খবর৭১:জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার জিয়াদ রা’দ আল হোসাইন বাংলাদেশে মাদকবিরোধী অভিযানে ‘বন্দুকযুদ্ধের’ ঘটনাকে ‘বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের’ সঙ্গে তুলনা করে তা অবিলম্বে বন্ধ এবং অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে আহ্বান জানিয়েছেন। বুধবার এক বিবৃতিতে তিনি এ আহ্বান জানিয়েছেন। খবর- রয়টার্স।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে মাদকের বর্ধিত ব্যবহার রোধে সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি ঘোষণার পরই ‘হত্যাকাণ্ড’ শুরু হয়েছে। এত বিপুল সংখ্যক মানুষের মৃত্যুতে আমি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। তারা কেউ নিরপরাধ ছিলেন না বলে সরকার জনগণকে আশ্বস্ত করছে, কিন্তু মাদকবিরোধী অভিযানে এমন ভুল ঘটতে পারে।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘মাদকবিরোধী অভিযানে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সাথে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ এখন পর্যন্ত ১৩০ জন ‘মাদক ব্যবসায়ী’ নিহত হয়েছেন। মাদকের বিরুদ্ধে সরকারের এ ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিতে আরও অন্তত ১৩ হাজার জনকে আটক বা গ্রেফতার করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিটি ব্যক্তির জীবনের অধিকার রয়েছে। মাদক ব্যবহার বা বিক্রির কারণে মানুষের মানবাধিকার চলে যায় না। অপরাধ দমনের যেকোনো প্রচেষ্টার পুরোভাগে অবশ্যই নির্দোষ হওয়ার অনুমান ও যথাযথ প্রক্রিয়া থাকতে হবে।’
বিপুল সংখ্যক মানুষকে গ্রেফতারের সময় অনেককে আইন লঙ্ঘন করে ইচ্ছামতো আটক করার সম্ভাবনা থাকে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ‘বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের’ ঘটনা তদন্ত করতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘মাদক নিয়ন্ত্রণের নামে মানবাধিকার লঙ্ঘনের সুযোগ থাকতে পারে না।’
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক গত সপ্তাহে জেনেভার বৈঠকে তদন্ত ও দোষীদের বিচার করার যে অঙ্গীকার করেছেন তা পালন করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে জিয়াদ রা’দ আল হোসাইন তদন্ত কাজ স্বাধীন, পক্ষপাতহীন, স্বচ্ছ ও কার্যকর করার ওপর গুরুত্ব দেন।
হাইকমিশনার বলেন, ‘অবৈধ মাদকের চোরাচালান ও বিক্রি যে ব্যক্তি ও পুরো সমাজের ভীষণ ভোগান্তির সৃষ্টি করে সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু যারা মাদক ব্যবহার করেন তাদের বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা, অবাধে গ্রেফতার ও কলঙ্কিত করা কোনো সমাধান হতে পারে না।’
বাংলাদেশকে সমস্যা সমাধানে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন ও মাদক নীতিমালার আলোকে একটি জাতীয় মাদক নীতি গ্রহণ করার আহ্বান জানান তিনি।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুস্পষ্টভাবে বলেছেন, জনগণের শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও মাদক বিরোধী অভিযান অব্যাহত থাকবে। গতকাল বুধবার সারাদেশের আইনজীবীদের সম্মানে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ইফতার পূর্বে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে অন্যায় ও অবিচারের কোনো স্থান হবে না। জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে। আমরা একটি মাদক, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ মুক্ত দেশ গঠন করতে চাই।’
খবর৭১/জি: