উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধি:
নড়াইলের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৫০ শয্যায় উন্নীতকরণের জন্য তিনতলা নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়েছে প্রায় চার বছর আগে। ২০১৪ সালের নভেম্বরে নতুন ভবনটি যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট হস্তন্তর করা হলেও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির শুধুমাত্র ৫০ শয্যার খাদ্যের অনুমোদন হয়েছে। তবে চার বছর ধরে এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৫০ শয্যায় উন্নীতকরণের জন্য চিকিৎসকসহ জনবল নিয়োগের অনুমোদন মেলেনি। এদিকে, চিকিৎসক সংকটের ফলে চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হয়ে পড়েছে। চিকিৎসকের ১০টি পদ থাকলেও বর্তমানে কর্মরত আছেন ৪ জন। আর এর ফলে দুর্ভোগে পড়েছেন এখানে সেবা নিতে আসা রোগী ও স্বজনরা। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, ৩১ শয্যার এই হাসপাতালকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করার জন্য ২০০১-০২ অর্থবছরে ৭ কোটি ১৭ লাখ ৩৪১ টাকা ব্যয়ে তিন তলা ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হয়। দীর্ঘ ১৩ বছর পর নির্মাণ কাজ শেষে ২০১৪ সালের নভেম্বরে নতুন ভবনটি যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট হস্তন্তর করা হয়। এরপর দীর্ঘ চার বছরেও প্রশাসনিক অনুমোদন না পাওয়ায় বতর্মানে পুরনো ভবনে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি চলছে। এ ভবনে বেড রয়েছে ৩১টি। লোহাগড়া উপজেলার জনসংখ্যা প্রায় তিন লাখ। এ কারণে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে রোগী ভর্তির চাপ অনেক বেশী হয়ে থাকে। শয্যার অভাবে তাদের মেঝেতে রেখে চিকিৎসা দিতে হয়। বহির্বিভাগেই প্রতিদিন ২০০-৩০০ রোগী সেবা নিতে আসেন। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে ১০টি চিকিৎসক পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন মাত্র ৪জন চিকিৎসক। তাদেরকে আন্তঃবিভাগ, বহির্বিভাগ ও জরুরি বিভাগ সামাল দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা যায়,জন গুরত্বপূর্ণ এ কমপ্লেক্সেটি কাগজে-কলমে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হলেও অনুমোদন না হওয়ায় ৩১ শয্যায় চলছে চিকিৎসা সেবা। পুরুষ ওয়ার্ডে ভেতরে প্রবেশ করলে দেখা মেলে রোগীরা গাদাগাদি করে কোন রকম চিকিৎসা সেবা নিচ্ছে। আবার কিছু রোগী সিট না পাওয়ায় মেঝেতেই চিকিৎসা দিচ্ছে কর্তব্যরত এক চিকিৎসক। আরো দেখা গেছে, বহির্বিভাগে চিকিৎসা সেবা নিতে এসে রোগীরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করছেন। অপেক্ষা করতে গিয়ে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। উপজেলার লাহুড়িয়া গ্রামের জনৈক রেজাউল হক জানান, ভিড়ের কারণে প্রায় ২ ঘণ্টা অপেক্ষায় আছি। বাটিকা বাড়ি গ্রামের হেনা বেগম নামক অপর এক রোগী জানান, সকাল ১০টায় এসেছি। দেড় ঘণ্টায়ও ডাক্তারের সিরিয়াল পাইনি। মাই গ্রামের প্রশান্ত কুমার দাশ ব্যথার ওষুধ নিতে এসেছেন। ২ ঘণ্টা অপেক্ষা করে ডাক্তারের দেখা পেলেও বাইরে থেকে তাকে ওষুধ কিনে নিতে বলা হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বহির্বিভাগের এক চিকিৎসক বলেন, বহির্বিভাগে মাত্র দু’জন চিকিৎসককে কয়েক শত রোগীকে চিকিৎসা পরামর্শ দিতে হয়। এক মুহূর্তের জন্য চেয়ার থেকে ওঠা যায় না। নিজেরা অসুস্থ হলেও ছুটি নেয়া বা পাওয়া যায় না। এত চাপেরমুখে ভালো চিকিৎসা দেয়া সম্ভব নয়। ৫০ শয্যা বাস্তবায়ন হলে আরো ১২জন চিকিৎসকের পদ সৃষ্টি হতো। তখন রোগীদের সঠিকভাবে চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হতো। এ ব্যাপারে লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা লুৎফুন নাহার নড়াইল জেলা অনলাইন মিডিয়া ক্লাবের সভাপতি উজ্জ্বল রায়কে জানান,‘ ৩১ শয্যার এ হাসপাতালে চিকিৎসকের পদ মাত্র ১০টি। ৫০ শয্যা হলে চিকিৎসকের পদ হবে ২১টি। এছাড়া অপারেশন থিয়েটার ও আরো ১৯টি শয্যার প্রয়োজনীয় আসবাবপত্রসহ অন্যান্য উপকরণ এখনো পাওয়া যায়নি। নতুন ভবন নির্মিত হলেও প্রশাসনিক অনুমোদন না পাওয়া এবং ১২টি চিকিৎসকের পদসহ অন্যান্য উপকরণের অভাবে ৫০ শয্যা চালু করা সম্ভব হচ্ছে না।’ নড়াইলের সিভিল সার্জন মুন্সি আসাদুজ্জামান নড়াইল জেলা অনলাইন মিডিয়া ক্লাবের সভাপতি উজ্জ্বল রায়কে জানান, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি শুধু ৫০ শয্যার খাদ্যের অনুমোদন আছে। অন্য সবকিছুই চলছে ৩১ শয্যার ঘাটতি জনবল দিয়ে। হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত করতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। গত মাসেও এ বিষয়ে একটি চিঠি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। ৫০ শয্যা অনুমোদনের জন্য আমরা আন্তরিকভাবে চেষ্টা করছি।।
খবর ৭১/ ই: