খবর৭১: চাঁদ দেখা গেছে। এরই মধ্যে শত প্রতিক‚লতা এবং অস্বস্তিকে উপেক্ষা করে নাড়ীর টানে শহর থেকে গ্রামে পৌঁছেছে বেশিরভাগ মানুষ। ঘরমুখো মানুষের মধ্যে কেউ কেউ আছেন পথে। চাঁদ দেখার খবরে সারা দেশে একই ধ্বনি-প্রতিধ্বনি ঈদ মোবারক, ঈদ মোবারক ঈদ।
প্রতিবছরের মতো এবারও গ্রামের পাড়ায়, মহল্লায় শহরে থাকা মানুষের সঙ্গে গ্রামে থাকা স্বজনদের কোলাকুলিতে ভরে উঠবে প্রতিটি ঈদগাহ। তবে ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচন হওয়ায় এবারের গ্রামের ঈদ হবে আরো জমজমাট। মনোনয়ন প্রত্যাশীদের পদচারনায় এবার ঈদে থাতবে নির্বাচনী আমেজ। ভোটের আগে এটিই শেষ ঈদুল ফিতর। তাই সব রাজনৈতিক দলের নেতারা ছুটছেন নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায়। এরমধ্যে আবার যুক্ত হয়েছে সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা ফুটবল বিশ্বকাপ। এবার ঈদে এই তিনে মিলে ত্রয়ী আনন্দে মাতবে দেশ।
জানা গেছে, এবার পুরো রমজান মাসজুড়ে ইফতার মাহফিলসহ নানা কৌশলে প্রচার ও গণসংযোগ করলেও শেষ সময়ে এসে ঈদ শুভেচ্ছা এবং উপহারের তালিকা নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মীরা। যাকাতের কাপড়, সেমাই-চিনিসহ বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে।
এর ওপর চাকরিজীবী শহুরে মানুষ শেকড়ের টানে প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে বেতন-বোনাসের সঙ্গে সঞ্চয়ের নগদ টাকা নিয়ে ফিরছেন নিজ য়ে। বিদেশ থেকেও পরিবার-পরিজনের জন্য এসেছে বিপুল প্রবাসী আয়। প্রবাসী ও শহুরে মানুষের যাকাত, ফিতরা ও দান-খয়রাতের অর্থের সিংহভাগই গেছে গ্রামে। সব মিলিয়ে ঈদকে ঘিরে বেড়েছে টাকার লেনদেন, ফলে চাঙ্গা গ্রামীণ অর্থনীতি।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, ঈদ উপলক্ষে চাকরিজীবী ও শ্রমজীবী মানুষের প্রাপ্ত বোনাসের একটি বড় অংশই যায় গ্রামে। এছাড়া ঈদ উপলক্ষে গ্রামীণ কিছু পণ্যের চাহিদা শহরে বাড়ে। এসব পণ্যের সঙ্গে সংশিস্নষ্টদের আয়ও বাড়ে।
তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর তথ্য মতে, এ শিল্পে ৪০ লাখ শ্রমিক কাজ করেন। এসব শ্রমিকের ৯৫ শতাংশই গ্রাম থেকে আসা। যার ৭০ শতাংশই ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়ি যান। তাই কয়েক মাস আগ থেকেই তারা টাকা জমাতে থাকেন ঈদের জন্য। এর সঙ্গে বেতন- বোনাসের পুরো অর্থই খরচ হয় ঈদকে ঘিরে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, এবার ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে প্রবাসীরা প্রচুর প্রবাসী আয় দেশে পাঠিয়েছে। সারা বছর প্রবাসী আয়ের খরা থাকলেও মে মাসে রেকর্ড পরিমাণ প্রবাসী আয় এসেছে। সদ্য বিদায়ী মে মাসে প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে ১৪৮ কোটি ২৮ লাখ ডলারেরও বেশি প্রবাসী আয় পাঠিয়েছেন, যা একক মাস হিসাবে গত ৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। ঈদকে ঘিরে এরইমধ্যে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে গ্রামে আর্থিক লেনদেনও প্রায় ২০ শতাংশ বেড়েছে। এছাড়া আত্মীয়স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের মাধ্যমে গ্রামে টাকা পাঠানোসহ বিকল্প অন্যান্য ব্যবস্থাতেও লেনদেন মে মাসের শেষভাগ থেকেই বেড়ে চলেছে। যা ঈদের এক-দুদিন আগ পর্যন্ত্ম অব্যাহত থাকবে। এসব টাকার প্রায় পুরোটাই ঈদের আগেই গ্রামে খরচ হয়।
এদিকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপ্রত্যাশী প্রার্থী এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রথম সারির নেতারা নির্বাচনী ঈদকে ঘিরে কী পরিমাণ টাকা নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় নিয়ে গেছেন তার সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও তা আনুমানিক দেড় হাজার কোটি টাকার কম নয় বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। এককথায় নির্বাচনী ঈদকে ঘিরে গ্রামে টাকার প্রবাহ সাধারণ সময়ের চেয়ে কয়েক গুণ বেড়েছে।
রাজনৈতিক সূত্রগুলো জানায়, মনোনয়নপ্রত্যাশী অনেকে যাকাতের বড় অংশই এবারের নিজস্ব নির্বাচনী এলাকায় খরচ করছেন। তারা নিজ উপস্থিতিতে যাকাত বিতরণ করছেন। এমনকি কেউ কেউ গভীর রাতে বাড়ি বাড়ি ঘুরে দলের নিষ্ঠাবান দরিদ্র নেতাকর্মীদের হাতে যাকাতের শাড়ি-লুঙ্গি ও নগদ টাকা পৌঁছে দিচ্ছেন। সব মিলিয়ে গ্রামের একেবার অসচ্ছল মানুষের হাতেও নগদ টাকা যাবে।
সূত্রমতে, টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ির চাহিদা অন্যান্য ঈদের চেয়ে এবার ২০ ভাগ বেড়েছে। যার একটি বড় অংশ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতা ও মনোনয়নপ্রত্যাশীরা অর্ডার দিয়েছে। গত ১০ বছরের তুলনায় তা শতগুন বেশি।
বগুড়া, সিরাজগঞ্জ অঞ্চলের লুঙ্গি ও তাঁতের কাপড়ের কাটতিও এবার অন্যান্য ঈদের চেয়ে অনেক বেশি। সংশিস্নষ্টরা জানান, পাইকারি ব্যবসায়ী ছাড়াও বিপুল সংখ্যক জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিবিদ ও নির্বাচনে মনোনয়নপ্রত্যাশী এবার বড় দাগে শাড়ি-লুঙ্গির অর্ডার দিয়েছেন। যা তারা স্থানীয়ভাবে বিলি করবেন বলে জানিয়েছেন। এতে তাদের কাজের চাপ ভীষণভাবে বেড়েছে। নরসিংদীর বাবুরহাট ও নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের কুটির শিল্পগুলোতেও একই অবস্থা চলছে। এসব পণ্য বিক্রির টাকা গ্রামেই থেকে যাওয়ায় গ্রামীণ অর্থনীতি অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে কয়েকগুণ শক্তিশালী বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
উল্লেখ্য, আগামী ১৬ জুন ঈদ হতে পারে এমনটা ধরে ১৫, ১৬, ১৭ জুন রোজার ঈদের সরকারি ছুটি নির্ধারণ করা আছে। তবে রোজা ৩০টি হলে ঈদ হবে রোববার, সেক্ষেত্রে ১৮ জুনও ঈদের ছুটি থাকবে।
খবর৭১/এস: