ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুর ঘোষণা আসার পর একদল হামলাকারী দৈনিক প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টারের অফিসে ভাঙচুর করে আগুন দেয়, এতে দুটি অফিসেই অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে।
শুক্রবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঢাকার কারওয়ানবাজারে অবস্থিত প্রথম আলোর চারতলা ভাবনটি পুরোপুরি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। কিছু জায়গা থেকে তখনও ধোয়া উঠতে দেখা যায়। ফায়ার সার্ভিসের একটি টিমকে ঘটনাস্থলে দেখা গেছে।
প্রসঙ্গত, ভবনটিতে প্রথম কয়েকটি বিভাগের কার্যালয় ছিল।
হামলাকারীদের দেওয়া আগুনে ডেইলি স্টার অফিসের নিচ তলা ও দোতলা পুড়ে গেছে। অফিসের ভেতরে ভাঙচুর করে ফেলে রাখা জিনিসপত্র পড়ে থাকতে দেখা গেছে। শুক্রবার সকালে ডেইলি স্টারের সামনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি দেখা গেছে।
এর আগে, ওসমান হাদির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে রাতভর দেশের বিভিন্ন স্থানে ভবনে ভাঙচুর ও আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে।
বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে কারওয়ানবাজারে অবস্থিত দেশের দুটি শীর্ষ গণমাধ্যমের অফিস ভাঙচুর করে আগুন দেওয়া হয়। এসময় সেখানে অবস্থানরত সংবাদকর্মীরা আটকা পড়েন।
পরে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা তাদের ক্রেনের সাহায্যে উদ্ধার করেন এবং আগুন নেভান। হামলাকারীদের সংবাদমাধ্যমের অফিসের ভেতরে লুটতরাজও করতে দেখা গেছে।
এসময় সম্পাদক পরিষদের সভাপতি নূরুল কবীর ঘটনাস্থলে গেলে তাকেও হেনস্তা করা হয়।
পরে সেখানে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়। তবে শুক্রবার সকালে প্রথম আলোর সামনে র্যাবের একটি টিম এবং কয়েকজন পুলিশ সদস্য থাকলেও কোনো সেনাসদস্যকে দেখা যায়নি।
সর্বশেষ অবস্থার বিষয়ে জানতে পুলিশের ধানমন্ডি ও তেজগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কেউ ফোন ধরেননি। পর্যাপ্ত তথ্য নেই বলে জানান ডিউটি অফিসার।
প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ বিবিসি বাংলাকে জানান, বৃহস্পতিবার রাতের হামলায় তাদের অফিসের বিদ্যুৎ সংযোগ ব্যবস্থার ক্ষতিসহ অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এখন পর্যন্ত অনলাইন পোর্টালে খবর প্রকাশের কাজ স্থগিত আছে। তবে তারা পরিস্থিতি সামলে দ্রুততম সময়ে কাজ শুরুর চেষ্টা করেছেন।
প্রথমবারের মতো হামলার কারণে প্রথম আলোর প্রকাশনা বন্ধ রাখা হয়েছে বলেও তিনি জানান।
"পুরো ঘটনায় আমরা খুবই মর্মাহত। সাংবাদিকতরা জন্য এটা একটা আঘাত," বলেন সাজ্জাদ শরিফ।
ডেইলি স্টারের কয়েকজন কর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হামলাকারীরা ভবনের প্রায় প্রতিটি তলায় হামলা ও ভাঙচুর চালায় এবং মূল্যবান জিনিসপত্র লুটপাট করেছে।
ডেইলি স্টারে কর্মরত একজন জানিয়েছেন, হামলাকারীরা তার ক্যামেরা, ভিভাইস, হার্ডড্রাইভ সব লুট করে নিয়ে গেছে। কথা বলতে গিয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ে তিনি জানান, তার সারা জীবনের সব কাজ এবং স্মৃতি ওগুলোয় সংরক্ষিত ছিল।
গতকাল রাতের ভয় ও আতঙ্ক কাটিয়ে উঠে স্বাভাবিকভাবে কথা বলার মতো পরিস্থিতি নেই বলেও জানান কয়েকজন কর্মী।
এছাড়াও রাত একটার দিকে ধানমন্ডিতে অবস্থিত বাংলাদেশের অন্যতম সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানটের ভবনে ব্যাপক ভাঙচুর করা হয় এবং আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়।
হামলার পর রাত সাড়ে ৩টার দিকে ছায়ানটের ফেসবুকে দেওয়া এক ঘোষণায়, ভবনটিতে পরিচালিত 'ছায়ানট সঙ্গীতবিদ্যায়তনের' ক্লাসসহ সংগঠনের সব কার্যক্রম পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত স্থগিত রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
আবারও ভাঙচুর করে আগুন দেওয়া হয় আগে দুইবার গুড়িয়ে দেওয়া ধানমন্ডি-৩২'এ থাকা শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িটি। সকাল সাড়ে আটটার দিকেও বেসরকারি টিভি চ্যানেলে দেওয়া লাইভে কয়েকজনকে ইট দিয়ে বাড়ির অবশিষ্ট দেয়াল ভাঙতে দেখা যায়।
কেবল রাজধানীতেই না, হামলার শিকার হয়েছে চট্টগ্রামের ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনারের কার্যালয়ও। কার্যালয়ের সামনে ইনকিলাব মঞ্চের অবস্থান কর্মসূচি শেষ হওয়ার পর কিছু লোক এসে ভবনে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে।
পরে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছুঁড়লে হামলাকারীরা ইট-পাটকেল মারে। পুলিশ তাদের ধাওয়া দিয়ে ধরিয়ে দিলে রাত দুইটার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
এছাড়াও রাত সোয়া ১১টার দিকে চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র মহিউদ্দিনের বাসায় আগুন দেওয়া হয়। গুড়িয়ে দেওয়া হয় রাজশাহীতে আওয়ামী লীগের পার্টি অফিস।
রাজনৈতিক নেতাদের প্রতিক্রিয়া
সারারাত এসব ঘটনার চলার পর রাত সাড়ে চারটার দিকে ইনকিলাব মঞ্চের ফেসবুক পেইজ থেকে দেওয়া এক বার্তায় লেখা হয়, "ওসমান হাদীকে যারা খুন করেছে তাদের হাতে দেশকে তুলে দিয়েন না"।
"ভাঙচুর আর আগুন সন্ত্রাসের মধ্য দিয়ে তারা মূলত বাংলাদেশকে একটি অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়। তারা এই দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে বিপন্ন করতে চায়। ৩২ আর ৩৬ এক জিনিস না এইটা আপনাদের বুঝতে হবে"।
প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিএনপি নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলগীরও। নিজের অফিশিয়াল ফেসবুক পেইজে তিনি লেখেন, "ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী স্বৈরাচারী শাসকগোষ্ঠীর পতনের পর দুস্কৃতিকারিরা আবারো দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টিসহ নৈরাজ্যের মাধ্যমে ফায়দা হাসিলের অপতৎপরতায় লিপ্ত হয়েছে। দুস্কৃতিকারিদের নির্মম হামলায় ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি নিহতের ঘটনা সেই অপতৎপরতারই বহিঃপ্রকাশ"।
"দুস্কৃতিকারি সন্ত্রাসীদের কঠোর হস্তে দমনের বিকল্প নেই" বলেও পোস্টটিতে লেখেন তিনি।
ফেসবুকে জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান লিখেছেন, "বর্তমান পরিস্থিতিতে আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সর্বোচ্চ ধৈর্য ও প্রজ্ঞার পরিচয় দেওয়ার তাওফিক দান করুন। ধৈর্যই মজলুমের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। ধৈর্য ধরার কোনোই বিকল্প নেই"।
"দেশটা আমাদের সকলেরই অস্তিত্বের অংশ। আশা করি সকলেই সর্বোচ্চ ধৈর্যের পরিচয় দিবো"।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে পদোন্নতিতে অনিয়ম ও অসঙ্গতির অভিযোগে দায়ের করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে মহামান্য হাইকোর্ট রুল জারি করেছেন। একই সঙ্গে আদালত নির্দেশ দিয়েছেন, রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত পদোন্নতি সংক্রান্ত যেকোনো কার্যক্রম অবৈধ হিসেবে গণ্য হবে। দেশের বৃহত্তম রাষ্ট্রায়ত্ত বিশেষায়িত ব্যাংকটির ১০ম গ্রেডের পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন ধরে ন্যায্য পদোন্নতির দাবিতে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করে আসছিলেন। দাবি আদায়ে বারবার কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন ও মানববন্ধন করেও সাড়া না পেয়ে তারা শেষ পর্যন্ত আদালতের দ্বারস্থ হন। সূত্র জানায়, পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তারা গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর (শনিবার) ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে ছুটির দিনে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন করেন, যাতে গ্রাহকসেবা ব্যাহত না হয়। তাদের দাবির প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করে তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শওকত আলী খান দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন। তবে তিন মাস পার হলেও প্রতিশ্রুত আশ্বাস বাস্তবায়িত না হওয়ায় তারা পুনরায় ওই বছরের ৩০ নভেম্বর মানববন্ধনের আয়োজন করেন। এতে সারা দেশের শাখা থেকে ১২০০–এর বেশি কর্মকর্তা অংশ নেন। পরদিন (১ ডিসেম্বর) বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক সঞ্চিয়া বিনতে আলী পদোন্নতির বিষয়ে মৌখিক আশ্বাস দিলে আন্দোলনকারীরা কর্মস্থলে ফিরে যান। পরে কর্মকর্তাদের জানানো হয়, সুপারনিউমারারি পদ্ধতিতে মার্চের মধ্যে পদোন্নতির বিষয়টি সমাধান করা হবে। কিন্তু এখনো তা বাস্তবায়ন হয়নি। অন্যদিকে অগ্রণী, জনতা, রূপালী ও সোনালী ব্যাংকে ইতোমধ্যে মোট ৭,৩১৬ কর্মকর্তা এই পদ্ধতিতে পদোন্নতি পেয়েছেন, যা অর্থ মন্ত্রণালয়ও অনুমোদন করেছে। পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তাদের অভিযোগ, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের এই উদাসীনতা তাদের প্রতি কর্মীবান্ধবহীন মনোভাব ও কর্তৃপক্ষের অনীহারই প্রকাশ। তারা বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট স্বৈরাচার পতনের পর অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পরিবর্তন এলেও কৃষি ব্যাংকে আগের প্রশাসনিক কাঠামো অপরিবর্তিত রয়ে গেছে, যা ন্যায্য দাবি আদায়ের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের অভিযোগ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, মহাব্যবস্থাপক ও মানবসম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক জাহিদ হোসেন একাধিক বৈঠকে আশ্বাস দিলেও বাস্তব পদক্ষেপ না নিয়ে বরং আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী কর্মকর্তাদের হয়রানি ও নিপীড়ন করা হয়েছে। ফলে তারা বাধ্য হয়ে এ বছরের চলতি মাসে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন (রিট মামলা নং: ১৬৪২৮/২০২৫, মো. পনির হোসেন গং বনাম রাষ্ট্র ও অন্যান্য)। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৬ অক্টোবর হাইকোর্ট রুল জারি করে জানতে চেয়েছেন, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের পদোন্নতিতে দেখা দেওয়া অনিয়ম ও অসঙ্গতি কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না। পাশাপাশি আদালত নির্দেশ দিয়েছেন, রুল নিষ্পত্তির আগে কোনো পদোন্নতি কার্যক্রম শুরু করা হলে তা অবৈধ ও আদালত–অবমাননার শামিল হবে। রিটে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক পদোন্নতিতে ১০৭৩ জন কর্মকর্তা (ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা থেকে মূখ্য কর্মকর্তা) এবং ৫১ জন মূখ্য কর্মকর্তা (ঊর্ধ্বতন মূখ্য কর্মকর্তা পদে) অনিয়মের মাধ্যমে পদোন্নতি পেয়েছেন। এদিকে জানা গেছে, পূর্বে দুর্নীতির অভিযোগে আলোচিত মানবসম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক জাহিদ হোসেন এখনো পদোন্নতি কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তারা বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করে যদি পুনরায় অনিয়মের পথে যাওয়া হয়, তাহলে তা আদালতের অবমাননা ও রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল হবে। তারা আশা করছেন, এ বিষয়ে দ্রুত ন্যায়বিচার ও সমাধান মিলবে।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে সাম্প্রতিক সময়ে পদোন্নতি ও প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। পদোন্নতিবঞ্চিত কর্মকর্তাদের একটি অরাজনৈতিক সংগঠন ‘বৈষম্য বিরোধী অফিসার্স ফোরাম’ এর কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক মো. পনির হোসেন ও সদস্য সচিব এরশাদ হোসেনকে শৃঙ্খলাজনিত মোকদ্দমা এবং মুখ্য সংগঠক মো. আরিফ হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া মুখপাত্র তানভীর আহমদকে দুর্গম অঞ্চলে বদলি করা হয় এবং সারাদেশের দুই শতাধিক কর্মকর্তাকে ব্যাখ্যা তলব করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে যে, মো. আরিফ হোসেনকে বরখাস্ত করার নথিতে তাকে ‘ব্যাংক ও রাষ্ট্রবিরোধী’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে, অথচ ব্যাখ্যা তলবপত্রে বলা হয় তিনি ‘রাজনৈতিক কাজে তহবিল সংগ্রহ করেছেন।’ ফরেনসিক বিশ্লেষণ অনুযায়ী, তার ব্যাখ্যাতলবের জবাব প্রদানের পরও বরখাস্ত চিঠি আগেই তৈরি করা হয়েছিল, যা অনেক কর্মকর্তার মধ্যে প্রশ্ন তোলেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মহাব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, সরকারি কর্মকর্তারা যদি সংবিধান বা আইন অনুযায়ী দায়িত্ব না পালন করেন, হাইকোর্ট তাদের ক্ষমতা প্রয়োগ বা অপব্যবহার রোধের জন্য আদেশ দিতে পারে। অন্য একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, এ সিদ্ধান্তের পেছনে ব্যাংকের ফ্যাসিস্ট সরকারের সহযোগী একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা বলছেন, পদোন্নতি ও ন্যায়বিচারের জন্য আন্দোলন এবং আইনি লড়াই চলবে। ভুক্তভোগী কর্মকর্তারা শিগগিরই বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, অর্থ উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার কাছে এ বিষয়ে প্রতিকার চাইবেন। এ ব্যাপারে মো. আরিফ হোসেন ও পনির হোসেনের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে একটি ভুয়া কর্মচারী ইউনিয়নের সভায় জোরপূর্বক কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণ করানোর অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন ব্যাংকের ভিজিল্যান্স স্কোয়াডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা তাসলিমা আক্তার লিনা ও তার স্বামী মিরাজ হোসেন। গত ২০ অক্টোবর প্রধান কার্যালয়ের অডিটোরিয়ামে ‘বিশেষ সাধারণ সভা’ নামে একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের (সিবিএ) নামে তারা এটির আয়োজন করে। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির সহ-শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির খান ও উদ্বোধক হিসেবে জাতীয়তাবাদী শ্রমিকদলের সভাপতি আনোয়ার হোসাইনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তবে তারা প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে ভুয়া নেতাদের কার্যকলাপ সম্পর্কে অবগত হয়ে অনুষ্ঠানটি বয়কট করেন। অভিযোগ রয়েছে, তাসলিমা আক্তার লিনা হেড অফিসের বিভিন্ন দপ্তরের নারী কর্মকর্তা এবং তার স্বামী মিরাজ হোসেন পুরুষ কর্মকর্তাদের ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে ওই সভায় অংশগ্রহণে বাধ্য করেন। অংশগ্রহণে অস্বীকৃতি জানালে বদলি বা পদোন্নতি রোধের হুমকিও দেওয়া হয় বলে জানা গেছে। হেড অফিসের কয়েকজন কর্মকর্তার ভাষ্য অনুযায়ী, লিনা তার স্বামীর প্রভাব খাটিয়ে নারী সহকর্মীদের ওপর দীর্ঘদিন ধরে অনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে আসছেন। কেউ আপত্তি জানালে মিরাজের সহযোগীরা এসে অশালীন আচরণ ও গালিগালাজ করে থাকে বলেও অভিযোগ ওঠে। এ ছাড়া, লিনা ‘উইমেনস ফোরাম’ নামে একটি সংগঠন গড়ে মাসিক চাঁদা সংগ্রহ করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। তার এই কর্মকাণ্ডে অনেক নারী কর্মকর্তা বিব্রতবোধ করলেও চাকরির স্বার্থে নীরব থাকছেন। অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা গেছে, মানবসম্পদ বিভাগের ডিজিএম জাহিদ হোসেনের প্রত্যক্ষ সহায়তায় তাসলিমা আক্তার লিনা ও তার স্বামী মিরাজ ব্যাংকের অভ্যন্তরে প্রভাব বিস্তার করছেন। এ ঘটনায় নারী কর্মকর্তাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তারা কর্তৃপক্ষের কাছে তাসলিমা আক্তার লিনা ও মিরাজ হোসেনকে অবাঞ্ছিত ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন। এ বিষয়ে জানতে তাসলিমা আক্তার লিনার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি নিয়ম অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করছি, অভিযোগগুলো ভিত্তিহীন। অন্যদিকে, মিরাজ হোসেনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে সংঘটিত এজাহারভুক্ত হত্যা মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি ফয়েজ উদ্দিন আহমেদ ও মিরাজ হোসেন পলাতক রয়েছেন। ব্যাংক প্রশাসন বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। খুনের শিকার কৃষি ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী আব্দুল হালিম ছিলেন কৃষি ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের (সিবিএ) সভাপতি। তার গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলায়। পরিবারের ভাষ্য অনুযায়ী, তিনি স্থানীয়ভাবে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। মামলার বিবরণ অনুযায়ী, ১ নম্বর আসামি হিসেবে অবসরপ্রাপ্ত পিয়ন ফয়েজ উদ্দিন আহমেদ এবং ২ নম্বর আসামি মিরাজ হোসেনের নাম রয়েছে। তারা বর্তমানে নিজেদের সিবিএ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দাবি করে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে প্রভাব বিস্তার করছেন। ব্যাংক সূত্রে গেছে, তারা চাঁদাবাজি, ঘুষ আদায় ও নানা অনিয়মের সঙ্গে জড়িত। সূত্র জানায়, ব্যাংকের ভেতরে একটি সিন্ডিকেটের প্রভাবেই এসব আসামিরা এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছেন। এই সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে আছেন মানবসম্পদ বিভাগের ডিজিএম জাহিদ হোসেন। এতে আরও যুক্ত রয়েছেন ডিজিএম সৈয়দ লিয়াকত হোসেন, হাবিব উন নবী, ডিএমডি খালেকুজ্জামান জুয়েল ও ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সঞ্চিয়া বিনতে আলী। গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর রাতে মতিঝিলের বিমান অফিসের সামনে আব্দুল হালিমের মৃত্যু হয়। পরদিন সকালে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠায়। মতিঝিল থানার উপ-পরিদর্শক সজীব কুমার সিং সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে জানান, পুরনো সহকর্মীদের সঙ্গে বিরোধের জেরে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং রাত ১টা ৪০ মিনিটে হাসপাতালে মারা যান। হালিমের ছেলে ফয়সাল বলেন, তার বাবা ২০১৪ সাল থেকে কৃষি ব্যাংক সিবিএর সভাপতি ছিলেন এবং বোয়ালখালী উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করতেন। ইউনিয়নের নেতৃত্ব ও পদ নিয়ে সহকর্মীদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। এ নিয়ে গত নভেম্বরেই মতিঝিল থানায় একটি জিডি (নং ০৫/১১/২০২৪ - ৩৩৫) করেছিলেন তার বাবা। তিনি আরও বলেন, বুধবার রাতে আমার বাবাকে তার অফিসের সহকর্মীরা মারধর করে হত্যা করেছে। সিবিএর বর্তমান সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জানান, ২০১৪ সালে আমরা নির্বাচিত হই। এরপর আর কোনো নির্বাচন হয়নি। কিন্তু গত ৫ আগস্ট বিনা নির্বাচনে নতুন কমিটি ঘোষণা করে আমাদের অফিস দখল করে নেয় ফয়েজ ও মিরাজ। এ নিয়ে মামলা চলছে। মামলার তথ্য অনুযায়ী, আসামিরা অস্থায়ী জামিনে ছিলেন। সম্প্রতি তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। এছাড়া আরও কয়েকজন পলাতক রয়েছেন—যাদের মধ্যে আছেন ড্রাইভার সাইফুল, শাহেদ, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর মেহেদী ও অবসরপ্রাপ্ত ক্লিনার সিরাজ। এদিকে, মামলার ২ নম্বর আসামি মিরাজ হোসেন নৈমিত্তিক ছুটির আবেদন করে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। যদিও ওয়ারেন্টভুক্ত আসামির নৈমিত্তিক ছুটি পাওয়ার কোনো এখতিয়ার নেই। মানবসম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক এ বিষয়ে বলেন, তিনি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন এবং নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। কিন্তু স্থানীয় মুখ্য কার্যালয়ের প্রধান মহাব্যবস্থাপক জানান, তিনি কোনো মন্তব্য করতে চান না। কারণ ব্যবস্থাপনা পরিচালক মন্তব্য না করার নির্দেশ দিয়েছেন। ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। অভ্যন্তরীণ এই পরিস্থিতিতে কৃষি ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
অভিনব কায়দায় চাঁদাবাজিতে নেমেছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের একদল ভুয়া সিবিএ নেতা। অভিযোগ উঠেছে, তারা বিশেষ সাধারণ সভা আয়োজনের নামে সারা দেশের শাখাগুলো থেকে কোটি টাকারও বেশি চাঁদা আদায় করছে। তথ্যসূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন (সিবিএ), রেজি. নং বি-৯৮৫-এর নাম ব্যবহার করে আগামী ২০ অক্টোবর ‘বিশেষ সাধারণ সভা’ শিরোনামে একটি অনুষ্ঠান আয়োজনের ঘোষণা দেয় একদল ভুয়া নেতা। এ উপলক্ষে তারা ব্যাংকের প্রায় ১ হাজার ২৫০টি ইউনিট থেকে ১০-২০ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করে ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার উঠে। গোপন সূত্র জানায়, তাদের নিয়ন্ত্রিত লোকজন শাখা পর্যায়ে বদলি ও পদোন্নতির ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন উপ-মহাব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, তারা এসব কর্মকাণ্ডে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করলেও এ সিন্ডিকেটের ভয়ে কিছু বলার সাহস পাচ্ছেন না। এ ঘটনায় ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগের ডিজিএম জাহিদ হোসেনের প্রত্যক্ষ মদদ ও আস্কারায় চাঁদাবাজি চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রাপ্ত আমন্ত্রণপত্রে দেখা গেছে, ভুয়া সভাপতি দাবিকারী কৃষি ব্যাংকের সাবেক পিয়ন ফয়েজ আহমেদ ও ভুয়া সাধারণ সম্পাদক মিরাজ হোসেন স্বাক্ষরিত পত্রে প্রধান অতিথি হিসেবে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির, উদ্বোধক হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন এবং প্রধান বক্তা হিসেবে সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম খান নাসিমকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। কয়েকজন মহাব্যবস্থাপক জানান, তারা বিভিন্ন শাখা থেকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ পেয়েছেন এবং বিষয়টি ব্যবস্থাপনা পরিচালক অবগত আছেন বলে জানানো হয়েছে। অনুষ্ঠানটি কৃষি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত হওয়ায় তারা কার্যত কিছু করতে পারছেন না। অনুসন্ধানে জানা যায়, এর আগেও একই সিন্ডিকেট শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে প্রায় ৫০ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করেছিল। সেই টাকা তারা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, চাঁদাবাজ ও তাদের মদদদাতাদের সঙ্গে দলের কোনো সম্পর্ক নেই। তারা বহিরাগত অনুপ্রবেশকারী। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এসব ভুয়া সিবিএ নেতাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও অবাঞ্ছিত ঘোষণা দাবি করেছেন। তাদের আশঙ্কা, এসব কর্মকাণ্ডের নেতিবাচক প্রভাব আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে পড়তে পারে।
দেশে পৌঁছানোর পর ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শহীদ ওসমান বিন হাদিকে সর্বসাধারণের সাক্ষাতের জন্য হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সরাসরি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদে নেওয়া হবে। শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) বিকালে ইনকিলাব মঞ্চের ভেরিফায়েড পেইজ থেকে দেওয়া এক পোস্টে এমনটাই জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে- ‘শহীদ ওসমান হাদিকে বহনকারী বিমানটি (শুক্রবার) সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবে। আমাদের জুলাই জজবার প্রাণ, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার অকুতোভয় বীরকে গ্রহণ করতে আমরা সবাই এয়ারপোর্ট থেকে শাহবাগগামী রাস্তার দুইপাশে সুশৃঙ্খলভাবে অবস্থান নেবো। সেখান থেকে শহিদ ওসমান হাদীকে সর্বসাধারণের সাক্ষাতের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদে আনা হবে।’ এর আগে এক পোস্টে ইনকিলাব মঞ্চের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বাংলাদেশ বিমানের একটি বাণিজ্যিক ফ্লাইটে শুক্রবার সিঙ্গাপুরের স্থানীয় সময় বিকাল ৩টা ৫০ মিনিটে শহীদ ওসমান হাদির লাশ নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা করা হবে। ফ্লাইটটি সন্ধ্যা ৬টা ৫ মিনিটে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করার কথা রয়েছে।
দেশের বিভিন্নস্থানে কয়েকটি বিচ্ছিন্ন উগ্র গোষ্ঠীর সংঘটিত সহিংসতার বিরুদ্ধে দৃঢ়তার সঙ্গে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। শুক্রবার দুপুরে দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়,‘আমরা সহিংসতা, ভীতি প্রদর্শন, অগ্নিসংযোগ এবং জানমাল ধ্বংসের সকল কর্মকাণ্ডকে দৃঢ়ভাবে ও দ্ব্যর্থহীনভাবে নিন্দা জানাই। দেশের ইতিহাসের এই সংকটময় সময়ে আমরা একটি ঐতিহাসিক গণতান্ত্রিক রূপান্তরের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হচ্ছি। যারা বিশৃঙ্খলাকে পুঁজি হিসেবে নেয় এবং শান্তির পথকে উপেক্ষা করে—এমন অল্প কয়েকজনের কারণে এই অগ্রযাত্রা আমরা কোনোভাবেই ব্যাহত হতে দিতে পারি না এবং দেব না। আসন্ন নির্বাচন ও গণভোট কেবল রাজনৈতিক অনুশীলন নয়; এগুলো একটি গুরুতর জাতীয় অঙ্গীকার। এই অঙ্গীকার অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িয়ে আছে সেই স্বপ্নের সঙ্গে, যার জন্য শহীদ শরিফ ওসমান হাদি তাঁর জীবন উৎসর্গ করেছেন। তাঁর আত্মত্যাগ ও স্মৃতির প্রতি সম্মান জানাতে হলে সংযম, দায়িত্বশীলতা এবং ঘৃণা প্রত্যাখ্যানের প্রতি অবিচল অঙ্গীকার প্রয়োজন। দ্য ডেইলি স্টার, প্রথম আলো ও নিউ এজ–এর সাংবাদিকদের প্রতি আমরা বলতে চাই—আমরা আপনাদের পাশে আছি। আপনারা যে সন্ত্রাস ও সহিংসতার শিকার হয়েছেন, তার জন্য আমরা গভীরভাবে দুঃখিত। সন্ত্রাসের মুখেও আপনাদের সাহস ও সহনশীলতা জাতি প্রত্যক্ষ করেছে। সাংবাদিকদের ওপর হামলা মানেই সত্যের ওপর হামলা। আমরা আপনাদের পূর্ণ ন্যায়বিচারের আশ্বাস দিচ্ছি। ময়মনসিংহে এক হিন্দু ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় আমরা গভীরভাবে নিন্দা জানাই। নতুন বাংলাদেশে এ ধরনের সহিংসতার কোনো স্থান নেই। এই নৃশংস অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। এই সংকটময় মুহূর্তে আমরা প্রত্যেক নাগরিকের প্রতি আহ্বান জানাই—সহিংসতা, উসকানি ও ঘৃণাকে প্রত্যাখ্যান ও প্রতিরোধের মাধ্যমে শহীদ হাদির প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করুন।’
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুতে তার গ্রামের বাড়ি ঝালকাঠির নলছিটিতে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) সরেজমিন দেখা গেছে, নলছিটি পৌর শহরের খাসমহল এলাকায় হাদির গ্রামের বাড়তে চলছে মাতম। স্বজনরা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না, হাদি আর নেই। সদা হাস্যজ্জ্বল হাদির মৃত্যুর খবরে শোকস্তব্ধ গোটা এলাকা। এর আগে, গতরাতে হাদির মৃত্যু সংবাদ পাওয়ার পরপরই দ্রুত হত্যাকারীদের গ্রেফতারের দাবিতে সড়কে নেমে আসে স্থানীয়রা। শহরের কলেজ মোড় এলাকায় অবস্থান নিয়ে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ঢাকা-ঝালকাঠি মহাসড়ক অবরোধ করে রাখা হয়। এসময় সড়কের দুই পাশেই তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে রাত তিনটার সময় বিক্ষুব্ধরা সরে গেলে, ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয় যান চলাচল।