খবর ৭১: আমাদের দুয়ারেও কড়া নাড়ছে পবিত্র মাহে রমজান। রমজানের আগমনে সাড়া পড়ে যায় আসমান ও জমিনে। আনন্দের হিল্লোল বয়ে যায় গোটা সৃষ্টিজগতে! কল্যাণের সব দরজা এ মাসে খুলে দেওয়া হয়। আর অকল্যাণের পথ রুদ্ধ করা হয়। মহানবী (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যখন রমজানের প্রথম রাতের আগমন ঘটে, শয়তান ও অবাধ্য জিনদের শৃঙ্খলিত করা হয়, জাহান্নামের সব দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। খোলা রাখা হয় না কোনো দরজা। আর জান্নাতের দুয়ারগুলো অর্গলমুক্ত করে দেওয়া হয়। বন্ধ রাখা হয় না কোনো তোরণ। এদিকে একজন ঘোষক ঘোষণা করেন, ‘হে পুণ্যের অনুগামী! অগ্রসর হও।
হে মন্দ পথের যাত্রী! থেমে যাও’। আবার অনেক ব্যক্তিকে আল্লাহ জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন। আর এমনটি করা হয় রমজানের প্রতিটি রাতেই’। (তিরমিজি, হাদিস : ৬৮২; ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৬৪২)
মহানবী (সা.) রমজান আসার আগেই রমজানের জন্য প্রস্তুতি নিতেন। তিনি শাবান মাসে অধিক হারে নফল রোজা রাখতেন। তিনি তাঁর সাহাবিদের রমজানের শুভাগমনের সুসংবাদ দিতেন, যাতে তাঁরাও রমজানে বেশি বেশি ইবাদত-বন্দেগি করতে পারেন। এ বিষয়ে হাদিস শরিফে এসেছে, আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত,
‘রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর সঙ্গীদের এ মর্মে সুসংবাদ শোনাতেন—‘তোমাদের সামনে রমজান মাস এসেছে। এটি বরকতময় মাস। আল্লাহ তোমাদের ওপর এ মাসের রোজা ফরজ করেছেন। এ মাসে জান্নাতের দরজা খোলা হয়। বন্ধ রাখা হয় জাহান্নামের দরজা। শয়তানকে বেঁধে রাখা হয় শিকলে। এ মাসে এমন একটি রজনী রয়েছে, যা হাজার মাস থেকেও উত্তম। যে এর কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হলো, সে যেন যাবতীয় কল্যাণ থেকেই বঞ্চিত হলো। ’ (নাসায়ি, হাদিস : ২৪২৭; মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ৮৯৭৯)
সুতরাং আমাদের কর্তব্য হলো, এ মাস আসার আগেই এর যথার্থ মূল্যায়নের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা। সবচেয়ে ভয়ংকর ব্যাপার হলো, যারা রমজান পেয়েও নিজের জীবনকে পরিবর্তন করতে পারেনি, তারা বড় হতভাগা।
এমন ব্যক্তি আল্লাহর ফেরেশতা ও খোদ রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর বদদোয়াপ্রাপ্ত। কেননা এমন ব্যক্তির ওপর জিব্রাইল আলাইহিস সালাম লানত করেছেন, আর রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর সঙ্গে ‘আমিন’ বলেছেন! হাদিস শরিফে এসেছে, আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘নবী করিম (সা.) একদা মিম্বরে আরোহণ করেন। অতঃপর বলেন—আমিন, আমিন, আমিন। জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রাসুল, এটা আপনি কী করলেন? তিনি বললেন, জিবরাইল আমাকে বলেছেন, ওই ব্যক্তির নাক ধূলিধূসরিত হোক, যার সামনে রমজান প্রবেশ করেছে অথচ তাকে ক্ষমা করা হলো না। আমি শুনে বললাম, আমিন (আল্লাহ কবুল করুন)। এরপর তিনি বলেন, ওই ব্যক্তির নাক ধূলিধূসরিত হোক, যার সামনে আপনার কথা আলোচিত হয়; তথাপি সে আপনার ওপর দরুদ পড়ে না। তখন আমি বললাম, আমিন (আল্লাহ কবুল করুন)। অতঃপর তিনি বলেন, ওই ব্যক্তির নাক ধূলিধূসরিত হোক, যে তার পিতা-মাতা বা তাঁদের একজনকে পেল, অথচ সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারল না। তখন আমি বললাম, আমিন (আল্লাহ কবুল করুন)। ’ (আল-আদাবুল মুফরাদ, হাদিস : ৬৪৬; সহিহ ইবনে খুজাইমাহ, হাদিস : ১৮৮৮)
রমজানকে স্বাগত জানানোর ক্ষেত্রে সুন্নত হলো, রমজানের চাঁদ দেখে নিম্নের দোয়া পাঠ করা। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করিম (সা.) যখন চাঁদ দেখতেন, তখন তিনি বলতেন—
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা আহিল্লাহু আলাইনা বিল ইউমনি ওয়াল-ঈমান ওয়াস-সালামাতি ওয়াল-ইসলাম, রাব্বি ওয়া রব্বুকাল্লাহ। ’
অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি এই চাঁদকে আমাদের ওপর নিরাপত্তা ও ঈমানের সঙ্গে এবং সুস্থতা ও ইসলামের সঙ্গে উদিত করুন, তোমার ও আমার রব হলেন আল্লাহ। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৪৫১, মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ১৩৯৭)
রমজানকে স্বাগত জানানোর সর্বোত্তম উপায় হলো, রমজানকে সব গুনাহ থেকে মুক্ত রাখা। কেননা রমজান হলো তাওবার সুবর্ণ সময়। রমজানকে স্বাগত জানাতে হবে ইবাদতে দ্বিগুণ চেষ্টা, দান-সাদাকা, কোরআন তিলাওয়াত, জিকির-ইস্তিগফার এবং অন্য নেক আমল বেশি পরিমাণে করার দৃঢ় সংকল্প নিয়ে।
মহান আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন। আমিন।