রাণীনগর (নওগাঁ) প্রতিনিধি: নওগাঁর রাণীনগরে অবৈধ ভাবে সরকারি খাসের জায়গায় জবর দখল করে বহুতল ভবন নির্মাণ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলার বড়গাছা ইউনিয়নের বড়গাছা বাজার সংলগ্ন সুগানদিঘী নামক স্থানে এই বহুতল ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানার পরও রহস্যজনক কারণে নীবর ভূমিকা পালন করছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
জানা গেছে, উপজেলার বড়গাছা গ্রামের মো: সমসের আলী মোল্লার ছেলে ভূমিহীন ও দিনমজুর মো: মনছুর আলী মোল্লাকে বড়গাছা মৌজার ১নং খতিয়ান ভূক্ত ১১৯ দাগে ৫০ শতাংশ সরকারি খাসের জমি (শ্রেণী: মাটিয়াল) ৯৯ বছরের জন্য ১৮৮৮-৮৯ নং চিরস্থায়ী পত্তন দেওয়া হয়। উক্ত পত্তনকৃত জমি মনছুর আলী মোল্লা আইন না মেনে জোর করে নিজের ইচ্ছে মাফিক পুকুর খনন করে। বিষয়টি জানতে পেরে পত্তনকৃত জমিতে পুকুর খনন করায় গত ২৬ ফ্রেরুয়ারি ২০১৩ইং সালে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: মনিরুল ইসলাম পাটোয়ারী পত্তনকৃত জমির লীজ বাতিল করে দেন। আর তারপর থেকে মনছুর আলী মোল্লা ও তার স্ত্রী জরিনা বিবি কোন কিছুর তোয়াক্কা না করে পেশীবলের জোরে অবৈধ ভাবে সেই সরকারি খাসের জায়গা ভোগ-দখল করে আসছে। শুধু তাই নয় জমির পাশ (পুকুরের পাশ) দিয়ে থাকা অনেক টাকার বড় বড় গাছও পেশীবলের জোরে বিক্রয় করে। এছাড়া পুকুরের মাছও এই পরিবার দীর্ঘদিন যাবত ভোগদখল করে আসছে। হটাৎ করে গ্রামের কিছু স্থানীয় মাতব্বরদের সহযোতিায় গত ১৫-২০দিন পূর্বে এই সরকারি খাস জায়গার প্রায় ৭-৮ শতাংশ জমির উপরে ৫তলা ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করেন যা এখনও চলমান রয়েছে। এছাড়া এই জমি নিয়ে আদালতে একটি মামলা চলমান রয়েছে। এতে সরকার হারাতে বসেছে লাখ লাখ টাকার সম্পদ। অপরদিকে স্থানীয়রা এই বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনের নিকট বিষয়টি সরেজমিনে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য লিখিত অভিযোগ করলেও রহস্যজনক ভাবে প্রশাসন নীরবতা পালন করছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা, মনছুর আলী মোল্লা ও তার স্ত্রী মোছা: জরিনা বিবি (হাজারি) দিনমজুরের কাজ করে ও তার সন্তানরা ভ্যানগাড়ী চালায়। এই দিনমজুর পরিবারের পক্ষে প্রায় ৫০ লাখ টাকা খরচ করে বহুতল ভবন নির্মাণ করা কেমন করে সম্ভব এখন এই প্রশ্ন বাসা বেধেছে স্থানীয় জনমনে।
একই গ্রামের বাসিন্দা মোছা: শরিফুন বিবিসহ আরও অনেকেই বলেন, এই পরিবারের পেশী জোরের দাপটে আমাদের এখানে বসবাস করা অসম্ভব হয়ে উঠেছে। দীর্ঘদিন যাবত এই পরিবার আমাদেরকে বিভিন্ন ভাবে হয়রানি করে আসছে। আমরা এই পরিবারের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছি। আমরা এই সমস্যা থেকে উত্তোরণ চাই। বিষয়টির সুষ্ঠ তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা চাই। আমরা বাদি হয়ে বিষয়টি সুষ্ঠ তদন্তের জন্য একাধিকবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছি কিন্তু আজ পর্যন্ত তাতেও কোন লাভ হয় নাই।
এবিষয়ে মো: মনছুর আলী মোল্লা ও তার স্ত্রী জরিনা বিবি (হাজারি) বলেন আমাদের কাছে উপযুক্ত কাগজপত্রাদি আছে তাই আমরা এখানে আরসিসি পিলার দিয়ে ভবন নির্মাণ করছি। এর চেয়ে বেশি তারা এই বিষয়ে সাংবাদিকের সঙ্গে কোন আলাপ করতে নারাজ। কিন্তু তারা কোন প্রকার কাগজপত্র দেখাইনি।
এব্যাপারে স্থানীয় ইউপি চেয়াম্যান মো: শফিকুল ইসলাম (সফি) জানান, ওই মহিলা খুবই ভয়ংকর। তার কোন আত্মসম্মান নেই। তার সঙ্গে কথা বলাও বিপদজনক। কারণ কখন যে কি করে ফেলে তার কোন নিশ্চয়তা নেই। এই পরিবার সম্পন্ন অবৈধ ভাবে ওই সরকারি জায়গায় বহুতল ভবন নির্মাণ করছে। আমি একাধিকবার নিষেধ করা সত্তেও তারা আমার নিষেধ অমান্য করে এই ভবন নির্মাণের কাজ করছে। আমি নির্বাহী কর্মকর্তাকে বিষয়টি মৌখিক ভাবে বলেছি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারি কমিশনার (ভূমি) সোনিয়া বিনতে তাবিব বলেন, আমি বিষয়টি শুনেছি। তবে নতুন করে লিখিত অভিযোগ পেলে আমি তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
খবর৭১/এস: