বাল্য বিবাহের অভিশাপ থেকে মুক্ত হয়েছে নিজ প্রচেষ্টায়

0
742

খবর৭১,সোহেল পারভেজ,ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি॥ আত্ম প্রত্যয়ী ও সংগ্রামী এক কিশোরীর নাম কারজিনা আক্তার কেয়া। অজো পাড়া গাঁয়ে তার বাড়ি । দশম শ্রেণীতে পড়ে সে । বাবা দরিদ্র কৃষক । মা গৃহিনী। তিন ভাই-বোনের মধ্যে সে সবার বড় । ইচেছ লেখাপড়া শেখে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর আর অসহায় মানুষের কল্যাণ করা। কিন্তু র্দুভাগ্য দরিদ্রঘরে জন্ম নেয়া । বাবা লেখাপড়া করাতে চেয়েছিল না । বড় হচেছ মেয়ে , কখন কী হয় ! এ ভেবে তার বিয়ের সব প্রস্তুতি নেয় বাবা-মা । কেয়া জানে বাল্য বিবাহের কুফল । তাই বিয়েতে মত দেয়নি সে। তারপরও রক্ষা হচিছল না । শেষে ঘটনা খুলে বলে সে তার স্কুলের হেড স্যার শ্রী মনরাম সিংহকে । অল্প বয়সে বিয়ে দিলে মেয়েদের শারিরিক ও মানসিক কি পরিণতি হয় ! শ্রী মনরাম তা’ বোঝাতে সক্ষম হয় তার বাবা-মাকে । এ ভাবে রক্ষা পায় সে।
কারজিনা আক্তার কেয়া ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার গোয়ালকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী । জীবন দক্ষতা বিষয়ে প্র্রশিক্ষণ পেয়ে ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সচেতন সে । কেয়ার বাবা পেয়ার আলী এখন বোঝে, বাল্যবিবাহের কুফল । তাই আর বাধাঁ দেয় না মেয়েকে স্কুলে যেতে । সাত মাস আগে বিয়ে ঠিক হয়েছিল শাহানাজ পারভীনের । সে ও দশম শ্রেণীতে পড়ে। কেয়া শুধু নয়, শাহানাজও নিজের বিয়ে ঠেকিয়েছে । এক- দুইজন নয়। এক বছরে এই উপজেলার ৬০ জন কিশোরী বাল্য বিবাহের অভিশাপ মুক্ত হয়েছে নিজ প্রচেষ্টায়। তারপর কি নিরাপদ এই কিশোরীরা ? এ প্রশ্ন হাবিবা আক্তার সুমির । সে বালিয়াডাঙ্গী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্রী । তার ইচেছর বিরুদ্ধে বিয়ে দিতে চেয়েছিল বাবা-মা । কেয়া’র পথ ধরে সুমিও নিজের বিয়ে ঠেকিয়েছে । তার ইচেছ আর্দশ চিকিৎসক হওয়ার । এ স্বপ্ন নিয়ে সে লেখাপড়ায় মনযোগ দিয়েছে । কেয়া ও শাহানাজরা গ্রামের দশ’জনের চোখ খুলে দিয়েছে । নিপা আক্তার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। তারও বিয়ে ঠিক হয়েছিল পরীক্ষা দেয়ার আগে। ইউএনও-র মুঠোফোনে এসএমএস পাঠিয়ে সে নিজেকে রক্ষা করে ।
রতœাই বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মেজবাউল ইসলাম মিন্টু বলেন বাল্য বিবাহ প্রতিরোধে এলাকায় সামাজিক বিপ্লব শুরু হয়েছে । এর ফলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলোতে ছাত্র-ছাত্রীদের উপস্থিতি বেড়েছে। তিনি আরও বলেন এ উপজেলায় বাল্য বিবাহ প্রতিরোধে স্টুডেন্টস ডাটাবেজ কর্মসুচী চালুর পর গ্রামে ও স্কুলে গড়ে উঠেছে বাল্য বিবাহ প্রতিরোধ মঞ্চ । সভা-সেমিনার ও জারি গানে সচেতন হচেছ এলাকার মানুষ । উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুর রহমান বলেন দশম শ্রেণীতে উঠার আগে ৫৫ ভাগ ছাত্রী ঝরে পড়ত । কারণ বাল্য বিবাহ ও দারিদ্রতা।

বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীদের ঝরে পরা বিষয়টি নজরে আসে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের (ইউএনও )। ২০১৫ সালের জুনে তিনি(ইউএনও) উদ্যোগ গ্রহণ করেন বাল্য বিবাহ প্রতিরোধে সামাজিক কর্মসুচী। পরে তিনি বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ ও স্কুলে ঝরে পরা রোধ কল্পে একটি উদ্ভাবনী ধারনা পাঠান প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। সে ধারনা গ্রহণ করে প্রধানমন্ত্রী দফতরের এটুআই প্রকল্প পরিচালক । শুরু হয় বাল্য বিবাহ,ইভটিজিং,যৌতুক , নারী নির্যাতন ও মাদক প্রতিরোধে শিক্ষার্থীদের বিশেষ প্রশিক্ষণ । এছাড়াও কাজী ও নিকাহ রেজিস্টার, ইমাম , পুরোহিত,জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক এবং অভিভাবক ও গ্রাম পুলিশকে এই কার্যক্রমের আওতায় আনা হয় । পাড়া Ñমহল্লায় গড়ে উঠে বাল্য বিবাহ প্রতিরোধ কমিটি। লেখাপড়া চালিয়ে যেতে দরিদ্র শিক্ষার্থীদের দেয়া হচেছ আর্থিক সহায়তা ।

এ বিষয়ে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো.আব্দুল মান্নান বলেন ৬২টি স্কুল-মাদ্রাসার ১৭ হাজার শিক্ষার্থীকে স্টুডেন্ট ডাটা বেজের আওতায় আনা হয়েছে বাল্য বিবাহ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ড্রপ আউট প্রতিরোধে । এ ডাটাবেজে বাদ পড়েনি শিক্ষক, কাজী ও নিকাহ রেজিস্টার, ইমাম , পুরোহিতরাও জানান এই কর্মকর্তা।
খবর৭১/জি:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here