উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধি: জাতীয় সংসদ নির্বাচন নড়াইল সদর উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ৮টি ইউনিয়ন এবং নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ১২টি ইউনিয়ন নিয়ে নড়াইল-২ আসন গঠিত। এ আসনে মোট ভোটার সংখা ৩ লক্ষ ২ শ’ ৩৭জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লক্ষ ৪৭ হাজার ৭শ’ ৯১ জন এবং মহিলা ভোটার ১ লক্ষ ৫২ হাজার ৪শ’ ৪৬ জন। এ আসনে বর্তমান এমপি ১৪ দলের শরীক ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা এ্যাডঃ শেখ হাফিজুর রহমান। আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি ১৪ দলীয় জোটের মনোনয়ন পাবেন বলে তিনি আশাবাদী। আওয়ামীলীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন – সাবেক এমপি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব)ঃ এসকে আবু বাকের, শিল্পপতি বাসুদেব ব্যানার্জি, জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি এসএম আসিফুর রহমান বাপ্পি, সাবেক ছাত্রনেতা ও নড়াইল জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ন-সাধারন সস্পাদক শরীফ মনিরুজ্জামান ,আওয়ামীলীগ নেতা শেখ মোঃ আমিনুর রহমান হিমু, হাবিবুর রহমান তাপস, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহ-সভাপতি এ্যাডঃ শেখ তরিকুল ইসলাম প্রমুখ। তারা সকলেই ইতিমধ্যে ব্যানার ফেষ্টুন টানিয়ে ঈদ-পূজাসহ বিভিন্ন জাতীয় দিবসে শুভেচ্ছা জানানো ছাড়াও গনসংযোগ শুরু করেছেন। বিশিষ্ট শিল্পপতি ও জাহাজ ব্যবসায়ী বাসুদেব ব্যানার্জি গত ১৫ আগষ্ট জাতীয় শোক দিবস পালনের জন্য প্রতিটি ইউনিয়নে দশ হাজার করে টাকা দিয়েছেন। এছাড়া তিনি পূর্ব থেকেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে এবং দরিদ্র শিক্ষার্থীদের শিক্ষার জন্য আর্থিক সহায়তা দিয়ে থাকেন। মনোনয়ন লাভের আশায় তিনিও নিবার্চনী এলাকায় ভোটারদের সাথে মতবিনিময় সভা ও কুশল বিনিময় শুরু করেছেন । আসিফুর রহমান বাপ্পী গত নির্বাচনে মনোনয়ন পেয়েছিলেন । পরে জোটের কারনে তার মনোনয়ন কেটে শেখ হাফিজুর রহমান কে মনোনয়ন দেয়া হয়। নির্বাচনী মাঠে আরেক নবাগত প্রার্থী শেখ মোঃ আমিনুর রহমান হিমু । কৃতি শিক্ষার্থীসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ‘সবুজ নড়াইল’ গঠনে বিপুল অংকের আর্থিক সহায়তা দিয়ে ইতিমধ্যেই তিনি ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছেন। এসকল প্রার্থীরা তাদের নিজ নিজ কর্মী-সমর্থক নিয়ে নির্বাচনী তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন এবং মনোনয়ন পাওয়ার আশায় কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছেন। আগামী ডিসেম্বর মাসে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় হিসাবে এখনও প্রায় আট মাস সময় বাকী। অথচ নড়াইল-২ আসনের সর্বত্র নির্বাচনী হাওয়া বইতে শুরু করেছে। নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থীরা ইতিমধ্যে ব্যানার – ফেস্টুন টানিয়ে ঈদ-পূজা, বিজয় দিবস ও নববর্ষের শুভেচ্ছা জানানোর নামে নির্বাচনে তাদের প্রার্থীতা জানান দিচ্ছে। সম্ভাব্য প্রার্থীদের ন্যায় ভোটারদের মাঝেও কে কোন দলের প্রার্থী হচ্ছে তা নিয়ে চায়ের দোকানে বসে আলোচনার অন্ত নেই। অর্থ্যাৎ নির্বাচনকে ঘিরে লোকজনের মধ্যে শুরু হয়েছে নানা জল্পনা-কল্পনা। নির্বাচনী হিসাব নিকাশের মধ্যে আওয়ামীলীগ ও বিএনপি দলীয় প্রার্থীরা ছাড়াও তাদের জোট সহযোগীরাও নির্বাচনী প্রচারনায় নেমে পড়েছেন। বসে নেই ছোট ছোট দল গুলিও। অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নড়াইলের ২টি আসনে বর্তমান প্রধান মন্ত্রী নির্বাচন করে জয়লাভ করায় সেই থেকে আসন দুইটি ‘শেখ হাসিনার সীট’ বলে পরিচিত। তাছাড়া ‘৯১ সালের ৫ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে শুরু করে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত সবগুলি নির্বাচনে আওয়ামীলীগের প্রার্থী জয়লাভ করায় আসনটিকে ‘আওয়ামীলীগের দুর্গ ’ বলা হয়ে থাকে। প্রধান বিরোধী দল হিসাবে বিএনপির ভোটও একেবারে কম নেই। ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের প্রার্থী শেখ হাসিনা বিএনপি প্রার্থী মুফতি শহিদুল ইসলামকে মাত্র চার হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেছিল। ফলে আওয়ামীলীগের সম্ভাব্য প্রার্থীদের পাশাপাশি বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরাও সমানতালে নির্বাচনী প্রচারনায় নেমে পড়েছেন। আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন জোট গত ভাবেই হবে ধরে নিয়ে আওয়ামীলীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট ও বিএনপি’র নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের নেতারা নিজ নিজ জোটের মনোনয়ন লাভের আশায় কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রাখার পাশাপাশি নিজ নিজ সংসদীয় আসনে গণসংযোগ অব্যাহত রেখেছেন। সাধারন ভোটারদের অভিনন্দন জানানো পোষ্টার, ব্যানার, ফেস্টুন শোভা পাচ্ছে গ্রামের প্রত্যন্ত অ ল থেকে শুরু করে শহরের অলি-গলিতে। নির্বাচনে আওয়ামীলীগ চায় বিজয়ী হয়ে তাদের ঐতিহ্য ধরে রাখতে। অন্যদিকে বিএনপি’র নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট চায় বিজয় ছিনিয়ে এনে আওয়ামীলীগের এ দূর্গের পতন ঘটাতে। আওয়ামীলীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের প্রায় এক ডজন নেতা সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে নিজেদের নাম ঘোষনা করে দলীয় মনোনয়ন পেতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করলেও বিএনপি’র নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটে মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রার্থীর সংখ্যা কিছুটা কম। ফলে ক্ষমতাসীন দল প্রার্থী বাছাইয়ে সমস্যায় পড়তে পারে। সে ক্ষেত্রে বিএনপি জোট সুবিধাজনক অবস্থায় আছে। সাধারন ভোটারদের মতে, নড়াইল -২ আসনে যোগ্য প্রার্থী মনোনয়নে ব্যর্থ হলে ভরাডুবি হতে পারে আওয়ামীলীগের। আর এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে বিজয় ছিনিয়ে নিতে পারে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। এদিকে বিএনপি থেকে সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশিরা হলেন- সাবেক এমপি বিএন পির কেন্দ্রীয় নিবার্হী কমিটির সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা শরীফ খসরুজ্জামান, ২০ দলীয় জোট নেতা ও এনপিপি’র চেয়ারম্যান এ্যাডঃ ফরিদুজ্জামান ফরহাদ কেন্দ্রীয় নেতা হওয়ায় সকলের মুখে মুখে শোনা যাচ্ছে তার এ আসনে মনোনয়ন অনেকটা নিশ্চিত। তিনি তার নিবার্চনী এলাকায় ভোটারদের সাথে নিয়মিত মতবিনিময় সভা ও গনসংযোগ অব্যাহত রেখেছেন। ন্যাশনাল পিপর্লস পার্টি এনপিপি (নিলু) এর কেন্দ্রীয় কামটির যুগ্ন-মহাসচিব ও নড়াইল জেলার এনপিপির সভাপতি মনিরুল ইসলাম গত কয়েকদিন ধরে নড়াইল তুলারামপুর, মুলিয়া, চৌগাছা দওপাড়া লোহাগড়া, শালনগর,শিয়ারবর, সহ তার নিবার্চনী এলাকায় ভোটারদের সাথে মতবিনিময় সভা করেন। একইভাবে ১৪ দলীয় জোট ঠিক থাকলে জোটের শরীক ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা ও বর্তমান এমপি শেখ হাফিজুর রহমানই পুনরায় এ আসনে মনোনয়ন পাবেন বলে জনশ্রুতি রয়েছে। তবে জোটের অপর শরীক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ এর জেলা সভাপতি এ্যাডঃ আবদুস ছালাম খানও নিজ নিজ দলের মনোনয়ন চেয়ে গন- সংযোগ অব্যাহত রেখেছেন।# ছবি সংযুক্ত