খবর ৭১: ৩৬০০ শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী রাজধানী ঢাকাসহ দেশের ৬৪ জেলা নিয়ন্ত্রণ করছেন। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা, নিজস্ব তথ্য প্রমাণ, ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যদের মতামত এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সর্বস্তরের মানুষের সহযোগিতায় খুবই নিখুঁতভাবে মাদক ব্যবসায়ীদের এ তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছে।
সমাজের শত্রু এ সব মাদক ব্যবসায়ীকে ধরতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী মাঠে দিনরাত কাজ করছে। অভিযানে গুলি বিনিময়কালে প্রায় প্রতিদিনই শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীরা নিহত হচ্ছে। র্যাব-পুলিশের অভিযানে গুলি বিনিময়কালে গতকাল শনিবার পর্যন্ত মারা গেছে ১৩৪ শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী। এর মধ্যে র্যাবের অভিযানে নিহত হয় ৩৩ জন, পুলিশের অভিযানে ১০১ জন নিহত হয়েছে। গত ৪ মে র্যাব মাদক নির্মূল অভিযান শুরু করেছে। অন্যদিকে পুলিশের অভিযান শুরু হয় পয়লা রজমান থেকে।
৩৬০০ শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীর মধ্যে ঢাকা নিয়ন্ত্রণকারী হলেন ৫০ জন। এদের মধ্যে একজন ইতিমধ্যে মারা গেছেন। রাজধানীর ৫০ জনের অধীনস্থ রয়েছে এলাকাভিত্তিক ১৩৮৪ জন মাদক ব্যবসায়ী। এ তালিকা মহানগর পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার কাছে রয়েছে। এ তালিকা ধরেই রাজধানীতে মাদকবিরোধী অভিযান চলছে। টেকনাফ থেকে ইয়াবার বড় বড় চালান ঢাকার এ শীর্ষ ৫০ ব্যবসায়ীর কাছে আসে। পরে তাদের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে ইয়াবা পৌঁছে যায়। তারা বিভিন্ন জেলায় চাহিদা অনুযায়ী ইয়াবা সরবরাহ করেন।
এ দিকে র্যাব এ পর্যন্ত অভিযান পরিচালনা করেছে ৮৩৮টি। এতে গ্রেফতার করা হয়েছে ১০২৬ মাদক ব্যবসায়ী ও সেবনকারীকে।
র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ জানান, অত্যন্ত নিখুঁতভাবে সারাদেশের মাদক ব্যবসায়ীদের তালিকা করা হয়েছে। নিজস্ব তথ্য প্রমাণের পাশাপাশি স্থানীয় জনসাধারণের সহযোগিতা ও গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যের ভিত্তিতে ৩৬০০ মাদক ব্যবসায়ীর তালিকা ধরে অভিযান চালাচ্ছে র্যাব। অভিযান যাতে কোনো ধরনের প্রশ্নবিদ্ধ না হয় সেজন্য খুবই সতর্ক রয়েছে র্যাব।
এ দিকে অভিযানকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর একশ্রেণীর কর্মকর্তা তৎপর। যারা মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নিয়মিত উেকাচ গ্রহণ করতো; আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সেসব অসাধু কর্মকর্তা এখন অভিযান ব্যর্থ করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। অপরদিকে জামায়াত-শিবির ও বিএনপি ঘরোয়া কর্মকর্তারা অভিযানকে প্রশ্নবিদ্ধ করে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষূণ্ণ করতে তৎপর রয়েছে। কোনো কোনো সংস্থার পক্ষ থেকে এমন মন্তব্য করা হয়েছে। এ সংস্থার পক্ষ থেকে ঘুষখোর কর্মকর্তা ও সরকারবিরোধী কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করতে ইতোমধ্যে কার্যক্রম শুরু করেছে। দেশব্যাপী মাদকবিরোধী অভিযানের মধ্যেই রাজধানী ঢাকাসহ দেশের জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন পর্যায়ে ফাঁস হয়ে গেছে মাদক কারবারীদের নামের তালিকা। মাদক কারবারীর তালিকা ফাঁস করে দিয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর মাদক কানেকশনের সঙ্গে সম্পৃক্ত একশ্রেণির দুর্নীতিবাজ, অসৎ কর্মকর্তা। এ কারণে মাদকবিরোধী অভিযান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে।
মাদকের ব্যবসা করতে হলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ প্রশাসনকে উৎকোচ দিতেই হয়। তবে এ উৎকোচের পরিমাণ জনপ্রতি মাসে কোটি টাকার বেশি। স্থানীয় প্রশাসন, রেঞ্জ, জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়, গোয়েন্দা বিভাগ ও মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একশ্রেণির কর্মকর্তার নিয়মিত উেৎকোচ গ্রহণের ফলেই দেশব্যাপী মাদকের দ্রুত বিস্তার ঘটেছে, যা থেকে প্রতি মাসে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নিচ থেকে অনেক উপরে যায়; যা কাঁচা টাকা হিসেবে পরিচিত। এখন অভিযানের কারণে ওই টাকা আসা বন্ধ হয়ে গেছে। এ কারণে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাদের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। অতীতে বিভিন্ন সময় অভিযান হলেও কখনো মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে এত কঠোর অবস্থান দৃশ্যমান হয়নি।
খবর ৭১/ই: