খবর৭১: কোটা সংস্কার আন্দোলনকে বিভক্ত করার জন্য ষড়যন্ত্র চলছে বলে অভিযোগ করেছে সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ।
সংগঠনটির নেতারা শিক্ষার্থীদের কোনো ষড়যন্ত্রের ফাঁদে না দিয়ে আগামী ৭ মে পর্যন্ত ধৈর্য ধরতে বলেন। এর মধ্যে দাবি মানা না হলে দুর্বার আন্দোলনের মাধ্যমে
সারা দেশ অচল করে দেয়া হবে।
মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলন থেকে এ হুশিয়ারি দেন সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতারা।
সংগঠনের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল ইসলাম বলেন, আমরা সরকারের পক্ষ থেকে আশ্বাস পাওয়ার পর ৭ মে পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছি। যদি এর মধ্যে আমাদের দাবিদাওয়া মেনে না নেয়া হয়, তা হলে আবারও দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
আন্দোলনরত ছাত্রদের ওপর পুলিশের হামলার বিচার দাবি করে তিনি বলেন, পুলিশ আমাদের ওপর অতর্কিতে হামলা চালিয়েছে। তারা ছাত্রদের ওপর কাঁদানে গ্যাস, টিয়ারশেল নিক্ষেপ ও লাঠিপেটা করেছে।
রোববার রাতে উপাচার্যের বাসভবনে হামলার বিষয়ে নুরুল ইসলাম বলেন, ভিসি স্যারের বাসভবনে ভাঙচুরের বিষয়টি দুঃখজনক। তবে এ ঘটনার সঙ্গে ছাত্ররা কোনোভাবেই জড়িত নয়। কিছু কুচক্রীমহল এর সঙ্গে জড়িত। আমরা এর শাস্তি দাবি করছি।
সংবাদ সম্মেলন থেকে আন্দোলনে জড়িত ছাত্রদের হলে ও ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং সরকারের প্রতি দাবি জানানো হয়।
সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতৃত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই মাস ধরে কোটা সংস্কার আন্দোলন পরিচালিত হচ্ছে।
রোববার কোটা সংস্কারের দাবিতে সংগঠনটি গণপদযাত্রা কর্মসূচি পালন করে। এদিন দুপুরে তারা হাজার হাজার ছাত্র নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শাহবাগ মোড়ে গিয়ে অবস্থান নেন।
একপর্যায়ে রাত ৮টায় তাদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিপেটার পাশাপাশি কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে পুলিশ। এ নিয়ে রোববার রাত থেকে সোমবার পর্যন্ত পুলিশের সঙ্গে ছাত্রদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এ সময় ছাত্রলীগও আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালায়।
সোমবার সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ২০ নেতা কোটা সংস্কারের পাঁচ দফা দাবি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে প্রায় দেড় ঘণ্টা বৈঠক করেন।
এ সময় ছাত্রদের দাবি বাস্তবায়নে সরকারের পক্ষ থেকে ৭ মে পর্যন্ত সময় চাওয়া হয়। ওবায়দুল কাদের বলেন, কোটা পদ্ধতির যৌক্তিক সংস্কার করা হবে। সরকার আন্দোলনকে ইতিবাচকভাবে দেখছে।
তখন আন্দোলনের নেতারা ৭ মে পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত করার ঘোষণা দিয়ে বিকালে ক্যাম্পাসে ফিরে আসেন।
তখন টিএসসির রাজু ভাস্কর্যে সমবেত ছাত্রদের একাংশ এক মাসের জন্য আন্দোলন স্থগিত করার বিরোধিতা করেন। তবে সরকারের দাবি মানার আশ্বাসের পরও আন্দোলন চালিয়ে গেলে ছাত্রলীগ হামলা করবে বলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
একপর্যায়ে সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতারা সার্বিক পরিস্থিতিতে আন্দোলন স্থগিত সিদ্ধান্ত থাকবে কথা জানিয়ে সবাইকে হলে ফিরে যাওয়ার কথা বলেন।
একপর্যায়ে বামপন্থী ছাত্র সংগঠনের কিছু নেতাকর্মী সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতাদের বাদ দিয়ে নিজেরা কমিটি গঠন করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
তবে বেশিরভাগ সাধারণ শিক্ষার্থী হলে ফিরে গেলে রাত ৯টার দিকে বেসরকারি ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটির ছাত্রী বিপাশা চৌধুরীকে দিয়ে মঙ্গলবার পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত করার কথা জানিয়ে বামপন্থী অংশও রাজু ভাস্কর্য ছেড়ে যায়।
তবে মঙ্গলবার সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতারা ক্যাম্পাসে এসে কোটা সংস্কার আন্দোলনে বিভক্তির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এনে এ বিষয়ে সাধারণ ছাত্রদের বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানালেন।
খবর৭১/এস: