এম এম আতাউর রহমান (জীবন),জয়পুরহাটঃ
মাদকবিরোধী অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকা জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার মাদক ব্যবসার চিত্র পাল্টে গেছে। এলাকা ছাড়া হয়েছে পুলিশের তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ীরা। তারপর ও অনায়াসে চলছে মাদক বিক্রি। মাদক ব্যবসায়ীরা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে মাদক সেবনকারীদের ডেকে নিয়ে ফেনসিডিল সহ অন্যান্য মাদক দ্রব্য বিক্রি করছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান শুরুর পর পাঁচবিবি থানায় মাদকের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে প্রায় দেড় শতাধিক মাদকসেবী ও মাদক ব্যাবসায়ীকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ সহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তাদের বিরুদ্ধে মাদক বেচাকেনা ও সেবন করার অভিযোগ এনে ৯৫ টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। আর অভিযান চলাকালে উত্তর গোপালপুরের শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী মাদকের ১০ মামলার আসামি রেন্টু মিয়া র্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়। অভিযানে দেড় শতাধিক গ্রেফতার হলে ও শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীরা রয়েছে ধরাছোঁয়ার বাইরে এমন অভিযোগ এলাকাবাসীর। আর পুলিশের দাবি অভিযানের কারণে শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীরা এলাকা ছেড়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাঁচবিবি উপজেলা সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় প্রতিদিন মাদক ব্যবসায়ীরা ভারত থেকে খুব অনায়াসে ফেনসিডিল সহ অন্যান্য মাদক বিক্রির জন্য নিয়ে আসে। সে গুলি পাঁচবিবির সীমান্তবর্তী অন্তত অর্ধশত গ্রামে বেচাকেনা হতো। আবার মাদকের বড় একটি অংশ বিভিন্ন পথে রাজধানী ঢাকায় সহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হতো। এছাড়া প্রতিদিন জয়পুরহাট, বগুড়া, নওগাঁ ও গাইবান্ধা সহ আশে পাশের জেলাগুলো থেকে শত শত যুবক মোটর সাইকেলে পাঁচবিবির বাগজানা, আটাপাড়া, রতনপুর সহ কয়েকটি স্পটে প্রায় প্রকাশ্যেই ফেনসিডিল সেবন করতো। এলাকার এই চিত্র দীর্ঘদিনের।
এ অবস্থায় গত ১ মে থেকে মাদকবিরোধী অভিযান শুরু করে পাঁচবিবি থানা পুলিশ। সেই থেকে পুলিশ সহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা পৃথক অভিযান চালিয়ে এ পর্যন্ত মাদকের সঙ্গে জড়িত দেড় শতাধিক যুবককে গ্রেফতার করে। পুলিশের তথ্য মতে, পাঁচবিবি থানায় ৫৩২ জন মাদক চোরাচালানির সঙ্গে জড়িত। যাদের শীর্ষে আছে ২০ থেকে ২৫ জন। তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে ৫-৭টি করে মাদকের মামলা থাকলে ও অভিযান শুরুর পর থেকে তারা এলাকা ছেড়েছে। তাদেরই একজন উত্তর গোপালপুরের রেন্টু মিয়া র্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ গত ২৫ মে রাতে নিহত হয়। যার বিরুদ্ধে মাদকের ১০টি মামলা আছে।
তারপর ও বন্ধ হয়নি মাদকের ব্যবসা। মাদক ব্যবসায়ীরা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে মাদকসেবীদের কাছে ফেনসিডিল বিক্রি এখন ও অব্যাহত রেখেছে। ফোনের মাধ্যমে স্পট পরিবর্তন করে প্রতিদিন তারা বিক্রি করছে ফেনসিডিল সহ অন্যান্য নেশা দ্রব্য। মাদকসেবীরা স্পটেই সেবন করে মোটরসাইকেল করে বাড়ি ফিরছে। প্রতিদিন ভিন্ন ভিন্ন স্পটে ফেনসিডিল বেচাকেনা চলছে। সঙ্গে বিক্রি হচ্ছে ইয়াবা এবং গাঁজা।
তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতার কারণে আগের তুলনায় ফেনসিডিলের বেচাকেনা অনেক কমে গেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। গ্রেফতারের ভয়ে নতুন মাদকসেবীদের আনাগোনা নেই বললেই চলে। শুধুমাত্র নিয়মিত মাদকসেবীরাই মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে মাদক সেবন করছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পাঁচবিবি থানা পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, আমরা যেসব মাদক আটক করছি, সেগুলো আসছে ভারতীয় সীমান্ত পথে। মাদকের অভিযোগে কাউকে গ্রেফতার করলেই স্থানীয় কিছু নেতা অভিযুক্তদের পক্ষে সুপারিশ করেন বলে তিনি অভিযোগ করেন।
বাগজানা হিন্দুপাড়া এবং পশ্চিম রামচন্দ্রপুর গ্রামের যুবক মাসুদ রানা ও মামুন খান বলেন, আগে প্রকাশ্যেই মাদকের ব্যবসা চলতো। মাদকবিরোধী অভিযানের কারণে ইদানিং সেটা কমে গেছে, তবে মাদক বেচাকেনা বন্ধ হয়নি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে প্রতিদিন ভারত থেকে মাদক ঢুকছে দেশে।
পাঁচবিবি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফরিদ হোসেন বলেন, ‘সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী মাদকবিরোধী অভিযান ১৭ মে থেকে শুরু হলে ও পাঁচবিবিতে আমরা শুরু করেছি ১ মে থেকে। সেই থেকে অভিযান চলছে। এ পর্যন্ত দেড় শতাধিক জনকে গ্রেফতার করে তাদের বিরুদ্ধে ৯৫ টি মামলা দায়ের করা হয়েছে।’ তিনি দাবি করেন, তাদের এই অভিযানের ফলে শীর্ষ মাদক বিক্রেতারা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছে। ফলে পাঁচবিবি থানায় মাদকের ব্যবহার আগের মতো নেই। চোরাচালানিদের কৌশলের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘তাদের অবৈধ সব দরজা বন্ধে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।’
জয়পুরহাট পুলিশ সুপার রশীদুল হাসান বলেন, ‘মাদকের বিরুদ্ধে কোন ছাড় নেই। আমরা চেষ্টা করছি মাদক নির্মূল করার।’ এ ক্ষেত্রে অনেকটা সফলতা এসেছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘আইন প্রয়োগের পাশাপাশি আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ মানুষকে সচেতন করার। যাতে মাদককে মানুষ না বলতে শেখে। সে ব্যাপারে আমরা অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
খবর ৭১/ইঃ