খবর৭১:শহরের একটি শরীর চর্চা কেন্দ্রে, টেরেল ভ্যান ডে নামের একজন স্কুল ছাত্র ওঠা-বসার ব্যায়াম করছে। এরপর সে খানিকক্ষণ লাফালো আর দৌড়ালো।
তার শ্বাস ঘন হয় এসেছে আর হৃপিন্ড জোরে জোরে চলছে। কিন্তু নয় বছরের শিশুটি হাসছে, কারণ কষ্ট হলেও সে আনন্দ পাচ্ছে। শিশুদের স্বাস্থ্যের উন্নতির যে কর্মসূচী নিয়েছে আমস্টার্ডাম, সেই কর্মসূচীতে অংশ নেয়া শিশুদের সে একজন। শহরের স্বাস্থ্য-ওজন কর্মসূচী অনুযায়ী, শহরে এখন স্থূল শিশুদের অতিরিক্ত ওজন ১২ শতাংশ কমেছে। এর ফলে সারা বিশ্বেই শিশুদের মধ্যে স্থূলতা বাড়লেও ইউরোপের নেদারল্যান্ডসের আমস্টার্ডামের কমছে এর প্রবণতা।
একবছর আগে টেরেলের বাবা-মাকে স্কুল কর্তৃপক্ষ জানায় যে, তার ওজন অতিরিক্ত বেশি। এরপরই তাকে এই কর্মসূচীতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। আমস্টার্ডামের সব শিশুর ওজন এখন নিয়মিতভাবে নজরদারি করা হচ্ছে। তাদের বয়স ও উচ্চতার সাথে মিলিয়ে দেখা হয় যে ওজন ঠিক আছে কিনা।
কারো অতিরিক্ত ওজন পাওয়া গেলে তা কমানোর ব্যবস্থা করা হয়। যেমন টেরেলকে ক্রিস্টাল ডে লিজেস্টার নামের একজন শিশু স্বাস্থ্য সেবিকার কাছে পাঠানো হয়।
তিনি টেরেলের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ প্যাকেজ তৈরি করেছেন, যার মধ্যে রয়েছে তার খাদ্য তালিকা, ব্যায়ামের সময়সূচী আর একজন স্বেচ্ছাসেবীকে নির্ধারণ করে দেয়া, যে তার বাড়িতে গিয়ে নিয়মিত নজরদারি করবে। এ সব কিছুই করা হয় একেবারে বিনামূল্যে। শুধু খাবার নয়, শিশুদের জীবনযাত্রার আর শারিরিক চর্চার দিকেও নজর রাখছে শহর কর্তৃপক্ষ।
মিজ ক্রিস্টাল বলছেন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে প্রচলিত পদ্ধতিতে কথা না বলা, কারণ সবাই জানে চিনি বা ফাস্টফুড খাওয়া ক্ষতিকর। সুতরাং যখন কোন শিশুর অতিরিক্ত ওজন হয়, তখন তাকে এবং তার অভিভাবকদের বোঝানো দরকার আসলে সমস্যাটা কোথায় হচ্ছে? যেমন টেরেলের ক্ষেত্রে তার বাবা-মা বুঝতে পারে, অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া আর স্কুল থেকে ফিরে অতিরিক্ত সময় ধরে কম্পিউটারে গেম খেলা তার মুটিয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ।
টেরেলে মা বলছেন, ‘শহর কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ যে, তারা এরকম উদ্যোগ নিয়েছে। এটা আসলে খুবই ভালো কাজ করছে। শিশুদের সাইকেল চালানো আর নানা খেলাধূলায় অংশ নিতেও উৎসাহিত করা হচ্ছে। তবে আমস্টার্ডামের স্থূলতার সবচেয়ে বেশি শিকার শহরের দরিদ্র অভিবাসী পরিবারগুলোর শিশুরা, যারা সুরিনাম, উত্তর আফ্রিকা বা তুরস্ক থেকে এসেছে। এখন এই এলাকাগুলোতেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে শহর কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যেই এই এলাকার শিশুদের মধ্যে স্থূলতার হার কমতে শুরু করেছে। গত কয়েক বছরে এই হার অন্তত ১২ শতাংশ কমেছে।
যেমন উত্তর আমস্টার্ডামের অনেক অভিবাসী পরিবারের মেন্যুতে সবজি আর মুরগি দিয়ে তৈরি স্যুপ যোগ হয়েছে। খাবারদাবার আর রান্নার প্রক্রিয়া নিয়ে তারা নিয়মিত পুষ্টিবিদদের পরামর্শ নিচ্ছেন। বাজেটের স্বল্পতা থাকায় এই কর্মসূচীর আওতায় যোগ করা হয়েছে স্থানীয় সংগঠক, শিক্ষক, সেবিকা, সমাজকর্মীদের। যারা স্থূলতার বিষয়ে সবাইকে সচেতন করছেন। এর আওতায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুদের ফলমূল, কাবার আর স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া শেখানো হচ্ছে, পাশাপাশি ব্যায়াম তো রয়েছেই।
পাশাপাশি সাবওয়ে আর খেলাধুলার স্থানগুলোয় অস্বাস্থ্যকর খাবারের বিজ্ঞাপন প্রচারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। দোকান আর সুপারমার্কেটগুলোতেও স্বাস্থ্যকর সতেজ খাবার খেতে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। এসব কর্মকাণ্ডের সুফল এর মধ্যেই পাওয়া যাচ্ছে। কর্তৃপক্ষের আশা, তাদের এই কর্মসূচী শহরের বাসিন্দাদের দীর্ঘ জীবন আর সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করবে।
খবর৭১/জি: