জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে করা মামলার রায় ঘোষণা করা হবে আগামী সোমবার (১৭ নভেম্বর)।
বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল রায় ঘোষণার এই দিন ধার্য করেন। ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারপতি মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
মামলার অন্য দুই আসামি হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এবং সাবেক আইজিপি আবদুল্লাহ আল-মামুন।
এর আগে প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম বলেন, রায়ে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের মৃত্যুদণ্ডের প্রত্যাশা করছেন তারা। তবে আসামি থেকে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি আবদুল্লাহ আল-মামুনের ভাগ্য আদালত নির্ধারণ করবেন।
তিনি আরও বলেন, বিচার প্রশ্নবিদ্ধ ও বানচাল করার উদ্দেশ্যে একটি পক্ষ দেশ-বিদেশে অপচেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু ট্রাইব্যুনাল নিরপেক্ষভাবে ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করছে এবং কোনোভাবেই প্রভাবিত হবে না।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়। পুনর্গঠনের পর জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় প্রথম মামলা দায়ের করা হয় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে। গত বছরের ১৭ অক্টোবর পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালের প্রথম বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়। সেদিনই শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়।
প্রাথমিকভাবে এ মামলায় শেখ হাসিনাই একমাত্র আসামি ছিলেন। চলতি বছরের ১৬ মার্চ ট্রাইব্যুনাল প্রসিকিউশনের আবেদনের পর সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে আসামি হিসেবে যুক্ত করার আদেশ দেন।
চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় মোট পাঁচটি অভিযোগ আনে প্রসিকিউশন। গত ১২ মে তদন্ত সংস্থা প্রতিবেদন জমা দেয়। ৮ হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার সেই প্রতিবেদনে রয়েছে ২ হাজার ১৮ পৃষ্ঠার তথ্যসূত্র, ৪ হাজার পাঁচ পৃষ্ঠার দালিলিক প্রমাণাদি ও জব্দতালিকা, এবং ২ হাজার ৭২৪ পৃষ্ঠার শহীদদের তালিকার বিবরণ।
এর ভিত্তিতে ১ জুন ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান ও আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন। ওই দিনই অভিযোগ আমলে নিয়ে ১০ জুলাই তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করার আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।
পরে সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে রাজসাক্ষী হওয়ার আবেদন করলে তা ট্রাইব্যুনাল মঞ্জুর করে। পরে তিনি সাক্ষ্য দেন এবং ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরেন।
গত ২৩ অক্টোবর মামলার চূড়ান্ত শুনানি শেষে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের সর্বোচ্চ শাস্তি প্রার্থনা করেন। চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলামও একই আবেদন জানান। অপরদিকে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন আসামিদের খালাসের আবেদন করেন।
সব পক্ষের বক্তব্য শেষে ট্রাইব্যুনাল জানায়, রায়ের তারিখ ১৭ নভেম্বর ঘোষণা করা হবে।
মামলার অভিযোগসমূহ
প্রথম অভিযোগ:
২০২৪ সালের ১৪ জুলাই গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা আন্দোলনকারী ছাত্র-ছাত্রীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ ও ‘রাজাকারের নাতিপুতি’ উল্লেখ করে উসকানিমূলক বক্তব্য দেন। এর প্ররোচনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সশস্ত্র দলীয় সন্ত্রাসীরা ব্যাপক আক্রমণ চালায়। গুলিতে দেড় হাজারেরও বেশি ছাত্র-জনতা নিহত এবং প্রায় ২৫ হাজার আহত হন।
দ্বিতীয় অভিযোগ:
শেখ হাসিনা হেলিকপ্টার, ড্রোন ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে আন্দোলনকারীদের নির্মূল করার নির্দেশ দেন। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও আইজিপি আবদুল্লাহ আল-মামুন সেই নির্দেশ বাস্তবায়ন করেন। এ নির্দেশে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়।
তৃতীয় অভিযোগ:
রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান ও মামুনকে অভিযুক্ত করা হয়।
চতুর্থ অভিযোগ:
রাজধানীর চানখাঁরপুলে আন্দোলনরত নিরীহ-নিরস্ত্র ছয়জনকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে তিনজনের বিরুদ্ধেই অভিযোগ আনা হয়।
পঞ্চম অভিযোগ:
আশুলিয়ায় নিরীহ ছয়জনকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান ও আবদুল্লাহ আল-মামুনকে অভিযুক্ত করা হয়।
সব অভিযোগে আসামিদের বিরুদ্ধে সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটি বা সর্বোচ্চ দায়ের অভিযোগ আনা হয়েছে।
১৭ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ এই ঐতিহাসিক মামলার রায় ঘোষণা করা হবে।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে পদোন্নতিতে অনিয়ম ও অসঙ্গতির অভিযোগে দায়ের করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে মহামান্য হাইকোর্ট রুল জারি করেছেন। একই সঙ্গে আদালত নির্দেশ দিয়েছেন, রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত পদোন্নতি সংক্রান্ত যেকোনো কার্যক্রম অবৈধ হিসেবে গণ্য হবে। দেশের বৃহত্তম রাষ্ট্রায়ত্ত বিশেষায়িত ব্যাংকটির ১০ম গ্রেডের পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন ধরে ন্যায্য পদোন্নতির দাবিতে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করে আসছিলেন। দাবি আদায়ে বারবার কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন ও মানববন্ধন করেও সাড়া না পেয়ে তারা শেষ পর্যন্ত আদালতের দ্বারস্থ হন। সূত্র জানায়, পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তারা গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর (শনিবার) ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে ছুটির দিনে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন করেন, যাতে গ্রাহকসেবা ব্যাহত না হয়। তাদের দাবির প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করে তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শওকত আলী খান দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন। তবে তিন মাস পার হলেও প্রতিশ্রুত আশ্বাস বাস্তবায়িত না হওয়ায় তারা পুনরায় ওই বছরের ৩০ নভেম্বর মানববন্ধনের আয়োজন করেন। এতে সারা দেশের শাখা থেকে ১২০০–এর বেশি কর্মকর্তা অংশ নেন। পরদিন (১ ডিসেম্বর) বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক সঞ্চিয়া বিনতে আলী পদোন্নতির বিষয়ে মৌখিক আশ্বাস দিলে আন্দোলনকারীরা কর্মস্থলে ফিরে যান। পরে কর্মকর্তাদের জানানো হয়, সুপারনিউমারারি পদ্ধতিতে মার্চের মধ্যে পদোন্নতির বিষয়টি সমাধান করা হবে। কিন্তু এখনো তা বাস্তবায়ন হয়নি। অন্যদিকে অগ্রণী, জনতা, রূপালী ও সোনালী ব্যাংকে ইতোমধ্যে মোট ৭,৩১৬ কর্মকর্তা এই পদ্ধতিতে পদোন্নতি পেয়েছেন, যা অর্থ মন্ত্রণালয়ও অনুমোদন করেছে। পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তাদের অভিযোগ, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের এই উদাসীনতা তাদের প্রতি কর্মীবান্ধবহীন মনোভাব ও কর্তৃপক্ষের অনীহারই প্রকাশ। তারা বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট স্বৈরাচার পতনের পর অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পরিবর্তন এলেও কৃষি ব্যাংকে আগের প্রশাসনিক কাঠামো অপরিবর্তিত রয়ে গেছে, যা ন্যায্য দাবি আদায়ের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের অভিযোগ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, মহাব্যবস্থাপক ও মানবসম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক জাহিদ হোসেন একাধিক বৈঠকে আশ্বাস দিলেও বাস্তব পদক্ষেপ না নিয়ে বরং আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী কর্মকর্তাদের হয়রানি ও নিপীড়ন করা হয়েছে। ফলে তারা বাধ্য হয়ে এ বছরের চলতি মাসে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন (রিট মামলা নং: ১৬৪২৮/২০২৫, মো. পনির হোসেন গং বনাম রাষ্ট্র ও অন্যান্য)। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৬ অক্টোবর হাইকোর্ট রুল জারি করে জানতে চেয়েছেন, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের পদোন্নতিতে দেখা দেওয়া অনিয়ম ও অসঙ্গতি কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না। পাশাপাশি আদালত নির্দেশ দিয়েছেন, রুল নিষ্পত্তির আগে কোনো পদোন্নতি কার্যক্রম শুরু করা হলে তা অবৈধ ও আদালত–অবমাননার শামিল হবে। রিটে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক পদোন্নতিতে ১০৭৩ জন কর্মকর্তা (ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা থেকে মূখ্য কর্মকর্তা) এবং ৫১ জন মূখ্য কর্মকর্তা (ঊর্ধ্বতন মূখ্য কর্মকর্তা পদে) অনিয়মের মাধ্যমে পদোন্নতি পেয়েছেন। এদিকে জানা গেছে, পূর্বে দুর্নীতির অভিযোগে আলোচিত মানবসম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক জাহিদ হোসেন এখনো পদোন্নতি কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তারা বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করে যদি পুনরায় অনিয়মের পথে যাওয়া হয়, তাহলে তা আদালতের অবমাননা ও রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল হবে। তারা আশা করছেন, এ বিষয়ে দ্রুত ন্যায়বিচার ও সমাধান মিলবে।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে সাম্প্রতিক সময়ে পদোন্নতি ও প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। পদোন্নতিবঞ্চিত কর্মকর্তাদের একটি অরাজনৈতিক সংগঠন ‘বৈষম্য বিরোধী অফিসার্স ফোরাম’ এর কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক মো. পনির হোসেন ও সদস্য সচিব এরশাদ হোসেনকে শৃঙ্খলাজনিত মোকদ্দমা এবং মুখ্য সংগঠক মো. আরিফ হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া মুখপাত্র তানভীর আহমদকে দুর্গম অঞ্চলে বদলি করা হয় এবং সারাদেশের দুই শতাধিক কর্মকর্তাকে ব্যাখ্যা তলব করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে যে, মো. আরিফ হোসেনকে বরখাস্ত করার নথিতে তাকে ‘ব্যাংক ও রাষ্ট্রবিরোধী’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে, অথচ ব্যাখ্যা তলবপত্রে বলা হয় তিনি ‘রাজনৈতিক কাজে তহবিল সংগ্রহ করেছেন।’ ফরেনসিক বিশ্লেষণ অনুযায়ী, তার ব্যাখ্যাতলবের জবাব প্রদানের পরও বরখাস্ত চিঠি আগেই তৈরি করা হয়েছিল, যা অনেক কর্মকর্তার মধ্যে প্রশ্ন তোলেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মহাব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, সরকারি কর্মকর্তারা যদি সংবিধান বা আইন অনুযায়ী দায়িত্ব না পালন করেন, হাইকোর্ট তাদের ক্ষমতা প্রয়োগ বা অপব্যবহার রোধের জন্য আদেশ দিতে পারে। অন্য একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, এ সিদ্ধান্তের পেছনে ব্যাংকের ফ্যাসিস্ট সরকারের সহযোগী একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা বলছেন, পদোন্নতি ও ন্যায়বিচারের জন্য আন্দোলন এবং আইনি লড়াই চলবে। ভুক্তভোগী কর্মকর্তারা শিগগিরই বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, অর্থ উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার কাছে এ বিষয়ে প্রতিকার চাইবেন। এ ব্যাপারে মো. আরিফ হোসেন ও পনির হোসেনের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে একটি ভুয়া কর্মচারী ইউনিয়নের সভায় জোরপূর্বক কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণ করানোর অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন ব্যাংকের ভিজিল্যান্স স্কোয়াডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা তাসলিমা আক্তার লিনা ও তার স্বামী মিরাজ হোসেন। গত ২০ অক্টোবর প্রধান কার্যালয়ের অডিটোরিয়ামে ‘বিশেষ সাধারণ সভা’ নামে একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের (সিবিএ) নামে তারা এটির আয়োজন করে। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির সহ-শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির খান ও উদ্বোধক হিসেবে জাতীয়তাবাদী শ্রমিকদলের সভাপতি আনোয়ার হোসাইনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তবে তারা প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে ভুয়া নেতাদের কার্যকলাপ সম্পর্কে অবগত হয়ে অনুষ্ঠানটি বয়কট করেন। অভিযোগ রয়েছে, তাসলিমা আক্তার লিনা হেড অফিসের বিভিন্ন দপ্তরের নারী কর্মকর্তা এবং তার স্বামী মিরাজ হোসেন পুরুষ কর্মকর্তাদের ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে ওই সভায় অংশগ্রহণে বাধ্য করেন। অংশগ্রহণে অস্বীকৃতি জানালে বদলি বা পদোন্নতি রোধের হুমকিও দেওয়া হয় বলে জানা গেছে। হেড অফিসের কয়েকজন কর্মকর্তার ভাষ্য অনুযায়ী, লিনা তার স্বামীর প্রভাব খাটিয়ে নারী সহকর্মীদের ওপর দীর্ঘদিন ধরে অনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে আসছেন। কেউ আপত্তি জানালে মিরাজের সহযোগীরা এসে অশালীন আচরণ ও গালিগালাজ করে থাকে বলেও অভিযোগ ওঠে। এ ছাড়া, লিনা ‘উইমেনস ফোরাম’ নামে একটি সংগঠন গড়ে মাসিক চাঁদা সংগ্রহ করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। তার এই কর্মকাণ্ডে অনেক নারী কর্মকর্তা বিব্রতবোধ করলেও চাকরির স্বার্থে নীরব থাকছেন। অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা গেছে, মানবসম্পদ বিভাগের ডিজিএম জাহিদ হোসেনের প্রত্যক্ষ সহায়তায় তাসলিমা আক্তার লিনা ও তার স্বামী মিরাজ ব্যাংকের অভ্যন্তরে প্রভাব বিস্তার করছেন। এ ঘটনায় নারী কর্মকর্তাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তারা কর্তৃপক্ষের কাছে তাসলিমা আক্তার লিনা ও মিরাজ হোসেনকে অবাঞ্ছিত ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন। এ বিষয়ে জানতে তাসলিমা আক্তার লিনার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি নিয়ম অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করছি, অভিযোগগুলো ভিত্তিহীন। অন্যদিকে, মিরাজ হোসেনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে সংঘটিত এজাহারভুক্ত হত্যা মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি ফয়েজ উদ্দিন আহমেদ ও মিরাজ হোসেন পলাতক রয়েছেন। ব্যাংক প্রশাসন বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। খুনের শিকার কৃষি ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী আব্দুল হালিম ছিলেন কৃষি ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের (সিবিএ) সভাপতি। তার গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলায়। পরিবারের ভাষ্য অনুযায়ী, তিনি স্থানীয়ভাবে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। মামলার বিবরণ অনুযায়ী, ১ নম্বর আসামি হিসেবে অবসরপ্রাপ্ত পিয়ন ফয়েজ উদ্দিন আহমেদ এবং ২ নম্বর আসামি মিরাজ হোসেনের নাম রয়েছে। তারা বর্তমানে নিজেদের সিবিএ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দাবি করে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে প্রভাব বিস্তার করছেন। ব্যাংক সূত্রে গেছে, তারা চাঁদাবাজি, ঘুষ আদায় ও নানা অনিয়মের সঙ্গে জড়িত। সূত্র জানায়, ব্যাংকের ভেতরে একটি সিন্ডিকেটের প্রভাবেই এসব আসামিরা এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছেন। এই সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে আছেন মানবসম্পদ বিভাগের ডিজিএম জাহিদ হোসেন। এতে আরও যুক্ত রয়েছেন ডিজিএম সৈয়দ লিয়াকত হোসেন, হাবিব উন নবী, ডিএমডি খালেকুজ্জামান জুয়েল ও ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সঞ্চিয়া বিনতে আলী। গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর রাতে মতিঝিলের বিমান অফিসের সামনে আব্দুল হালিমের মৃত্যু হয়। পরদিন সকালে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠায়। মতিঝিল থানার উপ-পরিদর্শক সজীব কুমার সিং সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে জানান, পুরনো সহকর্মীদের সঙ্গে বিরোধের জেরে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং রাত ১টা ৪০ মিনিটে হাসপাতালে মারা যান। হালিমের ছেলে ফয়সাল বলেন, তার বাবা ২০১৪ সাল থেকে কৃষি ব্যাংক সিবিএর সভাপতি ছিলেন এবং বোয়ালখালী উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করতেন। ইউনিয়নের নেতৃত্ব ও পদ নিয়ে সহকর্মীদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। এ নিয়ে গত নভেম্বরেই মতিঝিল থানায় একটি জিডি (নং ০৫/১১/২০২৪ - ৩৩৫) করেছিলেন তার বাবা। তিনি আরও বলেন, বুধবার রাতে আমার বাবাকে তার অফিসের সহকর্মীরা মারধর করে হত্যা করেছে। সিবিএর বর্তমান সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জানান, ২০১৪ সালে আমরা নির্বাচিত হই। এরপর আর কোনো নির্বাচন হয়নি। কিন্তু গত ৫ আগস্ট বিনা নির্বাচনে নতুন কমিটি ঘোষণা করে আমাদের অফিস দখল করে নেয় ফয়েজ ও মিরাজ। এ নিয়ে মামলা চলছে। মামলার তথ্য অনুযায়ী, আসামিরা অস্থায়ী জামিনে ছিলেন। সম্প্রতি তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। এছাড়া আরও কয়েকজন পলাতক রয়েছেন—যাদের মধ্যে আছেন ড্রাইভার সাইফুল, শাহেদ, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর মেহেদী ও অবসরপ্রাপ্ত ক্লিনার সিরাজ। এদিকে, মামলার ২ নম্বর আসামি মিরাজ হোসেন নৈমিত্তিক ছুটির আবেদন করে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। যদিও ওয়ারেন্টভুক্ত আসামির নৈমিত্তিক ছুটি পাওয়ার কোনো এখতিয়ার নেই। মানবসম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক এ বিষয়ে বলেন, তিনি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন এবং নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। কিন্তু স্থানীয় মুখ্য কার্যালয়ের প্রধান মহাব্যবস্থাপক জানান, তিনি কোনো মন্তব্য করতে চান না। কারণ ব্যবস্থাপনা পরিচালক মন্তব্য না করার নির্দেশ দিয়েছেন। ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। অভ্যন্তরীণ এই পরিস্থিতিতে কৃষি ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
অভিনব কায়দায় চাঁদাবাজিতে নেমেছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের একদল ভুয়া সিবিএ নেতা। অভিযোগ উঠেছে, তারা বিশেষ সাধারণ সভা আয়োজনের নামে সারা দেশের শাখাগুলো থেকে কোটি টাকারও বেশি চাঁদা আদায় করছে। তথ্যসূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন (সিবিএ), রেজি. নং বি-৯৮৫-এর নাম ব্যবহার করে আগামী ২০ অক্টোবর ‘বিশেষ সাধারণ সভা’ শিরোনামে একটি অনুষ্ঠান আয়োজনের ঘোষণা দেয় একদল ভুয়া নেতা। এ উপলক্ষে তারা ব্যাংকের প্রায় ১ হাজার ২৫০টি ইউনিট থেকে ১০-২০ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করে ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার উঠে। গোপন সূত্র জানায়, তাদের নিয়ন্ত্রিত লোকজন শাখা পর্যায়ে বদলি ও পদোন্নতির ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন উপ-মহাব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, তারা এসব কর্মকাণ্ডে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করলেও এ সিন্ডিকেটের ভয়ে কিছু বলার সাহস পাচ্ছেন না। এ ঘটনায় ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগের ডিজিএম জাহিদ হোসেনের প্রত্যক্ষ মদদ ও আস্কারায় চাঁদাবাজি চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রাপ্ত আমন্ত্রণপত্রে দেখা গেছে, ভুয়া সভাপতি দাবিকারী কৃষি ব্যাংকের সাবেক পিয়ন ফয়েজ আহমেদ ও ভুয়া সাধারণ সম্পাদক মিরাজ হোসেন স্বাক্ষরিত পত্রে প্রধান অতিথি হিসেবে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির, উদ্বোধক হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন এবং প্রধান বক্তা হিসেবে সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম খান নাসিমকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। কয়েকজন মহাব্যবস্থাপক জানান, তারা বিভিন্ন শাখা থেকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ পেয়েছেন এবং বিষয়টি ব্যবস্থাপনা পরিচালক অবগত আছেন বলে জানানো হয়েছে। অনুষ্ঠানটি কৃষি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত হওয়ায় তারা কার্যত কিছু করতে পারছেন না। অনুসন্ধানে জানা যায়, এর আগেও একই সিন্ডিকেট শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে প্রায় ৫০ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করেছিল। সেই টাকা তারা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, চাঁদাবাজ ও তাদের মদদদাতাদের সঙ্গে দলের কোনো সম্পর্ক নেই। তারা বহিরাগত অনুপ্রবেশকারী। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এসব ভুয়া সিবিএ নেতাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও অবাঞ্ছিত ঘোষণা দাবি করেছেন। তাদের আশঙ্কা, এসব কর্মকাণ্ডের নেতিবাচক প্রভাব আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে পড়তে পারে।
সামনের দিনগুলো দেশের জন্য খুব একটা অনুকূল নয় উল্লেখ করে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, সামনে কঠিন সময় অপেক্ষা করছে, বিভিন্ন জায়গায় নানা ষড়যন্ত্র চলছে। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপিই এ ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে সক্ষম। রোববার (৭ ডিসেম্বর) ফার্মগেটের কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন। বিজয়ের মাস উপলক্ষে আয়োজন করা এ কর্মসূচিতে জেলা পর্যায়ের হাজারের বেশি ছাত্রদল নেতা অংশ নেন। তারেক রহমান বলেন, ৫ আগস্টের পর থেকেই তিনি বলে আসছেন—সামনের সময় ভালো নয়। তবে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠাই সব ষড়যন্ত্র রুখে দেওয়ার একমাত্র উপায়। জনগণের মতামত প্রতিষ্ঠিত করতে পারলে যেকোনো বাধা অতিক্রম করা সম্ভব বলে তিনি মন্তব্য করেন। দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নকে তিনি সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ দুটি কাজ বলে আখ্যা দেন। বলেন, সরকার গঠনের সুযোগ পেলে প্রথমেই দুর্নীতি ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির লাগাম টেনে ধরতে হবে, না হলে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষিসহ সব উন্নয়ন পরিকল্পনা বাধাগ্রস্ত হবে। তিনি অভিযোগ করেন, অতীতে যেমন স্বৈরাচারের সময় আদালতকে প্রভাবিত করা হতো, এখন আদালত অনেকটাই স্বাধীন এবং সেই আদালতও দেখিয়েছে—বিএনপির বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগই ছিল প্রোপাগান্ডা। বিএনপিই দেশকে দুর্নীতি থেকে মুক্ত করতে সক্ষম, অতীতে যেমন করেছে। সম্প্রতি কিছু গোষ্ঠীর ‘অমুককে দেখুন’ মন্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, যাদের কথা বলা হচ্ছে তাদের দেশবাসী ১৯৭১ সালেই দেখেছে—কীভাবে লাখো মানুষ হত্যা করেছে এবং মা-বোনদের ইজ্জত লুট করেছে। রাজনৈতিক স্বার্থে এদের ভূমিকা জাতি ভুলে যায়নি বলে মন্তব্য করেন তিনি। একটি ধর্মভিত্তিক দলের জান্নাতের গ্যারেন্টি দেওয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যেটার মালিক আল্লাহ, সেটি নিয়ে কেউ প্রতিশ্রুতি দিতে পারে না। এমন দাবি শিরিকের পর্যায়ে পড়ে। ছাত্রদল নেতাদের তিনি বলেন, ঘরে ঘরে গিয়ে মানুষকে জানাতে হবে—এ ধরনের কথায় বিশ্বাস করলে তারাও শিরিকে জড়িত হবে। দেশ গড়ার পরিকল্পনা সম্পর্কে তারেক রহমান বলেন, বিএনপি বাংলাদেশকে সিঙ্গাপুর বা মালয়েশিয়ার মতো করতে চায় না; বরং চায় একটি স্বাবলম্বী বাংলাদেশ—যেখানে কর্মসংস্থান থাকবে, মানুষ শান্তিতে বাঁচবে এবং দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে থাকবে। তিনি ছাত্রদলকে নির্দেশ দেন মানুষের দোরগোড়ায় যেতে, ঐক্য গড়ে তুলতে এবং দেশের ভবিষ্যৎ গঠনে ভূমিকা রাখতে। বাধা ও কঠিন সময় আসবে, তবু জনগণের শক্তিকে কেউ দমন করতে পারবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রুহুল কবির রিজভী, সঞ্চালনা করেন হাবিব উন নবী খান সোহেল। বিএনপি ও ছাত্রদলের ঊর্ধ্বতন নেতারা বক্তব্য রাখেন এবং পরে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন আলোচকরা।
অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মোহাম্মদ তৌহিদ হোসেন বলেছেন, ভাষা শিক্ষা ও প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের অভাবে বিদেশে বাংলাদেশিদের বেতন অন্য দেশের শ্রমিকদের তুলনায় ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত কম। অনেক ক্ষেত্রে বাংলাদেশিদের ৫-৭ গুণ বেশি টাকা খরচ করে বিদেশে যেতে হয়। এটিকে তিনি রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা হিসেবে উল্লেখ করেন। রোববার (৭ ডিসেম্বর) দুপুরে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার মাগুড়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। বিদ্যালয়টির সাবেক কৃতী শিক্ষার্থী হিসেবে তিনি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, ‘গত ৬০ বছরে বাংলাদেশের শিক্ষায় অসাধারণ পরিবর্তন ঘটেছে, বিশেষ করে নারী শিক্ষার ব্যাপক অগ্রগতি হয়েছে। এখন গ্রামাঞ্চলের অধিকাংশ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের অর্ধেকের বেশি নারী।’ তবে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ নিয়ে তিনি অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি উল্লেখ করেন, ‘শিক্ষাখাতে মোট বাজেটের ২৫ শতাংশ বরাদ্দ থাকা প্রয়োজন। শুধু অর্থ বরাদ্দ করলেই হবে না, বরং সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।’ পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘অতীতে শিক্ষকদের বেতন-ভাতা কম ছিল, বর্তমানে কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে শিক্ষার মান উন্নয়ন এবং শিক্ষকদের দক্ষতা বৃদ্ধির ওপর আরও জোর দিতে হবে। এক সময় লেখাপড়া ছাড়াই অনেক ক্ষেত্রে পাস করিয়ে দেওয়ার প্রবণতা ছিল। বর্তমানে সে অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা চলছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘মানবসম্পদই দেশের সবচেয়ে বড় সম্পদ। তাই জনসম্পদকে দক্ষ করে গড়ে তুলতে জিডিপির কমপক্ষে ৫ শতাংশ শিক্ষা খাতে ব্যয় করা জরুরি।’ মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল কুদ্দুস। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নাইয়িরুজ্জামান, পুলিশ সুপার শেখ জাহিদুল ইসলাম (পিপিএম), ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী অফিসার তনিমা জামান তন্বী, মাগুড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আখতারুজ্জামান মিঠু প্রমুখ।
আওয়ামী লীগের শাসনামলে সংঘটিত গুম ও নির্যাতনের অভিযোগে দায়ীদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার শুনানিতে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম দাবি করেছেন, গুমের নির্দেশ সরাসরি দিতেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সেই নির্দেশ বাস্তবায়ন করতেন তার প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক। রোববার (৭ ডিসেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১–এ জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেল (জেআইসি) বা আয়নাঘরে সংঘটিত গুম ও নির্যাতনসংক্রান্ত মামলার অভিযোগ গঠন শুনানিতে তিনি এ মন্তব্য করেন। দুপুরে ট্রাইব্যুনাল-১–এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের প্যানেলে শুনানি শুরু হয়। অন্য দুই সদস্য ছিলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। মামলায় ইতোমধ্যে ডিজিএফআইয়ের তিন সাবেক সেনা কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করে সেনানিবাসের বিশেষ কারাগার থেকে কড়া নিরাপত্তায় ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়েছে। তারা হলেন মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসেন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান সিদ্দিকী এবং ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ তানভির মাজাহার সিদ্দিকী। একই মামলায় পলাতক আসামিদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, ডিজিএফআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক লে. জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ আকবর হোসেন, মেজর জেনারেল (অব.) সাইফুল আবেদিন, লে. জেনারেল (অব.) মো. সাইফুল আলম, লে. জেনারেল তাবরেজ শামস চৌধুরী, মেজর জেনারেল (অব.) হামিদুল হক, মেজর জেনারেল তৌহিদুল ইসলাম, মেজর জেনারেল কবির আহাম্মদ এবং লে. কর্নেল (অব.) মখসুরুল হক। পলাতকদের জন্য ট্রাইব্যুনাল স্টেট ডিফেন্স নিয়োগ করেছে। প্রথমে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেডআই খান পান্না শেখ হাসিনার পক্ষে দায়িত্ব নিলেও পরে অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে তিনি সরে দাঁড়ান এবং তার স্থলাভিষিক্ত হন মো. আমির হোসেন। ৮ অক্টোবর প্রসিকিউশন ১৩ জনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে, যা আদালত আমলে নিয়ে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। পলাতক আসামিদের হাজিরের জন্য সাত দিনের মধ্যে জাতীয়ভাবে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।