মুকুরুল ইসলাম মিন্টু চৌগাছা (যশোর) : যশোরের চৌগাছায় চলতি মৌসুমে কাঁঠালের বাম্পার ফলনের আশা করছেন চাষিরা। উপজেলার অধিকাংশ গ্রামের পতিত জমিতে গড়ে উঠা বাগান গুলোর প্রতিটি গাছে শোভা পাচ্ছে ছোট বড় কাঁঠাল। প্রাকৃতিক কোন দূর্যোগ না এলে এবং ভরা মৌসুমে কাঁঠালের দাম ভাল থাকলে কৃষক লাভবান হবেন বলে মনে করছেন। এ জনপদে উৎপাদিত কাঁঠাল স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে সুদুর ভোলা, পিরোজপুর, ঝালকাটি, খুলনা, বাগেরহাটসহ যায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। কাঁঠাল চাষে কৃষককে বেশি বেশি উদ্বুদ্ধ করতে উপজেলা কৃষি অফিস নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, চৌগাছার মাটি সোনার চেয়েও খাটি, এ মাটিতে কৃষক যখন যে ফসল বা ফলের চাষ করেন তা সোনা হয়ে কৃষকের ঘরে আসে। তাই চৌগাছা কৃষকরা বছরের বার মাসই কোন না কোন ফসল ফলাতে অভ্যস্ত। তারা ফসলের পাশাপাশি নানা ধরনের ফল ফলালির চাষও নিয়মিত শুরু করেছেন। তেমনই একটি চাষ হচ্ছে জাতীয় ফল কাঁঠাল। এক সময় এ জনপদের মানুষ পতিত জমিতে শুধুমাত্র পারিবারিক চাহিদা মেটানোর জন্যই শখের বশত কাঁঠাল গাছ লাগাতেন। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে বাজারে এই ফলের ব্যাপক চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় তা বানিজ্যিক ভাবে চাষ শুরু করা হয়েছে। চৌগাছার প্রত্যান্ত গ্রামাঞ্চালে কাঁঠাল ব্যাপক ভাবে উৎপাদিত হওয়ায় প্রতিটি মৌসুমে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এখানে ক্রেতা সাধারণ নিজ উদ্দ্যেগে চলে আসেন। তারা কাঁঠাল ক্রয় করে তা ট্রাক বা পিকআপ ভর্তি করে নিয়ে যান দেশের বিভিন্ন জেলাতে। প্রতি বছরই কাঁঠালের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় উপজেলার প্রায় গ্রামে কমবেশি চাষ হচ্ছে কাঁঠালের। পৌর এলাকাসহ উপজেলার বেলোমাঠ, কংশারীপুর, জিওয়লগাড়ী, হাজরাখানা, নারায়নপুর, পেটভরা, হাকিমপুর, মাঠচাকলা, দেবীপুর, পাতিবিলা, তেঘরী, মুক্তদাহ, জগদীশপুর, মির্জাপুর, আড়পাড়া, দক্ষিনসাগর, মাড়–য়াসহ বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে বানিজ্যিক ভাবে শুরু হয়েছে কাঁঠালের চাষ। কাঁঠাল চাষিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এই চাষ পদ্ধতি অন্য যে কোন চাষের থেকে ভিন্ন। কাঁঠাল চাষের জন্য চাষিদেরকে সেভাবে অর্থ ব্যয় করতে হয়না। এমনকি বাগান বা গাছে ফল আসলে সেভাবে পরিচর্জা করা লাগে না। জমি তৈরী করে বছরের একটি নিদিষ্ট সময়ে ওই জমিতে চারা রোপন করাটাই হচ্ছে মুল কাজ। এরপর জমি ও চারা পরিচর্জা করে গাছকে কিছুটা বড় করে কৃষকের দায়িত্ব অনেকটাই শেষ হয়ে যায়। গাছ আপন মনে বেড়ে উঠে। চারা রোপনের ২ থেকে ৩ বছরের মাথায় গাছে ফল আসতে শুরু করে। গাছ গুলো প্রতি বছরই নিয়মিত ফল দিতে শুরু করে। পোকা মাকড়ের উপদ্রুপ না হলে গাছে ব্যাপক ভাবে ধরে কাঁঠাল। বাংলা সনের জ্যৈষ্ঠ মাস শুরু হলে কাঁঠাল পাকা শুরু হয়। এ সময় অনেক ব্যাপারী (ক্রেতা) সরাসরি চলে আসেন চৌগাছার বিভিন্ন এলাকাতে। তারা অনেক সময় বাগানের সমুদয় কাঁঠাল ক্রয় করে নিয়ে যান আবার ক্রয়ের পর কাঁঠাল গাছে রেখে সুবিধা মত সময়ে তা গাছ থেকে কেটে নিয়ে যান নিজ এলাকাতে। কৃষকরা জানান, চলতি মৌসুমে আবহাওয়া এখনও কাঁঠাল চাষের জন্য উপযোগী। আমরা আশা করছি ভাল ফলন পাব। গ্রাম বাংলার প্রতিটি পরিবার এমনকি শহরে বসবাস করা প্রতিটি মানুষের কাছে কাঁঠাল অত্যান্ত জনপ্রিয় একটি ফল। ছোট কাঁঠাল গ্রাম বাংলার সকলের কাছে পরিচিত ও সুস্বাধু তরকারী। বসন্তকাল থেকে গ্রীস্মকাল পর্যন্ত কাঁচা কাঁটাল ’ইচোড়’ সবজি হিসাবে খাওয়া যায়। পাকা ফল বেশ পুষ্টিকর, সুমিষ্টস্বাদ ও স্বল্পমূল্যের জন্য অনেকেই এই ফলকে পছন্দ করেন। কাঁঠালের আটি তরকারীর সাথে রান্না করে খাওয়া হয়, তবে পুড়িয়ে তা বাদামের মত খেতেও বেশ মজাদার। এর সুবিধা হলো অনেক দিন পর্যন্ত ঘরে রেখে বিভিন্ন তরকারীর সাথে মিশিয়ে রান্না করা যায়। পাকা কাঁঠালের কোষ সাধারনত খাওয়া হয়, তবে কোষ নিংড়ে তা শুকিয়ে আমসত্বের ন্যায় কাঁঠালসত্বও তৈরী করা যায়। এমনকি কাঁঠল থেকে চিপস তৈরী করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে কাঁঠালে আছে থায়ামিন, রিবোফ্লাভিন, ক্যালসিয়াম, আয়রন, সোডিয়াম, জিংক এবং নায়াসিনসহ বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান। অন্যদিকে কাঁঠালে প্রচুর পরিমান অমিষ, শর্করা ও ভিটামিন থাকায় তা মানবদেহের জন্য বিশেষ উপকারী। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রইচউদ্দিন জানান, চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় কাঁঠালের ভাল ফলন হবে বলে আশা করছি। উপজেলাতে কাঁঠালের চাষ বৃদ্ধির লক্ষে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। চলতি মৌসুমে কাঁঠালের বাজারদর ভাল হলে কৃষক লাভবান হবেন বলে তিনি মনে করেন।
খবর ৭১/ এস: