মুক্তির প্রতিজ্ঞায় উদ্দীপ্ত হওয়ার ইতিহাস ২৬ শে মার্চ

0
733

এস.এম সিরাজুল ইসলাম :
হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি ও বাঙালির মুক্তির সংগ্রামের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আর তাঁর সুযোগ্য কন্যা হলেন, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আমরা পেয়েছি স্বাধীনতা। আর বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা’র নেতৃত্বে পেয়েছি অর্থনৈতিক মুক্তি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র নেতৃত্বে দেশে সকল খাতে ব্যাপক উন্নয়ন হচ্ছে। বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উন্নয়নের মডেল। মুক্তির প্রতিজ্ঞায় উদ্দীপ্ত হওয়ার ইতিহাস ২৬ শে মার্চ। বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস ২৬ শে মার্চ। লাখো শহিদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে এই স্বাধীনতা, এই দিনে জাতি স্মরণ করছে বীর শহিদদের। স্বাধীনতা দিবস তাই বাংলাদেশের মানুষের কাছে মুক্তির প্রতিজ্ঞায় উদ্দীপ্ত হওয়ার ইতিহাস৷ বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা ও লাখো শহীদের রক্তে রঞ্জিত জাতীয় দিবস ২৬ মার্চ। বিশ্বের বুকে লাল সবুজের পতাকা ওড়ানোর দিন ২৬ মার্চ। তাই মুক্তিযুদ্ধে জীবন উৎসর্গকারী সকল শহীদদের স্মরন করছি গভীর শ্রদ্ধায়।
১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ঘুমন্ত নিরস্ত্র বাঙালির ওপর আধুনিক যুদ্ধাস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল৷ বাংলাদেশিদের স্বাধীকার আন্দোলন, এমনকি জাতীয় নির্বাচনের ফলাফলের আইনসঙ্গত অধিকারকেও রক্তের বন্যায় ডুবিয়ে দিতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী শুরু করেছিল সারাদেশে গণহত্যা৷ সেইরাতে হানাদাররা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল, ইকবাল হল, রোকেয়া হল, শিক্ষকদের বাসা, পিলখানার ইপিআর সদরদপ্তর, রাজারবাগ পুলিশ লাইনে একযোগে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে হত্যা করে অগণিত নিরস্ত্র দেশ প্রেমিক ও দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের৷ পাকহানাদার বাহিনী বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় একাধিক গণকবর খুঁড়ে সেখানে শত শত লাশ মাটি চাপা দিয়ে তার ওপর বুলডোজার চালায়৷ নগরীর বিভিন্ন স্থানে সারারাত ধরে হাজার হাজার লাশ মাটি চাপা দেয়া হয়৷ পুরানো ঢাকার বুড়িগঙ্গায় ভাসিয়ে দেয়া হয় নিহতদের লাশ৷
বঙ্গবন্ধু ঘোষিত বাংলাদেশের স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা হ্যান্ডবিল আকারে ইংরেজি ও বাংলায় ছাপিয়ে চট্টগ্রামে বিলি করা হয়৷ আওয়ামী লীগের শ্রম সম্পাদক জহুর আহমেদ চৌধুরী বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা চট্টগ্রামের ইপিআর সদর দপ্তর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে ওয়্যারলেস মারফত পাঠানোর ব্যবস্থা করেন৷ চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম.এ হান্নান দুপুর ২টা ১০ মিনিটে এবং ২টা ৩০ মিনিটে চট্টগ্রাম বেতার থেকে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা পত্র পাঠ করেন৷
‘তোমাদের এই ঋণ কোনোদিন শোধ হবে না’ মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি: ১৯৫২ সালের ২ শে ফেব্রুয়ারি ভাষার জন্য আন্দোলনরত ছাত্রদের বুকে গুলি চালানো হয়৷ রফিক, সালাম, বরকতসহ অনেকে এদিন শহিদ হন৷ সেই তার সঙ্গে সঙ্গেই রচিত হয় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি৷
২৬ শে মার্চ ঢাকা সেনানিবাসের ভেতরে আদমজী কলেজ থেকে বন্দি অবস্থায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ফ্ল্যাগ স্টাফ হাউজে নিয়ে যাওয়া হয়৷ সেখানে তাঁকে সারাদিন আটক রেখে সন্ধ্যায় অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়৷ সন্ধ্যায় কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রে ৮৭০ কিলোওয়াট ট্রান্সমিটার থেকে এই বেতার কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই মুক্তিযুদ্ধকে সংগঠিত করা হয়৷ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ভাষণ ও স্বাধীনতার ঘোষণাভিত্তিক তারবার্তার আদলে স্বাধীনতা এবং স্বাধীনতা যুদ্ধ সম্পর্কিত অনুষ্ঠান ২৬শে মার্চ কালুরঘাট থেকে সম্প্রচার করেন এম.এ হান্নান, সুলতানুল আলম, বেলাল মোহাম্মদ, আবদুল্লাহ আল-ফারুক, আবুল কাশেম সন্দ্বীপ, কবি আবদুস সালাম এবং মাহমুদ হাসান৷
১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চ শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ৷ ২৫ শে মার্চের মধ্যরাত থেকে শুরু হওয়া হত্যাযজ্ঞের ধ্বংসস্তুুপের মধ্য থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশিরা এই দিন থেকে মুক্তিযুদ্ধ ও দেশ স্বাধীন করার শপথ গ্রহণ করে৷ ঐ রাতেই তৎকালীন পূর্ব বাংলার পুলিশ, ইপিআর ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা শুরু করে প্রতিরোধ যুদ্ধ, সঙ্গে যোগ দেয় সাধারণ মানুষ৷ ৯ মাসের যুদ্ধে ৩০ লাখ শহিদের রক্তের বিনিময়ে ১৬ ই ডিসেম্বর অর্জিত হয় স্বাধীনতা৷ জন্ম হয় বাংলাদেশের৷
মহান স্বাধীনতা দিবসের এই দিনে জাতি সকল বিতর্কের অবসান ঘটিয়ে উৎসবের পাশাপাশি শ্রদ্ধা আর বেদনায় স্মরণ করবে মুক্তিযুদ্ধে আত্ম উৎর্সগ করা লাখো শহীদ-যোদ্ধাকে। শ্রদ্ধা জানাবে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তাজউদ্দীন আহমেদসহ মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনাকারী তাঁদের সহকর্মী জাতীয় নেতাদের। মুক্তিযুদ্ধে জীবন উৎসর্গকারী সকল শহীদদের স্মরন করছি গভীর শ্রদ্ধায়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here