থাইরয়েড সমস্যা অনেকের জন্য ওজন নিয়ন্ত্রণকে কঠিন করে তোলে। অনেকেই লক্ষ্য করেন যে, খাওয়া-দাওয়ার নিয়ন্ত্রণে থাকলেও ওজন কমানো খুব ধীরগতি হয়, বিশেষত পেটের চর্বি দ্রুত জমে।
থাইরয়েডের কারণে বিপাকক্রিয়ার ধীরগতি এবং হরমোনের ভারসাম্যহীনতা শরীরকে সহজে চর্বি জমানোর দিকে নিয়ে যায়। এতে শুধু শারীরিক নয়, মানসিক প্রভাবও পড়ে।
তবে চিন্তার কিছু নেই! চরম ব্যায়াম ছাড়াও সঠিক খাদ্যাভ্যাস, হালকা শারীরিক কার্যকলাপ ও নিয়মিত জীবনধারা মেনে চললে ধীরে ধীরে পেটের চর্বি কমানো সম্ভব। নিচে রয়েছে কিছু সহজ ও কার্যকর টিপস—
১. প্রোটিন বেশি খান
প্রোটিন দীর্ঘ সময় পেট ভরা রাখে, অতিরিক্ত খাওয়া কমায় এবং বিপাকক্রিয়াকে শক্তিশালী করে।
✅ প্রতিদিনের খাবারে রাখুন ডিম, মাছ, মুরগি, ছোলা, মটরশুঁটি, দই বা কম চর্বিযুক্ত দুধ।
২. সাদা চাল ও রুটি কমিয়ে সম্পূর্ণ শস্য বেছে নিন
সাদা চাল ও রুটি দ্রুত রক্তে চিনি বাড়ায়, যা চর্বি জমায়।
✅ এর পরিবর্তে খান বাদামি চাল, ওটস, গমের রুটি ও বার্লি — এগুলো ফাইবারে সমৃদ্ধ ও পেট ভরা রাখে।
৩. চিনি ও প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়ান
সোডা, প্যাকেটজাত জুস বা মিষ্টি খালি ক্যালোরি দেয়।
✅ বেছে নিন তাজা ফল, দই ও সাধারণ পানি।
৪. পর্যাপ্ত পানি পান করুন
প্রতিদিন ৮–১০ গ্লাস পানি পান করুন।
💡 খাবারের আগে পানি পান করলে ফোলাভাব কমে এবং মেটাবলিজম ঠিক থাকে।
৫. ফাইবার ও প্রদাহ কমানো খাবার খান
ফাইবার ও অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি খাবার চর্বি কমাতে সহায়ক।
✅ উদাহরণ: পালং শাক, পাতা কচু, সবজি, বেরি, মাছ, বাদাম ও অলিভ অয়েল।
৬. পর্যাপ্ত ঘুম ও মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করুন
কম ঘুম ও স্ট্রেস পেটে চর্বি জমায়।
✅ দিনে ৭–৯ ঘণ্টা ঘুমান, যোগব্যায়াম বা ধ্যান করুন এবং খাবারের ২০–৩০ মিনিট পর হাঁটুন।
৭. হালকা শারীরিক কার্যকলাপ করুন
যদি জিমে যাওয়া না যায়, তবে
✅ প্রতিদিন ২০–৩০ মিনিট হাঁটুন, যোগ ব্যায়াম, পিলাতেস, সাঁতার বা হালকা সাইকেলিং করুন।
৮. ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং (১৬:৮) চেষ্টা করুন
১৬ ঘণ্টা উপবাস ও ৮ ঘণ্টা খাবার গ্রহণ ইনসুলিন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে ও ফ্যাট বার্নিং বাড়ায়।
💡 সকালে উঠে এক ঘণ্টা পরে নাশতা শুরু করুন।
৯. কিছু খাবার এড়িয়ে চলুন
কাঁচা বাঁধাকপি, ব্রকোলি, টোফু, সয়া দুধ, কফি, চা, অ্যালকোহল, অতিরিক্ত ফাইবার ওষুধের সঙ্গে একসঙ্গে খাওয়া এড়িয়ে চলুন।
💡 তবে রান্না করা ব্রকোলি নিরাপদ।
১০. থাইরয়েডের জন্য উপকারী খনিজযুক্ত খাবার খান
-
আয়োডিন: আয়োডাইজড লবণ, মাছ
-
সেলেনিয়াম: ব্রাজিল বাদাম, বীজ, দই
-
জিঙ্ক: ডিমের কুসুম, সামুদ্রিক খাবার
১১. নিয়মিত থাইরয়েড পরীক্ষা করুন
টিএসএইচ, টি৩ ও টি৪ পরীক্ষা করুন এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধের ডোজ ঠিক রাখুন।
💡 সঠিক ডোজই ওজন নিয়ন্ত্রণের মূল চাবিকাঠি।
ধৈর্য ধরুন — নিয়মিত অভ্যাস ও সঠিক ডায়েট মানলে থাইরয়েড রোগীরাও প্রতি সপ্তাহে ১–২ পাউন্ড পর্যন্ত ওজন কমাতে পারেন। প্রক্রিয়াটি ধীর, কিন্তু পুরোপুরি সম্ভব।
সূত্র: Healthline Media