবারের ভাষ্য অনুযায়ী, তিনি স্থানীয়ভাবে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। মামলার বিবরণ অনুযায়ী, ১ নম্বর আসামি হিসেবে অবসরপ্রাপ্ত পিয়ন ফয়েজ উদ্দিন আহমেদ এবং ২ নম্বর আসামি মিরাজ হোসেনের নাম রয়েছে। তারা বর্তমানে নিজেদের সিবিএ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দাবি করে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে প্রভাব বিস্তার করছেন। ব্যাংক সূত্রে গেছে, তারা চাঁদাবাজি, ঘুষ আদায় ও নানা অনিয়মের সঙ্গে জড়িত। সূত্র জানায়, ব্যাংকের ভেতরে একটি সিন্ডিকেটের প্রভাবেই এসব আসামিরা এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছেন। এই সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে আছেন মানবসম্পদ বিভাগের ডিজিএম জাহিদ হোসেন। এতে আরও যুক্ত রয়েছেন ডিজিএম সৈয়দ লিয়াকত হোসেন, হাবিব উন নবী, ডিএমডি খালেকুজ্জামান জুয়েল ও ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সঞ্চিয়া বিনতে আলী। গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর রাতে মতিঝিলের বিমান অফিসের সামনে আব্দুল হালিমের মৃত্যু হয়। পরদিন সকালে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠায়। মতিঝিল থানার উপ-পরিদর্শক সজীব কুমার সিং সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে জানান, পুরনো সহকর্মীদের সঙ্গে বিরোধের জেরে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং রাত ১টা ৪০ মিনিটে হাসপাতালে মারা যান। হালিমের ছেলে ফয়সাল বলেন, তার বাবা ২০১৪ সাল থেকে কৃষি ব্যাংক সিবিএর সভাপতি ছিলেন এবং বোয়ালখালী উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করতেন। ইউনিয়নের নেতৃত্ব ও পদ নিয়ে সহকর্মীদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। এ নিয়ে গত নভেম্বরেই মতিঝিল থানায় একটি জিডি (নং ০৫/১১/২০২৪ - ৩৩৫) করেছিলেন তার বাবা। তিনি আরও বলেন, বুধবার রাতে আমার বাবাকে তার অফিসের সহকর্মীরা মারধর করে হত্যা করেছে। সিবিএর বর্তমান সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জানান, ২০১৪ সালে আমরা নির্বাচিত হই। এরপর আর কোনো নির্বাচন হয়নি। কিন্তু গত ৫ আগস্ট বিনা নির্বাচনে নতুন কমিটি ঘোষণা করে আমাদের অফিস দখল করে নেয় ফয়েজ ও মিরাজ। এ নিয়ে মামলা চলছে। মামলার তথ্য অনুযায়ী, আসামিরা অস্থায়ী জামিনে ছিলেন। সম্প্রতি তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। এছাড়া আরও কয়েকজন পলাতক রয়েছেন—যাদের মধ্যে আছেন ড্রাইভার সাইফুল, শাহেদ, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর মেহেদী ও অবসরপ্রাপ্ত ক্লিনার সিরাজ। এদিকে, মামলার ২ নম্বর আসামি মিরাজ হোসেন নৈমিত্তিক ছুটির আবেদন করে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। যদিও ওয়ারেন্টভুক্ত আসামির নৈমিত্তিক ছুটি পাওয়ার কোনো এখতিয়ার নেই। মানবসম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক এ বিষয়ে বলেন, তিনি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন এবং নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। কিন্তু স্থানীয় মুখ্য কার্যালয়ের প্রধান মহাব্যবস্থাপক জানান, তিনি কোনো মন্তব্য করতে চান না। কারণ ব্যবস্থাপনা পরিচালক মন্তব্য না করার নির্দেশ দিয়েছেন। ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। অভ্যন্তরীণ এই পরিস্থিতিতে কৃষি ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
অভিনব কায়দায় চাঁদাবাজিতে নেমেছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের একদল ভুয়া সিবিএ নেতা। অভিযোগ উঠেছে, তারা বিশেষ সাধারণ সভা আয়োজনের নামে সারা দেশের শাখাগুলো থেকে কোটি টাকারও বেশি চাঁদা আদায় করছে। তথ্যসূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন (সিবিএ), রেজি. নং বি-৯৮৫-এর নাম ব্যবহার করে আগামী ২০ অক্টোবর ‘বিশেষ সাধারণ সভা’ শিরোনামে একটি অনুষ্ঠান আয়োজনের ঘোষণা দেয় একদল ভুয়া নেতা। এ উপলক্ষে তারা ব্যাংকের প্রায় ১ হাজার ২৫০টি ইউনিট থেকে ১০-২০ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করে ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার উঠে। গোপন সূত্র জানায়, তাদের নিয়ন্ত্রিত লোকজন শাখা পর্যায়ে বদলি ও পদোন্নতির ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন উপ-মহাব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, তারা এসব কর্মকাণ্ডে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করলেও এ সিন্ডিকেটের ভয়ে কিছু বলার সাহস পাচ্ছেন না। এ ঘটনায় ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগের ডিজিএম জাহিদ হোসেনের প্রত্যক্ষ মদদ ও আস্কারায় চাঁদাবাজি চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রাপ্ত আমন্ত্রণপত্রে দেখা গেছে, ভুয়া সভাপতি দাবিকারী কৃষি ব্যাংকের সাবেক পিয়ন ফয়েজ আহমেদ ও ভুয়া সাধারণ সম্পাদক মিরাজ হোসেন স্বাক্ষরিত পত্রে প্রধান অতিথি হিসেবে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির, উদ্বোধক হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন এবং প্রধান বক্তা হিসেবে সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম খান নাসিমকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। কয়েকজন মহাব্যবস্থাপক জানান, তারা বিভিন্ন শাখা থেকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ পেয়েছেন এবং বিষয়টি ব্যবস্থাপনা পরিচালক অবগত আছেন বলে জানানো হয়েছে। অনুষ্ঠানটি কৃষি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত হওয়ায় তারা কার্যত কিছু করতে পারছেন না। অনুসন্ধানে জানা যায়, এর আগেও একই সিন্ডিকেট শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে প্রায় ৫০ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করেছিল। সেই টাকা তারা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, চাঁদাবাজ ও তাদের মদদদাতাদের সঙ্গে দলের কোনো সম্পর্ক নেই। তারা বহিরাগত অনুপ্রবেশকারী। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এসব ভুয়া সিবিএ নেতাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও অবাঞ্ছিত ঘোষণা দাবি করেছেন। তাদের আশঙ্কা, এসব কর্মকাণ্ডের নেতিবাচক প্রভাব আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে পড়তে পারে।
গুলি লাগার ঘটনাটি মুহূর্তের মধ্যে জীবন–মৃত্যুর ব্যবধান তৈরি করতে পারে। কোথায় গুলি লেগেছে, কী ধরনের গুলি, কত দ্রুত চিকিৎসা পাওয়া গেছে এসবের ওপর নির্ভর করে আহত ব্যক্তির জীবন ঝুঁকি বাড়ে বা কমে। তবে সময়মতো সঠিক পদক্ষেপ নিতে পারলে অনেক ক্ষেত্রেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। নিচে গুলিবিদ্ধ পরিস্থিতিতে প্রথম ৩০ মিনিট বা হাসপাতালে পৌঁছানোর পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত কী করা উচিত, কোন ক্ষেত্রে কী ধরনের চিকিৎসা লাগে সবই ধাপে ধাপে তুলে ধরা হলো। প্রথমেই যা করবেন যদি আপনি বা আশেপাশের কেউ গুলিবিদ্ধ হন, তবে প্রাথমিকভাবে তিনটি কাজ খুব জরুরি ১. নিরাপদ স্থানে যান আহত ব্যক্তি হাঁটতে বা দৌড়াতে পারলে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে সাহায্য করুন। ২. অস্ত্র নিরাপদ করুন দুর্ঘটনাবশত গুলিবিদ্ধ হলে নিশ্চিত করুন অস্ত্র আর কারও ক্ষতি করতে না পারে। ৩. ৯৯৯ এ ফোন করুন নিরাপদে পৌঁছানোর পর সঙ্গে সঙ্গে জরুরি সেবায় ফোন দিন এবং অপারেটরের নির্দেশনা অনুসরণ করুন। দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছানোই জীবন বাঁচানোর সবচেয়ে বড় উপায়। রক্তপাত বন্ধ করা গুলিবিদ্ধ ব্যক্তিকে বাঁচাতে প্রথম কাজ হলো রক্তপাত থামানো। এজন্য রক্ত বের হচ্ছে এমন স্থানে শক্ত চাপ দিতে হবে। রক্তপাত বেশি হলে হাঁটু দিয়ে চেপে ধরার মতো জোরালো চাপও প্রয়োজন হতে পারে। ড্রেসিং ব্যবহার করুন ক্ষতস্থানে পরিষ্কার কাপড়, গজ, তোয়ালে বা যেকোনো কাপড় চেপে ধরুন। এতে রক্ত জমাট বাঁধতে সুবিধা হবে। টুর্নিকেট (সতর্কভাবে) পেশাদার টুর্নিকেট থাকলে ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে ভুলভাবে লাগালে বিপদ বাড়তে পারে। টুর্নিকেট না থাকলে চাপ দেওয়ার ওপরই জোর দিন। মনে রাখবেন আহত ব্যক্তিকে কখনোই পানি, খাবার বা পানীয় দেবেন না। শকে গেলে বমি হতে পারে এবং খাবার-তরল শ্বাসনালিতে ঢুকে যেতে পারে। পা বা মাথা উঁচু করবেন না অনেকেই আহত ব্যক্তির পা উঁচু করে দেন, এটি ভুল। এতে বুক বা পেটের গুরুতর রক্তপাত বেড়ে যেতে পারে এবং শ্বাসকষ্টও তৈরি হতে পারে। ব্যক্তি সচেতন থাকলে তিনি যেভাবে আরাম পান সেভাবে বসতে বা শুতে দিন। অচেতন হলে রিকভারি পজিশন–এ (কাত হয়ে, এক পা ভাঁজ করে) রাখুন। শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুলি লাগলে করণীয় ১. বুকে গুলি হৃদপিণ্ড, ফুসফুস ও প্রধান ধমনী গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে সাকিং চেস্ট উন্ড হয়, এই ক্ষত দিয়ে বাতাস ঢুকে ফুসফুস বসে যেতে পারে। এই অবস্থায় ক্ষতটি প্লাস্টিক জাতীয় কিছু দিয়ে সিল করে দিন যাতে বাতাস ঢুকতে না পারে। শ্বাসকষ্ট বাড়লে সিলটি খুলে দিন। ২. পেটে গুলি তীব্র রক্তপাত, অঙ্গ ক্ষতি এবং অন্ত্র বা পাকস্থলীর ফুটো হয়ে সংক্রমণ হতে পারে। তাই ক্ষতস্থানে শক্ত চাপ দিন। যদি পেট দ্রুত ফুলে যায়, তবে ক্ষত ছোট মনে করে ভুলবেন না। সাধারণত এই ক্ষেত্রে জরুরি অস্ত্রোপচার প্রয়োজন হয়। ৩. হাত–পায়ে গুলি রক্তনালী কেটে যাওয়া, স্নায়ু ক্ষতি এবং হাড় ভেঙে যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে আহত অঙ্গ নাড়ানো উচিত নয়। শুধু রক্তপাত থামানোর ওপর জোর দিন। ৪. ঘাড় বা মেরুদণ্ডে গুলি পক্ষাঘাত পর্যন্ত হতে পারে। তাই রোগীকে কখনোই নড়াবেন না। এতে স্পাইনাল কর্ড ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ঘাড়ের সামনে গুলি লাগলে রক্তপাত বন্ধে চাপ দিন। গুলি লাগলে কেন ক্ষতি ভয়াবহ হয়? বুলেট শুধু একটি ফুটোর মতো ক্ষত তৈরি করে না, শরীরের ভেতরে লাফিয়ে, ঘুরে আরও অনেক স্থানে আঘাত করতে পারে। ক্ষতি নির্ভর করে গুলির অবস্থান, বুলেটের আকার এবং বুলেটের গতির ওপর। চিকিৎসা ও সুস্থ হতে কত সময় লাগে? সহজ গুলিবিদ্ধ ক্ষত (যেখানে অঙ্গ বা অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি) ১০ দিনের মধ্যেও সেরে উঠতে পারে। কিন্তু জটিল আঘাতে সময় অনেক বেশি লাগে। অন্যদিকে মানসিক ধাক্কা ভয়, দুঃস্বপ্ন, খিদে না পাওয়া, অস্থিরতা দীর্ঘদিন থাকতে পারে। এসব হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। আলোচ্য বিষয়গুলো প্রাথমিক করণীয় হিসেবে বলা হয়েছে। মূল চিকিৎসার জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচাল করার মতো ক্ষমতা পৃথিবীর কোনো শক্তির নেই বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব মোহাম্মদ শফিকুল আলম। শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শরীয়তপুরের নড়িয়ার সুরেশ্বর দরবার শরিফ জিয়ারত শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ এখন নির্বাচনের অপেক্ষায় রয়েছে। গত ১৫ বছরের শাসনামলে ভালো নির্বাচন না পাওয়ায় জনগণ একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য অধীর আগ্রহে আছে। যারা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির চেষ্টা করবে বা আইন হাতে তুলে নেবে, তাদের কঠোরভাবে দমন করা হবে। একই সঙ্গে অনৈতিক দাবি তুলে নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করলেও তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষিত দল আওয়ামী লীগের নির্বাচন অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে শফিকুল আলম বলেন, যারা পতিত স্বৈরশাসকের দল, তারা নিজেদের সিদ্ধান্তেই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছে। রাজনৈতিক দল হলে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করত। কিন্তু তারা তা না করে অস্ত্র নিয়ে নিরপরাধ মানুষকে হত্যার পথ বেছে নিয়েছে। তারা ভেবেছিল, আরও মানুষ খুন করলে আগামী ১৫ বছর সবাই নিশ্চুপ থাকবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা নিজেরাই নিজেদের রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে বাইরে ঠেলে দিয়েছে। প্রেস সচিব আরও বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক করতে সরকার সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে রয়েছে। পাশাপাশি প্রোপাগান্ডা, অপপ্রচার ও সহিংসতার বিরুদ্ধে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান তিনি।
ডিজিটাল লটারির মাধ্যমে দেশের সব সরকারি এবং মেট্রোপলিটন ও জেলা-উপজেলা সদরের বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রথম থেকে নবম শ্রেণিতে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে ৩ লাখ ৫ হাজার ৪৯৯ জন শিক্ষার্থী। বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে স্কুলভর্তির লটারি প্রক্রিয়া শুরু হয়। প্রথম ধাপে ৬৮৯টি সরকারি বিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য নির্বাচিত হয়েছে ১ লাখ ৭ হাজার ৫২১ জন এবং ৩ হাজার ৩৬০টি বেসরকারি স্কুলে নির্বাচিত হয়েছে ১ লাখ ৯৭ হাজার ৯৭৮ জন শিক্ষার্থী। লটারি শেষে দুপুরে পৌনে তিনটায় ঢাকা মহানগর ভর্তি কমিটির সদস্য সচিব এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মাধ্যমিক শাখার উপপরিচালক ইউনুস ফারুকী নির্বাচিত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ঘোষণা করেন। তিনি জানান, ডিজিটাল লটারির ফল gsa.teletalk.com.bd ওয়েবসাইটে এবং যেকোনো টেলিটক মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে পাওয়া যাবে। --- সরকারি স্কুলে ফাঁকা ১৪ হাজারের বেশি আসন ৬৮৯টি সরকারি স্কুলে মোট আসন ১ লাখ ২১ হাজার ৫৯৬টি। সেখানে আবেদন করেছিলেন ৭ লাখ ১৯ হাজার ৮৫৮ জন শিক্ষার্থী। লটারি শেষে নির্বাচিত হয়েছে ১ লাখ ৭ হাজার ৫২১ জন, ফলে সরকারি বিদ্যালয়ে ১৪ হাজার ৭৫টি আসন এখনো খালি রয়েছে। --- বেসরকারি স্কুলে ৮ লাখের বেশি আসন শূন্য মহানগর এবং জেলা-উপজেলা সদরের ৩ হাজার ৩৬০টি বেসরকারি বিদ্যালয়ে আসন রয়েছে ১০ লাখ ৭২ হাজার ৯১৭টি। এর বিপরীতে আবেদন করেছেন মাত্র ৩ লাখ ৩৬ হাজার ১৯৬ জন। লটারিতে নির্বাচিত হয়েছে ১ লাখ ৯৭ হাজার ৯৭৮ জন। ফলে বেসরকারি স্কুলগুলোতে ৮ লাখ ৪৩ হাজার ১৬০টি আসন খালি আছে। --- ভর্তি শুরু ১৭ ডিসেম্বর লটারিতে নির্বাচিত শিক্ষার্থীরা ১৭ থেকে ২১ ডিসেম্বর ভর্তি হতে পারবেন। ভর্তি কমিটির সদস্য সচিব ইউনুস ফারুকী জানান, এবারও আগের মতো দুটি অপেক্ষমান তালিকা থাকবে। ২২ থেকে ২৪ ডিসেম্বর প্রথম ওয়েটিং লিস্ট থেকে ভর্তি ২৭ থেকে ৩০ ডিসেম্বর দ্বিতীয় ওয়েটিং লিস্ট থেকে ভর্তি --- উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত শিক্ষাউপদেষ্টা স্কুলে ভর্তির কেন্দ্রীয় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন না শিক্ষা উপদেষ্টা চৌধুরী রফিকুল আবরার, যদিও তাকে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকার কথা জানিয়েছিল মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর। এদিন সকালে সরকারি বিদ্যালয়ের ভর্তির ডিজিটাল লটারি উদ্বোধন করেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের কলেজ শাখার অতিরিক্ত সচিব মো. শাহজাহান মিয়া এবং উন্নয়ন শাখার অতিরিক্ত সচিব বদরুন নাহার। পরে বেসরকারি বিদ্যালয়ের লটারি উদ্বোধন করেন প্রশাসন শাখার অতিরিক্ত সচিব মো. মিজানুর রহমান। টেলিটকের পক্ষ থেকে বিকেল পৌনে তিনটায় ভর্তি কমিটির সদস্য সচিব ইউনুস ফারুকীর হাতে ফলাফল হস্তান্তর করা হয়। --- অনুষ্ঠানে আরও যারা ছিলেন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক বিএম আব্দুল হান্নান, মাধ্যমিক শাখার পরিচালক অধ্যাপক খান মইনুদ্দিন আল মাহমুদ সোহেল, টেলিটকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুরুল মাবুদ চৌধুরী, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের পরিচালক জাহিদ মো. ফিরোজ এবং টেলিটক ডিজিটাল সার্ভিসের ম্যানেজার জাহিদুর রহমান। এছাড়া বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। --- লটারি পদ্ধতি কেন চালু হয় শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপ কমানো এবং কোচিং ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিগত আওয়ামী লীগ সরকার ২০২০ সালে মহামারির সময় প্রথমবারের মতো স্কুলভর্তিতে লটারি পদ্ধতি চালু করে। এরপর থেকে প্রতি বছরই এই পদ্ধতি অনুসরণ করা হচ্ছে।