আসাদুল ইসলাম সবুজ, লালমনিরহাট ॥ ভারি বর্ষণ ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে তিস্তা, ধরলা ও সানিয়াজান নদীর পানি আবারও বৃদ্ধি পাওয়ায় লালমনিরহাটের ৫ উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। বন্যার পানিতে নদীর তীরবর্তী এলাকা গুলোর প্রায় ১০ হাজার মানুষ গত ৩ দিন ধরে বন্দি হয়ে পড়েছে। জেলার হাতীবান্ধা উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। তার সাথে দেখা গেছে পানি বন্দি পরিবার গুলোর মাঝে বিশুদ্ধ পানি ও খাবার তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। পানি বন্দী লোকজনের অভিযোগ, ত্রাণ বিতরণ তো দুরের কথা, জন প্রতিনিধি বা সরকারী কর্মকর্তারা কেউ দেখতেও আসেনি। তিস্তা নদী পানি আবারও বাড়তে শুরু করে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড দোয়ানী সুত্রে জানা গেছে, তিস্তা পাড়ের লোক জনের মাঝে আতংক বিরাজ করছে। ভারত গজল ডোবা ব্যারাজের অধিকাংশ গেট খুলে দেয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই ঘর বাড়ি ছেড়ে নিরাপদ স্থানে চলে যাচ্ছে। প্রচন্ড গতিতে পানি বাংলাদেশের দিকে ধেয়ে আসছে। আরও কি পরিমাণ পানি আসবে তা ধারণা করা যাচ্ছে না। পানির গতি নিয়ন্ত্রণ করতে তিস্তা ব্যারাজের অধিকাংশ গেটই খুলে দেয়া হয়েছে।
তিস্তার পানিতে জেলার পাটগ্রাম উপজেলার বহুল আলোচিত ছিটমহল আঙ্গোরপোতা-দহগ্রাম, হাতীবান্ধার সানিয়াজান, গড্ডিমারী, সিঙ্গিমারী, সিন্দুনা, পাটিকাপাড়া ও ডাউয়াবাড়ী ইউনিয়ন, পার্শ্ববতী কালীগঞ্জ, আদিতমারী ও সদর উপজেলার বেশ ইউনিয়নের চর এলাকার ২০ গ্রামের ১০ হাজার মানুষ গত ৩ দিন ধরে পানি বন্দি হয়ে পড়ে আছে। কয়েক হাজার একর আমন ধানের ক্ষেতসহ অনেক ফসলী ক্ষেত তিস্তার পানিতে ডুবে গেছে। হাতীবান্ধা উপজেলার ধুবনী গ্রামের অস্থায়ী বাঁধ গুলো হুমকির মুখে পড়েছে। এবাঁধগুলো ভেঙে গেলে তিস্তার পানি হাতীবান্ধা শহরে ঢুকে পড়বে। ইতিমধ্যে চর এলাকা গুলোর যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙ্গে গেছে।
জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার দক্ষিণ ধুবনী গ্রামে একটি অস্থায়ী বাধ ভেঙ্গে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করছে। এতে ওই এলাকার গুলো অনেক পরিবার নতুন করে পানি বন্দি হয়ে পড়ছে। চর এলাকা বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সংকট দেখা দিয়েছে। এখনও পানি বন্দি পরিবার গুলোর মাঝে কোন খাবার বিতরণ করতে দেখা যায়নি।
সিন্দুনা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান নুরল আমিন জানান, তার ইউনিয়নে প্রায় ২ হাজার পরিবার ৩ দিন ধরে পানি বন্দি অবস্থায়। এখন পর্যন্ত তিনি কোনো সরকারি ত্রাণ বরাদ্দ পাননি। ত্রাণের জন্য জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে তিনি কথা বলেছেন। তবে হাতীবান্ধা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম জানান, ইউনিয়ন চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে পানিবন্দি পরিবার গুলোর খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে।
তিস্তা ব্যরাজ দোয়ানী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল আলম চৌধুরী জানান, ভারত গজল ডোবা ব্যারাজের অধিকাংশ গেট খুলে দেয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। আরও কি পরিমাণ পানি আসবে তা ধারণা করা যাচ্ছে না। পানি গতি নিয়ন্ত্রণ করতে তিস্তা ব্যারেজের সবক’টি গেটই খুলে দেয়া হয়েছে।
খবর ৭১/ই: