খবর৭১: বেশি মুনাফার আশায় কম শুল্কে বেশি চাল আমদানি করে বিপাকে পড়েছেন দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে চাল আমদানি করা ব্যবসায়ীরা।
এ কারণে ১৮ দিন ধরে হিলি স্থলবন্দরে আটকা পড়ে আছে ৯ হাজার মেট্রিক টন চাল। আর এ কারণে অর্থনৈতিক বিড়ম্বনাসহ নানা ভোগান্তিতে পড়েছেন ভারতীয় ট্রাক চালক ও তাদের সহকারীরা।
বাজেটে আমদানি শুল্ক বাড়ানো হবে জেনে ৭ জুন বাজেটের আগে ৬জুন পর্যন্ত হিলি স্থলবন্দর দিয়ে চাল আমদানি বাড়িয়ে দেয় চাল ব্যবসায়ীরা। কিন্তু সংসদে সাত জুন বাজেট অধিবেশন শুরুর আগ পর্যন্ত সব চাল ছাড় করাতে পারেনি ব্যবসায়ীরা। কিন্তু বাজেট অধিবেশনের আগে ৬ জুন বুধবার ও ৭ জুন বৃহস্পতিবার বাজেট অধিবেশন শুরু হলে এনবিআর তাদের সার্ভার বন্ধ করে দেয়। ফলে হিলি স্থলবন্দরের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। আটকা পড়ে ৯ হাজার মেট্রিক টন চাল।
হিলি স্থলবন্দরের চাল আমদানিকারক মামনুর রশীদ লেবু ও হারুন উর রশীদ হারুন জানান, গত ৪ জুন এক অনুষ্ঠানে বাণিজ্য মন্ত্রী তোফায়েল আহম্মেদ জানান, দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্য মজুত রয়েছে। কৃষকরা যাতে ধানের ন্যায্য মূল্য পায় সে জন্য সরকার এবারের বাজেটে চাল আমদানির ওপর আগের মতো ২৮ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। এ ঘোষণার পর যাদের চালের এলসি খোলা ছিল এবং চালের ট্রাক পাইপলাইনে ছিল তারা ৫ ও ৬ তারিখের মধ্যে তা বন্দরে ঢুকিয়ে খালাসের চেষ্টা করে।
কিন্তু বাজেটের আগের দিন ৬ জুন বুধবার ও বাজেটের দিন ৭ জুন বৃহস্পতিবার এনবিআর সার্ভার বন্ধ রাখায় তারা চালগুলো খালাস করতে পারেনি। এর ওপর শুক্রবার ছুটি থাকায় কার্যক্রম বন্ধ ছিল। ফলে তাদের পণ্যগুলো তিন দিন আটকা ছিল। এ কারনে চাল গুলো আগের শুল্ক হারে খালাস করতে পারেনি ব্যবসায়ীরা। এখন তাদের প্রতিদিন ভারতীয় ট্রাক গুলোর জন্য দুই হাজার টাকা করে গুণতে হচ্ছে। অপরদিকে বন্দরের চার্জও দ্বিগুণ বাড়ছে।
আমদানিকারকরা আরও বলেন,আমরা বাজেটের আগে চালগুলো আমদানি করেছি। এখন সেই চালের ওপর যদি বাড়তি শুল্ক পরিশোধ করতে হয় তাহলে দুঃখজনক। বাড়তি শুল্ক পরিশোধ করতে হলে আমরা লোকশানের মুখে পড়বো। আমরা বাজেটের আগে চাল আমদানি করে কেন বাজেটের পরের রেটে শুল্ক পরিশোধ করবো। আগের মতো দুই ভাগ শুল্ক পরিশোধ করে চাল খালাসের জন্য এরইমধ্যে হিলি কাস্টমস, রংপুর কমিশনারেট ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এনবিআরসহ বিভিন্ন দফতরে আবেদন করা হয়েছে। এর কোনও ফলাফল না আসলে কাস্টমসের এমন আদেশের বিপরীতে আমরা আদালতে যাব।
এ ব্যাপারে হিলি স্থলবন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট মুশফিকুর রহমান চৌধুরী জানান, বাজেট ঘোষণার আগে আমাদের কোন দিক নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। অন্যান্যবার বাজেটের আগে ও পরে সার্ভার বন্ধ থাকার কথা জানিয়ে নোটিশ দেওয়া হলেও এবারে তা দেওয়া হয়নি। আমাদের কোনও কিছু জানানো হয়নি। চাল খালাসের জন্য ৬ জুন দুপুর ১২টার মধ্যে ৭৫টি বিলঅবএন্ট্রি কাস্টমসে জমা হলেও কাস্টমসের সার্ভারের ধীরগতি থাকার কারণে মাত্র ২৯টি বিল অব এন্ট্রি দাখিলের পর বাকিগুলো আর দাখিল করা যায়নি। এর পর হঠাৎ করে বিকেল ৩টা থেকে সার্ভার বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপরে আর কোনও পণ্যের বিলঅবএন্টি দাখিল করা যায়নি।
হিলি স্থলবন্দরে খালাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকা ভারতীয় ট্রাকের চালকরা বলেন, ১৫দিন হয়ে গেল কিন্তু এখন পর্যন্ত চাল খালাস হচ্ছে না। কোন পার্টি আসছে না আমাদের সঙ্গে দেখা করতে। খরচ বাবদ যে টাকা নিয়ে এসেছিলাম সেগুলোও শেষ হয়ে গেছে। এখন আমরা খাওয়া দাওয়া নিয়ে বিপাকে পড়েছি।
হিলি স্থলবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন জানান, বর্তমানে হিলি স্থলবন্দরে নয় টন চাল নিয়ে ২১৫টি চালবাহী ট্রাক আটকা আছে। চালের আমদানিশুল্ক বৃদ্ধির কারণে আমদানিকারকরা চালগুলো খালাস করছে না। চালগুলো নষ্ট হলে ব্যবসায়ীরা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবেন।
হিলি স্থলশুল্কস্টেশনের ডেপুটি কমিশনার রেজভী আহম্মেদ বলেন, হিলি স্থলশুল্ক স্টেশনের সব কার্যকম জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এনবিআর নিয়ন্ত্রিত। অ্যাসাইকোডা ওয়ার্ল্ড সার্ভার দ্বারা অনলাইনের মাধ্যমে বিলঅবএন্ট্রি সাবমিট থেকে শুরু করে পণ্যের পরিক্ষণ শুল্কায়ন ও আউটপাশ কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে হিলি শুল্কস্টেশনের কোন কিছু করার উপায় নেই। সারাদেশের সব কাস্টমসের কার্যক্রম এভাবেই পরিচালিত হয়ে থাকে। তাই নতুন আরোপিত ২৮ ভাগ শুল্কে চালগুলো খালাস করতে হবে। ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে তাদের কাছে আবেদনের বিষয়টি তিনি স্বীকার করে বলেন, আগের দুই ভাগ শুল্কে চাল ছাড় দেওয়ার কোনও সুযোগ এখন নেই কারণ সার্ভারে নতুন আরোপিত শুল্ক সংক্রান্ত তথ্য হালনাগাদ করা হয়েছে। সার্ভার আগের কোন তথ্য গ্রহণ করবে না। বা এ ধরণের কোন অপশন সার্ভারে নেই।
খবর৭১/এস: