রাকিব হাসান, পটুয়াখালী প্রতিনিধি:
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ১১৪, পটুয়াখালী-৪ (কলাপাড়া-রাঙ্গাবালী) নির্বাচনী এলাকায় ক্রমশ সরব হয়ে উঠছে বিএনপির রাজনীতি। গত ৯ বছরে শাসক দলের নেতা-কর্মী ও ক্যাডারদের সাথে গোপন সখ্যতা বজায় রেখে চলা শহর, উপ-শহর ও প্রত্যন্ত জনপদের নির্লিপ্ত নেতাকর্মীরাও এখন নড়েচড়ে বসতে শুরু করেছেন।
অপরদিকে বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের বেশ কিছু চিহ্নিত নেতাসহ তার পরিবারের সদস্যরা ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের সাথে যৌথ মালিকানাধীন ইটভাটা ও ঠিকাদারী ব্যবসার দাপটে দলের অভ্যন্তরে কোন্দল সৃষ্টি এবং আলাদা দলীয় অফিস খুলে দলে বিভাজনসহ শাসক দলের এজেন্ডা বাস্তবায়নে তৎপর হওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
বিএনপি ও এর সহযেগী সংগঠন সূত্রে জানা যায়, নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর পটুয়াখালী-৪ নির্বাচনী এলাকায় বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের বেশ কিছু নেতা-কর্মী মামলা, হামলা থেকে নিজেকে নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন রাখতে এবং আর্থিক সুবিধা নিতে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ ও এর সহযোগী সংগঠনে যোগ দেয়। দীর্ঘদিন ধরে দলীয় কার্যক্রমের বাইরে থাকা বিএনপির এসব নেতা-কর্মী ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মী ও ক্যাডারদের সাথে হট কানেকশন বজায় রেখে দলের অভ্যন্তরে বিভাজন সৃষ্টির লক্ষ্যে ফের সক্রিয় হয়ে উঠতে শুরু করেছে বলে দলের দায়িত্বশীল মহলের অভিযোগ।
এরা জাপা (এ) থেকে সদ্য দলে যোগ দেয়া এক নেতার ব্যক্তিগত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে দলীয় বিভিন্ন কর্মসূচী পালন ও দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবীর নামমাত্র কর্মসূচী পালন করে নির্বাচনী এলাকার ভোটারদের কাছে বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল প্রমানে মরিয়া হয়ে উঠেছেন।
বিএনপির এসকল দলীয় ষড়যন্ত্রকারীদের মদদ দিচ্ছে সহযোগী সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির এক নেতাসহ স্থানীয় কয়েকজন নেতা। এছাড়া বিবাহিত-অছাত্রদের নিয়ে সদ্য ঘোষিত দলের সহযোগী সংগঠন ছাত্রদলের উপজেলা কমিটির সম্পাদকসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদ দেয়া হয়েছে ক্ষমতাসীন দলের সহযোগী সংগঠনের প্রভাবশালী এক ভাই’র নির্দেশে- এমনও অভিযোগ করা হয়েছে।
অই সূত্রটি জানায়, যার ইশারায় যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও শ্রমিক দলের আসন্ন উপজেলা, থানা ও পৌরসভা কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে ভাই’র গ্রুপের সাথে ব্যালেন্স করে চলা নেতা-কর্মীদের। যারা পরবর্তীতে তৃণমূলে ক্ষমতাসীন দলের কানেকশনে থাকা নেতা-কর্মীদের নিয়ে কমিটি গঠন করবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে। নবগঠিত এসকল কমিটির নেতা-কর্মীরা নির্বাচনী প্রচারনায় অংশ নিয়ে দলের হয়ে কাজ করবে কিনা- এ নিয়ে সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, এবছর এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক ও কলাপাড়া উপজেলা বিএনপি সভাপতি এবিএম মোশারেফ হোসেন, উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক মো. মনিরুজ্জামান মনির। এদের মধ্যে দু’জনের নাম পাঠানো হয়েছে লন্ডনে এবং তন্মধ্যে এবিএম মোশারেফ হোসেনর মনোনয়ন অনেকটা নিশ্চিত বলছেন দলীয় একটি দায়িত্বশীল সূত্র।
সূত্রটি আরও জানায়, স্বাধীনতার পর ৩য় সংসদ নির্বাচনে এ আসনের নির্বাচনে ধানেরশীষ প্রতীক নিয়ে প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা মোয়াজ্জেম হোসেন প্রথম সাংসদ নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে ১৫ ফেব্রুয়ারির ৬ষ্ঠ সংসদ নির্বাচনে অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান মাত্র কয়েকদিনের জন্য এ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর থেকে অদ্যবধি এ আসন থেকে বিএনপির মনোনীত কোন প্রার্থী এমপি নির্বাচিত হতে পারেনি। যদিও ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়নি। তাই এ আসনে বিএনপির জন্য এবারের নির্বাচন হবে অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই। বিএনপি যদি দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল মিটিয়ে একক প্রার্থী নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে পারে তবে আ.লীগ মনোনিত প্রার্থীর সাথে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বিএনপির- এমন মন্তব্য করেছেন দল নিরপেক্ষ বেশ কয়েকজন সচেতন ভোটার।
অপর একটি সূত্রের তথ্য অনুযায়ী বিএনপির দলীয় প্রচারনার প্রধান ইস্যু হতে পারে একদলীয় শাসনের কবল থেকে গণতন্ত্র রক্ষা ও উপজেলার সরকার দলীয় বহু নেতাদের রহস্যজনক ভাবে বেড়ে যাওয়া কোটিপতিদের ইতিবৃত্ত।