বাংলাদেশে সরবরাহের জন্য ১ লাখ টন চাল ক্রয়ে আন্তর্জাতিক টেন্ডার আহ্বান করেছে ট্রেডিং করপোরেশন অব পাকিস্তান (টিসিপি)। সোমবার (২৪ নভেম্বর) বিষয়টি প্রকাশ্যে এসেছে।
পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডনের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
টিসিপির ২০ নভেম্বর প্রকাশিত টেন্ডার অনুযায়ী, ২৮ নভেম্বর বেলা সাড়ে ১১ টার মধ্যে মূল্য প্রস্তাব জমা দিতে হবে। ডনের হাতে পাওয়া নথিতে বলা হয়েছে, করাচি বন্দর দিয়ে ব্রেক-বাল্ক কার্গোর মাধ্যমে বাংলাদেশে রপ্তানির জন্য ১ লাখ টন লং গ্রেইন সাদা চাল ক্রয়ে কোম্পানি, পার্টনারশিপ বা ব্যক্তিগত ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে।
টেন্ডারে মূল্য প্রস্তাব জমাদানের পর ২১ কার্যদিবস পর্যন্ত বৈধ থাকা, চুক্তি চূড়ান্ত হওয়ার ৪৫ দিনের মধ্যে চাল রপ্তানি উপযোগী করা এবং ন্যূনতম বিড ২৫ হাজার টন, এরপর তার গুণিতক; সর্বোচ্চ ১ লাখ টন পর্যন্ত শর্তারোপ করা হয়েছে। এছাড়া চাল অবশ্যই পাকিস্তানের সর্বশেষ ফসল থেকে হওয়ার, চাল মানবভোগের উপযোগী হওয়া এবং দুর্গন্ধ, ছত্রাক, বিষাক্ত আগাছা, পোকামাকড় বা সংক্রমণের কোনো চিহ্ন থাকা চলবে না বলে শর্ত দেওয়া হয়েছে।
রয়টার্স জানায়, পাকিস্তানি চালকে বাংলাদেশি আমদানিতে অন্তর্ভুক্ত করার সম্ভাব্য পদক্ষেপ হিসেবে টেন্ডারটি দেখা হচ্ছে। বাজারে ধারণা রয়েছে, বাংলাদেশ এর আগের কিছু চালের চাহিদায় ভারতীয় উৎসের চালও ব্যবহার করতে পারে।
বাংলাদেশ সোমবার আরও একটি চাল আমদানির টেন্ডার ঘোষণা করেছে, যা গত কয়েক সপ্তাহ ধরে অভ্যন্তরীণ বাজারে মূল্য স্থিতিশীল রাখতে ধারাবাহিক টেন্ডারের অংশ।
এর আগে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে দুই দেশের সরকার প্রথমবারের মতো সরাসরি সরকার-টু-সরকার (জিটুজি) চাল বাণিজ্য শুরু করে, যার আওতায় ৫০ হাজার টন চাল আমদানি করে বাংলাদেশ। এছাড়া গত মাসে অনুষ্ঠিত নবম যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের (জেইসি) বৈঠকে পাকিস্তান ঢাকাকে আঞ্চলিক দেশগুলোর (চীন ও মধ্য এশিয়া) সঙ্গে বাণিজ্যের জন্য করাচি বন্দরকে গেটওয়ে হিসেবে ব্যবহার করতে পারে বলে প্রস্তাব দেয়।
ডন জানিয়েছে, ২০২৬ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে পাকিস্তানের চাল রপ্তানি ২৮ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। রপ্তানি খাতের সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ভারতের ২০২৪ সালে চাল রপ্তানি পুনরায় শুরু করা, বাসমতির সর্বনিম্ন রপ্তানি মূল্য তুলে নেওয়া এবং চাল রপ্তানিতে শূন্য শুল্ক আরোপ করার কারণে পাকিস্তান প্রতিযোগিতায় চাপের মুখে পড়েছে।
তবে পাকিস্তান সরাসরি মূল্যযুদ্ধে না যাওয়ায় ভারতের বাজারে ফিরে আসা রপ্তানিতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারেনি। ২০২৪ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত পাকিস্তান উচ্চমানের বাজারে তাদের অবস্থান ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র ২০২৪ সালের আগস্টে ভারতীয় পণ্যের উপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করায় পাকিস্তান মার্কিন বাজারে শেয়ার বাড়ানোর সুযোগ পাচ্ছে।
গ্লোবাল ট্রেড প্ল্যাটফর্ম ভলজার তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৪ সালের অক্টোবর পর্যন্ত পাকিস্তানের মোট বাসমতি রপ্তানির ২৪ শতাংশ গেছে যুক্তরাষ্ট্রে।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে পদোন্নতিতে অনিয়ম ও অসঙ্গতির অভিযোগে দায়ের করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে মহামান্য হাইকোর্ট রুল জারি করেছেন। একই সঙ্গে আদালত নির্দেশ দিয়েছেন, রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত পদোন্নতি সংক্রান্ত যেকোনো কার্যক্রম অবৈধ হিসেবে গণ্য হবে। দেশের বৃহত্তম রাষ্ট্রায়ত্ত বিশেষায়িত ব্যাংকটির ১০ম গ্রেডের পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন ধরে ন্যায্য পদোন্নতির দাবিতে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করে আসছিলেন। দাবি আদায়ে বারবার কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন ও মানববন্ধন করেও সাড়া না পেয়ে তারা শেষ পর্যন্ত আদালতের দ্বারস্থ হন। সূত্র জানায়, পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তারা গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর (শনিবার) ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে ছুটির দিনে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন করেন, যাতে গ্রাহকসেবা ব্যাহত না হয়। তাদের দাবির প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করে তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শওকত আলী খান দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন। তবে তিন মাস পার হলেও প্রতিশ্রুত আশ্বাস বাস্তবায়িত না হওয়ায় তারা পুনরায় ওই বছরের ৩০ নভেম্বর মানববন্ধনের আয়োজন করেন। এতে সারা দেশের শাখা থেকে ১২০০–এর বেশি কর্মকর্তা অংশ নেন। পরদিন (১ ডিসেম্বর) বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক সঞ্চিয়া বিনতে আলী পদোন্নতির বিষয়ে মৌখিক আশ্বাস দিলে আন্দোলনকারীরা কর্মস্থলে ফিরে যান। পরে কর্মকর্তাদের জানানো হয়, সুপারনিউমারারি পদ্ধতিতে মার্চের মধ্যে পদোন্নতির বিষয়টি সমাধান করা হবে। কিন্তু এখনো তা বাস্তবায়ন হয়নি। অন্যদিকে অগ্রণী, জনতা, রূপালী ও সোনালী ব্যাংকে ইতোমধ্যে মোট ৭,৩১৬ কর্মকর্তা এই পদ্ধতিতে পদোন্নতি পেয়েছেন, যা অর্থ মন্ত্রণালয়ও অনুমোদন করেছে। পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তাদের অভিযোগ, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের এই উদাসীনতা তাদের প্রতি কর্মীবান্ধবহীন মনোভাব ও কর্তৃপক্ষের অনীহারই প্রকাশ। তারা বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট স্বৈরাচার পতনের পর অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পরিবর্তন এলেও কৃষি ব্যাংকে আগের প্রশাসনিক কাঠামো অপরিবর্তিত রয়ে গেছে, যা ন্যায্য দাবি আদায়ের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের অভিযোগ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, মহাব্যবস্থাপক ও মানবসম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক জাহিদ হোসেন একাধিক বৈঠকে আশ্বাস দিলেও বাস্তব পদক্ষেপ না নিয়ে বরং আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী কর্মকর্তাদের হয়রানি ও নিপীড়ন করা হয়েছে। ফলে তারা বাধ্য হয়ে এ বছরের চলতি মাসে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন (রিট মামলা নং: ১৬৪২৮/২০২৫, মো. পনির হোসেন গং বনাম রাষ্ট্র ও অন্যান্য)। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৬ অক্টোবর হাইকোর্ট রুল জারি করে জানতে চেয়েছেন, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের পদোন্নতিতে দেখা দেওয়া অনিয়ম ও অসঙ্গতি কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না। পাশাপাশি আদালত নির্দেশ দিয়েছেন, রুল নিষ্পত্তির আগে কোনো পদোন্নতি কার্যক্রম শুরু করা হলে তা অবৈধ ও আদালত–অবমাননার শামিল হবে। রিটে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক পদোন্নতিতে ১০৭৩ জন কর্মকর্তা (ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা থেকে মূখ্য কর্মকর্তা) এবং ৫১ জন মূখ্য কর্মকর্তা (ঊর্ধ্বতন মূখ্য কর্মকর্তা পদে) অনিয়মের মাধ্যমে পদোন্নতি পেয়েছেন। এদিকে জানা গেছে, পূর্বে দুর্নীতির অভিযোগে আলোচিত মানবসম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক জাহিদ হোসেন এখনো পদোন্নতি কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তারা বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করে যদি পুনরায় অনিয়মের পথে যাওয়া হয়, তাহলে তা আদালতের অবমাননা ও রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল হবে। তারা আশা করছেন, এ বিষয়ে দ্রুত ন্যায়বিচার ও সমাধান মিলবে।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে সাম্প্রতিক সময়ে পদোন্নতি ও প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। পদোন্নতিবঞ্চিত কর্মকর্তাদের একটি অরাজনৈতিক সংগঠন ‘বৈষম্য বিরোধী অফিসার্স ফোরাম’ এর কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক মো. পনির হোসেন ও সদস্য সচিব এরশাদ হোসেনকে শৃঙ্খলাজনিত মোকদ্দমা এবং মুখ্য সংগঠক মো. আরিফ হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া মুখপাত্র তানভীর আহমদকে দুর্গম অঞ্চলে বদলি করা হয় এবং সারাদেশের দুই শতাধিক কর্মকর্তাকে ব্যাখ্যা তলব করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে যে, মো. আরিফ হোসেনকে বরখাস্ত করার নথিতে তাকে ‘ব্যাংক ও রাষ্ট্রবিরোধী’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে, অথচ ব্যাখ্যা তলবপত্রে বলা হয় তিনি ‘রাজনৈতিক কাজে তহবিল সংগ্রহ করেছেন।’ ফরেনসিক বিশ্লেষণ অনুযায়ী, তার ব্যাখ্যাতলবের জবাব প্রদানের পরও বরখাস্ত চিঠি আগেই তৈরি করা হয়েছিল, যা অনেক কর্মকর্তার মধ্যে প্রশ্ন তোলেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মহাব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, সরকারি কর্মকর্তারা যদি সংবিধান বা আইন অনুযায়ী দায়িত্ব না পালন করেন, হাইকোর্ট তাদের ক্ষমতা প্রয়োগ বা অপব্যবহার রোধের জন্য আদেশ দিতে পারে। অন্য একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, এ সিদ্ধান্তের পেছনে ব্যাংকের ফ্যাসিস্ট সরকারের সহযোগী একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা বলছেন, পদোন্নতি ও ন্যায়বিচারের জন্য আন্দোলন এবং আইনি লড়াই চলবে। ভুক্তভোগী কর্মকর্তারা শিগগিরই বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, অর্থ উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার কাছে এ বিষয়ে প্রতিকার চাইবেন। এ ব্যাপারে মো. আরিফ হোসেন ও পনির হোসেনের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে একটি ভুয়া কর্মচারী ইউনিয়নের সভায় জোরপূর্বক কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণ করানোর অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন ব্যাংকের ভিজিল্যান্স স্কোয়াডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা তাসলিমা আক্তার লিনা ও তার স্বামী মিরাজ হোসেন। গত ২০ অক্টোবর প্রধান কার্যালয়ের অডিটোরিয়ামে ‘বিশেষ সাধারণ সভা’ নামে একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের (সিবিএ) নামে তারা এটির আয়োজন করে। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির সহ-শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির খান ও উদ্বোধক হিসেবে জাতীয়তাবাদী শ্রমিকদলের সভাপতি আনোয়ার হোসাইনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তবে তারা প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে ভুয়া নেতাদের কার্যকলাপ সম্পর্কে অবগত হয়ে অনুষ্ঠানটি বয়কট করেন। অভিযোগ রয়েছে, তাসলিমা আক্তার লিনা হেড অফিসের বিভিন্ন দপ্তরের নারী কর্মকর্তা এবং তার স্বামী মিরাজ হোসেন পুরুষ কর্মকর্তাদের ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে ওই সভায় অংশগ্রহণে বাধ্য করেন। অংশগ্রহণে অস্বীকৃতি জানালে বদলি বা পদোন্নতি রোধের হুমকিও দেওয়া হয় বলে জানা গেছে। হেড অফিসের কয়েকজন কর্মকর্তার ভাষ্য অনুযায়ী, লিনা তার স্বামীর প্রভাব খাটিয়ে নারী সহকর্মীদের ওপর দীর্ঘদিন ধরে অনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে আসছেন। কেউ আপত্তি জানালে মিরাজের সহযোগীরা এসে অশালীন আচরণ ও গালিগালাজ করে থাকে বলেও অভিযোগ ওঠে। এ ছাড়া, লিনা ‘উইমেনস ফোরাম’ নামে একটি সংগঠন গড়ে মাসিক চাঁদা সংগ্রহ করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। তার এই কর্মকাণ্ডে অনেক নারী কর্মকর্তা বিব্রতবোধ করলেও চাকরির স্বার্থে নীরব থাকছেন। অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা গেছে, মানবসম্পদ বিভাগের ডিজিএম জাহিদ হোসেনের প্রত্যক্ষ সহায়তায় তাসলিমা আক্তার লিনা ও তার স্বামী মিরাজ ব্যাংকের অভ্যন্তরে প্রভাব বিস্তার করছেন। এ ঘটনায় নারী কর্মকর্তাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তারা কর্তৃপক্ষের কাছে তাসলিমা আক্তার লিনা ও মিরাজ হোসেনকে অবাঞ্ছিত ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন। এ বিষয়ে জানতে তাসলিমা আক্তার লিনার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি নিয়ম অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করছি, অভিযোগগুলো ভিত্তিহীন। অন্যদিকে, মিরাজ হোসেনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে সংঘটিত এজাহারভুক্ত হত্যা মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি ফয়েজ উদ্দিন আহমেদ ও মিরাজ হোসেন পলাতক রয়েছেন। ব্যাংক প্রশাসন বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। খুনের শিকার কৃষি ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী আব্দুল হালিম ছিলেন কৃষি ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের (সিবিএ) সভাপতি। তার গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলায়। পরিবারের ভাষ্য অনুযায়ী, তিনি স্থানীয়ভাবে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। মামলার বিবরণ অনুযায়ী, ১ নম্বর আসামি হিসেবে অবসরপ্রাপ্ত পিয়ন ফয়েজ উদ্দিন আহমেদ এবং ২ নম্বর আসামি মিরাজ হোসেনের নাম রয়েছে। তারা বর্তমানে নিজেদের সিবিএ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দাবি করে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে প্রভাব বিস্তার করছেন। ব্যাংক সূত্রে গেছে, তারা চাঁদাবাজি, ঘুষ আদায় ও নানা অনিয়মের সঙ্গে জড়িত। সূত্র জানায়, ব্যাংকের ভেতরে একটি সিন্ডিকেটের প্রভাবেই এসব আসামিরা এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছেন। এই সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে আছেন মানবসম্পদ বিভাগের ডিজিএম জাহিদ হোসেন। এতে আরও যুক্ত রয়েছেন ডিজিএম সৈয়দ লিয়াকত হোসেন, হাবিব উন নবী, ডিএমডি খালেকুজ্জামান জুয়েল ও ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সঞ্চিয়া বিনতে আলী। গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর রাতে মতিঝিলের বিমান অফিসের সামনে আব্দুল হালিমের মৃত্যু হয়। পরদিন সকালে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠায়। মতিঝিল থানার উপ-পরিদর্শক সজীব কুমার সিং সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে জানান, পুরনো সহকর্মীদের সঙ্গে বিরোধের জেরে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং রাত ১টা ৪০ মিনিটে হাসপাতালে মারা যান। হালিমের ছেলে ফয়সাল বলেন, তার বাবা ২০১৪ সাল থেকে কৃষি ব্যাংক সিবিএর সভাপতি ছিলেন এবং বোয়ালখালী উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করতেন। ইউনিয়নের নেতৃত্ব ও পদ নিয়ে সহকর্মীদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। এ নিয়ে গত নভেম্বরেই মতিঝিল থানায় একটি জিডি (নং ০৫/১১/২০২৪ - ৩৩৫) করেছিলেন তার বাবা। তিনি আরও বলেন, বুধবার রাতে আমার বাবাকে তার অফিসের সহকর্মীরা মারধর করে হত্যা করেছে। সিবিএর বর্তমান সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জানান, ২০১৪ সালে আমরা নির্বাচিত হই। এরপর আর কোনো নির্বাচন হয়নি। কিন্তু গত ৫ আগস্ট বিনা নির্বাচনে নতুন কমিটি ঘোষণা করে আমাদের অফিস দখল করে নেয় ফয়েজ ও মিরাজ। এ নিয়ে মামলা চলছে। মামলার তথ্য অনুযায়ী, আসামিরা অস্থায়ী জামিনে ছিলেন। সম্প্রতি তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। এছাড়া আরও কয়েকজন পলাতক রয়েছেন—যাদের মধ্যে আছেন ড্রাইভার সাইফুল, শাহেদ, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর মেহেদী ও অবসরপ্রাপ্ত ক্লিনার সিরাজ। এদিকে, মামলার ২ নম্বর আসামি মিরাজ হোসেন নৈমিত্তিক ছুটির আবেদন করে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। যদিও ওয়ারেন্টভুক্ত আসামির নৈমিত্তিক ছুটি পাওয়ার কোনো এখতিয়ার নেই। মানবসম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক এ বিষয়ে বলেন, তিনি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন এবং নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। কিন্তু স্থানীয় মুখ্য কার্যালয়ের প্রধান মহাব্যবস্থাপক জানান, তিনি কোনো মন্তব্য করতে চান না। কারণ ব্যবস্থাপনা পরিচালক মন্তব্য না করার নির্দেশ দিয়েছেন। ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। অভ্যন্তরীণ এই পরিস্থিতিতে কৃষি ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
অভিনব কায়দায় চাঁদাবাজিতে নেমেছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের একদল ভুয়া সিবিএ নেতা। অভিযোগ উঠেছে, তারা বিশেষ সাধারণ সভা আয়োজনের নামে সারা দেশের শাখাগুলো থেকে কোটি টাকারও বেশি চাঁদা আদায় করছে। তথ্যসূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন (সিবিএ), রেজি. নং বি-৯৮৫-এর নাম ব্যবহার করে আগামী ২০ অক্টোবর ‘বিশেষ সাধারণ সভা’ শিরোনামে একটি অনুষ্ঠান আয়োজনের ঘোষণা দেয় একদল ভুয়া নেতা। এ উপলক্ষে তারা ব্যাংকের প্রায় ১ হাজার ২৫০টি ইউনিট থেকে ১০-২০ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করে ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার উঠে। গোপন সূত্র জানায়, তাদের নিয়ন্ত্রিত লোকজন শাখা পর্যায়ে বদলি ও পদোন্নতির ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন উপ-মহাব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, তারা এসব কর্মকাণ্ডে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করলেও এ সিন্ডিকেটের ভয়ে কিছু বলার সাহস পাচ্ছেন না। এ ঘটনায় ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগের ডিজিএম জাহিদ হোসেনের প্রত্যক্ষ মদদ ও আস্কারায় চাঁদাবাজি চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রাপ্ত আমন্ত্রণপত্রে দেখা গেছে, ভুয়া সভাপতি দাবিকারী কৃষি ব্যাংকের সাবেক পিয়ন ফয়েজ আহমেদ ও ভুয়া সাধারণ সম্পাদক মিরাজ হোসেন স্বাক্ষরিত পত্রে প্রধান অতিথি হিসেবে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির, উদ্বোধক হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন এবং প্রধান বক্তা হিসেবে সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম খান নাসিমকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। কয়েকজন মহাব্যবস্থাপক জানান, তারা বিভিন্ন শাখা থেকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ পেয়েছেন এবং বিষয়টি ব্যবস্থাপনা পরিচালক অবগত আছেন বলে জানানো হয়েছে। অনুষ্ঠানটি কৃষি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত হওয়ায় তারা কার্যত কিছু করতে পারছেন না। অনুসন্ধানে জানা যায়, এর আগেও একই সিন্ডিকেট শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে প্রায় ৫০ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করেছিল। সেই টাকা তারা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, চাঁদাবাজ ও তাদের মদদদাতাদের সঙ্গে দলের কোনো সম্পর্ক নেই। তারা বহিরাগত অনুপ্রবেশকারী। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এসব ভুয়া সিবিএ নেতাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও অবাঞ্ছিত ঘোষণা দাবি করেছেন। তাদের আশঙ্কা, এসব কর্মকাণ্ডের নেতিবাচক প্রভাব আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে পড়তে পারে।
লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীদের টহল দলের ওপর বন্দুকধারীদের হামলার পর দেশটির সেনাবাহিনী ছয়জনকে গ্রেফতার করেছে। আজ শনিবার লেবাননের সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে এ কথা জানিয়েছে। বৈরুত থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানিয়েছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনী ইউনিফিল এর আগে জানায়, বৃহস্পতিবার তিনটি মোটরসাইকেলে থাকা ছয়জন বন্দুকধারী একটি টহল গাড়িতে গুলি চালায়, তবে কেউ আহত হয়নি। শনিবার সেনাবাহিনীর বিবৃতিতে বলা হয়, গোয়েন্দা অধিদপ্তর হামলার পর তদন্ত চালিয়ে ছয়জন লেবাননি সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করেছে। সেনাবাহিনী জানায়, ইউনিফিলের ওপর হামলা সহ্য করা হবে না। শান্তিরক্ষীরা ইসরাইল সীমান্তের কাছে লিতানি নদীর দক্ষিণে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে ইউনিফিল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ১৯৭৮ সালের মার্চ থেকে ইউনিফিল ইসরাইল ও লেবাননের মধ্যে বাফার হিসেবে কাজ করছে। এছাড়া ২০২৪ সালের নভেম্বরের যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণের দায়িত্বও তাদের ওপর রয়েছে, যা ইসরাইল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা সংঘাত থামানোর উদ্দেশ্যে করা হয়েছিল। চুক্তি অনুযায়ী লেবানন থেকে ইসরাইলি বাহিনী সরে যাবে এবং হামলা বন্ধ করবে, একইসঙ্গে ইরান-সমর্থিত হিজবুল্লাহর নিরস্ত্রীকরণ নিশ্চিত করার কথা রয়েছে।
বিশ্বের জনসংখ্যা ক্রমবর্ধমান। বর্তমানে সারা বিশ্বের ৮২০ কোটি মানুষের অর্ধেকেই শহরে বসবাস করছেন। এর ফলে অতিমহানগরীর সংখ্যা বাড়ছে। সাম্প্রতিক জাতিসংঘের এমন প্রতিবেদন প্রকাশের পর মেগা সিটি ফের আলোচনায় এসেছে। এখন একনজরে দেখা নেই—মেগা সিটি বলতে আসলে কী বোঝানো হয় এবং এটি কীভাবে নির্ধারণ করা হয়। জাকার্তা: এশিয়ার হৃৎপিণ্ড জাতিসংঘের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী মেগা সিটিগুলোর শীর্ষে অবস্থান করছে ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তা। ঘনবসতিপূর্ণ দ্বীপ জাভার পশ্চিমাংশে অবস্থিত এ উপকূলীয় শহরে বসবাস করছেন ৪ কোটি ১৯ লাখ মানুষ। গত ২৫ বছরে জাকার্তার জনসংখ্যা পাঁচ গুণের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। জাকার্তার এ নাটকীয় বৃদ্ধির মূল কারণ হলো অভ্যন্তরীণ অভিবাসন। গ্রামাঞ্চলের মানুষ উন্নত নাগরিক সুবিধা, শিক্ষা এবং কর্মসংস্থানের খোঁজে শহরে ঢুকে পড়ছেন। জাকার্তা এখন এক অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক হাব। শহরের অবকাঠামো যেমন আধুনিক, তেমনি পরিবহন, আবাসন ও নগর সেবা শহরের নাগরিকদের জন্য ক্রমশ চাপ সৃষ্টি করছে। প্রতিদিন ঘনবসতিপূর্ণ সড়কে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজট। এ নগর শুধু জনসংখ্যার হিসাবেই নয়, বরং প্রযুক্তি ও অর্থনীতির দিকেও বিশ্বকে প্রভাবিত করছে। টোকিও: স্থিতিশীল বৃদ্ধির মডেল জাপানের রাজধানী টোকিও একসময় বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল নগর ছিল। বর্তমানে ৩ কোটি ৩৪ লাখ মানুষ এ শহরে বসবাস করছেন। গত ২৫ বছরে জনসংখ্যা বৃদ্ধি তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল। টোকিওর এ স্থিতিশীলতা আসে উন্নত অবকাঠামো, কার্যকর নগর পরিকল্পনা এবং উন্নত নাগরিক সেবার কারণে। এটি প্রমাণ করে, মেগা সিটি শুধু দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফল নয়; দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নেও শহরকে মেগা সিটি হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব। ম্যানিলা: যেখানে অপরাধ ও দূষণের মাত্রাও বেশি ফিলিপাইনের ম্যানিলা শহরেও ২ কোটি ৪৭ লাখ মানুষের বসতি, যেখানে অতিরিক্ত জনসংখ্যা, দূষণ এবং অপরাধ নাগরিক জীবনে বড় চ্যালেঞ্জ। ১৫৭১ সালে গোড়াপত্তন হওয়া এ নগরের লোকসংখ্যা গত শতাব্দীতে দ্রুতগতিতে বেড়েছে, তবে শেষ ১০ বছরে গতি অনেকটা কমে গিয়েছিল। ম্যানিলা শত শত বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্র, স্পেন ও জাপানের শাসনে ছিল। কিন্তু কেউই এ নগরের উন্নয়নে সত্যিকারের কোনো পরিকল্পনা করেনি। নয়াদিল্লি: ঐতিহ্য ও চ্যালেঞ্জের সমন্বয় ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে ৩ কোটি ২ লাখ মানুষের বসতি। প্রায় দুই হাজার বছরের ইতিহাসে নয়াদিল্লি শহর যেমন ঐতিহ্যবাহী, তেমনি আধুনিক নগর পরিকল্পনার জন্য চ্যালেঞ্জেরও সম্মুখীন। পুরোনো অবকাঠামো, যানজট, শিল্প ও কৃষিদূষণ শহরের দৈনন্দিন বাস্তবতা। অভ্যন্তরীণ অভিবাসনের চাপ এবং নগরের সীমিত জমি নয়াদিল্লিকে টেকসই নগরায়ণের জন্য কঠিন পরিস্থিতিতে রাখছে। সাংহাই : চীনের অর্থনৈতিক শক্তি চীনের সাংহাইতে ২ কোটি ৯৬ লাখ । সাংহাইয়ের ইয়াংজি নদীর দক্ষিণ মোহনায় অবস্থিত এ নগর একসময় ছিল জেলেদের গ্রাম। আজ এটি চীনের বৃহত্তম নগর ও অর্থনৈতিক কেন্দ্র। অভ্যন্তরীণ অভিবাসী ও বিদেশি নাগরিকরা সাংহাইয়ে বসতি স্থাপন করছেন, যার ফলে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কায়রো: মিশরের ইতিহাস ও সংস্কৃতির ভরকেন্দ্র মিশরের রাজধানী কায়রো আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের প্রধান কেন্দ্র। এখানে ২ কোটি ৫৫ লাখ মানুষ বসবাস করছেন। ইতিহাস, পিরামিড এবং আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান কায়রোকে আকর্ষণীয় করে তুলেছে। পরিসংখ্যান বলছে, মিশরের মোট জনসংখ্যার প্রায় সাড়ে ১৯ শতাংশ কায়রোতে বসবাস করেন। দেশটির বেশিরভাগ মন্ত্রণালয়, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি, গণমাধ্যম এবং আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সংস্থার প্রধান কার্যালয় কায়রোতে অবস্থিত। সিউল: উদ্ভাবন ও উচ্চ জীবনমানের কেন্দ্র দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলও ২ কোটি ২৫ লাখ মানুষকে আশ্রয় দিচ্ছে। এটি জাতিসংঘ প্রকাশিত ২০২৫ সালের শীর্ষ ১০ মেগা সিটির তালিকায় সবার শেষে রয়েছে। সিউল দেখিয়েছে, দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধির দেশ নয়, উন্নত অর্থনীতির দেশেও মেগা সিটি গড়ে উঠতে পারে। স্থিতিশীল বৃদ্ধি, উদ্ভাবন এবং কার্যকর নগর পরিকল্পনা সিউলের মডেল। শক্তিশালী শিক্ষাব্যবস্থা ও উচ্চ জীবনমানের কারণে সিউল বিশ্বজুড়ে পরিচিত। গুয়াংজু: চীনের অভিবাসীপ্রবাহের কেন্দ্র সাংহাইয়ের পরই সবচেয়ে জনবহুল মেগা সিটির তালিকায় ৬ নম্বরে রয়েছে চীনের গুয়াংজু নগর। সেখানে ২ কোটি ৭৬ লাখ মানুষ বসবাস করেন। এটি চীনের তৃতীয় বৃহৎ নগরী। গুয়াংজু ও এর আশপাশের অঞ্চল ব্যাপকভাবে অভিবাসীপ্রবাহের জন্য পরিচিত। গুয়াংজুর অর্থনীতি দ্রুত বাড়ছে, যে কারণে সেখানে শ্রমের উচ্চ চাহিদা রয়েছে। শ্রমের এ চাহিদা মেটাতেই ফ্লোটিং পপুলেশন গুয়াংজুতে ভিড় করে। গুয়াংজুতে ফ্লোটিং পপুলেশন বছরে ছয় মাসের জন্য অন্তত তিন কোটি মানুষকে শহরে নিয়ে আসে। ঢাকা: এশিয়ার নতুন জায়ান্ট জাকার্তার ঠিক পরেই রয়েছে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা। গত ২৫ বছরে ঢাকা এমন বৃদ্ধির সাক্ষী হয়েছে, যা পৃথিবীর অন্যান্য মেগা সিটির তুলনায় সবচেয়ে দ্রুত। বর্তমানে ঢাকায় বসবাস করছেন ৩ কোটি ৬৬ লাখ মানুষ। জাতিসংঘের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০৫০ সালের মধ্যে ঢাকা জাকার্তাকেও ছাড়িয়ে বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল নগরে পরিণত হবে। ঢাকার জনসংখ্যা বৃদ্ধির মূল কারণও অভ্যন্তরীণ অভিবাসন। গ্রামীণ ও উপনগর এলাকার মানুষ শিক্ষা, চাকরি, স্বাস্থ্যসেবা ও অন্যান্য নাগরিক সুবিধার জন্য ঢাকায় ঢুকছেন। কিন্তু এই দ্রুত বৃদ্ধির ফলে শহরের অবকাঠামো, স্যানিটেশন, গণপরিবহন ও বাসস্থান ব্যবস্থা ক্রমশ চাপে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নগর পরিকল্পনা ও টেকসই অবকাঠামো ছাড়া এ জনসংখ্যা চাপ দীর্ঘমেয়াদে নগরের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। কলকাতা: ইতিহাস ও আধুনিকতার সমন্বয় ভারতের কলকাতা শহরে ২ কোটি ২৫ লাখ মানুষ বসবাস করছেন। শহরমুখী জনসংখ্যার বৃদ্ধির ফলে কলকাতায় নাগরিক সেবা, আবাসন ও পরিবহন ব্যবস্থায় চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। জাতিসংঘের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০০০ সালে কলকাতা জনবহুল নগরের তালিকায় ৫ নম্বরে ছিল। এখন কয়েক ধাপ নেমে ৯ নম্বরে গেছে। ২০৫০ সালে আরও এক ধাপ নেমে ১০ নম্বরে থাকবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
ভারতে দুই বাংলাদেশিসহ পাঁচজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন কলকাতার একটি আদালত। তাদের বিরুদ্ধে ভারতজুড়ে বোমা বিস্ফোরণ ও নাশকতা চালানোর ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অপরাধে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে। বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। দণ্ডপ্রাপ্ত দুই বাংলাদেশি হলেন আনোয়ার হোসেন ফারুক ওরফে এনাম এবং মোহাম্মদ রুবেল ওরফে রফিক। তারা জামালপুরের বাসিন্দা। আর বাকি তিনজন হলেন পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানের বাসিন্দা মাওলানা ইউসুফ শেখ ওরফে শেখ ইউসুফ ওরফে আবু বকর ওরফে সুলেইমান শেখ (৩১), আসামের বরবেটার বাসিন্দা মোহাম্মদ সাহিদুল ইসলাম ওরফে সামিম ওরফে আসরাফুল আলম ওরফে নির্মল ওরফে সূর্য সামিম (২২) এবং জাবিরুল ইসলাম (৩০)। তাদের মধ্যে মোহাম্মদ রুবেল এবং জাবিরুল ইসলামের ২০১৪ সালের খাগড়াগড় বোমা বিস্ফোরণ মামলায়ও পূর্বে দণ্ড হয়েছিল। কলকাতার সিটি সেশনস কোর্টের বিশেষ এনডিপিএস বিচারক রোহন সিনহা এ রায় ঘোষণা করেন। কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের (এসটিএফ) তদন্তে নাশকতার বৃহৎ ষড়যন্ত্রের প্রমাণ মিললে মামলাটি আদালতে আসে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মাওলানা ইউসুফকে ভারত সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার ষড়যন্ত্র সংক্রান্ত দণ্ডযোগ্য অপরাধে (ধারা ১২১এ) অতিরিক্ত যাবজ্জীবন দেওয়া হয়েছে। দুই বাংলাদেশি নাগরিককে ফরেনার্স অ্যাক্টের ধারা ১৪-এর অধীনেও দণ্ডিত করা হয়েছে। তদন্তকারী কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জেএমবি সদস্যরা অবৈধভাবে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত পেরিয়ে উত্তর ২৪ পরগনায় ঢোকার পরিকল্পনা করেছিল। তাদের লক্ষ্য ছিল উত্তর-পূর্ব ভারত, দক্ষিণ ভারতসহ বিভিন্ন স্থানে বোমা বিস্ফোরণ ও নাশকতা চালানো। তাদের চূড়ান্ত উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশে শরিয়াভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় ভারতের ‘বাধা’ দূর করা এবং রোহিঙ্গা ও কাশ্মীর ইস্যুতে ভারতের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়া। বাংলাদেশি সদস্যরা ভুয়া ভারতীয় নথি সংগ্রহ করে ভারতে প্রবেশ করেছিল। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এসটিএফ বনগ্রাম, বসিরহাট, কোচবিহার এবং আসাম থেকে ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় তাদের কাছ থেকে বিস্ফোরক, আইইডি তৈরির সরঞ্জাম, ভারতের বিভিন্ন এলাকায় হামলার নকশা ও নথি, সংগঠনের কাঠামোর নকশা এবং নগদ টাকা, ল্যাপটপ ও এসডি কার্ড উদ্ধার করা হয়। তবে প্রমাণের অভাবে আরেক অভিযুক্ত আবদুল কালাম ওরফে আজাদ ওরফে কালামকে মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।