খবর৭১; এক সময় আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের কেবল সাহায্যপ্রত্যাশী জাতি হিসেবে বদনাম ছিল। কিন্তু জাতিসংঘের উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতিতে সেই পরিচয় ঘুঁচবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
মন্ত্রী বলেন, ‘এতদিন বিশ্বের যেকোনও স্থানে গেলে শুধু আমাদের বদনাম শুনতে হয়েছে যে বাংলাদেশ একটি গরিব দেশ। শুধু সাহায্য চায়।’
‘এখন আর বাংলাদেশ সে অবস্থানে নেই। বাংলাদেশ এখন আর বিশ্বভিক্ষুক নয়। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের মডেল।’
বুধবার সকালে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন অর্থমন্ত্রী।
মুহিত বলেন, ‘আগে বাংলাদেশ এখন পাতাল থেকে আসমানে উঠেছে। আগে নিচে ছিলাম, এখন ওপরে উঠেছি এবং আরও উঠব।’
‘উন্নয়নের উপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় এখন বাংলাদেশ। এ ধারাবাহিকতায় ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ও ২০৪১ সালে বাংলাদেশ পৌঁছে যাবে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত উন্নত দেশের তালিকায়।’
পুরোপুরি উত্তরণ ২০২৪ সালে
মন্ত্রী জানান, বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে জাতিসংঘের স্বীকৃতিপত্র পেলেও স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বের হতে আরও ছয় বছর লাগবে। ২০২৪ সাল অবধি বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবেই বিবেচনা করবে জাতিসংঘ।
আর স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বিশ্বে বাংলাদেশ যেসব সুযোগ সুবিধা পায়, সেটি বহাল থাকবে আরও নয় বছর অর্থাৎ ২০২৭ সাল অবধি।
মন্ত্রী বলেন, উন্নয়নশীল দেশের প্রথম তিনটি সূচকেই বাংলাদেশ প্রয়োজনীয় মানদণ্ড পূরণে সক্ষম হয়েছে। ২০২১ সালে অনুষ্ঠেয় পরবর্তী ত্রি-বার্ষিক পর্যালোচনায় বাংলাদেশ যদি আবারও মানদণ্ডগুলোর কমপক্ষে দুটি পুরণে সক্ষম হয় তাহলে সিডিপি জাতিসংঘের অর্থনৈতিক এবং সামাজিক কাউন্সিল এর কাছে বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের জন্য সুপারিশ করবে।
‘জাতিসংঘের অর্থনৈতিক এবং সামাজিক কাউন্সিল তা অনুমোদন করে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের কাছে অনুরূপ সুপারিশ করবে। এর তিন বছর পর ২০২৪ সালে বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে আসবে।’
২০২৪ সালের মধ্যে মানবসম্পদ উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে স্কুল পর্যায়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত কমানোর পরামর্শ দেন অর্থমন্ত্রী।
স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ যেসব সুযোগ সুবিধা পায়, তার কী হবে- সে বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের আগের তিনবছর (২০২১-২০২৪) বাংলাদেশ তার উন্নয়ন সহযোগীদের অংশগ্রহণে একটি ক্রান্তিকাল কৌশলপত্র তৈরি করবে। এটি যা এলডিসি থেকে বেরিয়ে আসার পরবর্তী তিন বছরে ২০২৪-২০২৭) বাস্তবায়ন করা হবে।
‘এই কৌশলপত্র তৈরির মূল উদ্দেশ্যে হলো স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বেরিয়ে আসার পরবর্তী ধাপে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সহায়তা কমে আসার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের উন্নয়ন কার্যক্রম যাতে ব্যাহত না হয় তা নিশ্চিত করা।’
‘উদযাপন করব না কেন?’
গত ১৭ মার্চ জাতিসংঘ বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতিপত্র হস্তান্তর করে। আর এই আনন্দে বৃহস্পতিবার দেশ জুড়ে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছ সরকার।
সেদিন সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সচিবালয়ে সংবর্ধনা, নগরীর নয়টি এলাকা থেকে শোভাযাত্রা বের করা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
উন্নয়নশীল দেশে বাংলাদেশের উত্তরণ ২০২৪ সালে হলে এখনই উদযাপন কেন?- এমন প্রশ্ন ছিল অর্থমন্ত্রীর কাছে। জবাবে তিনি বলেন, ‘স্বীকৃতি পত্র পাওয়া একটা অর্জন। বাংলাদেশের এই অর্জন ধুমধামের সঙ্গে সেলিব্রেট করব না কেন?’
মন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী এই অর্জনের রূপকার। আগামী ২২ মার্চ সকালে প্রধানমন্ত্রীকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে।’
‘ওইদিন দুপুরের পর থেকে রাজধানীর নয়টি অঞ্চল থেকে জনগণ র্যালি সহকারে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে জমায়েত হবে বিকাল তিনটার মধ্যে। সেখানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত থাকবেন।’
‘আগামী ২৬ তারিখ পর্যন্ত সরকারের সব দপ্তর থেকে জনগণকে যেকোনও একটি সেবা ফ্রি দেওয়া হবে।’
বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ
উন্নয়নশীল দেশ হলে বাংলাদেশের মূল চ্যালেঞ্জ কী হবে- এমন প্রশ্নে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘মূল চ্যালেঞ্জ হলো আমাদের মানসিক পরিবর্তন। মানসিক পরিবর্তনের জন্যই আমাদের এই অর্জন। আমরা যে এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছি সেটা আমাদের মানসিকভাবে ধারণ করতে হবে।’
অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ, ইআরডি সচিব শফিকুল আজম প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
খবর৭১/এস: