‘বেনিফিট নেবেন, দায় নেবেন না’

0
303

খবর ৭১ঃ দুই বাসের রেষারেষিতে মারা যাওয়া রাজীবের দুই ভাইকে এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের আদেশের বিরুদ্ধে করা আবেদনের ওপর শুনানি শেষ হয়েছে। এ বিষয়ে আদেশের জন্য আগামী সোমবার দিন নির্ধারণ করেছেন আপিল বিভাগ।

ক্ষতিপূরণ দিতে হাইকোর্টের দেয়া আদেশের বিরুদ্ধে বিআরটিসি ও স্বজন পরিবহনের করা আবেদনের শুনানি নিয়ে বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ আদেশের এই দিন ধার্য করেন।

আদালতে রাজীবের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। বিআরটিসির পক্ষে ছিলেন এ বি এম বায়েজিদ এবং স্বজন পরিবহনের পক্ষে ছিলেন পংকজ কুমার কুণ্ড।

শুনানিতে বিআরটিসির পক্ষের আইনজীবী এ বি এম বায়েজিদ বলেন, আমরা ওই দূর্ঘটনার জন্য দায়ী না। স্বজন পরিবহনের ওই গাড়িটি ওইদিন বাম দিক থেকে ওভারটেক করে এসে বিআরটিসির গাড়িটিসহ রাজীবকে ধাক্কা দেয়। অতএব, আমি দায়ী না হলে ক্ষতিপূরণের টাকা কেন দেব?

এ সময় স্বজন পরিবহনের পক্ষের আইনজীবী পংকজ কুমার কুণ্ড আদালতকে বলেন, স্বজন কোম্পানি কিন্তু ওই গাড়ির মালিক না। ওই গাড়িটি আমাদের প্রতি মাসে ৬ হাজার টাকা দিত এবং আমাদের স্বজন নামের ব্যানার দিয়ে চলত। আসাদুজ্জামান রাজু নামের একজন ওই গাড়ির মালিক। এ সময় আদালত বলেন, ‘‘বেনিফিট নেবেন, দায় নেবেন না” এটাকি হয়।

এ সময় রাজীবের আইনজাবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, তারা স্বজন পরিবহনের নাম ও সুনাম ব্যবহার করবেন আর দায়দায়িত্ব নেবেন না তা হয় না। তাদের দুই পক্ষের বক্তব্যে প্রমাণ হয় রাজীবের কোনো দোষ ছিল না।

বিআরটিসির আইনজীবী এ বি এম বায়েজিদ বলেন, নিয়ম হচ্ছে ক্ষতিপূরণের মামলা করতে হবে নিম্ন আদালতে। তখন আদালত বলেন, ‘‘এ প্রক্রিয়া করে আসলে তো এরা বুড়ো হয়ে যাবে। এরপর আদালত ক্ষতিপূরণ বিষয়ে আদেশের জন্য সোমবার দিন ধার্য করেন।’’

গত ৮ মে বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী ও বিচারপতি একেএম জহিরুল হকের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ রাজীবের দুই ভাইকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ১ কোটি টাকা দেয়ার নির্দেশ দেন। বিআরটিসি ও ‘স্বজন পরিবহনকে ৫০ লাখ করে মোট এক কোটি টাকা দিতে ওই আদেশে বলা হয়।

হাইকোর্টের আদেশ অনুযায়ী আগামী এক মাসের মধ্যে ওই দুই বাস কর্তৃপক্ষকে ২৫ লাখ করে মোট ৫০ লাখ টাকা পরিশোধের পর আদালতকে অবহিত করতে বলা হয়। সোনালী ব্যাংক মতিঝিল শাখায় রাজীবের খালা ও রাজীবের গ্রামের এক কর্মকর্তা ওমর ফারুকের নামে যৌথ অ্যাকাউন্ট খুলে সেখানে এই টাকা রাখতে বলেন আদালত। আগামী ২৫ জুন আদালত পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেন। এই আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করে বিআরটিসি ও স্বজন পরিবহন।

বিআরটিসির আইনজীবী ব্যারিস্টার মুনীরুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, কার কতটুকু দায় সেটা পরিমাপ কিংবা তদন্ত না করে ক্ষতিপূরণের আদেশ দেয়া হয়েছে। আর এ ধরনের ক্ষতিপূরণ পাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালে আবেদন করতে হয়। এছাড়া বিআরটিসি সরকারের টাকায় চলে। তারা কীভাবে ক্ষতিপূরণ দেবে? এসব কারণে হাইকোর্টের আদেশের বিআরটিসির অংশ স্থগিত চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। যেখানে এক মাসের মধ্যে ২৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের আদেশ ছিল।

গত ৩ এপ্রিল রাজধানীর কারওয়ান বাজার এলাকায় দুই বাসের রেষারেষিতে হাতকাটা পড়ে রাজীবের। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনা নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর ৪ এপ্রিল রিট আবেদন করেন সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।

হাইকোর্ট এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের রুল জারিসহ রাজীবের চিকিৎসার খরচ দুই বাস মালিক বিআরটিসি এবং স্বজন পরিবহনকে বহনের নির্দেশ দেন। রুলে তাকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে এক কোটি টাকা দিতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না, সাধারণ যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিদ্যমান আইন কঠোরভাবে কার্যকর করতে কেন নির্দেশনা দেয়া হবে না এবং প্রয়োজনে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে আইন সংশোধন বা নতুন করে বিধিমালা প্রণয়নের কেন নির্দেশ দেয়া হবে না তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। এ রুল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় গত ১৬ এপ্রিল রাত ১২টা ৪০ মিনিটে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান রাজীব। এরপর ৬ মে বিষয়টি আদালতকে জানান আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। এরপর আদালত অন্তর্বর্তীকালীন সময়ে রাজীবের দুই ভাইয়ের জন্য ক্ষতিপূরণের জন্য এ আদেশ দেন।
খবর ৭১/ইঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here