রাণীনগর (নওগাঁ) প্রতিনিধি: নওগাঁর রাণীনগরে একডালা ইউনিয়ন পরিষদের ভিজিএফ’র চাল বিতরণের অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। অবশেষে বৃহস্পতিবার প্রশাসনের হস্তক্ষেপে ভিজিএফ এর বিতরণ না হওয়া ৪০ বস্তা চাল বিতরণ করা হলো সুবিধাভুগিদের মাঝে।
সূত্রে জানা, ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে খাদ্য সহায়তা প্রকল্প ভিজিএফ’র ৪ শ ৫০ বস্তা (৩০ কেজি হিসেবে) চাল গত সোমবার রাণীনগর সরকারি খাদ্য গুদাম থেকে সুবিধা ভোগীদের মাঝে বিতরণের জন্য একডালা ইউনিয়ন পরিষদের মো: রেজাউল ইসলাম উত্তোলন করেন চালগুলো।
গত মঙ্গলবার যথারীতি সুবিধা ভুগিদের মাঝে বিতরণ শুরু করেন। প্রায় শতাধিক সুবিধাভুগিরা আসে নাই বলে এই অজুহাতে তাদের জন্য বরাদ্দকৃত ৪০ বস্তা চাল ইউনিয়ন পরিষদে রেখে দেয় চেয়ারম্যান। বুধবার সকাল থেকেই এলাকায় খবর ছড়িয়ে পড়ে ভিজিএফ’র ৪০ বস্তা চাল কালো বাজারে বিক্রির জন্য ইউনিয়ন পরিষদে চাল জমা রেখেছেন চেয়ারম্যান। এছাড়াও চেয়ারম্যান ও চাল বিতরণ তদারকি র্কমর্কতার যোগসাজসে এই চালগুলো কালো বাজারে বিক্রি করার উদ্দেশ্যে বিতরণ না করে রাখা হয়েছিল বলেও স্থানীয়দের ধারনা।
এক পর্যায়ে খবর পেয়ে রাণীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোনিয়া বিনতে তাবিব এবং চাল বিতরণ তদারকি কর্মকর্তা অমল কুমার রায় বুধবার দুপুরে একডালা ইউনিয়ন পরিষদে যান। তারপর থেকেই চেয়ারম্যান রেজাউল ইসলাম নির্বাহী কর্মকর্তাকে বুঝাতে চেষ্টা করেন সুবিধাভোগীরা না আসায় চালগুলো বিতরণ করা সম্ভব হয়নি তাই চালগুলো মজুদ রয়েছে। এরপর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রায় তিন ঘন্টা পরিষদে অবস্থান করে চালগুলো যারা চাল পায়নি তাদের মাঝে বৃহস্পতিবার বিতরণের জন্য নির্দেশ প্রদান করেন। সেই নির্দেশনা মতাবেক বৃহস্পতিবার চাল না পাওয়া সুবিধাভোগীদের মাঝে চাল বিতরণ করা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পরিষদের অনেক সদস্যরা বলেন, পুরো ইউনিয়ন পরিষদের চাল পরিষদ প্রাঙ্গনে প্রাকাশ্যে বিতরণ করার সরকারি বিধান রয়েছে। কিন্তু এই চালগুলো মেম্বারদের এলাকায় নিয়ে গিয়ে বিতরণ করার কোন বিধান না থাকলেও চেয়ারম্যানের আস্থাভাজন মেম্বাররা এই চালগুলো নিজ এলাকায় নিয়ে গিয়ে বিতরণ করেছেন বলে জানা গেছে। আদৌ কি তারা এই চালগুলো নিজ এলাকায় নিয়ে গিয়ে বিতরণ করেছেন নাকি ভুয়া নাম দেখিয়ে বাজারে বিক্রয় করেছেন তা এখনও স্পষ্ট নয়।
অনিয়মের সাথে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে একডালা ইউনিয়ন পরিষদের ভিজিএফের চাল বিতরণের ট্যাগ কর্মকর্তা উপজেলা মৎস্য স¤প্রসারণ কর্মকর্তা অমল কুমার রায় বলেন, চাল বিতরণে কিছুটা অনিয়ম হয়েছিলো কিন্তু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার আদেশ অনুযায়ী বিতরণ না হওয়া ৪০ বস্তা চাল বৃহস্পতিবার সুবিধাভুগিদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। বিতরণ না হওয়া অবশিষ্ট চাল নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর জমা দেওয়া হবে।
আবাদপুকুর বাজারের বিশিষ্ট সমাজ সেবক মো: রুহুল আমীন বলেন, গরীবের চাল নিয়ে চালবাজী এই কাজটি খুবই নাক্কারজনক এবং জঘন্যতম কাজ। যদি বিষয়টি স্থানীয়রা প্রশাসনকে না জানাতো তাহলে চেয়ারম্যান ও তার আস্থাভাজনরা এই ৪০বস্তা গরীব-অসহায় মানুষের চাল হজম করে ফেলতো। পরবর্তি সংশোধনের জন্য এই অপরাধের জন্য চেয়ারম্যানের দৃষ্টান্তর মূলক শাস্তি পাওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।
এব্যাপারে একডালা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো: রেজাউল ইসলাম জানান, অনেক সুবিধাভুগিরা আসে নাই তাই এই চালগুলো পরবর্তি সময়ে বিতরণের জন্য পরিষদে রাখা হয়েছে। চাল বিতরনে কোন অনিয়ম করা হয়নি। কতিপয় মানুষ এই গুজবগুলো ছড়িয়ে দিচ্ছে।
এব্যাপারে রাণীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোনিয়া বিনতে তাবিব বলেন, ভিজিএফ এর চাল বিতরণে কিছুটা অনিয়ম পাওয়া গেছে। আমি ৪০বস্তা চাল না পাওয়া সুবিধাভুগিদের মাঝে বৃহস্পতিবার বিতরণের জন্য এবং বিতরণ না হওয়া চালগুলো আমার কাছে জমা দেওয়ার নির্দেশ প্রদান করেছি।
খবর৭১/এস: