এস. এম. রাসেল, মাদারীপুর প্রতিনিধি:
কাঠালবাড়ি-শিমুলিয়া নৌরুট হয়ে এখনো কর্মস্থলমুখী যাত্রীদের ভীড় রয়েছে। তবে যে চাপ ছিল তা এখন সহনীয় মাত্রায় নেমে এসেছে। বিআইডব্লিউটিসি, বিআইডব্লিউটিএ সহ একাধিক সূত্রে জানা গেছে, শুধু শুক্রবারেই এ রুট ব্যবহার করে অন্তত আড়াই লাখ মানুষ স্বজনদের নিয়ে ঢাকাসহ তাদের কর্মস্থলে পৌছেছেন। বিপুল পরিমান এ যাত্রী পারাপার করতে গিয়ে ফেরি ও স্পীডবোটগুলোকে কয়েকগুন বেশি ট্রীপ দিতে হয়েছে। তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, ওসি সহ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে বিআইডব্লিউটিএ, বিআইডব্লিউটিসি, র্যাব, পুলিশ, বিআইডব্লিউটিএ, ফায়ার সার্ভিস, আনসার যৌথভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করায় কাঠালবাড়ি ইলিয়াছ আহমেদ চৌধুরী ঘাট হয়ে নিরাপদেই যাত্রীরা গন্তব্যে পৌছান।
বিআইডব্লিউটিসি, বিআইডব্লিউটিএ সহ ঘাট সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা যায়, ঈদ শেষে সরকারি ছুটি শেষ হওয়ার পর থেকে কাঠালবাড়ি-শিমুলিয়া নৌরুট হয়ে যাত্রীদের ভীড় ছিল। চাপ বেশি থাকায় প্রথম থেকেই ল ঘাটে প্রশাসনের নজরদারি বেশি ছিল। কিন্তু বৃহস্পতি ও শুক্রবার যেন যাত্রীদের বাধ ভাঙ্গা জোয়াড় নামে। বিশেষ করে শুক্রবারের যাত্রী উপস্থিতি ছিল রেকর্ড সংখ্যক। বেলা বাড়ার সাথে সাথে যাত্রীদের ঢল ছিল কাঠালবাড়ি ইলিয়াছ আহমেদ চৌধুরী ঘাটে। দক্ষিনের জেলাগুলো থেকে এদিন সকল যানবাহনেই ছিল উপচেপড়া ভীড়। ফলে ল , স্পীডবোট ও ফেরিগুলো দিনভর কানায় কানায় পূর্ন ছিল যাত্রীতে। পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রশাসন শিমুলিয়া থেকে শুন্য ফেরি, ল , স্পীডবোট এনে ভীড় সামাল দেয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরান আহমেদ, ওসি জাকির হোসেন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) , পরিদর্শক (তদন্ত) শাজাহান মিয়া, বিআইডব্লিউটিএ ও উপ-পরিচালক কবির হোসেনসহ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে বিআইডব্লিউটিএ, বিআইডব্লিউটিসি, র্যাব, পুলিশ, বিআইডব্লিউটিএ, ফায়ার সার্ভিস, আনসার যৌথভাবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে। বিআইডব্লিউটিসির এক হিসেবে দেখা যায় শুক্রবার দিনরাত ২৪ ঘন্টায় কাঠালবাড়ি ঘাট থেকে ফেরিগুলো মোট ১শ ৮ টি ট্রীপ দেয়। এদিন মোট যানবাহন পার হয় ৩ হাজার ১শ ৩৮ টি। আর প্রতিটি ফেরিতে গড়ে ১ থেকে দেড় হাজার যাত্রী পার হয়। এমনও ফেরি পার হয় যেটিতে ২ হাজার যাত্রীও পার হয়েছে বলে বিআইডব্লিউটিসি নিশ্চিত করেছে। সে হিসেবে শুধু ফেরিতেই যাত্রী পার হয়ে ওপাড় যায় দেড় লক্ষাধিক যাত্রী। অপরদিকে একদিন আগেই বৃহস্পতিবার ফেরি ট্রীপ সংখ্যা ছিল ৬০ টি। আর গত শনিবার সকাল ৬ টা থেকে রবিবার সকাল ৬ টা পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় ফেরিতে ট্রিপ সংখ্যা ছিল ৯৬ টি। এদিন যানবাহন পাড় হয় ২ হাজার ৪ শ ১৭ টি। সুত্র জানায় যাত্রী চাপ সামাল দিতে শুক্রবার অধিকাংশ ফেরিগুলো শিমুলিয়া থেকে শুন্যই আনা হয়। বিআইডব্লিউটিএর আরেক হিসেবে দেখা যায়, লে শুক্রবার এ ঘাট থেকে মোট ১শ ৭৯টি লোকাল ট্রীপ ও ১শ১টি পরিবহন ট্রীপ শিমুলিয়ায় যায়। বিআইডব্লিউটিএ ট্রীপ প্রতি ২শ/আড়াই’শ যাত্রী পার করার দাবী করলেও স্থানীয় সুত্রগুলো জানায় যাত্রীর এ সংখ্যা গানিতিক হারে আরো অনেক বেশি ছিল। সে হিসেবে লে পারাপারের যাত্রী সংখ্যা অন্তত ৬০ হাজার থেকে ৮০ হাজার। এরআগে ১৯ জুনের এক হিসেবে দেখা যায় লোকাল ও পরিবহন ট্রীপ মিলে মোট ১শ ৩৪ টি ট্রীপ দেয় ল গুলো। আর শনিবার লোকাল ও পরিবহন মিলে ল গুলো ১ শ ৮৭ টি ট্রিপ দিয়েছে। এছাড়া দেড় শতাধিক স্পীডবোটের মধ্যে প্রতিটি অন্তত ৫-৬ টি ট্রীপ দিয়েছে। এতে দেখা যায় অন্তত ১৫ হাজার যাত্রী পার হয়েছে দ্রুতগতির এ নৌযানে। এছাড়াও ট্রলারেও অসংখ্য যাত্রী পদ্মা পাড়ি দেয়।
বিআইডব্লিউটিএ কাঁঠালবাড়ি ঘাট পরিদর্শক আক্তার হোসেন উল্ল্যেখিত তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, এখনো কাজে ফেরা যাত্রীদের ভীড় রয়েছে। প্রশাসন, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী, বিআইডব্লিউটিএ সহ কর্তব্যরতদের কঠোর অবস্থানের কারনে শুক্রবার বিপুল পরিমান যাত্রী নির্বিঘেœ পার করা সম্ভব হয়েছে। নৌযান সংশ্লিষ্টরাও আমাদের সহায়তা করেছেন।
বিআইডব্লিউটিসি কাঁঠালবাড়ি ঘাট ম্যানেজার আঃ সালাম উল্ল্যেখিত তথ্য উল্ল্যেখ করে বলেন, মন্ত্রনালয়ের নির্দেশনাই ছিল যেহেতু বর্ষা মৌসুম সেহেতু ফেরিতেও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যাত্রী পারাপার করার। শুক্রবার এমনও অনেক ফেরি গেছে যেগুলোতে ২ হাজারের বেশি যাত্রী পার হয়েছে। কোন ফেরি ১২ শ /১৫ শ যাত্রীর নীচে পার হয়নি। অনেক ফেরি যাত্রী চাপে পর্যাপ্ত গাড়িও নিতে পারেনি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরান আহমেদ বলেন, ঈদে প্রতিবছরই লাখ লাখ যাত্রী এরুট ব্যবহার করে। শুক্রবার পরিস্থিতি সামাল দিতে আমরা নৌযানগুলো ওপাড় থেকে শুন্য অবস্থায় ফিরিয়ে আনি। ফেরিতেও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যাত্রী পার করা হয়। নৌযান সংশ্লিষ্টদের সকলের আন্তরিক সহযোগিতার কারনেই নির্বিঘেœ যাত্রী পারাপার সম্ভব হয়েছে। কোন নৌযানেই এপাড় থেকে পার হতে বাড়তি ভাড়া গুনতে হয়নি।