রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশেই হত্যাকাণ্ডের সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। চলতি বছরের প্রথম ১০ মাসে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের হিসাব অনুযায়ী রাজধানীতে ঘটেছে ১৯৮টি হত্যাকাণ্ড। তবে পুলিশ সদর দপ্তর বলছে, একই সময় ঢাকায় হত্যাকাণ্ডের সংখ্যা ৩৭১টি। দুই সংস্থার পরিসংখ্যানে পার্থক্য থাকলেও দু’পক্ষই জানাচ্ছে হত্যাকাণ্ডের হার বেড়েছে।
ডিএমপির তথ্য অনুযায়ী, প্রতি মাসে গড়ে প্রায় ২০টি করে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে রাজধানীতে। অন্যদিকে পুলিশ সদর দপ্তরের হিসাবে প্রতি মাসে গড়ে ৩১টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।
ডিএমপির গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপ-কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানান, পুলিশের পক্ষ থেকে বেশির ভাগ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করা হয়েছে। সর্বশেষ পল্লবীতে যুবদল নেতা গোলাম কিবরিয়া হত্যার ঘটনায় বিস্তারিত তদন্ত চলছে এবং একজনকে আটক করা হয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে ঘটনার সম্পূর্ণ রহস্য বের করা হবে বলে তিনি জানান।
পুলিশ সদর দপ্তরের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সারা দেশে হত্যাকাণ্ডের সংখ্যা বাড়ছে। ঢাকায় এই বৃদ্ধি আরও বেশি উদ্বেগজনক। সাম্প্রতিক সময়ে আলোচিত বেশ কিছু হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, যার মধ্যে রাজনৈতিক নেতা, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি এবং এলাকা দখলসংক্রান্ত বিরোধ উল্লেখযোগ্য কারণ হিসেবে উঠে এসেছে।
সদর দপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, এ বছরের প্রথম ছয় মাসে দেশে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে ১ হাজার ৯৩১টি। যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৯৮টি বেশি। ২০২৩ সালের তুলনায় এই সংখ্যা বেড়েছে ৪১৬টি।
রাজধানীতে এ বছরের প্রথম ছয় মাসে হত্যাকাণ্ড হয়েছে ২১৭টি, যেখানে গত বছর একই সময়ে সংখ্যা ছিল ৮৬। অর্থাৎ এক বছরে ১৩১টি হত্যাকাণ্ড বেড়েছে। আর ২০২৩ সালের তুলনায় বেড়েছে ১১৯টি।
মাসভিত্তিক বিচারে এ বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ঢাকায় হত্যাকাণ্ডের সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ৩৬, ৩৮, ৩৩, ২৯, ৩২ এবং ৪৯ সব মিলিয়ে ২১৭টি। গত বছর একই সময়ে তা ছিল ৮৬টি এবং তার আগের বছরে ৯৮টি।
একইভাবে সারা দেশে এ বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ২৯৪, ৩০০, ৩১৬, ৩৩৬, ৩৪১ ও ৩৪৪ জন হত্যাকাণ্ডের শিকার হন মোট ১ হাজার ৯৩১ জন। গত বছর একই সময়ে এই সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৫৩৩ জন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক তৌহিদুল হক বলেন, অপরাধীরা পার পেয়ে গেলে অপরাধ বাড়ে। দ্রুত বিচার ও আইনের যথাযথ প্রয়োগ না থাকা গুরুতর কারণ। অপরাধ দমনে সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিচয়ের ঊর্ধ্বে উঠে কাজ করতে হবে। কিছু এলাকায় ভাসমান জনসংখ্যা বেশি হওয়া এবং স্থানীয়দের দায়িত্বহীনতাও অপরাধ বাড়ার অন্যতম কারণ বলে তিনি উল্লেখ করেন। তার মতে, পুলিশকে আরও কার্যকরভাবে গড়ে তোলা জরুরি।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে পদোন্নতিতে অনিয়ম ও অসঙ্গতির অভিযোগে দায়ের করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে মহামান্য হাইকোর্ট রুল জারি করেছেন। একই সঙ্গে আদালত নির্দেশ দিয়েছেন, রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত পদোন্নতি সংক্রান্ত যেকোনো কার্যক্রম অবৈধ হিসেবে গণ্য হবে। দেশের বৃহত্তম রাষ্ট্রায়ত্ত বিশেষায়িত ব্যাংকটির ১০ম গ্রেডের পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন ধরে ন্যায্য পদোন্নতির দাবিতে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করে আসছিলেন। দাবি আদায়ে বারবার কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন ও মানববন্ধন করেও সাড়া না পেয়ে তারা শেষ পর্যন্ত আদালতের দ্বারস্থ হন। সূত্র জানায়, পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তারা গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর (শনিবার) ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে ছুটির দিনে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন করেন, যাতে গ্রাহকসেবা ব্যাহত না হয়। তাদের দাবির প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করে তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শওকত আলী খান দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন। তবে তিন মাস পার হলেও প্রতিশ্রুত আশ্বাস বাস্তবায়িত না হওয়ায় তারা পুনরায় ওই বছরের ৩০ নভেম্বর মানববন্ধনের আয়োজন করেন। এতে সারা দেশের শাখা থেকে ১২০০–এর বেশি কর্মকর্তা অংশ নেন। পরদিন (১ ডিসেম্বর) বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক সঞ্চিয়া বিনতে আলী পদোন্নতির বিষয়ে মৌখিক আশ্বাস দিলে আন্দোলনকারীরা কর্মস্থলে ফিরে যান। পরে কর্মকর্তাদের জানানো হয়, সুপারনিউমারারি পদ্ধতিতে মার্চের মধ্যে পদোন্নতির বিষয়টি সমাধান করা হবে। কিন্তু এখনো তা বাস্তবায়ন হয়নি। অন্যদিকে অগ্রণী, জনতা, রূপালী ও সোনালী ব্যাংকে ইতোমধ্যে মোট ৭,৩১৬ কর্মকর্তা এই পদ্ধতিতে পদোন্নতি পেয়েছেন, যা অর্থ মন্ত্রণালয়ও অনুমোদন করেছে। পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তাদের অভিযোগ, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের এই উদাসীনতা তাদের প্রতি কর্মীবান্ধবহীন মনোভাব ও কর্তৃপক্ষের অনীহারই প্রকাশ। তারা বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট স্বৈরাচার পতনের পর অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পরিবর্তন এলেও কৃষি ব্যাংকে আগের প্রশাসনিক কাঠামো অপরিবর্তিত রয়ে গেছে, যা ন্যায্য দাবি আদায়ের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের অভিযোগ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, মহাব্যবস্থাপক ও মানবসম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক জাহিদ হোসেন একাধিক বৈঠকে আশ্বাস দিলেও বাস্তব পদক্ষেপ না নিয়ে বরং আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী কর্মকর্তাদের হয়রানি ও নিপীড়ন করা হয়েছে। ফলে তারা বাধ্য হয়ে এ বছরের চলতি মাসে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন (রিট মামলা নং: ১৬৪২৮/২০২৫, মো. পনির হোসেন গং বনাম রাষ্ট্র ও অন্যান্য)। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৬ অক্টোবর হাইকোর্ট রুল জারি করে জানতে চেয়েছেন, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের পদোন্নতিতে দেখা দেওয়া অনিয়ম ও অসঙ্গতি কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না। পাশাপাশি আদালত নির্দেশ দিয়েছেন, রুল নিষ্পত্তির আগে কোনো পদোন্নতি কার্যক্রম শুরু করা হলে তা অবৈধ ও আদালত–অবমাননার শামিল হবে। রিটে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক পদোন্নতিতে ১০৭৩ জন কর্মকর্তা (ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা থেকে মূখ্য কর্মকর্তা) এবং ৫১ জন মূখ্য কর্মকর্তা (ঊর্ধ্বতন মূখ্য কর্মকর্তা পদে) অনিয়মের মাধ্যমে পদোন্নতি পেয়েছেন। এদিকে জানা গেছে, পূর্বে দুর্নীতির অভিযোগে আলোচিত মানবসম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক জাহিদ হোসেন এখনো পদোন্নতি কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তারা বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করে যদি পুনরায় অনিয়মের পথে যাওয়া হয়, তাহলে তা আদালতের অবমাননা ও রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল হবে। তারা আশা করছেন, এ বিষয়ে দ্রুত ন্যায়বিচার ও সমাধান মিলবে।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে সাম্প্রতিক সময়ে পদোন্নতি ও প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। পদোন্নতিবঞ্চিত কর্মকর্তাদের একটি অরাজনৈতিক সংগঠন ‘বৈষম্য বিরোধী অফিসার্স ফোরাম’ এর কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক মো. পনির হোসেন ও সদস্য সচিব এরশাদ হোসেনকে শৃঙ্খলাজনিত মোকদ্দমা এবং মুখ্য সংগঠক মো. আরিফ হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া মুখপাত্র তানভীর আহমদকে দুর্গম অঞ্চলে বদলি করা হয় এবং সারাদেশের দুই শতাধিক কর্মকর্তাকে ব্যাখ্যা তলব করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে যে, মো. আরিফ হোসেনকে বরখাস্ত করার নথিতে তাকে ‘ব্যাংক ও রাষ্ট্রবিরোধী’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে, অথচ ব্যাখ্যা তলবপত্রে বলা হয় তিনি ‘রাজনৈতিক কাজে তহবিল সংগ্রহ করেছেন।’ ফরেনসিক বিশ্লেষণ অনুযায়ী, তার ব্যাখ্যাতলবের জবাব প্রদানের পরও বরখাস্ত চিঠি আগেই তৈরি করা হয়েছিল, যা অনেক কর্মকর্তার মধ্যে প্রশ্ন তোলেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মহাব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, সরকারি কর্মকর্তারা যদি সংবিধান বা আইন অনুযায়ী দায়িত্ব না পালন করেন, হাইকোর্ট তাদের ক্ষমতা প্রয়োগ বা অপব্যবহার রোধের জন্য আদেশ দিতে পারে। অন্য একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, এ সিদ্ধান্তের পেছনে ব্যাংকের ফ্যাসিস্ট সরকারের সহযোগী একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা বলছেন, পদোন্নতি ও ন্যায়বিচারের জন্য আন্দোলন এবং আইনি লড়াই চলবে। ভুক্তভোগী কর্মকর্তারা শিগগিরই বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, অর্থ উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার কাছে এ বিষয়ে প্রতিকার চাইবেন। এ ব্যাপারে মো. আরিফ হোসেন ও পনির হোসেনের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে একটি ভুয়া কর্মচারী ইউনিয়নের সভায় জোরপূর্বক কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণ করানোর অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন ব্যাংকের ভিজিল্যান্স স্কোয়াডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা তাসলিমা আক্তার লিনা ও তার স্বামী মিরাজ হোসেন। গত ২০ অক্টোবর প্রধান কার্যালয়ের অডিটোরিয়ামে ‘বিশেষ সাধারণ সভা’ নামে একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের (সিবিএ) নামে তারা এটির আয়োজন করে। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির সহ-শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির খান ও উদ্বোধক হিসেবে জাতীয়তাবাদী শ্রমিকদলের সভাপতি আনোয়ার হোসাইনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তবে তারা প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে ভুয়া নেতাদের কার্যকলাপ সম্পর্কে অবগত হয়ে অনুষ্ঠানটি বয়কট করেন। অভিযোগ রয়েছে, তাসলিমা আক্তার লিনা হেড অফিসের বিভিন্ন দপ্তরের নারী কর্মকর্তা এবং তার স্বামী মিরাজ হোসেন পুরুষ কর্মকর্তাদের ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে ওই সভায় অংশগ্রহণে বাধ্য করেন। অংশগ্রহণে অস্বীকৃতি জানালে বদলি বা পদোন্নতি রোধের হুমকিও দেওয়া হয় বলে জানা গেছে। হেড অফিসের কয়েকজন কর্মকর্তার ভাষ্য অনুযায়ী, লিনা তার স্বামীর প্রভাব খাটিয়ে নারী সহকর্মীদের ওপর দীর্ঘদিন ধরে অনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে আসছেন। কেউ আপত্তি জানালে মিরাজের সহযোগীরা এসে অশালীন আচরণ ও গালিগালাজ করে থাকে বলেও অভিযোগ ওঠে। এ ছাড়া, লিনা ‘উইমেনস ফোরাম’ নামে একটি সংগঠন গড়ে মাসিক চাঁদা সংগ্রহ করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। তার এই কর্মকাণ্ডে অনেক নারী কর্মকর্তা বিব্রতবোধ করলেও চাকরির স্বার্থে নীরব থাকছেন। অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা গেছে, মানবসম্পদ বিভাগের ডিজিএম জাহিদ হোসেনের প্রত্যক্ষ সহায়তায় তাসলিমা আক্তার লিনা ও তার স্বামী মিরাজ ব্যাংকের অভ্যন্তরে প্রভাব বিস্তার করছেন। এ ঘটনায় নারী কর্মকর্তাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তারা কর্তৃপক্ষের কাছে তাসলিমা আক্তার লিনা ও মিরাজ হোসেনকে অবাঞ্ছিত ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন। এ বিষয়ে জানতে তাসলিমা আক্তার লিনার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি নিয়ম অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করছি, অভিযোগগুলো ভিত্তিহীন। অন্যদিকে, মিরাজ হোসেনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে সংঘটিত এজাহারভুক্ত হত্যা মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি ফয়েজ উদ্দিন আহমেদ ও মিরাজ হোসেন পলাতক রয়েছেন। ব্যাংক প্রশাসন বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। খুনের শিকার কৃষি ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী আব্দুল হালিম ছিলেন কৃষি ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের (সিবিএ) সভাপতি। তার গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলায়। পরিবারের ভাষ্য অনুযায়ী, তিনি স্থানীয়ভাবে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। মামলার বিবরণ অনুযায়ী, ১ নম্বর আসামি হিসেবে অবসরপ্রাপ্ত পিয়ন ফয়েজ উদ্দিন আহমেদ এবং ২ নম্বর আসামি মিরাজ হোসেনের নাম রয়েছে। তারা বর্তমানে নিজেদের সিবিএ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দাবি করে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে প্রভাব বিস্তার করছেন। ব্যাংক সূত্রে গেছে, তারা চাঁদাবাজি, ঘুষ আদায় ও নানা অনিয়মের সঙ্গে জড়িত। সূত্র জানায়, ব্যাংকের ভেতরে একটি সিন্ডিকেটের প্রভাবেই এসব আসামিরা এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছেন। এই সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে আছেন মানবসম্পদ বিভাগের ডিজিএম জাহিদ হোসেন। এতে আরও যুক্ত রয়েছেন ডিজিএম সৈয়দ লিয়াকত হোসেন, হাবিব উন নবী, ডিএমডি খালেকুজ্জামান জুয়েল ও ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সঞ্চিয়া বিনতে আলী। গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর রাতে মতিঝিলের বিমান অফিসের সামনে আব্দুল হালিমের মৃত্যু হয়। পরদিন সকালে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠায়। মতিঝিল থানার উপ-পরিদর্শক সজীব কুমার সিং সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে জানান, পুরনো সহকর্মীদের সঙ্গে বিরোধের জেরে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং রাত ১টা ৪০ মিনিটে হাসপাতালে মারা যান। হালিমের ছেলে ফয়সাল বলেন, তার বাবা ২০১৪ সাল থেকে কৃষি ব্যাংক সিবিএর সভাপতি ছিলেন এবং বোয়ালখালী উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করতেন। ইউনিয়নের নেতৃত্ব ও পদ নিয়ে সহকর্মীদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। এ নিয়ে গত নভেম্বরেই মতিঝিল থানায় একটি জিডি (নং ০৫/১১/২০২৪ - ৩৩৫) করেছিলেন তার বাবা। তিনি আরও বলেন, বুধবার রাতে আমার বাবাকে তার অফিসের সহকর্মীরা মারধর করে হত্যা করেছে। সিবিএর বর্তমান সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জানান, ২০১৪ সালে আমরা নির্বাচিত হই। এরপর আর কোনো নির্বাচন হয়নি। কিন্তু গত ৫ আগস্ট বিনা নির্বাচনে নতুন কমিটি ঘোষণা করে আমাদের অফিস দখল করে নেয় ফয়েজ ও মিরাজ। এ নিয়ে মামলা চলছে। মামলার তথ্য অনুযায়ী, আসামিরা অস্থায়ী জামিনে ছিলেন। সম্প্রতি তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। এছাড়া আরও কয়েকজন পলাতক রয়েছেন—যাদের মধ্যে আছেন ড্রাইভার সাইফুল, শাহেদ, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর মেহেদী ও অবসরপ্রাপ্ত ক্লিনার সিরাজ। এদিকে, মামলার ২ নম্বর আসামি মিরাজ হোসেন নৈমিত্তিক ছুটির আবেদন করে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। যদিও ওয়ারেন্টভুক্ত আসামির নৈমিত্তিক ছুটি পাওয়ার কোনো এখতিয়ার নেই। মানবসম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক এ বিষয়ে বলেন, তিনি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন এবং নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। কিন্তু স্থানীয় মুখ্য কার্যালয়ের প্রধান মহাব্যবস্থাপক জানান, তিনি কোনো মন্তব্য করতে চান না। কারণ ব্যবস্থাপনা পরিচালক মন্তব্য না করার নির্দেশ দিয়েছেন। ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। অভ্যন্তরীণ এই পরিস্থিতিতে কৃষি ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
অভিনব কায়দায় চাঁদাবাজিতে নেমেছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের একদল ভুয়া সিবিএ নেতা। অভিযোগ উঠেছে, তারা বিশেষ সাধারণ সভা আয়োজনের নামে সারা দেশের শাখাগুলো থেকে কোটি টাকারও বেশি চাঁদা আদায় করছে। তথ্যসূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন (সিবিএ), রেজি. নং বি-৯৮৫-এর নাম ব্যবহার করে আগামী ২০ অক্টোবর ‘বিশেষ সাধারণ সভা’ শিরোনামে একটি অনুষ্ঠান আয়োজনের ঘোষণা দেয় একদল ভুয়া নেতা। এ উপলক্ষে তারা ব্যাংকের প্রায় ১ হাজার ২৫০টি ইউনিট থেকে ১০-২০ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করে ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার উঠে। গোপন সূত্র জানায়, তাদের নিয়ন্ত্রিত লোকজন শাখা পর্যায়ে বদলি ও পদোন্নতির ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন উপ-মহাব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, তারা এসব কর্মকাণ্ডে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করলেও এ সিন্ডিকেটের ভয়ে কিছু বলার সাহস পাচ্ছেন না। এ ঘটনায় ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগের ডিজিএম জাহিদ হোসেনের প্রত্যক্ষ মদদ ও আস্কারায় চাঁদাবাজি চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রাপ্ত আমন্ত্রণপত্রে দেখা গেছে, ভুয়া সভাপতি দাবিকারী কৃষি ব্যাংকের সাবেক পিয়ন ফয়েজ আহমেদ ও ভুয়া সাধারণ সম্পাদক মিরাজ হোসেন স্বাক্ষরিত পত্রে প্রধান অতিথি হিসেবে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির, উদ্বোধক হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন এবং প্রধান বক্তা হিসেবে সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম খান নাসিমকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। কয়েকজন মহাব্যবস্থাপক জানান, তারা বিভিন্ন শাখা থেকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ পেয়েছেন এবং বিষয়টি ব্যবস্থাপনা পরিচালক অবগত আছেন বলে জানানো হয়েছে। অনুষ্ঠানটি কৃষি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত হওয়ায় তারা কার্যত কিছু করতে পারছেন না। অনুসন্ধানে জানা যায়, এর আগেও একই সিন্ডিকেট শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে প্রায় ৫০ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করেছিল। সেই টাকা তারা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, চাঁদাবাজ ও তাদের মদদদাতাদের সঙ্গে দলের কোনো সম্পর্ক নেই। তারা বহিরাগত অনুপ্রবেশকারী। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এসব ভুয়া সিবিএ নেতাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও অবাঞ্ছিত ঘোষণা দাবি করেছেন। তাদের আশঙ্কা, এসব কর্মকাণ্ডের নেতিবাচক প্রভাব আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে পড়তে পারে।
রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে বিয়ের প্রতিশ্রুতির প্রলোভন দেখিয়ে এক তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগে বাংলাদেশ ‘এ’ দলের পেস বোলিং অলরাউন্ডার তোফায়েল আহমেদ রায়হান অভিযুক্ত হয়েছেন। মামলার তদন্তে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ার পর সম্প্রতি ঢাকার আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে পুলিশ। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিয়ের আশ্বাস দেখিয়ে তোফায়েল একাধিকবার বিভিন্ন স্থানে নিয়ে তরুণীকে ধর্ষণ করেছেন। বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও গুলশান থানার উপপরিদর্শক মো. সামিউল ইসলাম নিশ্চিত করেন যে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(১) ধারায় আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, সাক্ষীরা আদালতে উপস্থিত হয়ে ঘটনার সত্যতা তুলে ধরবেন। মামলার সূত্র মতে, চলতি বছরের জানুয়ারিতে ফেসবুকে পরিচয়ের মাধ্যমে তোফায়েল ও তরুণীর যোগাযোগ শুরু হয়। মেসেঞ্জারে নিয়মিত আলাপের এক পর্যায়ে তোফায়েল প্রেমের প্রস্তাব দেন। তরুণী রাজি না হওয়ায় বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সম্পর্কের বিষয়ে সম্মত করান তিনি। এরপর ৩১ জানুয়ারি স্ত্রী পরিচয়ে ওই তরুণীকে গুলশানের একটি হোটেলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করেন। পরবর্তীতেও বিভিন্ন সময়ে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দেখিয়ে তাকে একাধিকবার ধর্ষণ করা হয়। কিন্তু যখন তরুণী বিয়ে করার কথা বলেন, তখন তোফায়েল অস্বীকৃতি জানান। এরপর গত ১ আগস্ট ভুক্তভোগী গুলশান থানায় ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন। মামলার পর ২৪ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট তাকে ছয় সপ্তাহের আগাম জামিন দেয় এবং জামিনের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেয়। তবে জামিনের মেয়াদ শেষ হলেও তিনি আদালতে আত্মসমর্পণ করেননি। অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, ধর্ষণের ঘটনাটি মামলার ছয় মাস আগে সংঘটিত হওয়ায় আলামত জব্দ করা সম্ভব হয়নি। ভুক্তভোগীও কোনো আলামত দিতে পারেননি। তবে হোটেলের গেস্ট বুকিং রেজিস্টার, রুম বুকিং স্লিপ ও উভয়ের পাসপোর্ট কপি জব্দ করা হয়। ডিএনএ পরীক্ষায় ভ্যাজাইনাল সোয়াবে বীর্যের উপস্থিতি মেলেনি। তবুও হোটেল বুকিং নথি, মেডিকেল রিপোর্টসহ সার্বিক তদন্ত বিবেচনায় তোফায়েলের বিরুদ্ধে অভিযোগকে তদন্ত কর্মকর্তা প্রাথমিকভাবে সত্য বলে অভিহিত করেছেন। ভুক্তভোগী তরুণী জানান, বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আমার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেছে। পরিবারের কাছে গিয়েও কোনো সমাধান মেলেনি। বিসিবি প্রেসিডেন্টের কাছেও লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলাম, তিনি আশ্বাস দিলেও পরে আর কোনো ব্যবস্থা নেননি। নিয়মিতভাবে অপমান, হেয় প্রতিপন্ন ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছি। আমি আদালতে ন্যায়ের আশা করছি। ঘটনাটি নিয়ে ক্রিকেট মহলসহ সামাজিক পরিমণ্ডলে ইতোমধ্যে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে।
বাংলাদেশের সারাহ করিম টাইটানস স্পেস ইন্ডাস্ট্রিজের মহাকাশচারী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। আন্তর্জাতিক মহাকাশ মিশনে অংশ নেওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হওয়ায় তিনি প্রথম বাংলাদেশি এবং সম্ভাব্যভাবে দেশের প্রথম নারী মহাকাশচারী হওয়ার পথে এগোচ্ছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজের অনুভূতি জানিয়ে সারাহ লিখেছেন, ২০২৬–২০৩০ সময়কালের জন্য টাইটানস স্পেস ইন্ডাস্ট্রিজের মহাকাশচারী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হয়ে আমি গর্বিত ও কৃতজ্ঞ। আনুষ্ঠানিকভাবে একজন মহাকাশচারী হওয়ার যাত্রা শুরু করলাম। সব ঠিক থাকলে বাংলাদেশি হিসেবে আমিই প্রথম মহাকাশে দেশের পতাকা বহন করব। নয় বছর বয়সী একটি মেয়ের স্বপ্ন যে একদিন সুনিতা উইলিয়ামসকে মহাকাশ থেকে ফিরে আসতে দেখেছিল আজ বাস্তবে রূপ নিতে শুরু করেছে। তিনি আরও জানান, আগামী বছর তিনি মহাকাশচারী প্রশিক্ষণ শুরু করবেন এবং ২০২৯ বা ২০৩০ সালে পৃথিবীর ৩০০ কিলোমিটার উপরে টাইটানস জেনেসিস মহাকাশযানে একটি ঐতিহাসিক কক্ষপথ অভিযানে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নেবেন। এ অভিযানের নেতৃত্ব দেবেন নাসার প্রবীণ মহাকাশচারী বিল ম্যাকআর্থার। সারাহ করিম বলেন, এই অর্জন আমার একার নয় এটি প্রতিটি বাংলাদেশি মেয়ের জন্য, যারা নীরবে বড় স্বপ্ন দেখে; প্রতিটি শিশুর জন্য, যে আকাশের দিকে তাকিয়ে বিস্মিত হয়; প্রতিটি মায়ের জন্য, যিনি তার কাঁধে বহন করেন একটি পুরো মহাবিশ্ব। কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি লিখেছেন, আমার স্বামীকে ধন্যবাদ, যিনি আমার পৃথিবীকে ধরে রেখেছেন। যারা আমাকে সমর্থন করেছেন, আপনাদের দোয়া আমাকে এই অবস্থানে এনেছে। টাইটানস স্পেস ইন্ডাস্ট্রিজের পুরো টিমকে ধন্যবাদ একজন স্বপ্নবাজ মেয়ের ওপর বিশ্বাস রাখার জন্য। মহাকাশে বাংলাদেশের পতাকা বহন করার সম্মান দেওয়ায় আমি কৃতজ্ঞ। এটি শুধু শুরু।
অগ্রহায়ণ মাস শেষ হতে আর কয়েক দিন বাকি। এরই মধ্যে দেশের গ্রামাঞ্চলে শীতের দাপট স্পষ্টভাবে অনুভূত হচ্ছে। এমন সময় মৌসুমের প্রথম মৃদু শৈত্যপ্রবাহ ‘পরশ’ আসছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ওয়েদার অবজারভেশন টিম (বিডব্লিউওটি)। সোমবার (৮ ডিসেম্বর) সংস্থাটির ফেসবুক পেজে প্রকাশ করা এক পোস্টে এ তথ্য জানানো হয়। বিডব্লিউওটির তথ্যমতে, শৈত্যপ্রবাহ পরশ ১৪ থেকে ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে সক্রিয় থাকতে পারে। এ সময় রংপুর, রাজশাহী, খুলনা ও সিলেট বিভাগের কিছু এলাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নেমে যেতে পারে ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এটিই হবে চলতি মৌসুমের প্রথম মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, এ মৌসুমে এখন পর্যন্ত সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়—১০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে ১১ ডিগ্রি, কুমিল্লা, বদলগাছী, গোপালগঞ্জ ও রাজারহাটে ১২ দশমিক ৫ ডিগ্রি, যশোর ও চুয়াডাঙ্গায় ১২ দশমিক ৪ ডিগ্রি এবং রাজশাহী, কুমারখালী ও ঈশ্বরদীতে ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, দেশের বেশিরভাগ স্থানে রাতের তাপমাত্রা ১৫ ডিগ্রির নিচে নেমে গেছে, যা আসন্ন শৈত্যপ্রবাহের ইঙ্গিত দিচ্ছে। সাধারণত তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি বা তার নিচে নামলেই শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়। ৮–১০ ডিগ্রি হলে মৃদু, ৬–৮ ডিগ্রি হলে মাঝারি, ৪–৬ ডিগ্রি হলে তীব্র এবং ৪ ডিগ্রির নিচে নামলে অতিতীব্র শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়। পূর্বাভাস অনুযায়ী, চলতি মাসে এক থেকে দুটি শৈত্যপ্রবাহ দেখা দিতে পারে, যার মাত্রা হবে মৃদু থেকে মাঝারি। অর্থাৎ তাপমাত্রা ৬ থেকে ১০ ডিগ্রির মধ্যে নেমে আসতে পারে। আবহাওয়াবিদ মো. তরিফুল নেওয়াজ কবির জানান, কোথাও কোথাও তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নামলেও তা স্থায়ী হওয়ার সম্ভাবনা কম। তার মতে, ১৫ ডিসেম্বরের পর শৈত্যপ্রবাহ শুরু হতে পারে এবং গত বছরের তুলনায় তাপমাত্রার তারতম্য খুব বেশি হবে না। আবহাওয়া অধিদপ্তর আরও জানায়, আগামী পাঁচ দিন আকাশ অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা ও আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। রাত-দিনের তাপমাত্রায় তেমন পরিবর্তন হবে না। ভোরবেলায় দেশের কিছু এলাকায় হালকা কুয়াশা পড়তে পারে। এ ছাড়া আগামী কয়েক দিনের মধ্যে উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে তাপমাত্রা আরও কমতে পারে। এসব অঞ্চলে শীতের প্রভাব তীব্র আকার ধারণ করতে পারে। বিশেষ করে শিশু, বৃদ্ধ এবং অসুস্থদের প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।