অন্যান্য

কাজী নজরুল ইসলামের ‘মানুষ’ কবিতার ভেতরের মানুষেরা

খবর৭১ ডেস্ক, অক্টোবর ১৩, ২০২৫ 0

জাগরণের অগ্নিবীণা বাজিয়ে যিনি আত্মভোলা, অসচেতন ও অলস জাতিকে তারুণ্যের উদ্দীপনায় উদ্দীপ্ত হতে বলেছেন, মুক্ত প্রাণ ধর্মের তারুণ্যকে জয়যুক্ত করার জন্য যিনি অমর যৌবনের আগ্নেয় দুর্দান্তকে দোড়রা মেরে সচেতন করে তুলেছেন তিনি হলেন মহাবিশ্বের এক জ্বলন্ত আগ্নেয়গিরি, মহাবিদ্রোহের রণতুর্যবাদক বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম। কাজী নজরুল ছিলেন ইসলাম সকল শ্রেণির মানুষের কবি, তিনি সমাজের উঁচুতলার লোকদের সাথে যেমন মিশেছেন ততোধিক গভীরভাবে ও নিবিড়ভাবে মিশেছেন সমাজের খেটে-খাওয়া কুলি-মজুর, শ্রমিক-কৃষান, জেলে-মাঝি, কামার-কুমার, সাঁওতাল-মুন্ডা, গারো-খাসিয়া, রাজমিস্ত্রী, তাঁতি-ধোপা, বাউল, সাপুড়ে-বেদে অন্ত্যজ শ্রেণির মানুষের সাথে। তিনি তাদের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, আবেগ-কল্পনা, ভালো লাগা-মন্দ লাগাকে বিষয় করে অসংখ্য কাব্য রচনা করেছেন। পণ্ডিত থেকে পথচারী, শহরবাসী ভদ্রলোক থেকে মাঠের রাখাল সবাই ছিলেন তাঁর আত্মার আত্মীয়। সাম্যবাদী কাব্যগ্রন্থে কবি মূলত মানুষের কথা বলেছেন। মানুষ কবিতায় বিশ্ব শব্দসম্রাট কাজী নজরুল ইসলাম নব শব্দ সৃষ্টির কারিগর হয়ে সমাজের নব বিনির্মাণের নিমিত্তে সাম্যের গান গেয়েছেন।

১৯২৫ খৃষ্টাব্দের ১৬ই ডিসেম্বর তারিখে কবি কাজী নজরুল ইসলামের সম্পাদনায় ৩৭নং হ্যারিসন রোড, কলিকাতা হতে শ্রমিক-প্রজা-স্বরাজ-সম্প্রদায়ের সাপ্তাহিক মুখপত্ররূপে ‘লাঙল’ পত্রিকা প্রকাশিত হয়। লাঙল পত্রিকাতেই ‘মানুষ’ কবিতাটি প্রকাশিত হয়। পরবর্তীতে ‘সাম্যবাদী’ কাব্যগ্রন্থে কবিতাটি সংকলিত হয়। ‘মানুষ’ কবিতায় কাজী নজরুল ইসলাম বৈষম্যহীন, শোষণমুক্ত এবং অসাম্প্রায়িক মানবসমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য মানুষের জয়গান গেয়েছেন।

‘মানুষ’ কবিতায় কবি বেশ কিছু পৌরাণিক চরিত্র ও মহানবীরদের বীরত্বগাঁথাকে উপমা হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। যেমন: দেবতা, চেঙ্গিস, কালাপাহাড়, ঈসা, কৃষ্ণ, বৃদ্ধ, নানক, কবীর, কল্কি, মেহেদী ইসা, চণ্ডাল, হরিশচন্দ্র, শ্মশানের শিব, ব্রজের গোপাল, বলরাম, ভোলানাথ গিরিজায়া, মন্দোদরী ইত্যাদি। 

দেবতা: সাধারণ অর্থে দেবতা হল আধ্যাত্মিক শক্তির অধিকারী। দেবতারা স্বর্গের অধিবাসী পরম পূজনীয় ও পবিত্র বলে বিবেচিত। পুরুষ দেবতাকে দেব এবং নারী দেবতাকে দেবী ডাকা হয়। পুরাণে পুরুষ দেবতার মধ্যে ব্রক্ষ্মা, বিষ্ণু ও শিব হচ্ছেন প্রধান। এঁদের একত্রে বলা হয় ত্রিদেব। নারী দেবতার মাঝে আছেন দুর্গা বা পার্বতী, কালী, জগদ্ধাত্রী, অন্নপূর্ণা প্রভৃতি দেবী শক্তি দেবতা রূপে পূজিত হন। কিছু লৌকিক দেবতাও পুরাণে দেখা যায়, যেমন শীতলা, মনসা, ষষ্ঠী প্রভৃতি। তেত্রিশ কোটি দেবতার কথা বলা হলেও মূলত দেবতার সংখ্যা ৩৩। তেত্রিশ কোটি  শব্দটি ভুলবশত প্রয়োগ করা হয়েছে। যর্জুবেদে দেবতার সংখ্যার বর্ণনায় বলা হয়“ত্রয়স্তিমাশতি কোটি” দেবতা। সংস্কৃত ভাষায় কোটি শব্দের দুটি অর্থ, একটি হল ‘প্রকার’ এবং অপরটি হল ‘কোটি’। ভুলবশত কোটি শব্দটির ভুল অর্থ প্রয়োগ করে ৩৩ প্রকার দেবতা পরিবর্তে ৩৩ কোটি দেবতা প্রচার করা হয়। 

কাজী নজরুল ইসলাম ‘মানুষ’ কবিতায় মূলত মানবিক গুণাবলি যথা: ভ্রাতৃত্ব, দয়া, ও সমতার প্রতীক হিসেবে ‘দেবতা’ শব্দটি ব্যবহার করে বোঝাতে চেয়েছেন মানুষের কষ্ট বুঝে, বিপদগ্রস্ত মানুষকে সাহায্য করে পৃথিবীর মানুষেরাই গোলকধাম ও দেবত্ব সৃষ্টি করতে পারে যেখানে ন্যায় বিচার ও ভ্রাতৃত্ব সদা বিরাজমান থাকবে।   

কালাপাহাড়: তৎকালীন গৌড় অঞ্চলের অন্তর্গত বর্তমান রাজশাহীর বীরজাওন গ্রামের খ্যাতিমান  ব্রাক্ষ্মণ নঞানচাঁদ রায়ের পুত্র কালাচাঁদ রায়। নিয়মিত পূজা অর্চনা ছাড়াও নঞানচাঁদ রায় পেশাগত জীবনে গৌড় অঞ্চলের বাদশাহ সুলায়মান খান কররানীর ফৌজদার হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন। পিতার পরিচয় সুবাদে কালাচাঁদ রায় গৌড়ের সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। সুঠামদেহী বলিষ্ঠ পুরুষ, বিদ্যা ও বুদ্ধিতে বিচক্ষণ কালাচাঁদ যুদ্ধবিদ্যায় পারদর্শিতার পরিচয় দিয়ে সবার নজর কেড়ে নেন। প্রাসাদের অভ্যন্তরে অবাধ যাতায়াতের সুবাদে সুলায়মান খান কররানীর কন্যা দুলারি বিবির সাথে তাঁর প্রণয় গড়ে উঠে। দুলারি বিবিকে বিয়ে করে তিনি প্রধান সেনাপতির পদ লাভ করেন। মুসলিম কন্যাকে বিয়ে করায় ব্রাক্ষ্মণরা ধিক্কার দিয়ে তাকে সমাজ থেকে বহিষ্কার করে। ব্রাক্ষ্মণদের প্রতি ব্রীতস্পৃহ হয়ে তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে 'মহম্মদ ফর্ম্মুলি' নামধারণ করেন। মায়ের অনুরোধে প্রায়শ্চিত্য করার জন্য পুরী মন্দিরে গেলে পুরোহিতরা তাকে ফিরিয়ে দেন। হিন্দু ধর্মে প্রত্যাখাত হওয়ার কারণে প্রবল হিন্দু বিদ্বেষী হয়ে তিনি কালাপাহাড় উপাধি লাভ করেন। গরুর চামড়া দিয়ে বিশাল আকৃতির ঢোল বাজিয়ে কালাপাহাড় মন্দিরে প্রবেশ করতেন। উড়িষ্যার বালেশ্বরের গোপীনাথ মন্দির, ভুবনেশ্বরের কাছে কোনার্ক মন্দির, মেদিনীপুর, ময়ূরভঞ্জ, কটক, কামাখ্যা মন্দিরে ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর পাশাপাশি পুরীর জগন্নাথ দেবের বলভদ্র ও সুভদ্রার কাঠের প্রতিমা উপড়ে ফেলে হুগলীতে নিয়ে আগুনে পুড়িয়ে দেন। সম্বলেশ্বরী মন্দিরে আক্রমণ চালানোর প্রাক্কালে গোয়ালিনীর ছদ্মবেশে এক সুন্দরী ব্রাক্ষ্মণী কালাপাহাড়ের সাথে মিলিত হন। তার দেয়া বিষ মিশ্রিত দুধ, দই ও ছানা খেয়ে কালাপাহাড়ের মৃত্যু হয়। 

সাম্যের কবি কাজী নজরুল ইসলাম ‘মানুষ’ কবিতায় ধর্মের নামে হওয়া অবিচার ও ভ-ামির বিরুদ্ধে শক্তির প্রতীক হিসেবে কালাপাহাড়কে উপস্থাপন করেছেন। সমাজে অত্যাচার, নিপীড়ন ও বৈষম্য সৃষ্টি হলে সমাজকে কলুষতার কলঙ্ক থেকে মুক্তি প্রদান করে কালাপাহাড়রাই  মানুষের জয়গান গাইবেন।

ঈসা: যিশু খ্রিষ্ট্রই মূলত ঈসা নবি হিসেবে পরিচিত। যিশু খ্রিষ্ট প্রায় দুই হাজার বছর আগে মাতা মেরির গর্ভে জন্ম গ্রহণ করেন।  যীশুর জন্মের সময় তখনকার ইহুদি রাজা হেরদ রাজ জ্যোতিষীর কাছে জানতে পারেন নবজাত এক শিশু খুব শীঘ্রই এদেশের রাজা হবেন। হেরদ বিদ্বেষপরায়ণ হয়ে বেথেলহেম ও তার আশেপাশের নবজাতক সকল পুরুষ সন্তানকে হত্যার আদেশ দিলেন। এই খবর শুনে যীশুর পিতা যোসেফ এবং মাতা মেরী শিশুসন্তানকে নিয়ে মিশরে পালিয়ে যান। যিশু খ্রিষ্ট্রের বয়স যখন ৩০ বছর তখন থেকেই তিনি প্রকাশ্যে ঈশ্বরের বাণী প্রচার করতে শুরু করেন। যিশু খ্রিষ্ট্র ধর্ম প্রচার করতেন একান্ত সাধারণ ভাষায়। যিশু খ্রিষ্ট্র ঈশ্বরের বাণী প্রচারের সাথে সাথে মানুষকে ডেকে বলতে লাগলেন‘ মানুষকে ভালোবাসো’। মানুষের সকল অপরাধ ক্ষমা করো। যারা তোমাদের শত্রু তাদেরকেও ভালোবাসো। মানুষকে ভালোবাসলে ঈশ্বর তোমাদের ভালোবাসবেন।’  মহামানব যীশুর উপদেশ শুনে মানুষ দলে দলে তার দিকে ধাবিত হলে ধীরে ধীরে তাঁর অনুসারীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। তার মুখের অমৃতবাণী শোনার জন্য মানুষ আকুল হয়ে থাকতো। জনপ্রিয়তা ঠেকাতে বিচারের নামে প্রহসন করে যিশুকে মৃত্যুদ-ের আদেশ দেওয়া হয়। মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্তে ভালোবাসা আর ক্ষমার মহান দূত যিশু খ্রিষ্ট্র ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেছিলেন “হে পিতা, তুমি এদের ক্ষমা করো। ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার চল্লিশ দিন পর যিশু ক্যালভেরি পর্বতে সমবেত শিষ্যদের দর্শন দেন। যিশু তাঁদের বললেন সমস্ত মানুষের কাছে আমার উপদেশ পৌঁছে দাও,দীক্ষিত করো। যারা আমাকে বিশ্বাস করবে তারা অনন্ত শান্তির অধিকারী হবে। অনন্ত কাল আমি তোমাদের সঙ্গে থাকব। এরপরই যিশু অন্তর্ধান করেন । ঈশ্বরপুত্র ফিরে যান তাঁর পিতার কোলে। যিশুর অনুসারীরা খ্রিষ্টান হিসাবে পরিচিত।

কৃষ্ণ: কংসের কারাগারে ভাদ্র মাসের মধ্যরাতে শ্রীকৃষ্ণ জন্মগ্রহণ করেন। বসুদেব সূতিকাগারে যশোদার শয্যায় নিজপুত্রকে রেখে যশোদার কন্যাকে সঙ্গে নিয়ে কংসের কারাগারে ফিরে আসেন। কালীয় নামে একটি বিরাট সাপ তাঁর বিষ দ্বারা জলাশয়কে বিষাক্ত করে দিয়েছিল। এই জল পান করে রাখাল ও গরুর মৃত্যু হতো প্রায়শই। বালক কৃষ্ণ জলাশয়ের কাছে গেলে কালীয় নাগ তাকে আক্রমণ করে। কৃষ্ণ কালীয় নাগের মাথার ওপর উঠে নৃত্য করতে শুরু করেন। কালীয় নাগ পরাজয় বরণ করে স্থান ত্যাগ করে। কৈশোরে মথুরায় প্রত্যাবর্তন করে কৃষ্ণ তাঁর মামা কংসকে হত্যা করেন। কংসের পিতা উগ্রসেনকে পুনরায় যাদবকুলের রাজা হিসেবে সিংহাসনে অধিষ্ঠিত করেন। পরে তিনি যাদবদের নিয়ে দ্বারকা নগরীতে বর্তমান গুজরাটে চলে যান। দ্বারকা নগরীকে তিনি স্বর্ণ নগরীতে রূপান্তরিত করেন। অর্জুন যুদ্ধক্ষেত্রে দাঁড়িয়ে তাঁর আত্মীয়স্বজনকে দেখতে পেয়ে অস্ত্র ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিলে কৃষ্ণ অর্জুনকে তার স্বীয় দায়িত্ব সম্পর্কে জ্ঞান প্রদান করেন। তাঁর সমগ্র উপদেশাবলি ভগবদগীতা নামে খ্যাত হয়েছে। 

বৌদ্ধ: বৌদ্ধ ধর্মের প্রবর্তক গৌতম বুদ্ধ নেপালের লুম্বিনী নগরে জন্মগ্রহণ করেন। বাল্যকালেই তার মাতা মারা যায়। সিদ্ধার্থের পিতা মহারাজ শাক্যবর্ধন তার জীবন বিলাসিতায় ভাসিয়ে দেন। অশোক- তমাল, নীপ-নিকুঞ্জ আর মহুয়া ঘেরা রাজপ্রাসাদে সুখে-স্বাচ্ছন্দ্যে আর বিলাসিতায় তার বাল্যকাল অতিবাহিত হয়। সুন্দরী রাজকুমারীর সাথে বিয়ের পর স্ত্রী পুত্রকে নিয়ে আরাম আয়েশেই তার জীবন চলে যাচ্ছিলো। রোগ-শোক, দুঃখ বলে পৃথিবীতে কোন ব্যাপার আছে তার ধারণাতেই ছিল না। জ্ঞান ছিল না মানুষের জন্ম,মৃত্যু আর বাধর্ক্য সম্পর্কে। কিন্তু একটি ঘটনা তার জীবনকে পাল্টে দেয়। জীবনের উনত্রিশতম বছর বয়সে সিদ্ধার্থ প্রথমবারের মতো তার বন্ধুর হাত ধরে একদিন প্রাসাদের বাইরে বের হন। তিনি রাস্তার ধারে জীবনে প্রথম বারের মতো এক বৃদ্ধ লোক দেখেন। বাধর্ক্যরে ভাড়ে বিপর্যস্ত  মানুষের এই রূপ তাকে অবাক করে দেয়। কিছুদূর যাওয়ার পর দেখেন বাজারের পাশে এক মরদেহ পড়ে রয়েছে। মৃতের আত্মীয় স্বজনেরা তার পাশে বসে আহাজারি করছেন। এই দৃশ্য দেখে তিনি ব্যাকুল হয়ে পড়েন। তার ভেতরে নতুন মানুষের জন্ম হয়। তিনি মানুষের জীবন, জীবনের পরিণতি নিয়ে গভীরভাবে ভাবতে থাকেন। বৈশাখের এক পূর্ণিমার রাতে স্ত্রী,পুত্র,বাবা,মা,রাজপ্রাসাদ ও রাজপ্রাসাদের বিলাসিতা  ত্যাগ করে বেছে নেন সন্ন্যাসের শান্ত স্নিগ্ধ করকমল। আহার-নিদ্রা,কামনা-বাসনা ত্যাগ করে একটানা ছাব্বিশ বছর গভীর ধ্যানে মগ্ন হয়ে অবশেষে তিনি সত্যের সন্ধান পান। বোধিবৃক্ষের তলে তপস্যা করে অসীম জ্ঞানের অধিকারী হয়ে মনুষ্য লয়ে ফিরে এসে মানুষের মাঝে প্রেম,সত্য আর ভালোবাসার অহিংস নীতি প্রচার করেন। 

নানক: শিখ ধর্মের প্রবর্তক গুরু নানক অবিভক্ত ভারতে (বর্তমান পাকিস্তানে) জন্মগ্রহণ করেন। সাম্য, ভ্রাতৃত্ব ও সহনশীলতার পাঠ নিয়ে তিনি সমগ্র ভারতে শান্তির বানী প্রচার করেন। মানুষকে ভালোবাসা, সবার মধ্যে একতা এবং নিঃস্বার্থ সেবার ব্রত দিয়ে মানুষের জয় করেন তিনি।  

কবীর: কবীর অবিভক্ত ভারতের প্রয়াগ অর্থাৎ বর্তমান এলাহাবাদে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ভারতের কুসংস্কারাছন্ন সমাজের জাতপ্রথা ও বর্ণপ্রথার বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। তিনি হিন্দু মুসলমানদের মধ্যে সাম্যের বাণী প্রচার করে মানুষের মঙ্গলের জন্য জয়গান রচনা করেন। তিনি হিন্দু দর্শন, সুফি দর্শন ও বাউল দর্শন দ্বারা প্রভাবিত হয়ে সাধারণ মানুষকে ধর্মের অভয়বাণীর জ্ঞান প্রদান করেন। 

কল্কি: কলি যুগের অন্তিমলগ্নে ভগবান বিষ্ণু কল্কি অবতাররূপে একজন বিষ্ণুভক্তের ঔরসে ধরাধামে অবতীর্ণ হবেন। তিনি বিষ্ণুর ষষ্ঠ অবতার পরশুরামের নিকট থেকে অস্ত্রশিক্ষা লাভ করে সমস্ত অনাচার ও অধর্মের  বিনাশ সাধন করবেন। বিষ্ণুর ত্রেতা যুগের অবতার ভগবান রামচন্দ্রের মতো কল্কিরও তিনজন ভ্রাতা থাকবে যারা বিষ্ণু ভক্ত ও দৈবশক্তিধারী হবেন। ভগবান কল্কি তাঁর দুই স্ত্রী পদ্মা ও রমা এবং চার সন্তান জয়, বিজয়, মেঘওয়াল ও বালা হকসহ শিবের আরাধনা করে শৈবশক্তি অর্জন করবেন। ভগবান কল্কি দেবদত্ত নামক সাদা রঙের ঘোড়ায় আরোহণ পাপীদের বিনাশ করবেন। সমস্ত অসত্য, অসাম্য, বৈষম্য নিপীড়নসহ সব কিছু ধ্বংস সাধন করে পুনরায় সত্যযুগের সূচনা করবেন।

মেহেদী: ধরিত্রীতে অত্যাচারের মাত্রা বেড়ে গেলে মানুষের পরিত্রাতা হিসেবে মেহেদী আবির্ভূত হবেন। তিনি মন্দ ও অন্যায় থেকে বিশ্বকে পরিত্রাণ দেওয়ার জন্য কেয়ামতের কিছু দিন আগে উপস্থিত হবেন। 

চণ্ডাল: হিন্দু ধর্মের চার বর্ণের মধ্যে চণ্ডাল সর্বাপেক্ষা নিম্নস্থানীয়। চণ্ডালরা মূলত মৃতদেহ সৎকারের কাজ করে থাকেন। চণ্ডালকে অস্পৃশ্য বলে বিবেচনা করা হয়।

হরিশচন্দ্র: সত্যবাদী, ন্যায়-পরায়ণ ও নীতিনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিতি রাজা হরিশচন্দ্র ছিলেন মহা দানবীর। একদা এক শরণাগতকে রক্ষার্থে রাজা হরিশচন্দ্র ধ্যানমগ্ন দুর্বাসা মুনির ধ্যানভঙ্গের কারণ হন। ক্রুদ্ধ দুর্বাসা অভিশাপ প্রদান করতে চাইলে রাজা হরিশচন্দ্র ক্ষমা প্রার্থনা করেন। ঋষি দুর্বাসা সম্পূর্ণ রাজত্ব গ্রহণ করার বিনিময়ে অভিশাপ প্রদান করা থেকে নিবৃত হন। রাজত্ব গ্রহণের পর দক্ষিণা চাইলে রাজা হরিশচন্দ্র আপন পুত্র ও স্ত্রীকে বিক্রি করে দেন। এতেও মুনির চাহিদা না মিটলে রাজা হরিশচন্দ্র নিজেকে মুনির হাতে তুলে দেন। দুর্বাসা এক লক্ষ স্বর্ণ মুদ্রার বিনিময়ে হরিশচন্দ্রকে চন্ডালের কাছে বিক্রি করে দেন। চন্ডালের চাকর হয়ে মৃতদেহ সৎকারের কাজে নিয়োজিত হন রাজা হরিশচন্দ্র। রাজা হরিশচন্দ্রের প্রিয়তম পত্নী তারামতী দাসীর কাজে নিয়োজিত হন আর পুত্র রোহিতাশ্ব  কাঠ সংগ্রহ করার কাজ করেন। একদিন কাঠ সংগ্রহকালে রোহিতাশ্ব সর্পাঘাতে মৃত্যুবরণ করে। তারামতী পুত্রকে শ্মশানে দাহ করতে নিয়ে গেলে চন্ডালরূপী রাজা হরিশচন্দ্র পুত্রকে চিনতে পেরে অশ্রুসজল নয়নে মুখাগ্নি করতে উদ্যত হলে ঋষি দুর্বাসা আবির্ভূত হয়ে রোহিতাশ্বের প্রাণ ফিরিয়ে দেন।   

নজরুল মানুষ কবিতায় চণ্ডাল ও হরিশ্চন্দ্র শব্দ দুটো দ্বারা বোঝাতে চেয়েছেন যে, সামাজিক শ্রেণি, বর্ণ বা পদবি নয় বরং মানুষের মর্যাদা নির্ধারিত হয় তাদের আদর্শ, মনোভাব ও মানবিক গুণাবলীর মাধ্যমে। কবি ‘উঁচু’ ও ‘নিচু’ জাতির বিভাজন ভেঙে মানুষের জন্য সমতার সাম্রাজ্য সৃষ্টির লক্ষ্যে মানুষকে সবার ঊর্ধ্বে তুলে আনার প্রয়াস ব্যক্ত করেছেন।


শ্মশানের শিব:  কাজী নজরুল ইসলাম তার মানুষ কবিতায় শ্মশানের শিবের উপমা দ্বারা ধ্বংসের মাধ্যমে নব সৃষ্টির জয়গান রচনা করেছেন। হিন্দু পৌরাণিক থেকে তিনি শিবকে তুলে এনেছেন বিদ্রোহের ধ্বংসাত্মক এবং নব সৃষ্টির রূপ দেখানোর জন্য। মহাদেব বিভিন্নরূপে সমগ্র সৃষ্টি জুড়ে আছেন। মহাদেবের ইঙ্গিতেই প্রলয়লীলা ঘটে থাকে। পুরুষবেশী মহাদেবের নৃত্যকে তা-ব নৃত্য বলা হয়। এই নাচ ধ্বংসের পরিচয় বহন করে। কবি মূলত শিবের উপমা দ্বারা আমাদের অজ্ঞতা-মূর্খতা, হানাহানি-সংঘাতকে ধ্বংস করে মনের ভেতর নবসৃষ্টির প্রদীপ প্রজ্বলন করতে চেয়েছেন।  

ব্রজের গোপাল: ব্রজের গোপাল বলতে শ্রীকৃষ্ণকে বোঝানো হয়েছে। শ্রীকৃষ্ণ ব্রজের গোপালরূপে ব্রজযোগিনীদের সাথে লীলা করেছেন। পুরাণে শ্রীকৃষ্ণের নিত্য অষ্টপ্রহরের আটটি লীলার কথা বলা আছে যার মধ্যে একটি দিব্যলীলাস্থল হলো ব্রজধাম। কিশোর  কৃষ্ণ আর রাধারানীর যে মাধুর্যপূর্ণ প্রেমের পরিপূর্ণ প্রকাশ বৃন্দাবনে স্থাপিত হয়েছিল তারই লীলা ব্রজধামে সংগঠিত হয়। কবি এক ও অভিন্ন সত্তার এক পরমপুরষের আখ্যানমালা দিয়ে বিদ্রোহীর প্রেমযাত্রার পথ রচনা করতেই ব্রজলীলার প্রসঙ্গ তুলে ধরেছেন।

নজরুল ‘ব্রজের গোপাল’ শব্দটির উপমা দ্বারা বুঝিয়েছেন সমাজে তুচ্ছ, অবহেলিত সাধারণ মানুষ অর্থাৎ রাখাল, চাষা এদের নীচু চোখে দেখা হলেও এদের ভেতরেও ঈশ্বরতুল্য মানবসত্তা লুকিয়ে রয়েছে। শ্রীকৃষ্ণ ব্রজের গোপাল অর্থাৎ গরুর রাখাল হয়েও মহান পুরুষ হিসেবে আবির্ভূত হয়ে ধরাধামকে পাপ পঙ্কিলের কলুষ হতে মুক্ত করেন। 

জনক রাজা: রাজা জনক ছিলেন মিথিলার রাজা। তিনি ছিলেন সীতার পিতা। রাবণ ঋষিদের হত্যা করে তাঁদের রক্ত একটি বৃহৎ কলসে সঞ্চয় করে রাখতেন। ঋষি রক্ত হলো সব বিষের চেয়েও বিষাক্ত। ঋষিদের হত্যা করায় রাবণের স্ত্রী মন্দোদরী ক্রুদ্ধ হয়ে বিষাক্ত রক্ত পান করে আত্মহত্যা করার সিদ্ধান্ত নেয়। রক্তের সাথে দুগ্ধ মিশ্রিত ছিল বিধায় মন্দোদরী গর্ভবতী হয়ে পড়েন। মন্দোদরী তাঁর ভ্রুণাংশটি মাটির নিচে লুকিয়ে রাখেন। বহুবছর পর রাজা জনক হাল চাষ করতে গেলে তার লাঙ্গলের হল দ্বারা মাটির নীচ থেকে এই কন্যাকে আবিষ্কার করেন এবং কন্যার নাম রাখেন সীতা। জনকের পণ ছিল যে ব্যক্তি হরধনু ভঙ্গ করতে পারবে তাকেই কন্যাদান করবেন । রাম এই শর্ত পূরণ করে সীতাকে পত্নী হিসেবে লাভ করেন।

বলরাম: বলরাম বিষ্ণুর একজন অবতার। দ্বাপর যুগে লক্ষ্মণ কৃষ্ণের বড় ভাই হিসেবে জন্মগ্রহণের ইচ্ছা পোষণ করে। তাই দেবকীর সপ্তম গর্ভে বলরামরূপে আশ্রয় নেন তিনি। বলরাম ছিল শান্ত প্রকৃতির। কিন্তু তাঁর রাগ ছিল ভয়াবহ। বাল্যকালে একদিন বলরাম স্নান করতে যমুনায় যান। বলরাম যমুনা নদীকে তাঁর সাথে খেলা করতে বলেন । যমুনা এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। প্রত্যাখাত বলরাম ক্রুদ্ধ হয়ে যমুনা নদীকে তাঁর লাঙল দ্বারা আঘাত করেন। যমুনা নদী খণ্ডবিখণ্ড হয়ে যায়। নদীকে তীরে এনে শাস্তির ব্যবস্থা করেন। অবশেষে যমুনা তাঁর স্বমূর্তিতে আবির্ভূত হয়ে বলরামের কাছে ক্ষমা চান। বলরাম অস্ত্রবিদ্যায় ছিলেন অত্যন্ত পারদর্শী। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে না পেরে বলরাম তীর্থ ভ্রমণে বের হন। তীর্থ ভ্রমণ শেষে কুরুক্ষেত্রে আসেন। ভীম অন্যায়ভাবে দুর্যোধনের কোমরের নিচে আঘাত করে তাকে হত্যা করেন। গদাযুদ্ধের নিয়ম লঙ্ঘনের অপরাধে ক্রুদ্ধ হয়ে ভীমের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। যদু বংশ ধ্বংসের পর প্রিয় ভ্রাতা কৃষ্ণ দেহত্যাগ করেন। প্রিয় ভ্রাতার শোকে বলরাম দ্বারকার এক বটবৃক্ষের নিচে যোগ সাধনায় বসেন। এ সময় তাঁর মুখ থেকে রক্তবর্ণ ও সহস্রমুখ এক সাপ নির্গত হয়ে সমুদ্রে চলে যায়। এরপর তিনি দেহত্যাগ করেন। কবি নজরুল তাঁর ‘মানুষ’ কবিতায় বলরামকে সমাজে বিপ্লব আনার জন্য এবং সৃষ্টিকে পরিবর্তনের হেতু হিসেবে ব্যবহার করেছেন।

কাজী নজরুল ইসলামের “মানুষ” কবিতায় ‘জনক রাজা’ ও ‘বলরাম’ শব্দ দুটি মূলত পৌরাণিক রেফারেন্স হলেও নজরুল এগুলো ব্যবহার করেছেন মানবতাবাদী, অসাম্প্রদায়িক ও সাম্যবাদী দৃষ্টিভঙ্গিতে। ‘জনক রাজা’ ও ‘বলরাম’ হলেন শক্তির প্রতীক যারা কৃষির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন। নজরুল বোঝাতে চেয়েছেন যাদের আমরা সাধারণ কৃষক বলে অবজ্ঞা করি তাদের মধ্যেই বলরাম ও রাজা জনকেরা দেবত্ব শক্তি ধারণ করে বিরাজমান আছেন। তাদের অবজ্ঞা করা মানে বলরাম ও রাজা জনকের শক্তিকে অস্বীকার করা। তাই মানবসাধক নজরুল সকল মানুষের ভেতরে সৃষ্টির অস্তিত্ব স্বীকার করে সবাইকে সমতার জয়গান গাইতে বলেছেন।

ভোলানাথ: হিন্দু পৌরাণিকে ভোলানাথ বলতে শিবকে বুঝানো হয়েছে। ভোলানাথ হলেন একজন পরম সত্তা মহাপরুষ। তিনি মহাজগতের পরাচৈতন্যের প্রতিভূ। মর্ত্যে ভোলানাথ শিবলিঙ্গ হিসেবে পুজিত হন। ভোলানাথ জীব জগতের সকলের কল্যাণ দান করে থাকেন। তিনি কল্যাণ কর্তা আদিপুরুষ। তাঁর মাথায় অর্ধচন্দ্র, কণ্ঠে সর্পাহার এবং জটায় দেবী গঙ্গার অবস্থান। মাথার অর্ধচন্দ্র জটার মধ্যে লুকানো অবস্থায় রয়েছে। এই অর্ধচন্দ্র হল জ্ঞানের প্রতীক। গলায় অবস্থিত সাপের কুণ্ডল হল কুলকুন্ডলিনীর প্রতীক, জটায় অবস্থিত দেবী গঙ্গা বিশুদ্ধতার প্রতীক, যা বিশুদ্ধ জ্ঞানকে সংযোগ করে। শঙ্করের ত্রিশূল ত্রিগুণ, ত্রিকাল, সৃষ্টি-স্থিতি এবং লয়ের প্রতীক। মহাদেবই সত্য, ত্রেতা, দ্বাপর ও কলি এই চার যুগের সৃষ্টি করেন। তিন যুগের অবতার লীলা শেষ করে মহাদেব কলি যুগে অবতীর্ণ হবেন। কলিযুগে ভোলানাথ শঙ্কর নামে মানবরূপ ধারণ করে সৃষ্টি-কে সংহার করবেন এবং নব সৃষ্টির আগমন বার্তা প্রকাশ করবেন।  

গিরিজায়া: গিরিজায়া বলতে কবি দেবী দুর্গাকে বুঝিয়েছেন। দুর্গা শব্দটির উল্লেখ প্রথম পাওয়া যায় তৈত্তেরীয় আরণ্যকে। দিতির পুত্র দুর্গাসুরকে বধ করায় তার নাম হয় দুর্গা। দেবী দুর্গা হিমালয়ে বাস করেন। দুর্গাকেই গিরিজায়া নামে অভিহিত করা হয়। তিনি মায়ের মতো আগলে রেখে সমস্ত বাধাবিঘ্ন, রোগ-শোক, পাপ-ভয়, শত্রু ও বিপদ থেকে মানুষকে রক্ষা করে থাকেন বলে তাঁকে বিশ্ব মা বলে অভিহিত করা হয়েছে। 

কাজী নজরুল ইসলাম ‘মানুষ’ কবিতায় ভোলানাথ ও গিরিজায়ার পৌরাণিক উপমা দ্বারা মূলত মানুষের ভেতরে এই দেবত্ব শক্তির অনুসন্ধান করেছেন। সমাজ যে-সব ভিখারি বা দীন-দরিদ্র মানুষকে অবজ্ঞা করে, অপমান করে তাদের মধ্যেই ঈশ্বরের রূপে ভোলানাথ ও গিরিজায়া বিরাজ করেন। মানুষই সর্বোচ্চ ধর্ম আর মানবতাই প্রকৃত পূজা। ঈশ্বর মন্দিরে নয়, সাধারণ মানুষের মধ্যেই বিরাজ করেন। তাই দরিদ্র ও অবহেলিত মানুষদের অপমান করা মানে ঈশ্বরকেই অপমান করা।

মানুষের মধ্যেই ঈশ্বরের বসবাস তাই সব মানুষের প্রতি সমান শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা দেখানোই প্রকৃত ধর্ম।

মন্দোদরী: স্বর্গের সুন্দরী অপ্সরা হেমা এবং ময়দানবের কন্যা মন্দোদরী ছিলেন মহাপরাক্রমশালী রাবনের স্ত্রী। মন্দোদরী ছিলেন মধুরা নামের এক অপ্সরা। কিশোরী বয়সে একদা মধুরা কৈলাসে শিবের পুজো করতে গেলে শিব সৌন্দর্যে বিমোহিত হন। পার্বতীর অনুপস্থিতিতে মহাদেবের কাছে নিজেকে নিবেদন করে দেন। পার্বতী মধুরার বুকের উপর মহেশ্বরের ভস্মের চিহ্ন দেখতে পেয়ে মধুরাকে কুয়োর ব্যাঙ হয়ে থাকার অভিশাপ দেন। পার্বতীর অভিশাপে কুয়োয় বন্দী হয়ে ব্যাঙ হিসেবে বারো বছর কাটিয়ে দেন। মহাপরাক্রমশালী রাবন তাকে কুয়ো থেকে মুক্তি দিয়ে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করেন। মন্দোদরী রাবণকে সীতা হরণের জন্য তিরস্কার করেন। তিনি সীতাকে শ্রীরামের কাছে ফিরিয়ে দেবার জন্য বারবার রাবণকে অনুরোধ করলেও রাবণ তা প্রত্যাখান করেন। রাবণ অমরত্বের বরদান প্রাপ্ত ছিল। সাধারণ কোনো অস্ত্রে বধ করা তাকে সম্ভব ছিল না। তাঁর মরণাস্ত্রের বিশেষ তীর মন্দোদরীর কাছে সুরক্ষিত ছিল। বিভীষণের নিকট থেকে এই তথ্য পেয়ে হনুমান কৌশলে তাঁর কাছ থেকে সেই বিশেষ তীরটি চুরি করে আনেন। রামকর্তৃক রাবণবধ করা হয়। রাবণের মৃত্যুর পর বিভীষণের সঙ্গে তাঁর বিবাহ হয়। 

কাজী নজরুল ইসলাম ‘মানুষ’ কবিতায় মন্দোদরীর উপমা দ্বারা মূলত শোষণকারী, অত্যাচারী ও সাম্রাজ্যবাদী প্রভূদের নিপীড়নের দিকে দৃষ্টিপাত করেছেন। যারা অন্যায়ভাবে জনমানুষকে শোষণ করে তাদের ধ্বংসের বীজ তাদের ভোগের মধ্যেই লুকায়িত থাকে। এই বীজ একদিন মহীরূহ আকার ধারণ করে নিজের উপড়েই আছড়ে পড়ে। কবি মানুষকে মানুষ হিসেবে মর্যাদা দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, অবিচার-ভিত্তিক সমাজ একদিন নিশ্চিহ্ন হবেই।

কাজী নজরুল ইসলামের ‘মানুষ’ কবিতাটি বিশ্বসাহিত্যের একটি অনন্য ম্যাগনাকার্টা। ‘মানুষ’ কবিতায় পৌরাণিক উপমার সাহায্যে কাজী নজরুল ইসলাম মানুষের আত্মমর্যাদা, চেতনা ও মানবিক গৌরবকে  দেবত্বের চেয়েও উচ্চে স্থান দিয়েছেন। পৌরাণিক চরিত্রগুলোর দ্বারা কবি বোঝাতে চেয়েছেন মানুষই সেই অনন্য সত্তা, যার মধ্যে আছে সৃষ্টির শক্তি, প্রেম, করুণা ও প্রতিবাদের সাহস। ‘মানুষ’ কবিতা যুগ যুগ ধরে চলে আসা সমাজের ধর্মীয় গোঁড়ামি, বর্ণবৈষম্য,অনাচার এবং শ্রেণিবিভক্ত সমাজের বিরুদ্ধে একটি মহাবিদ্রোহের ঘোষণা। শুধু এই একটি কবিতা দিয়েই একটি মহাকাব্য রচনা করা যেতে পারে। মানুষের প্রকৃত ধর্ম হলো মানবতা আর মানবিক চেতনা। এই মানবিক চেতনাকে হৃদয়ে ধারণ করে সমস্ত রকম বিভেদ ও অসহিষ্ণুতাকে এড়িয়ে মানুষ হিসেবে আমাদের কর্তব্য হলো ভালোবাসা, সহানুভূতি ও ন্যায়ের পথে চলা। ঐতিহাসিক

রেফারেন্স:
১.    ছেলেদের মহাভারত : উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরি
২.    বৃহৎ শ্রীমদ্ভাগবত : শ্রী বেণীমাধব শীল
৩.    বৃহদারণ্যকোপনিষদ: মহামহোপাধ্যায় দুর্গাচরণ
৪.    পুরাণসংগ্রহ : বিষ্ণু পুরাণ ; অশোক চট্টোপাধ্যায়
৫.    ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ : ড. গৌরিনাথ শাস্ত্রী
৬.    হিন্দুধর্ম : ক্ষিতিমোহন সেন
৭.    অষ্টাদশ পুরাণ কাহিনি : পৃথ্বিরাজ সেন
৮.    উপনিষদ অখ- সংস্করণ : অতুল চন্দ্র সেন
৯.    বড়ু চণ্ডীদাসের শ্রীকৃষ্ণ কীর্তন : উপল তালুকদার
১০.    শ্রী শ্রী চণ্ডী: নৃপেন্দ্রকৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায় 

 

লেখক : দেবব্রত নীল

Popular post
হাইকোর্টের রুল জারি, কৃষি ব্যাংকের পদোন্নতি কেন অবৈধ নয়

বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে পদোন্নতিতে অনিয়ম ও অসঙ্গতির অভিযোগে দায়ের করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে মহামান্য হাইকোর্ট রুল জারি করেছেন। একই সঙ্গে আদালত নির্দেশ দিয়েছেন, রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত পদোন্নতি সংক্রান্ত যেকোনো কার্যক্রম অবৈধ হিসেবে গণ্য হবে। দেশের বৃহত্তম রাষ্ট্রায়ত্ত বিশেষায়িত ব্যাংকটির ১০ম গ্রেডের পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন ধরে ন্যায্য পদোন্নতির দাবিতে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করে আসছিলেন। দাবি আদায়ে বারবার কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন ও মানববন্ধন করেও সাড়া না পেয়ে তারা শেষ পর্যন্ত আদালতের দ্বারস্থ হন। সূত্র জানায়, পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তারা গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর (শনিবার) ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে ছুটির দিনে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন করেন, যাতে গ্রাহকসেবা ব্যাহত না হয়। তাদের দাবির প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করে তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শওকত আলী খান দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন। তবে তিন মাস পার হলেও প্রতিশ্রুত আশ্বাস বাস্তবায়িত না হওয়ায় তারা পুনরায় ওই বছরের ৩০ নভেম্বর মানববন্ধনের আয়োজন করেন। এতে সারা দেশের শাখা থেকে ১২০০–এর বেশি কর্মকর্তা অংশ নেন। পরদিন (১ ডিসেম্বর) বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক সঞ্চিয়া বিনতে আলী পদোন্নতির বিষয়ে মৌখিক আশ্বাস দিলে আন্দোলনকারীরা কর্মস্থলে ফিরে যান। পরে কর্মকর্তাদের জানানো হয়, সুপারনিউমারারি পদ্ধতিতে মার্চের মধ্যে পদোন্নতির বিষয়টি সমাধান করা হবে। কিন্তু এখনো তা বাস্তবায়ন হয়নি। অন্যদিকে অগ্রণী, জনতা, রূপালী ও সোনালী ব্যাংকে ইতোমধ্যে মোট ৭,৩১৬ কর্মকর্তা এই পদ্ধতিতে পদোন্নতি পেয়েছেন, যা অর্থ মন্ত্রণালয়ও অনুমোদন করেছে। পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তাদের অভিযোগ, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের এই উদাসীনতা তাদের প্রতি কর্মীবান্ধবহীন মনোভাব ও কর্তৃপক্ষের অনীহারই প্রকাশ। তারা বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট স্বৈরাচার পতনের পর অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পরিবর্তন এলেও কৃষি ব্যাংকে আগের প্রশাসনিক কাঠামো অপরিবর্তিত রয়ে গেছে, যা ন্যায্য দাবি আদায়ের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের অভিযোগ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, মহাব্যবস্থাপক ও মানবসম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক জাহিদ হোসেন একাধিক বৈঠকে আশ্বাস দিলেও বাস্তব পদক্ষেপ না নিয়ে বরং আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী কর্মকর্তাদের হয়রানি ও নিপীড়ন করা হয়েছে। ফলে তারা বাধ্য হয়ে এ বছরের চলতি মাসে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন (রিট মামলা নং: ১৬৪২৮/২০২৫, মো. পনির হোসেন গং বনাম রাষ্ট্র ও অন্যান্য)। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৬ অক্টোবর হাইকোর্ট রুল জারি করে জানতে চেয়েছেন, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের পদোন্নতিতে দেখা দেওয়া অনিয়ম ও অসঙ্গতি কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না। পাশাপাশি আদালত নির্দেশ দিয়েছেন, রুল নিষ্পত্তির আগে কোনো পদোন্নতি কার্যক্রম শুরু করা হলে তা অবৈধ ও আদালত–অবমাননার শামিল হবে। রিটে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক পদোন্নতিতে ১০৭৩ জন কর্মকর্তা (ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা থেকে মূখ্য কর্মকর্তা) এবং ৫১ জন মূখ্য কর্মকর্তা (ঊর্ধ্বতন মূখ্য কর্মকর্তা পদে) অনিয়মের মাধ্যমে পদোন্নতি পেয়েছেন। এদিকে জানা গেছে, পূর্বে দুর্নীতির অভিযোগে আলোচিত মানবসম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক জাহিদ হোসেন এখনো পদোন্নতি কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তারা বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করে যদি পুনরায় অনিয়মের পথে যাওয়া হয়, তাহলে তা আদালতের অবমাননা ও রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল হবে। তারা আশা করছেন, এ বিষয়ে দ্রুত ন্যায়বিচার ও সমাধান মিলবে। 

কৃষি ব্যাংকে পদোন্নতি বিতর্ক : উদ্বেগে দুই শতাধিক কর্মকর্তা

বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে সাম্প্রতিক সময়ে পদোন্নতি ও প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। পদোন্নতিবঞ্চিত কর্মকর্তাদের একটি অরাজনৈতিক সংগঠন ‘বৈষম্য বিরোধী অফিসার্স ফোরাম’ এর কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক মো. পনির হোসেন ও সদস্য সচিব এরশাদ হোসেনকে শৃঙ্খলাজনিত মোকদ্দমা এবং মুখ্য সংগঠক মো. আরিফ হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া মুখপাত্র তানভীর আহমদকে দুর্গম অঞ্চলে বদলি করা হয় এবং সারাদেশের দুই শতাধিক কর্মকর্তাকে ব্যাখ্যা তলব করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে যে, মো. আরিফ হোসেনকে বরখাস্ত করার নথিতে তাকে ‘ব্যাংক ও রাষ্ট্রবিরোধী’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে, অথচ ব্যাখ্যা তলবপত্রে বলা হয় তিনি ‘রাজনৈতিক কাজে তহবিল সংগ্রহ করেছেন।’ ফরেনসিক বিশ্লেষণ অনুযায়ী, তার ব্যাখ্যাতলবের জবাব প্রদানের পরও বরখাস্ত চিঠি আগেই তৈরি করা হয়েছিল, যা অনেক কর্মকর্তার মধ্যে প্রশ্ন তোলেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মহাব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, সরকারি কর্মকর্তারা যদি সংবিধান বা আইন অনুযায়ী দায়িত্ব না পালন করেন, হাইকোর্ট তাদের ক্ষমতা প্রয়োগ বা অপব্যবহার রোধের জন্য আদেশ দিতে পারে। অন্য একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, এ সিদ্ধান্তের পেছনে ব্যাংকের ফ্যাসিস্ট সরকারের সহযোগী একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা বলছেন, পদোন্নতি ও ন্যায়বিচারের জন্য আন্দোলন এবং আইনি লড়াই চলবে। ভুক্তভোগী কর্মকর্তারা শিগগিরই বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, অর্থ উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার কাছে এ বিষয়ে প্রতিকার চাইবেন। এ ব্যাপারে মো. আরিফ হোসেন ও পনির হোসেনের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।   

কৃষি ব্যাংকের ‘ভুয়া সিবিএ সভা’ ঘিরে চাঞ্চল্য

বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে একটি ভুয়া কর্মচারী ইউনিয়নের সভায় জোরপূর্বক কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণ করানোর অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন ব্যাংকের ভিজিল্যান্স স্কোয়াডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা তাসলিমা আক্তার লিনা ও তার স্বামী মিরাজ হোসেন। গত ২০ অক্টোবর প্রধান কার্যালয়ের অডিটোরিয়ামে ‘বিশেষ সাধারণ সভা’ নামে একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের (সিবিএ) নামে তারা এটির আয়োজন করে।  অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির সহ-শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির খান ও উদ্বোধক হিসেবে জাতীয়তাবাদী শ্রমিকদলের সভাপতি আনোয়ার হোসাইনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তবে তারা প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে ভুয়া নেতাদের কার্যকলাপ সম্পর্কে অবগত হয়ে অনুষ্ঠানটি বয়কট করেন। অভিযোগ রয়েছে, তাসলিমা আক্তার লিনা হেড অফিসের বিভিন্ন দপ্তরের নারী কর্মকর্তা এবং তার স্বামী মিরাজ হোসেন পুরুষ কর্মকর্তাদের ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে ওই সভায় অংশগ্রহণে বাধ্য করেন। অংশগ্রহণে অস্বীকৃতি জানালে বদলি বা পদোন্নতি রোধের হুমকিও দেওয়া হয় বলে জানা গেছে। হেড অফিসের কয়েকজন কর্মকর্তার ভাষ্য অনুযায়ী, লিনা তার স্বামীর প্রভাব খাটিয়ে নারী সহকর্মীদের ওপর দীর্ঘদিন ধরে অনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে আসছেন। কেউ আপত্তি জানালে মিরাজের সহযোগীরা এসে অশালীন আচরণ ও গালিগালাজ করে থাকে বলেও অভিযোগ ওঠে। এ ছাড়া, লিনা ‘উইমেনস ফোরাম’ নামে একটি সংগঠন গড়ে মাসিক চাঁদা সংগ্রহ করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। তার এই কর্মকাণ্ডে অনেক নারী কর্মকর্তা বিব্রতবোধ করলেও চাকরির স্বার্থে নীরব থাকছেন। অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা গেছে, মানবসম্পদ বিভাগের ডিজিএম জাহিদ হোসেনের প্রত্যক্ষ সহায়তায় তাসলিমা আক্তার লিনা ও তার স্বামী মিরাজ ব্যাংকের অভ্যন্তরে প্রভাব বিস্তার করছেন। এ ঘটনায় নারী কর্মকর্তাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তারা কর্তৃপক্ষের কাছে তাসলিমা আক্তার লিনা ও মিরাজ হোসেনকে অবাঞ্ছিত ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন। এ বিষয়ে জানতে তাসলিমা আক্তার লিনার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি নিয়ম অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করছি, অভিযোগগুলো ভিত্তিহীন। অন্যদিকে, মিরাজ হোসেনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

হালিম হত্যার আসামিরা পলাতক, ধামাচাপা দিচ্ছে প্রশাসন

বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে সংঘটিত এজাহারভুক্ত হত্যা মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি ফয়েজ উদ্দিন আহমেদ ও মিরাজ হোসেন পলাতক রয়েছেন। ব্যাংক প্রশাসন বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। খুনের শিকার কৃষি ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী আব্দুল হালিম ছিলেন কৃষি ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের (সিবিএ) সভাপতি। তার গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলায়। পরিবারের ভাষ্য অনুযায়ী, তিনি স্থানীয়ভাবে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। মামলার বিবরণ অনুযায়ী, ১ নম্বর আসামি হিসেবে অবসরপ্রাপ্ত পিয়ন ফয়েজ উদ্দিন আহমেদ এবং ২ নম্বর আসামি মিরাজ হোসেনের নাম রয়েছে। তারা বর্তমানে নিজেদের সিবিএ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দাবি করে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে প্রভাব বিস্তার করছেন। ব্যাংক সূত্রে গেছে, তারা চাঁদাবাজি, ঘুষ আদায় ও নানা অনিয়মের সঙ্গে জড়িত। সূত্র জানায়, ব্যাংকের ভেতরে একটি সিন্ডিকেটের প্রভাবেই এসব আসামিরা এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছেন। এই সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে আছেন মানবসম্পদ বিভাগের ডিজিএম জাহিদ হোসেন। এতে আরও যুক্ত রয়েছেন ডিজিএম সৈয়দ লিয়াকত হোসেন, হাবিব উন নবী, ডিএমডি খালেকুজ্জামান জুয়েল ও ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সঞ্চিয়া বিনতে আলী। গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর রাতে মতিঝিলের বিমান অফিসের সামনে আব্দুল হালিমের মৃত্যু হয়। পরদিন সকালে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠায়। মতিঝিল থানার উপ-পরিদর্শক সজীব কুমার সিং সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে জানান, পুরনো সহকর্মীদের সঙ্গে বিরোধের জেরে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং রাত ১টা ৪০ মিনিটে হাসপাতালে মারা যান। হালিমের ছেলে ফয়সাল বলেন, তার বাবা ২০১৪ সাল থেকে কৃষি ব্যাংক সিবিএর সভাপতি ছিলেন এবং বোয়ালখালী উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করতেন। ইউনিয়নের নেতৃত্ব ও পদ নিয়ে সহকর্মীদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। এ নিয়ে গত নভেম্বরেই মতিঝিল থানায় একটি জিডি (নং ০৫/১১/২০২৪ - ৩৩৫) করেছিলেন তার বাবা। তিনি আরও বলেন, বুধবার রাতে আমার বাবাকে তার অফিসের সহকর্মীরা মারধর করে হত্যা করেছে। সিবিএর বর্তমান সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জানান, ২০১৪ সালে আমরা নির্বাচিত হই। এরপর আর কোনো নির্বাচন হয়নি। কিন্তু গত ৫ আগস্ট বিনা নির্বাচনে নতুন কমিটি ঘোষণা করে আমাদের অফিস দখল করে নেয় ফয়েজ ও মিরাজ। এ নিয়ে মামলা চলছে। মামলার তথ্য অনুযায়ী, আসামিরা অস্থায়ী জামিনে ছিলেন। সম্প্রতি তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। এছাড়া আরও কয়েকজন পলাতক রয়েছেন—যাদের মধ্যে আছেন ড্রাইভার সাইফুল, শাহেদ, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর মেহেদী ও অবসরপ্রাপ্ত ক্লিনার সিরাজ। এদিকে, মামলার ২ নম্বর আসামি মিরাজ হোসেন নৈমিত্তিক ছুটির আবেদন করে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। যদিও ওয়ারেন্টভুক্ত আসামির নৈমিত্তিক ছুটি পাওয়ার কোনো এখতিয়ার নেই। মানবসম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক এ বিষয়ে বলেন, তিনি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন এবং নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন।  কিন্তু স্থানীয় মুখ্য কার্যালয়ের প্রধান মহাব্যবস্থাপক জানান, তিনি কোনো মন্তব্য করতে চান না। কারণ ব্যবস্থাপনা পরিচালক মন্তব্য না করার নির্দেশ দিয়েছেন। ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। অভ্যন্তরীণ এই পরিস্থিতিতে কৃষি ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

কৃষি ব্যাংকে ভুয়া সিবিএ নেতাদের কোটি টাকারও বেশি চাঁদাবাজি

অভিনব কায়দায় চাঁদাবাজিতে নেমেছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের একদল ভুয়া সিবিএ নেতা। অভিযোগ উঠেছে, তারা বিশেষ সাধারণ সভা আয়োজনের নামে সারা দেশের শাখাগুলো থেকে কোটি টাকারও বেশি চাঁদা আদায় করছে। তথ্যসূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন (সিবিএ), রেজি. নং বি-৯৮৫-এর নাম ব্যবহার করে আগামী ২০ অক্টোবর ‘বিশেষ সাধারণ সভা’ শিরোনামে একটি অনুষ্ঠান আয়োজনের ঘোষণা দেয় একদল ভুয়া নেতা। এ উপলক্ষে তারা ব্যাংকের প্রায় ১ হাজার ২৫০টি ইউনিট থেকে ১০-২০ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করে ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার উঠে। গোপন সূত্র জানায়, তাদের নিয়ন্ত্রিত লোকজন শাখা পর্যায়ে বদলি ও পদোন্নতির ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন উপ-মহাব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, তারা এসব কর্মকাণ্ডে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করলেও এ সিন্ডিকেটের ভয়ে কিছু বলার সাহস পাচ্ছেন না। এ ঘটনায় ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগের ডিজিএম জাহিদ হোসেনের প্রত্যক্ষ মদদ ও আস্কারায় চাঁদাবাজি চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রাপ্ত আমন্ত্রণপত্রে দেখা গেছে, ভুয়া সভাপতি দাবিকারী কৃষি ব্যাংকের সাবেক পিয়ন ফয়েজ আহমেদ ও ভুয়া সাধারণ সম্পাদক মিরাজ হোসেন স্বাক্ষরিত পত্রে প্রধান অতিথি হিসেবে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির, উদ্বোধক হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন এবং প্রধান বক্তা হিসেবে সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম খান নাসিমকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। কয়েকজন মহাব্যবস্থাপক জানান, তারা বিভিন্ন শাখা থেকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ পেয়েছেন এবং বিষয়টি ব্যবস্থাপনা পরিচালক অবগত আছেন বলে জানানো হয়েছে। অনুষ্ঠানটি কৃষি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত হওয়ায় তারা কার্যত কিছু করতে পারছেন না। অনুসন্ধানে জানা যায়, এর আগেও একই সিন্ডিকেট শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে প্রায় ৫০ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করেছিল। সেই টাকা তারা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, চাঁদাবাজ ও তাদের মদদদাতাদের সঙ্গে দলের কোনো সম্পর্ক নেই। তারা বহিরাগত অনুপ্রবেশকারী। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এসব ভুয়া সিবিএ নেতাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও অবাঞ্ছিত ঘোষণা দাবি করেছেন। তাদের আশঙ্কা, এসব কর্মকাণ্ডের নেতিবাচক প্রভাব আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে পড়তে পারে।  

অন্যান্য

আরও দেখুন
ছবি: সংগৃহীত
এবারও নিম্নমানের পাঠ্যবই

আগামী শিক্ষাবর্ষের বই ছাপা নিয়ে আবারও উঠেছে নিম্নমানের কাগজ ব্যবহারের অভিযোগ। বিভিন্ন প্রেসে রিসাইকলড ও মানহীন কাগজ ব্যবহার করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। নির্ধারিত জিএসএম ও ব্রাইটনেস না মানলে কঠোরভাবে ব্যবস্থা নিতে গেলে বাধার মুখে পড়ছেন এনসিটিবি ও ইন্সপেকশন এজেন্টের কর্মকর্তারা। অভিযোগ রয়েছে, তাঁদের ভয়ভীতিও দেখানো হচ্ছে।   ২০২৬ শিক্ষাবর্ষের জন্য প্রায় ৩০ কোটি বই মুদ্রণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে প্রাথমিকের ৯ কোটি এবং মাধ্যমিক ও ইবতেদায়ির ২১ কোটি বই ছাপার বড় অংশ পেয়েছে চারটি প্রেস—অগ্রণী, কর্ণফুলী, কচুয়া ও আনোয়ারা। এসব প্রেস মিলে তিন কোটিরও বেশি বই ছাপার কাজ করছে, যার আর্থিক মাপ ২০০ কোটি টাকার বেশি। তবে এর মধ্যে দুটি প্রেস ইচ্ছাকৃতভাবে সময়ক্ষেপণ করে শেষ মুহূর্তে চুক্তি করে, যার কারণে সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির বই ফেব্রুয়ারি-মার্চ পর্যন্ত দেরিতে পৌঁছাতে পারে। মান নির্ধারণ অনুযায়ী প্রাথমিক বইয়ে ৮০ জিএসএম ও ৮৫ ব্রাইটনেস, আর মাধ্যমিক বইয়ে ৭০ জিএসএম ও ৮৫ ব্রাইটনেস মানতে হবে। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, কিছু প্রেস ৮০ জিএসএমের জায়গায় ৬৫–৭০ এবং ৭০ জিএসএমের জায়গায় ৬০–৬৩ জিএসএম কাগজ ব্যবহার করছে। বাজারে মানসম্মত কাগজের দাম যেখানে টনপ্রতি প্রায় ১ লাখ ১৫ হাজার টাকা, সেখানে কিছু প্রেস ৯০ হাজার টাকার রিসাইকলড কাগজ ব্যবহার করছে। এমনকি ইন্সপেকশন এড়াতে ভালো কাগজ আলাদা করে রাখা হয় এবং স্যাম্পল নেওয়ার সময় কর্মকর্তাদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা চলে। এক পর্যায়ে এনসিটিবির এক কর্মকর্তার ব্যাগও কেড়ে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে তাঁদের নিরাপত্তা নিয়েও উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন উপজেলায় পাঠানো বইয়ের কয়েকটি লটে নিম্নমানের কাগজ পাওয়া গেছে এবং কিছু এলাকা তা ফেরতও পাঠিয়েছে। একই সঙ্গে অভিযোগ উঠেছে, এনসিটিবির ভেতরও কিছু ব্যক্তি নিম্নমানের বই ছাপা সিন্ডিকেটের সঙ্গে যোগসাজশ করে ভালো রিপোর্ট দিতে চাপ সৃষ্টি করছেন।   জিএসএম কম হলে বই দ্রুত ছিঁড়ে যায়, আর ব্রাইটনেস কম হলে পাঠে চোখে চাপ পড়ে এই দুই কারণে বই বছরের শুরুতেই নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে। গত বছরও কিছু প্রেস নিম্নমানের বই সরবরাহ করেছিল, তবে তদন্ত মাঝপথে থেমে যায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, এবারও কঠোর ব্যবস্থা না নিলে ২০২৬ সালের বই বিতরণে বড় ধরনের সংকট দেখা দিতে পারে।

খবর৭১ ডেস্ক, ডিসেম্বর ০৭, ২০২৫ 0
ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রামে বিএনপির প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ

ছবি: সংগৃহীত

থাইরয়েডের যেসব লক্ষণ অবহেলা করবেন না

ছবি: সংগৃহীত

শিখন ঘাটতির বছরে মাত্র ৯২ দিন ক্লাস, পরীক্ষায় বসছে প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরা

পুরুষ বন্ধ্যত্ব কেন হয়, সমাধান কী

পুরুষের বীর্যে শুক্রাণুর সংখ্যা বা গতি কমে গেলে, কিংবা কখনো বীর্যে কোনো শুক্রাণুই শনাক্ত না হলে এবং স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে নিয়মিত সহবাস করার পরও এক বছরের মধ্যে গর্ভধারণ না হলে ওই অবস্থাকে পুরুষ বন্ধ্যত্ব বা মেল ইনফার্টিলিটি বলা হয়। সব বন্ধ্যত্ব-দম্পতির ক্ষেত্রে ৩০-৪০ শতাংশ ক্ষেত্রে পুরুষজনিত কারণই দায়ী। সব বন্ধ্যত্ব-দম্পতির ক্ষেত্রে ৩০-৪০ শতাংশ ক্ষেত্রে পুরুষজনিত কারণই দায়ী কারণ ● অতিরিক্ত ধূমপান করা। ● অ্যালকোহল, নেশাজাতীয় দ্রব্য গ্রহণ করা। ● কম সক্রিয় জীবনযাপন। ● ওজনাধিক্য। ● অতিরিক্ত স্ট্রেস। ● হরমোনজনিত সমস্যা (টেস্টোস্টেরন, থাইরয়েড, প্রোলাকটিন)। ● জিনগত কারণ। ● সংক্রমণ যেমন ক্ল্যামাইডিয়া, গনোরিয়া ইত্যাদি।  ● শুক্রনালির ব্লকেজ। ● অণ্ডকোষের টিউমার, ভেরিকোসিলি, মামস অরকাইটিস। ● দীর্ঘ সময় গরম আবহাওয়ায় কাজ করা। কীভাবে শনাক্ত করা হয়  বীর্য পরীক্ষার মাধ্যমে পুরুষ বন্ধ্যত্ব শনাক্ত করা সম্ভব। এর নির্দিষ্ট নিয়ম আছে। তিন দিন সহবাস বন্ধ রেখে বীর্য পরীক্ষা করতে হবে। একটি বীর্য পরীক্ষার রিপোর্ট যদি খারাপ আসে তাহলে এক মাস পরে আরেকটি বীর্য পরীক্ষা করতে হবে। সেটিও যদি খারাপ আসে তাহলে অণ্ডকোষের আলট্রাসনোগ্রাফি ও হরমোন পরীক্ষা করতে হবে।  যা করতে হবে ওজন কমানো, প্রতিদিন ৩০ মিনিট হাঁটাচলা করা, সবুজ শাকসবজি ও ফলমূল খাওয়া, তৈলাক্ত ও চর্বিজাতীয় খাবার এড়িয়ে চলা। স্ট্রেস কমানো এবং রাতে পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করা। ধূমপান, মদ্যপান পরিহার করা। শুক্রাণুর সংখ্যা ও গতির উন্নতির জন্য কিছু মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট দেওয়া হয়। যেমন লেবোকারনিটিন, ভিটামিন সি, ই, ডি, বি কমপ্লেক্স, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড।  তিন মাস পর্যবেক্ষণের পর যদি শুক্রাণুর সংখ্যার উন্নতি না হয়, তাহলে ইন্ট্রাইউটেরাইন ইনসেমিনেশন বা আইভিএফ/ইকসি করা যেতে পারে। ভেরিকোসিলি (অণ্ডকোষের শিরা ফুলে যাওয়া) বা শুক্রনালি বন্ধ। এ-জাতীয় সমস্যা থাকলে অনেক ক্ষেত্রে সার্জারি লাগতে পারে। হরমোনজনিত সমস্যা থাকলে এর চিকিৎসা করতে হবে। যদি শুক্রাণুর সংখ্যা বা গতির মাঝারি ধরনের সমস্যা থাকে, তবে সাধারণত আইইউআই এবং যদি শুক্রাণুর সংখ্যা বা গতির অনেক বেশি সমস্যা থাকে তবে ইকসি করা হয়। কিছু ক্ষেত্রে বীর্যে কোনো শুক্রাণুই পাওয়া যায় না, যাকে অ্যাজোস্পারমিয়া বলা হয়, সে ক্ষেত্রে অণ্ডকোষ থেকে শুক্রাণু নিয়ে ইকসি করা হয়।

খবর৭১ ডেস্ক, ডিসেম্বর ০৬, ২০২৫ 0

পৃথিবী কি এত গরম হয়ে যাচ্ছে যে মানুষ থাকতে পারবে না?

ঐতিহাসিক সত্যের আলোকপাত: ফেরাউন ও রোমান সাম্রাজ্য সম্পর্কে কোরআনের ভবিষ্যদ্বাণী

ছবি : সংগৃহীত

শিক্ষকদের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ স্থগিত, রোববার থেকে পরীক্ষা শুরু

ছবি : সংগৃহীত
আরও ৩৬ আসনের প্রার্থী ঘোষণা করল বিএনপি

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ২৩৭ আসনের পাশাপাশি আরও ৩৬ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল–বিএনপি। বৃহস্পতিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব আসনের প্রার্থীদের নাম প্রকাশ করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।   এর মধ্যে ঠাকুরগাঁও-২ আসনে ডা. আব্দুস সালাম, দিনাজপুর-৫ আসনে এ কে এম কামরুজ্জামান, নওগাঁ-৫ আসনে জাহিদুল ইসলাম ধলু এবং নাটোর-৩ আসনে আনোয়ারুল ইসলাম বিএনপির হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। সিরাজগঞ্জ-১ আসনে সেলিম রেজা, যশোর-৫ আসনে এম ইকবাল হোসেন, নড়াইল-২ আসনে মনিরুল ইসলাম, খুলনা-১ আসনে আমির এজাজ খান, পটুয়াখালী-১ আসনে মোহাম্মদ শহিদুল আলম তালুকদার, বরিশাল-৩ আসনে জয়নাল আবেদীন এবং ঝালকাঠি-১ আসনে রফিকুল ইসলাম জামাল বিএনপির হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এছাড়া টাঙ্গাইল-৫ আসনে সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, ময়মনসিংহ-৪ আসনে আবু ওহাব আখন্দ ওয়ালিদ, কিশোরগঞ্জ-১ আসনে মাজহারুল ইসলাম, কিশোরগঞ্জ-৫ আসনে শেখ মুজিবুর রহমান ইকবাল, মানিকগঞ্জ-১ আসনে এস এ জিন্নাহ কবির এবং মুন্সিগঞ্জ-৩ আসনে মো. কামরুজ্জামান বিএনপির হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।   ঢাকা-৭ আসনে হামিদুর রহমান, ঢাকা-৯ আসনে হাবিরুর রশিদ, ঢাকা-১০ আসনে শেখ রবিউল আলম, ঢাকা-১৮ আসনে এম এম জাহাঙ্গীর হোসেন, গাজীপুর-১ আসনে মজিবুর রহমান, রাজবাড়ী-২ আসনে হারুন অর রশিদ, ফরিদপুর-১ আসনে খন্দকার নাসিরুল ইসলাম, মাদারীপুর-১ আসনে নাদিরা আক্তার, মাদারীপুর-২ আসনে জাহান্দার আলী খান, সুনামগঞ্জ-২ আসনে নাসির হোসেন চৌধুরী এবং সুনামগঞ্জ-৪ আসনে নুরুল ইসলাম বিএনপির হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।

খবর৭১ ডেস্ক, ডিসেম্বর ০৪, ২০২৫ 0

ভেজাল গুড় খেলেই হতে পারে যেসব জটিল রোগ

ছবি : সংগৃহী

হঠাৎ বার্ষিক পরীক্ষা স্থগিতে বিপাকে পড়লো শিশু শিক্ষার্থীরা

আঙুলের ডগায় পরিচয়ের চাবিকাঠি: কোরআন ও আধুনিক ফরেনসিক বিজ্ঞান

0 Comments