মো: হুমায়ুন কবির ,জগন্নাথপুর(সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ
জগন্নাথপুর উপজেলার আশারকান্দি ইউনিয়নের দিঘলবাক আটঘর গ্রামের মৃত মদরিছ আলীর ছেলে শাহজাহান আলীকে অপহরন ও হত্যাকান্ডের ঘটনায় পুলিশ ৩জনকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছে জগন্নাথপুর উপজেলার দিঘলবাগ কালাইনজোড়া গ্রামের মৃত ইউনুছ উল্লার ছেলে আল আমিন লিটন (৩৬), মৃত আবরুজ উল্লার ছেলে মোঃ ফরুক মিয়া (৫৬) ও উত্তর কালনীরচর গ্রামের মৃত সুন্দর আলীর ছেলে মোঃ সুহিন মিয়া (৩৫)। এদের মধ্যে আল আমিন লিটন ও সুহিন মিয়া আদালতে শাহজাহান আলী হত্যাকান্ডের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে।
পুলিশ জানায় গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে আল আমিন লিটন ও সুহিন মিয়া আদালতে স্বীকারোক্তীমূলক জবানবন্ধী প্রদান করেছে এবং হত্যাকান্ডের মূল ঘটনা বর্নণা করেছে। গত ২২ মে দুপুরে শাহজাহান আলী নিখোঁজ হলে তার বড় ভাই আব্দুস সামাদ ২৩ মে জগন্নাথপুর থানায় একটি নিখোঁজ সাধারন ডায়েরী রুজু করেন। নিখোঁজ শাহজাহান আলীকে উদ্ধারের জন্য তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই আতিকুল আলম খন্দকার প্রযুক্তির সহায়তায় তদন্ত শুরু করেন। তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই আতিকুল আলম খন্দকার তদন্তকালীন সময়ে শাহজাহান আলী অপহরন হয়েছে এমন তথ্য প্রমানে নিশ্চিত হন। তদন্তকারী কর্মকর্তার তথ্য অনুযায়ী নিখোঁজ শাহজাহান আলীর ভাই আব্দুস সামাদ গত ৬ জুলাই কয়েকজনের নামসহ অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে জগন্নাথপুর থানায় অপহরন মামলা দায়ের করেন। এদিকে জগন্নাথপুর সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমানের সার্বিক তত্ত্বাবধানে জগন্নাথপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ হারুনুর রশীদ চৌধুরীর নেতৃত্বে ওসি তদন্ত মো: আশরাফুল ইসলাম, সেকেন্ড অফিসার সাইফুল আলম, তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই আতিকুল আলম খন্দকারসহ বিপুল সংখ্যক অফিসার ফোর্স টানা ৬দিন শ্বাসরুদ্ধকর বিশেষ অভিযান চালিয়ে শুক্রবার (১৩ জুলাই) রাতে অপহরনের সাথে জড়িত আসামী আল অমিন লিটন ও সুহিন মিয়াকে তাদের নিজ এলাকা থেকে গ্রেফতার করেন। তাদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের তারা নিজেই শাহজাহান আলীকে অপহরন ও পরবর্তীতে হত্যাকান্ড সংঘঠিত করেছে বলে স্বীকারোক্তী দেয়। পাশাপাশি নৃশংস এই হত্যাকান্ডের ঘটনায় জড়িত আরো কয়েকজনের নাম প্রকাশ করে। পরদিন শনিবার আসামীদের আদালতে পাঠানো হলে তারা স্বেচ্ছায় শাহজাহান আলীকে অপহরন ও হত্যাকান্ডে জড়িত রয়েছে মর্মে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করে। এদিকে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ হারুনুর রশীদ চৌধুরীর নেতৃতে অভিযানিক দল দিঘলবাক এলাকায় অভিযান চালিয়ে শাহজাহান আলী হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত আসামী ফরুক মিয়াকে গ্রেফতার করেন। গতকাল রবিবার তাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
জগন্নাথপুর থানার উপ-পরিদর্শক (সেকেন্ড অফিসার) সাইফুল আলম জানান, প্রাথমিক তদন্ত ও গ্রেফতারকৃত আসামী আল আমিন লিটন ও সুহিন মিয়ার স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি পর্যালোচনায় জানাযায়, নিহত শাহজাহান আলীর সাথে গ্রেফতারকৃত আসামী আল আমিন লিটনের জমি-জমা সংক্রান্ত বিরোধের পাশাপাশি গরু কেনা বেচাসহ বিভিন্ন বিষয়াদি নিয়ে দিঘলবাক গ্রামের মৃত আবরুজ মিয়ার ছেলে ফরুক মিয়ার সাথে বিরোধসহ একাধিকবার ফরুক মিয়াকে অপমান করা হয়। উক্ত বিরোধের জের ধরে লিটন ও ফরুক মিয়ার পরিকল্পনা অনুযায়ী শাহজাহান আলীকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। হত্যাকান্ডের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার অংশ হিসেবে আসামী আল আমিন লিটন ৪ লাখ টাকা অর্থায়ন করে। হত্যাকান্ডের পরিকল্পনা অনুযায়ী ২২ মে রাত ৯টায় হত্যাকান্ডের ঘটনায় জড়িত অন্যান্য সহযোগীরা শাহজাহান আলীকে দিঘলবাক কালাইনজোড়া বাজারে ডেকে আনে। পরে আসামী আল আমিন লিটন, সুহিন মিয়া, ফরুক মিয়া সহ ৬/৭ জন মিলে ইঞ্জিন চালিত নৌকা যোগে শাহজাহান আলীকে নারী ভোগ করার লোভ দেখিয়ে জগন্নাথপুর উপজেলার রানীগঞ্জ ইউনিয়নের রৌয়াইল গ্রামে হত্যাকারী আল আমিন লিটনের নানার বাড়িতে নিয়ে যায়। পরে হত্যাকারীরা শাহজাহান আলীকে চায়ের সাথে ঘুমের ট্যাবলেট মিশিয়ে পান করিয়ে দুর্বল করে। পরে রশি দ্বারা গলায় শ্বাস রোধ করে হত্যা পর শাহজাহান আলীর লাশ কুশিয়ারা নদীতে ফেলে দেয়। জগন্নাথপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ হারুনুর রশীদ চৌধুরী জানান, চা ল্যকর শাহজাহান আলী অপহরন ও পরে হত্যাকান্ডের মুটিভ উদঘাটন হয়েছে। হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত অন্যান্য খুনীদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।