আবু রায়হান দুপচাঁচিয়া(বগুড়া) প্রতিনিধিঃ
সড়ক দুর্ঘটনায় মস্তিষ্কের বিকৃতি হয়ে পাগল হাসান ফকির নামের এক তরুণকে শিকলে আটকে রেখেছে বাবা-মা। পাগলামির কারণে পাঁচ বছর আগেই স্ত্রী তাঁর ঘর ছেড়েছে। তৃতীয় শ্রেণিতে পড়–য়া আট বছরের এক মেয়ে দাদা-দাদির কাছে লালন-পালন হচ্ছে। ঘটনাটি আড়ালে থাকলেও গতকাল সোমবার সংবাদ পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম জাকির হোসেন তাঁর বাড়িতে গিয়ে শিকল খুলে দিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন। বগুড়ার দুপচাঁচিয়ার চামরুল ইউনিয়নের দীঘিসাজাপুর গ্রামে এ ঘটনাটি ঘটেছে।
হাসান ফকির(২৬) নামের পাগল এ তরুণ দীঘিসাজাপুর গ্রামের আবদুল আজিজ ফকিরের ছেলে। টিনের ছাউনি মাটির দুইটি ঘর আবদুল আজিজের সম্বল। নিজের কোনো জমি-জমা কিংবা ভিটে মাটি নেই। আবদুল আজিজ ভেড়া ও ছাগল লালন-পালন করে সংসার চালান। আবদুল আজিজ বলেন, ‘সুস্থ সবল ছেলে হাসান ফকির। চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া শেষ করে অভাবের সংসারের হাল ধরার জন্য বগুড়া শহরে রিকশা চালাতো। নয় বছর আগে বিয়ে দিয়েছি। ওঁদের ঘরে একটা মেয়ে সন্তান হয়েছে। সাত বছর আগে একদিন গ্রামের ছেলেদের সঙ্গে পিকনিকে যায়। আসার পথে বাসের ছাদ থেকে পড়ে হাসান ফকির অসুস্থ হয়ে পড়ে। এর পর এ ডাক্তার ও ডাক্তার এমনকি পাবনা মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসা করানো হয়েছে। কিন্তু হাসানের পাগলামি দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। ওর পাগলামির হাত থেকে বাঁচার জন্যই হাতে-পায়ে শিকল লাগানো হয়েছে। যখন ভালো থাকে তখন শিকল খুলে দেওয়া হয়। অভাবের সংসারে সংসার চালাবো না ছেলেকে চিকিৎসা করাবো।’
চামরুল ইউপি চেয়ারম্যান শাহজাহান আলী বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিল না। তবে ইউএনও মহোদয় যে কাজটি করেছেন তা ওই পরিবারের জন্য মঙ্গল হয়েছে।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আবু সালেহ মোহাম্মদ নূহ বলেন, আমি এ উপজেলায় যোগদান করে বিষয়টি গ্রামের লোকদের মাধ্যমে জানতে পেরেছি। এর আগে ওকে একটি ছাগল দেওয়া হয়েছিল। এর পর নতুন ইউএনও মহোদয়কে জানিয়েছি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস, এম জাকির হোসেন বলেন, ‘আমি এক মাস আগে এ উপজেলায় যোগদান করেছি। আজ সোমবার সমাজসেবা কর্মকর্তার মাধ্যমে জেনেছি। বিষয়টি খুবই অমানবিক। ওর বাড়িতে গিয়ে শিকল খুলে দিয়ে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করানো হয়েছে। উপজেলা পরিষদ থেকে তাঁর চিকিৎসা খরচ চালানো হবে।’
খবর ৭১/ইঃ