উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধি: নড়াইল থেকে দিনে দিনে দেশীয় প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হতে চলেছে। দেশী প্রজাতির মাছের প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করতে পেরে এ মাছ রক্ষায় মাঠে নেমেছেন নড়াইলের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন, পিপিএম। আমাদের নড়াইল জেলা প্রতিনিধি উজ্জ্বল রায়ের রিপোটে, সোমবার (১৬ জুলাই) সরেজমিনে নড়াইল রূপগঞ্জ মাছের বাজারে গিয়ে তিনি নিজেই দেশীয় প্রজাতির মাছের চিত্র অবলোকন করেন। বাজারে ডিমওয়ালা মাছ বিক্রি হচ্ছে কি না তাও তিনি তদারকি করেন। সেই সাথে ডিমওয়ালা মাছ ক্রয়-বিক্রয় থেকে বিরত থাকার জন্যও নড়াইলবাসীকে উদাত্ত আহ্বানও জানান। ইতোমধ্যে সরকারি বদ্ধ জলাশয়ে মাছের পোনা অবমুক্ত করে পুলিশ সুপার মৎস্য প্রকল্পের কাজ শুরু করেছেন। এ কারণে নড়াইলবাসীর প্রশংসাও কুড়িয়েছেন তিনি। এবার দেশীয় প্রজাতির মাছ রক্ষায় পুলিশ সুপারের এই অভিযানে সন্তোষ প্রকাশ করেছে নড়াইলের সর্বস্তরের জনগণ। এই মৎস্যপ্রেমিক মানুষের উদ্যোগে বিলুপ্তপ্রায় দেশী প্রজাতির মাছ রক্ষা করা সম্ভব বলেই অনেকের ধারণা। নড়াইল জেলা অনলাইন মিডিয়া ক্লাবের সভাপতি উজ্জ্বল রায় ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ হিমেল মোল্যার সরেজমিন প্রতিবেদনে জানা যায়, নড়াইলে খাল-বিলের দেশীয় মাছের বংশ ধ্বংস খালে বিলে জলাশয়ে চরপাটা, বাঁধ, ভেসাল জাল, কারেন্ট জাল ব্যবহার করে মাছ শিকার করে। নড়াইলের খালে বিলে দেশীয় মাছ ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে জনস্বার্থে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা আইন ভঙ্গকারীর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন নড়াইলের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন, পিপিএম। নড়াইলে মৎস্যজীবী দেশজ মাছ রক্ষার্থে নিরলস পরিশ্রম করে চলেছেন এই মহৎ মানুষটি। সেই সঙ্গে প্রকৃত মৎস্যজীবীরা ও এক শ্রেণীর লোকজন খালে বা বিলে চরপাটা, ভেসাল জাল এবং কারেন্ট জালের সাহায্যে মাছের পোনা (বিশেষ করে মাছ বড় হবার আগেই) ছোট অবস্থায় শিকার করে বিক্রি অথবা খেয়ে ফেলছে। এতে এলাকায় মাছের বংশ বৃদ্ধি হচ্ছে না। আর তাই দিন দিন এলাকা থেকে দেশীয় মাছ বিলুপ্ত হবার পথে। অথচ খাল-বিলে ভরা নড়াইলের জেলা উপজেলায় এক সময় দেশীয় মাছের ভান্ডার ছিল। কিন্তু কারেন্ট জাল, ভেসাল জালসহ অন্যান্য অবৈধ উপায়ে দেশীয় মাছের বংশ বৃদ্ধি ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। আর এ কারণে নড়াইলের বাজারে দেশীয় মাছের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। দেশীয় মাছের স্থলে এখন পুকুরে বা ঘেরে চাষ করা বিভিন্ন মাছে বাজার ভরে গেছে। মৎস্য ভান্ডার হিসাবে খ্যাত নড়াইলের বিভিন্ন বিল থেকে দেশীয় মাছ প্রায় বিলুপ্ত হতে চলেছে। হারিয়ে যেতে বসেছে কই, শিং, সরপুটি, বোয়ালসহ নানা জাতীয় দেশীয় মাছ। বিল রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে অসংখ্য খাল ও পুকুর। যেখানে প্রাকৃতিক ভাবেই জন্ম নেয় দেশীয় মাছ। স্বাদের কারণে এখানকার উৎপাদিত দেশীয় মাছের সুনাম রয়েছে সর্বত্র। নড়াইলের এ জেলায় উৎপাদিত মাছ জেলার চাহিদা মিটিয়েও ঢাকা, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি হতো। জেলার অধিবাসীদের মধ্যে বড় একটা অংশ মৎস্যজীবী। জেলেরা বিগত কয়েক বছর দেশীয় মাছ তেমন একটা পাচ্ছেন না। জেলার বিলুপ্তপ্রায় দেশীয় মাছের প্রজনন এলাকা ও তাদের জন্য অভায়শ্রম গড়ে তোলার জন্য। দেশীয় মাছের প্রজননের ব্যবস্থা করা। কয়েক বছর আগে জেলার বিভিন্ন স্থানে দেশীয় মাছের প্রাপ্যতা রক্ষার্থে ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টির প্রয়োজন। মাছের পোনা যাতে ভেসাল জাল, চরপাটা কিংবা কারেন্ট জাল দিয়ে শিকার করে দেশীয় মাছের বংশ বৃদ্ধিতে বাঁধা সৃষ্টি করতে না পারে সে জন্য গণবিজ্ঞপ্তি জারী করা হয়েছে। এ ব্যাপারে নড়াইলের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন, পিপিএম নড়াইল জেলা অনলাইন মিডিয়া ক্লাবের সভাপতি উজ্জ্বল রায় ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ হিমেল মোল্যার নিকট একান্ত সাক্ষাৎকারে বলেন, দেশীয় প্রজাতির মাছের প্রজনন বৃদ্ধি পেলে খালে বিলে মৎস্যজীবীরা অবলীলায় মাছ ধরতে পারবে। কিন্তু কেউ যাতে মাছের ছোট পোনা বড় হবার আগেই শিকার করতে না পারে সে জন্য আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। নড়াইলের সর্বত্র ব্যাপক প্রচারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সবাইকে স্থানীয় চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের মাধ্যমে সচেতন করার কাজও চলছে। তিনি আরও বলেন, সবাই যদি সচেতন হয় তাহলে এ এলাকায় প্রচুর দেশজ মাছ পাওয়া সম্ভব হবে। নড়াইলের বিভিন্ন এলাকায় দেশীয় মাছের উৎপাদন বাড়াতে আরও বেশী পরিমাণ মৎস্য অভয়াশ্রম গড়ে তোলার প্রতি জোর দিয়েছেন জেলার মৎস্যজীবী ও মৎস্য সংশ্লিষ্টরা ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন, পিপিএম।
খবর ৭১/ইঃ