ছাত্রদল সভাপতি শ্রাবণের একের পর এক নারী কেলেঙ্কারীর অভিযোগ

0
201

খবর ৭১: নারী কেলেঙ্কারী, আথিক কেলেঙ্কারীসহ একের পর এক বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছেন ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবন। এতে যেমন সংগঠনের নেতাকর্মীরা বিব্রত হচ্ছেন তেমনি পুরো দলও ক্ষুব্ধ। সরকার বিরোধী আন্দোলনকে সামনে রেখে এখনই তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে গড়িমসি করলেও যে কোন সময়ে কঠোর সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা জানান, শ্রাবণের নারী কেলেঙ্কারীতে ভয়ে, আতঙ্কে রয়েছেন সংগঠনের নারী নেত্রীরা। তার লোলুপ দৃষ্টি থেকে কেউ রেহাই পাচ্ছে না। যারাই বিরোধীতা করছে, প্রতিবাদ করছে তাদেরকেই পদ বঞ্চিত করার হুশিয়ারি দিচ্ছেন তিনি। এতে অনেক নারী নেত্রী এখন অসহায় হয়ে পড়েছেন। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে ইতি ঘটে যাবে শঙ্কায় বেশিরভাগ নেত্রী সহ্য করছেন এই নির্যাতন। তবে যারাই এর বিরুদ্ধে গেছেন তাকেই পড়তে হয়েছে রোষাণলে। ইডেন কলেজের একাধিক নারী নেত্রী এখন নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন বলে জানা গেছে। এর মধ্যে কমিটির দায়িত্বশীল নেত্রীরাও এখন আর সক্রিয় নেই।
সংগঠনের নেতাকর্মীরা জানান, আওয়ামী লীগ পরিবার থেকে উঠে আসা এই ছাত্র নেতা সিনিয়র সহ সভাপতি থাকা অবস্থাতেই নারী কেলেঙ্কারীতে জড়িয়ে পড়েন। এ নিয়ে একাধিক ভিডিও ভাইরাল হয়। কিন্তু বিভিন্ন লবিং-তদ্বীর করে সে যাত্রায় নিজেকে রক্ষা করতে সক্ষম হন। তাকে রক্ষা করতে অনেক সিন্ডিকেট সক্রিয় ছিলো বিগত দিনে। সম্প্রতি তার আরো বেশ কিছু ভিডিও ও ছবি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে ওঠে। এতে ছাত্রদলের সভাপতি শ্রাবণকে নগ্ন অবস্থায় দেখা গেছে। তার সঙ্গে যে নারীকে দেখা গেছে তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের একজন নারী নেত্রী বলে সংগঠনের নেতাকর্মীরা নিশ্চিত করেছেন। এর বাইরে রাজবাড়ি, চট্টগ্রাম এবং ঢাকার একাধিক নারী নেত্রীর সঙ্গে তার ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।
শুধু নারী কেলেঙ্কারীতেই সীমাবদ্ধ নেই শ্রাবণ। তার বিরুদ্ধে রয়েছে বিস্তর আর্থিক কেলেঙ্কারীর অভিযোগ। রয়েছে গ্রুপ সিন্ডিকেট তৈরীর অভিযোগ। সামনে যা পন তাই খান। কোন বাছবিচার নেই। যার কাছ থেকে বেশি পাবেন তাকেই সমর্থন দেন তিনি। একরকম আর্থিক প্রতিযোগিতা শুরু করেন কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে। আর্থিক কেলেঙ্কারীর মধ্যে তিনি নারায়নগঞ্জ, গাজীপুর জেলা ও মহানগর ছাত্রদল কমিটি গঠনের সময়ে একাধিক নেতার কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা লেনদেন করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। টাকার বিনিময়ে কমিটি গঠন করায় বাদ পড়েছেন দীর্ঘদিনের ত্যাগী ও যোগ্যরা। আর এই কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে গাজীপুরে একাধিকবার সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। নারায়নগঞ্জে ছাত্রদল নেতা সুলতান মাহমুদের কাছ থেকে বড় অঙ্কের টাকা নিয়ে জেলা সভাপতি বানানোর কথা বলেছিলেন। সেটা করতে না পারায় টাকা ফেরত চায় সুলতান। কিন্তু চিরতরে রাজনীতি শেষ করে দেওয়া হবে বলে হুমকি দিয়ে সুলতানের মুখ বন্ধ রাখা হয়েছে বলে তার অনুসারীরা জানিয়েছেন।
বিতর্কিত সাবেক একজন ছাত্রদল নেত্রীর মধ্যস্ততায় কুমিল্লা মহানগর বিএনপির একজন নেতার সঙ্গে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ রয়েছে। জেলা ও মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি প্রার্থীর বিষয়ে অগ্রিম এ লেনদেন হয়। হবিগঞ্জের কমিটিতে একজনের কাছ থেকেই সে ৭ লক্ষ টাকা লেনদেন করেছেন। মানিকগঞ্জ থেকে বড় অংকের টাকা নিয়ে পুরো কমিটি নিজের মতো করে প্রকাশ করেছে। মুন্সিগঞ্জে একজনের কাছ থেকে সে বড় অঙ্কের টাকা, আইফোন নিয়েছেন। ঢাকা মহানগর পূর্বের কমিটির সুপার ফইভে স্থান দেওয়া হবে উল্লেখ করে একজন যুগ্ম আহ্বায়কের কাছ থেকেও কাছ থেকে আইফোন নিয়েছেন শ্রাবণ।
কমিটি গঠনের নাম-গন্ধ না থাকলেও সারাদেশে কমিটি গঠন করা হবে বলে নিয়মিত টাকা সংগ্রহ করছেন শ্রাবণ। এমন অভিযোগ করে সংগঠনের একজন কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি জানান, টাকা ছাড়া কথা বলতেও চান না কেন্দ্রীয় সভাপতি। সাংগঠনিকভাবে পরামর্শ নিতে হলেও আগে তাকে টাকা দিতে হয়। সমস্যা সমাধানে টাকা দিতে হয়। কমিটি ভাঙ্গা-গড়ার জন্য টাকা দিতে হয়। এমনকি থানা, ইউনিয়ন কমিটি গঠনেও তিনি খবরদারী করে থাকেন।
নিজস্ব সিন্ডিকেট গঠনে তৎপরও রয়েছেন শ্রাবণ। অনুসারীদের দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিয়মিত পোস্ট দিতে বাধ্য করেন। যারা যত বেশি পোষ্ট করেন তাকে ততবেশি সুযোগ-সুবিধা দেন তিনি। তার হোয়াটআপ গ্রুপেও নির্দেশনা জারি করেছেন- তাকে নিয়ে বেশি বেশি স্ট্যাটাস দিতে হবে। এতে গ্রুপ পিলিটিপ অনেক ভালো হবে বলে তিনি দাবি করেন। আর যারা এসব পোস্ট দেবে না তারা তার গ্রুপে থাকতে পারবে না বলেও হুশিয়ারি দেন।
এসবের বাইরে নিয়মিত মাদক সেবনেরও অভিযোগ করেছেন সংগঠনের একাধিক নেতাকর্মী। তার মাদক সেবনের তথ্যচিত্রও রয়েছে অনেকের কাছে। তার এই নেশার কারণে কোনদিনই তিনি দুপুরের আগে ঘুম থেকে উঠতে পারেন না। প্রায় সময়ই তিনি কর্মসূচিতে ঠিকসময়ে উপস্থিত হতে পারেন না। বিএনপির হাইকমান্ডের নিদেশেনায় সকালে উপস্থিত থাকতে বলা হলেও তিনি বেশিরভাগ সময় তা করেন না। যদিও উপস্থিত হন তাহলে তিনি ঠিকমতো দাড়িয়ে থাকতেও পারেন না। নেশার ঘোরে তিনি টালমাটাল থাকেন।
এসব বিষয়ে একাধিকবার তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েলকে ফোন দিলেও তিনি ধরেননি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here