খবর৭১:রাশিয়া তালেবানদের সহায়তা করে আফগানিস্তানকে অস্থিতিশীল করে তোলার চেষ্টা করছে। এমনকি তালেবানকে অস্ত্র সরবরাহ করছে রাশিয়া বলে অভিযোগ করছে যুক্তরাষ্ট্র।
তবে ঐতিহাসিকভাবেই পরস্পরের শক্র রাশিয়া আর তালেবান উভয়েই এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। কিন্তু মার্কিন এই অভিযোগের সত্যতা কতটুকু? যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ আসলে কী?
গত মার্চে একটি সাক্ষাৎকারে আফগানিস্তানে মার্কিন কমান্ডার জেনারেল জন নিকলসন অভিযোগ করেন, তাজিকিস্তানের সীমান্ত এলাকা থেকে তালেবানের কাছে রাশিয়ান অস্ত্র চোরাচালান হয়ে আসছে। তার অভিযোগ, এসব অস্ত্র আমরা সদরদপ্তরেও এনেছি, আফগান নেতারা আমাদের দিয়েছেন এবং তারা বলেছেন যে, রাশিয়ানরাই তালেবানদের দিয়েছে। কয়েকজন আফগান পুলিশ ও সেনা কর্মকর্তা বিবিসিকে জানিয়েছেন যে, তালেবানদের কাছে রাশিয়ান সরঞ্জামের মধ্যে রাতের চশমা, ভারী মেশিনগান আর ছোট অস্ত্রও রয়েছে।
গত একবছর ধরেই রাশিয়ার বিরুদ্ধে এ ধরণের অভিযোগ করে আসছেন মার্কিন কর্মকর্তারা। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে জেনারেল নিকলসন রাশিয়া ও ইরানের বিরুদ্ধে প্রথম অভিযোগ করেন যে, তালেবানের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ আছে। এরপর বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ মার্কিন কর্মকর্তা এই অভিযোগ তুলেছেন। তবে গত বছরের মে মাসে মার্কিন সিনেটে দেয়া একটি সাক্ষ্যে প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা পরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল ভিনসেন্ট আর স্টুয়ার্ড বলেছেন, অস্ত্র সরবরাহ বা অর্থ লেনদেনের বাস্তব কোন তথ্যপ্রমাণ আমি পাইনি।
মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী জেমস ম্যাটিস গত অক্টোবরে বলেছেন, তালেবানকে রাশিয়ার সাহায্য করার বিষয়ে আমি আরো তথ্যপ্রমাণ দেখতে চাই।
যা এখন পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে, তা থেকে পরিষ্কার কিছু বোঝা যায় না। নেটো মহাসচিব জেনস স্টোলটেনবার্গ বলেছেন, এসব দাবির সপক্ষে আমরা এখনো কোন প্রমাণ পাইনি বা নিশ্চিত তথ্য পাইনি। আর এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে তাজিকিস্তান।
এই দাবির বিষয়ে আফগান কর্মকর্তারাও বিতর্কিত বক্তব্য দিয়েছেন। কয়েকজন আফগান কর্মকর্তা দাবি করেছেন যে, তালেবানদের রাশিয়া সাহায্য করছে। কিন্তু আফগানিস্তানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার মুখপাত্র গত মে মাসে বলেছেন, এখনো এর পক্ষে কোন প্রমাণ নেই। গত অক্টোবরে আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানিও দাবি করেন, রাশিয়ানদের কাছ থেকে অস্ত্র পাচ্ছে তালেবান। কিন্তু পরের মাসেই তার প্রতিরক্ষা মন্ত্রী এই দাবিকে গুজব বলে নাকচ করে দিয়েছেন।
মার্কিন এই দাবি সরাসরি নাকচ করে দিয়েছে মস্কো আর তালেবান। মস্কো বলছে, আফগানিস্তানে নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকার জন্য যুক্তরাষ্ট্র আর নেটো রাশিয়ার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ তুলেছে। তালেবানরা দাবি করেছে, তারা কোনও দেশ থেকেই কোন সামরিক সহায়তা পায়না। রাশিয়া আর তালেবানের মধ্যে কি কোন সম্পর্ক আছে? তালেবানকে সামরিক কোন সাহায্য সহযোগিতা দেয়ার কথা নাকচ করেছে রাশিয়া, তবে তারা স্বীকার করেছে যে, তাদের মধ্যে যোগাযোগ আছে।
আফগানিস্তানের প্রতি রাশিয়ার মনোভাবের পরিবর্তন বেশ অবাক করার মতো। কারণ তালেবানের বেশিরভাগ সদস্যই সাবেক মুজাহিদিন, যারা একসময় সোভিয়েত রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। এরপর তালেবানের বিরুদ্ধ বাহিনীকেও অর্থনৈতিক আর সামরিক সহায়তা দিয়েছে রাশিয়া। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে ৯/১১ হামলা এবং আফগানিস্তানে মার্কিন অভিযানের পর রাশিয়ার সঙ্গে নতুন সম্পর্কের সুযোগ পেয়েছে তালেবান।
খবর৭১/জি: