মুকুরুল ইসলাম মিন্টু চৌগাছা (যশোর) : আব্দুল মান্নান ও কুলসুমা দম্পতির সুখের সংসার। স্বামী স্ত্রী দুইজনই শারীরীক প্রতিবন্ধী (ছোট মানুষ)। তার পরও এই দম্পতির মনে নেই তেমন কোন কষ্ট অভিমান। একে অপরকে ভিষন ভাল বাসে, আর জীবনের শেষ সময় টুকু পর্যন্ত তারা এই ভালবাসর বন্ধনে আবদ্ধ থেকে সুন্দর এই পৃথিবী থেকে চলে যেতে চাই। বুধবার চৌগাছা পৌর সদরে আসা এই দম্পত্তির সাথে কথা হলে জানা যাই তাদের ভিতরে জমে থাকা অনেক অজানা কথা।
চৌগাছা উপজেলার সীমান্তবর্তী ইউনিয়ন স্বরুপদাহ। এই ইউনিয়নের মাকাপুর মাঠপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল মান্নান (২৯)। পিতা মৃত ফকির চাঁদ মন্ডল। আব্দুল মন্নান ৩ ভাই আর এক বোনের মধ্যে সবার ছোট। জন্মের পর সে আর দশটি শিশুর মতই স্বাভাবিক ভাবে জন্ম গ্রহন করেন। কিন্তু বয়স যত বাড়তে থাকে আব্দুল মান্নান সে ভাবে বেড়ে উঠতে পারেনি। হরমন জনিত কারনে তার স্বাভাবকি বেড়ে উঠা সম্ভব হয়নি বলে জানান বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। বর্তমান ২৯ বছর বয়সে তার উচ্চতা ৪ ফুটের মত। উচ্চতা ৪ ফুট হলেও তার শারীরীক গঠন বেশ ভাল। দুই হাত ও দুই পা কিছু সমস্যা সৃষ্টি করলেও দমিয়ে রাখতে পারেনি আব্দুল মান্নানকে। তাইতো সুস্থ্য সবল মানুষের মত চলাফেরা করা ও প্রয়োজনীয় সকল কাজ সে নিজেই করতে পারে। এমনকি ফসলি জমিতেও তার কাজ করা সকলে অবাক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকেন। চৌগাছা পৌরসভায় একটি কাজে আসা আব্দুল মান্নান জানান, আমরা চার ভাই বোন সকলেই স্বাভাবিক ভাবে বেড়ে উঠলেও আমি সে ভাবে আর বড় হতে পারেনি। এর জন্য আমার মনে তেমন কোন কষ্ট নেই। কারন সৃষ্টিকর্তা আমার শরীরটা বেশ ভাল রেখেছে, তাই সংসারের কাজ করার পাশাপাশি উপজেলার পুড়াপাড়া বাজারে একজন দাঁতের ডাক্তারের সহকারী হিসাবে কাজ করি। সেখানে যে রোজগার হয় এবং মাঠে কিছু বন্দকি জমি আছে সেই জমিতে চাষাবাদ করে আমাদের সংসার ভালই চলে। শারীরীক প্রতিবন্ধি হওয়া সত্ত্বেও আব্দুল মান্নান কখনও অন্যের মুখাপেক্ষি হয়নি। খুব ছোট বেলা থেকেই সে পরিশ্রমি। আব্দুল মান্নান লেখাপড়া তেমন না জানলেও রাজনীতি সম্পর্কে তার রয়েছে বেশ জ্ঞান। যখন সে একটু আধটু বুঝতে শিখেছে তখন থেকেই বিএনপি তথা শহীদ জিয়ার আদর্শকে ধারন করে ওই দলের একজন সক্রিয় কর্মী হিসাবে নিজেকে পরিচিতি করে তুলেছে। চৌগাছা উপজেলাতে তার রয়েছে বেশ জনপ্রিয়তা। সকলেই তাকে মান্নান ভাই বলে ডাকেন। উপজেলা এমনকি জেলা পর্যায়ে বড় কোন সভা সমাবেশ হলে আব্দুল মান্নান সব কাজ ফেলে দলের নেতাদের বক্তব্য শুনতে ছুটে যান সেই সভা স্থলে। তিনি ২০১৬ সালের প্রথম দিকে চৌগাছা পৌর এলাকার চাঁনপুর গ্রামে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। স্ত্রীর নাম কুলসুমা বেগম (২৫)। কুলসুমা বেগম কুমিল্লা জেলার বাসিন্দা হলেও ছোট বেলা থেকে সে চানপুর গ্রামে নানি বাড়িতে বড় হয়েছেন। দু’পরিবারের দেখাশুনায় তাদের বিয়ে হয়। স্ত্রী কুলসুমা বেগমের উচ্চতাও ৪ ফুটের মত। স্বামী স্ত্রী উচ্চতায় সমানে সমান হওয়ায় এই জুটিকে সকলেই বেশ পছন্দ করেন। কুলসুমা বেগমের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমরা স্বামী স্ত্রী দু’জনে বয়সের তুলনায় উচ্চতায় ছোট হলেও আমাদের মধ্যে কোন কষ্ট নেই। বিধাতা যেমনটি মনে করেছেন সে ভাবেই আমাদেরকে তৈরী করেছেন। সংসার জীবনে আমরা সুখী দম্পত্তি বলে আমি মনে করি। কেননা আমার স্বামী আমাকে বুঝার চেষ্টা করেন তদ্রুপ আমিও তাকে সেভাবে বুঝার চেষ্টা করি। সে কাজকে সব থেকে বেশি মূল্যয়ন করে। সকালে উঠে নিজের জমিতে কাজ করে বাড়িতে ফেরে। এরপর সকালের খাবার শেষ করে চলে যায় পুড়াপাড়া বাজারে। সেখানে দন্ত চিকিৎসক মিলনের সহযোগী হিসাবে সারা দিন কাজ করে রাতে বাড়িতে ফেরে। শারীরীক ভাবে আমরা ছোট হওয়ায় আমাদের কাজকর্মে প্রতিবেশিরাও মোটামুটি সহযোগীতা করেন। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, আব্দুল মান্নান শারীরীক ভাবে প্রতিবন্ধি হলেও সে একজন কর্মঠ ছেলে। কাজকে সে ব্যাপক প্রধান্য দেয়। এমনও দেখা গেছে, যে কাজ একজন স্বাভাবিক মানুষ করতে পারে না সেই শেষ করে বাড়িতে ফেরেন আব্দুল মান্নান। সংসার জীবনেও তারা একজন সুখি পরিবার বলে এলাকায় পরিচিতি লাভ করেন।
খবর ৭১/ ই: