নড়াইলের শেখ রাসেল সেতুর চিত্রানদী ভরাট করে ঘাট নির্মাণ, গাইডওয়াল ধ্বসের আশংকা

0
469

উজ্জ্বল রায়, নড়াইল প্রতিনিধি:

নড়াইলের শেখ রাসেল সেতুর চিত্রানদী ভরাট করে ঘাট নির্মাণ গাইডওয়াল ধ্বসের আশংকা!সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চিত্রানদীর সাথে সেতুর মূল পিলারের গাইড ওয়ালেরর নীচ থেকে মাটি কেটে নেয়ায় সেখানে তৈরী হয়েছে প্রায় ১২ ফুট গভীর খাদ। কোথাও মাটি কেটে গাইডওয়ালের তলে শূণ্য করে রাখা হয়েছে। সম্পূর্ন অরক্ষিত অবস্থায় আছে সম্পূর্ন গাইডওয়ালের প্রায় ৩০ ফুট জায়গা। ইতিমধ্যে গাইডওয়ালের গায়ে পুরো জায়গা জুড়ে ফাটল দেখা গেছে, যে কোন সময়ে মানুষের চলাচলের কারনেও ধ্বসে পড়তে পারে গাইডওয়াল। তাতে সেতুর তলের একটি বড় অংশ ধ্বসে হুমকীর মুখে পড়তে পারে নবনির্মিত শেখ রাসেল সেতু। খাঁজখবর নিয়ে আরো জানা গেছে, চিত্রানদীর পুরাতন ফেরীঘাট এলাকায় নবনির্মিত শেখ রাসেল সেতুর নীচে শিশুপার্ক নির্মাণের কাজ হাতে নেয় জেলা পরিষদ। ৩৬ লক্ষ টাকা ব্যয় জেপি/নড়াইল/২০১৭-১৭/০৩ এই প্যাকেজের আওতায় কাজটি শুরু হয় চলতি বছরের ফেব্রুয়ারী মাসে ।আর একই বছরে ৩০ জুন কাজটি শেষ হওয়ার কথা। কাজটির দায়িত্ব পায় ঝিনাইদহের মেসার্স লিটন ট্রেডার্স। নড়াইল জেলা শহর বেষ্টিত চিত্রানদী অপদখল করে শিশুপার্কের নামে ঘাট নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। ঘাট নির্মাণ করতে যেয়ে প্রায় নদী জুড়ে জায়গা বেধে সিড়ি নির্মাণের কাজ শুরু করেছে জেলা পরিষদ। এ নির্মান কাজ করতে গিয়ে পার্শ্ববর্তী চিত্রানদীর উপর শেখ রাসেল সেতুর মুল পিলারের গাইডওয়ালে ফাটল ধরে তা ধ্বসে পড়ার সমূহ সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।রবিবার (২৭মে) দুপুরে জেলা প্রশাসক মো: এমদাদুল হক চৌধুরী সরেজমিনে গিয়ে এ দৃশ্য ধরা পড়লে তাৎক্ষনিক এলাকাবাসি ক্ষোভে ফেটে পড়েন। একই সাথে তিনি নিজেও ক্ষোভ প্রকাশ করে জেলা পরিষদের সহকারী প্রকৌশলী বিষ্ণুপদ বিশ্বাসকে এ বিষয়ে নড়াইল জেলা অনলাইন মিডিয়া ক্লাবের সভাপতি উজ্জ্বল রায়কে জানান এখানে কার অনুমতি নিয়ে এ ঘাট নির্মাণ করছেন। নদী জেলা প্রশাসনের আপনি কি আমার অনুমতি নিয়েছেন? পানি উন্নয়ন বোর্ড জানে?বর্তমান যে অবস্থা তাতে এলাকাবাসী ও পরিবেশবিদদের ধারনা বর্ষা মৌসূমে ২/১টা ভারী বর্ষনে সেতুর গাইডওয়াল ভেঙ্গে শেখ রাসেল সেতু ধ্বসে পড়তে পারে। অন্যদিকে চিত্রানদীর অর্ধেক জায়গা জুড়ে সিড়ি নির্মাণের জন্য পাইলিং ঢালাই দেয়ায় নদী পলি পড়ে তা ভরাট হয়ে যাবে দ্রুত। এ ব্যাপারে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি সহ সর্বস্তরের মানুষ ক্ষোভে ফেটে পড়েছে। দ্রুত এ নির্মাণ কাজ বন্ধ ও ঘাটের নকশা পরিবর্তনের করারও দাবি করে এলাকাবাসি। দিকে চিত্রানদীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানে এ ধরনের একটি অসম্পূর্ন কাজের বিরোধিতা করে আসছিলেন নড়াইলের সর্বস্তরের মানুষ। এতো টাকা ব্যয়ে কেবলমাত্র একটি সিড়ি করানো জেলা পরিষদের নামমাত্র কাজ বলেই তারা মনে করেন।এর আগে এপ্রিল মাসের প্রথম দিকে নড়াইল জেলা প্রশাসনের সাথে মাশরাফির বিন মর্তুজার নড়াইল এক্সপ্রেস ফাউন্ডেশনের এক উন্নয়ন পরিকল্পনার সমন্বয় সভায় বৈঠকে স্থানীয় সুধীজনসহ স্থপতিরা এই কাজের তীব্র সমালোচনা করেন এবং জেলার স্থানীয় স্থপতিদের নকশা অনুযায়ী কাজ করার জন্য অনুরোধ করেন। এসময় জেলা পরিষদের কাজের নকশা পরিবর্তন করে নদীকে রক্ষা করে দীর্ঘমেয়াদী এবং দর্শনীয় একটি নকশা প্রনয়ণ করা হয়। পরবর্তীতে সেই নকশা অনুযায়ী কাজের জন্য অনুরোধ করা হয়। জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে তা মেনে নিলেও কাজটি করা হয়নি। পূর্বের নকশাতেই কাজ চলতে থাকে।গত ২৬ মে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পুরনায় নড়াইল এক্সপ্রেস ফাউন্ডেশনের সাথে বৈঠকে জেলা পরিষদের কাজের খোঁজ নেন নড়াইল এক্সপ্রেস ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তারা সহ স্থানীয় সুধী সমাজ। সেখানে জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, কাজের প্রায় ৬০ ভাগ সম্পন্ন করা হয়েছে। পরে সরেজমিন চিত্রাপাড়ে কাজটি দেখতে গিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েন খোদ জেলা প্রশাসক সহ অন্যরা। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সুধীজন ও নড়াইল এক্সপ্রেসের কর্তারা জেলা প্রশাসকের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করলে তিনি তাৎক্ষনিকভাবে পানি উন্নয়ন বোর্ড সহ জেলা পরিষদের উর্দ্ধতন কর্মবর্কাদের বিষয়টি অবগত করেন।নড়াইল এক্সপ্রেস ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক তরিকুল ইসলাম অনিক এ বিষয়ে নড়াইল জেলা অনলাইন মিডিয়া ক্লাবের সভাপতি উজ্জ্বল রায়কে জানান, আমরা বার বার বলা সত্ত্বেও এই নকশা পরিবর্তন করেনি জেলা পরিষদ। এই জাতীয় কাজ একদিকে যেমন চিত্রা নদী ধ্বংস করবে অন্যদিকে নদী পাড়ের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে কাজে আসবে না।নড়াইলের ১ম শ্রেণি ঠিকাদার মো. রেজাউল আলম এ বিষয়ে নড়াইল জেলা অনলাইন মিডিয়া ক্লাবের সভাপতি উজ্জ্বল রায়কে জানান, ঠিকাদার নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করবে এটা ঠিক, কিন্তু প্রকৌশলীরা কি করে নদী বন্ধ করে কাজ করেন এটা আমার মাথায় আসে না। এটা নদী মেরে ফেলার একটি কাজ। আমাদের এই সুন্দর নদীকে আমরা মেরে ফেলতে দেব না।স্থপতি সেলিম আলতাফ বিপ্লব বলেন, সৌন্দর্য বর্ধন যে কোন নকশাতেই করা যায়, কিন্তু আমাদের প্রাণের চিত্রা নদীতে কোন নকশা করলে তা অবশ্যই নদীকে বাঁচিয়ে রেখে এবং তার ভবিষৎ পানি প্রবাহ ঠিক রেখে করতে হবে। নদী মেরে ফেলে কোন কাজ করা ঠিক হবে না।নড়াইল পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর কাজী জহিরুল জহিরুল হক এ বিষয়ে নড়াইল জেলা অনলাইন মিডিয়া ক্লাবের সভাপতি উজ্জ্বল রায়কে জানান, এই জাতীয় খামখেয়ালী ধরনের নকশায় কাজ করলে অচিরেই চিত্রা নদী মরে যাবে, আমরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে জবাবদিহি করতে পারবো না। নদী মেরে ফেলার এই কাজ কোন অবস্থাতেই সমর্থনযোগ্য নয়।জেলা পরিষদের সহকারী প্রকৌশলী বিষ্ণুপদ বিশ্বাস এ বিষয়ে নড়াইল জেলা অনলাইন মিডিয়া ক্লাবের সভাপতি উজ্জ্বল রায়কে জানান, আমাদের ডিজাইন আগেই করা হয়ে গিয়েছিলো, আমি ঠিকাদারকে বলেছি গাইডওয়ালের নিরাপত্তা কলাম তৈরী করতে। আমরা অচিরেই এই কাজটি হাতে নেব। এই কাজ করার ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অনুমতি প্রসঙ্গে তিনি কিছুই বলতে পারেনি।নড়াইলের জেলা প্রশাসক মো. এমদাদুল হক চৌধুরী এ বিষয়ে নড়াইল জেলা অনলাইন মিডিয়া ক্লাবের সভাপতি উজ্জ্বল রায়কে জানান, আমি এ ব্যাপারে ইতিমধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীর সাথে কথা বলেছি, দ্রুত গাইডওয়াল ঠেকাতে হবে। সরকার যেখানে নদী খনন করতে চাচ্ছেন সেখানে নদীর ভিতরে এ ধরনের কাজ মোটেও ঠিক হচ্ছে না।
খবর ৭১/ই:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here