সোনারগাঁও বারদী থেকে মোঃ জহিরুল ইসলাম মৃধা ঃ উপমহাদেশের আধ্যাতিœক সাধক শ্রীশ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারীর আশ্রমে আজ রবিবার সোনারগাঁও উপজেলার বারদীতে ১২৮তম তিরোধান উৎসব শুরু হবে। এ উপলক্ষে মূল উৎসব ৩ দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হবে। সুষ্ঠ ও শান্তিপূর্নভাবে তিরোধান ও মেলা অনুষ্ঠানের উপলক্ষে আগামী ৩রা জুন আজ রবিবার বারদী শ্রীশ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারীর আশ্রমে উপজেলা নির্বহী কর্মকর্তা ও থানা কর্মকর্তা ও আইন-শৃঙ্খলার কমিটি প্রশাসনিকভাবে ব্যাপক প্রস্তুতি সস্পুর্ণ করেছেন। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে রাখার বিভিন্ন পয়েন্টে বিপুল সংখ্যক সাদা পোশাক পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হবে। আশ্রমে আসার জন্য চারটি পাকা সড়ক রয়েছে। প্রথমত ঢাকা-চট্রগ্র্মা মহাসড়কের মদনপুর-নরসিংদী সড়কস্থিত তালতলা দিয়ে, দ্ধিতীয়ত ঢাকা-চট্রগ্র্মা মহাসড়কস্থিত কেওঢালা দিয়ে, তৃতীয়ত ঢাকা-চট্রগ্র্মা মহাসড়কের মোগড়াপাড়া দিয়ে ও চতুর্থ আড়াইহাজার-গোপালদী থেকে উচিপুরা-শান্তিবাজার দিয়ে উপমহাদেশের আধ্যাতিœক মহাপুরুষ শ্রীশ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারীর আশ্রমে যাওয়া যাবে।মন্দিরে যাওয়ার পথে লক্ষ করা যায় ছোট ছোট দোকান। দোকানগুলিতে আছে শিশুদের খেলনা,মোম,আগরবাতি,স্টীল ও পিতলের সামগ্রী এবং শ্রীশ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারীর বিভিন্ন ছবি।এছারাও হিন্দু সম্প্রদায় বিভিন্ন অনুষ্ঠানের প্রয়োজনীয় দ্রবাদিও মিলবে এসব দোকানে। এ ছোট ছোট দোকানগুলো পিছনে ফেলে এক পা দু পা করে সিড়ি ভেঙ্গে মূল আশ্রমে গেটে প্রবেশ করে হাতের ডান দিকে দেখতে পাওয়া যায় মহাসাধক শ্রীশ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারীর সমাধি মন্দির এবং এটি আধুনিক ডিজাইনে নির্মিত ও মূল্যবান পাথরে সুসজ্জিত।এখানে সনাতন বা হিন্দু ধর্মাবলম্বী নর-নারী,শিশু ও বৃদ্ধেরা নতশিরে প্রণাম জানাচ্ছে সাধকের সমাধি মন্দিরে। সমাধি মন্দিরের পূর্বদিকে ঘেঁষে রয়েছে জানকীনাথের আরেকটি মন্দির।আশ্রম সুত্রে জানা যায় যে,এ জানকীনাথ শ্রীশ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারীর সেবা শুশ্রুষায় নিয়োজিত ছিলেন। ইমারতের উওর দিকে দূর্গা মন্দির হয়ে স্মৃতি মন্দির আছে।মূল মন্দির থেকে পূর্ব-উওর কোনে এক বিশাল নাটমন্দির।এ নাটমন্দিরে প্রতি বছর ১৬ই অগ্রাহায়নণ একনাম কীর্তন হয়। সাধকের মূল ভবনটি আস্তানার মনিকোঠায় অবস্থিত। এখানে সাধক লোকনাথ তার ভক্তবৃন্দের সাথে নানা সুখ-দূখের আলোচনা করতেন। নিদ্রা আহার ও ধ্যানের স্থানও ছিল এটি । বর্তমানে লোকনাথ বাবার মন্দিরের সম্মুখে বিশাল একটি বকুল ও ২/৩টি আম গাছ রয়েছে। পুরো আস্তানা ছায়াময় হয়ে রয়েছে বিভিন্ন জাতের গাছগুলি দ্ধারা। ভক্তবৃন্দের থাকার জন্য ফ্লাট বিশিষ্ট আকর্ষণীয় একটি ছয়তলা ভবন সহ আরো ৪/৫ টি তিনতলা ভবন রয়েছে। ভবনগুলোতে আছে প্রায় তিন থেকে পাঁচ হাজার ভক্তের থাকার সুব্যবস্থা। এখানে পান করার জন্য আর্সেনিক মুক্ত জল পাশাপাশি পয়ঃনিস্কাশনের প্রতি ভবনের ব্যাবস্থা থাকার পর ভবনের বাহিরে ৩০/৩৫টি সেনিটারী টয়লেটের সুব্যবস্থা রয়েছে।আর এ আশ্্রমকে ঘিড়ে তৈরি হয়েছে আতিথিশালা,ধর্মশালা, অফিসকক্ষ বিক্রয় কেন্দ্র,গোশালা, রন্ধনশালা, চিতাশালা, ও পূজামন্ডব ইত্যাদি। সব কিছু মিলিয়ে এক মনোরম পরিবেশ বিরাজ করেছে এ আশ্্রমে। ১২৯৭ বাংলা সালে ১৯ জ্যৈষ্ঠ শুক্ল পক্ষের ত্রয়োদশী বেলা ১১টা ৪০মিনিটে শ্রীশ্রী লোকনাথ সোনারগাঁওয়ে বারদীতে দেহ ত্যাগ করেন।সেই থেকে প্রতি বছর ১৯জ্যৈষ্ঠ পালিত হয়ে আসছে এ উৎসব। ব্রহ্মচারীর মৃত্যুও পর থেকেই এখানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এ আশ্রম। আশ্রম পরিচালনায় জন্য ৪৩সদস্য বিশিষ্ট একটি পরিচালনা কমিটি ও অনুষ্ঠানের সার্বিক কর্মকান্ড সম্পাদনের জন্য রয়েছে প্রায় ৭৫/৮০জন কর্মচারী। পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিজয় কুমার মোদি জানান, সকাল ৯টায় বাল্যভোগ বিকাল ৫টায় রাজভোগ ও সারাদিন ফলভোগ হবে।এ উপলক্ষে আশ্রম প্রাঙ্গনে বিশাল মাঠে ৩দিনব্যাপী মেলা। এ এর আমেজ থাকে প্রায় ১০ থেকে ২০ দিন পর্যন্ত। উৎসব উপলক্ষে প্রতি দেশের হিন্দু সম্প্রদায় তীর্তযাত্রী ছারাও ভরত, নেপাল, ভুটান ও মায়ানমার থেকে হাজার তীর্তযাত্রীর সমাগম ঘটে থাকে এখানে। আশ্রমে সন্নাসী এবং তীর্তযাত্রীদের জন্য রয়েছে যতদিন ইচ্ছা থাকা খাওয়া ফ্রি ব্যবস্থা। তাছাড়া সরকারী ছুটির দিন,প্রতি শুক্রবার ও শনিবার এখানে হাজার হাজার ভক্তবৃন্দ সমবেত হন এবং প্রতি উপবাস পালন করেন হিন্দ সম্প্রদায়।