খবর ৭১: বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে টাকা চুরি হ্যাকিংয়ের মাধ্যমেই হয়েছে বলে ফরেনসিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডি। রিজার্ভ চুরির বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়ে ফিলিপাইনের আদালতে জমা দেওয়া ফরেসনিক প্রতিবেদনে একথা বলেছে সিআইডি।
সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার ও রিজার্ভ চুরি মামলার তদারক কর্মকর্তা মোল্লা নজরুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করছেন। এ প্রতিবেদনটি আদালতে চলা মামলার সাক্ষ্য হিসেবে কাজে লাগবে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রায়হান উদ্দিন খান ফিলিপাইনের আদালতে এ ফরেনসিক প্রতিবেদন দাখিল করেন। তার সঙ্গে আইটি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও রয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘ফিলিপাইনে এন্ট্রি মানি লন্ডারিং কমিশন একটা মামলা করেছিল আরসিসি ব্যাংক ও তার কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তাদের দেশের আদালতে। সেই বিষয়ে আমাদের তদন্তকারী কর্মকর্তা ও আইটি বিশেষজ্ঞকে ডেকেছিল যে এটা হ্যাক হয়েছিল কিনা। আমাদের আইটি বিশেষজ্ঞ বলেছেন- হ্যা, এটা হ্যাকিং হয়েছিল।’
‘আমাদের তদন্তকারী কর্মকর্তাকে (সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রায়হান উদ্দিন খান) তারা জিজ্ঞাসা করেছিল এর সাথে কারা কারা জড়িত, সেখানে দেখা গেছে আমাদের তদন্ত ও তাদের তদন্তে একই নাম রয়েছে।’
আমাদের দেশের কারও সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে কিনা এমন প্রশ্নে এই কর্মকর্তা জানান, ‘এটা তো এখনও তদন্তাধীন। আর তাই এই মুহুর্তে কিছু বলতে চাচ্ছি না।’
সেটা কি তদন্তের কারণে নাকি রাজনৈতিক কোনও চাপ, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘তদন্তের স্বার্থে এখন কিছু বলা সম্ভব হচ্ছে না। এখনও আমাদের তদন্ত শেষ হয়নি, তদন্ত শেষ হলে সব জানা যাবে।’
কতদিন লাগতে পারে তদন্ত কাজ শেষ হতে এমন প্রশ্নে তিনি জানান, ‘আমরা আশা করছি তিন চার মাসের মধ্যে তদন্ত কাজ শেষ হবে। তবে ওদের দেশের কোর্ট আমাদের দেশের তদন্তকারী কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসা করেছে কে কে জড়িত? সেখানে ওদের তদন্ত আর আমাদের তদন্তেও ফিলিপাইনের ব্যাংকসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান ও কর্মকর্তা জড়িত প্রমাণ পাওয়া গেছে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনও ক্রটি ছিল কিনা যার কারণে হ্যাকিংটা সম্ভব হয়েছে এমন কোন প্রশ্ন তিনি বলেন, ‘না, তারা এমন কোনও প্রশ্ন করেনি আমাদের তদন্তকারী কর্মকর্তাকে।’
২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে সুইফট কোডের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রায় ১০১ মিলিয়ন ডলার চুরি করে নেয় দুর্বৃত্তরা। এর মধ্যে ২ কোটি ডলার চলে যায় শ্রীলঙ্কা এবং ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার চলে যায় ফিলিপাইনের জুয়ার আসরে।
আলোচিত ওই ঘটনার প্রায় একমাস পর ফিলিপাইনের ইনকোয়ারার নামের একটি পত্রিকায় এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হলে বাংলাদেশে এ ব্যাপারে জানতে পারে।
এরপরই বিষয়টি নিয়ে হইচই শুরু হয়। এ ঘটনা চেপে রাখতে গিয়ে সমালোচনার মুখে পড়ে পদ ছাড়তে বাধ্য হন তখনকার বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর ড. আতিউর রহমান।
তারপর বড় ধরনের রদবদল করা হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ে। পরে বাংলাদেশ ব্যাংকের যুগ্ম পরিচালক জোবায়ের বিন হুদা মানি লন্ডারিং আইনে ১০১ মিলিয়ন ডলার চুরির অভিযোগ এনে ১৫ মার্চ (২০১৬) মতিঝিল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
পরে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় সিআইডিকে। তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পান সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগের অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার রায়হান উদ্দিন খান। আলোচিত এ মামলাটির তদন্ত এখনও চলছে।
খবর ৭১/ই: