খবর৭১: আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণের পাশাপাশি প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন। বলেছেন, ‘অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হতে গেলে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির অংশগ্রহণ থাকতে হবে। এই বড় দল দুইটির একটিও যদি নির্বাচনে অংশ না নেয় তবে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে না। তবে অংশগ্রহণমূলকে নির্বাচনের চেয়ে আমরা প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনকে বেশি গুরুত্ব দিই। অংশগ্রহণ হতে পারে কিংবা নির্বাচন প্রতিযোগিতামূলক হবে কী না সেটা হচ্ছে বড় চ্যালেঞ্জ।’
শনিবার রাতে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের টকশো মুক্তমঞ্চ-এ অতিথি হিসেবে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
নাজনীন নাসিফ দোলার সঞ্চালয়নায় টক শোতে আরও অতিথি ছিলেন সাবেক সচিব আবু আলম মো. শহীদ খান, সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার এবং ইন্ডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের প্রধান বার্তা সম্পাদক আশীস সৈকত।
১১তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনে তিনটি চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করেন সাখাওয়াত হোসেন। এর মধ্যে প্রথম চ্যালেঞ্জটি হলো প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ধরুন একজন নেত্রী জেলে আছেন। তার তিনটি সিট কিন্তু নেই। তিনি এই তিনটি সিটে জয়ী হতেন। এখন তার জেলে থাকার দরুণ এই তিনটি সিট ওই দল নাও পেতে পারে। আমি এখনকার কথা বলছি। তাই বলা যায়, নির্বাচন অংশগ্রহণ হলেও এই তিনটি সিট মাইনাস। এভাবে বিভিন্ন দলে সিট মাইনাস হতে থাকলে নির্বাচনে প্রতিযোগিতা থাকবে না।’
সাবেক এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘আরেকটি চ্যালেঞ্জ হচ্ছে নির্বাচনে সবাই অংশগ্রহণ করবে তার নিশ্চয়তা দেবে কে? সব দলকে নির্বাচনে আনতে নিশ্চয়তা দিতে হবে যে দল ক্ষমতায় থাকবে সেই সরকারকে। সরকারকে এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি করতে হবে যে সবাই স্বেচ্ছায় নির্বাচনে অংশ নেয়।’
তৃতীয় চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘মনে করুন একটি দলে ২৩০ জন এমপি আছেন। সেখানে যদি আগামী নির্বাচনে ৩০ জন বাদ যায় বা ৫০ জনকে যদি নমিনেশন না দিয়ে নতুন ৫০ জনকে নমিনেশন দেয়া হয় তবে ওই ৫০ জন কিন্তু এমপি পদেই থেকে যাচ্ছেন। তারা এমপি হিসেবে তাদের পদে বহাল থাকলে বর্তমান প্রেক্ষাপটে তিনি ওই এলাকায় ভালো একটা অবস্থান তৈরি করবেন। সেই অবস্থায় নতুন নমিনেশন পাওয়া ওই দলের সংসদ সদস্য প্রার্থী কতটা কমফোর্ট ফিল করবেন সেটাও ভাবার বিষয়। এটা একটা বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ। এখনকার বর্তমান ইলেকশন কমিশনের ওপর জনগণের ট্রাস্ট আছে কী না, জন্মেছে কী না তাও ভাবতে হবে।’
একই প্রসঙ্গে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘নির্বাচন মানেই প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন। আমাদের সংবিধানে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনের কথা বলা আছে। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক আইনেও সঠিক নির্বাচনের কথা বলা আছে। এই সঠিক নির্বাচনের মাধ্যমে ভোটারদের সামনে বিকল্প প্রার্থী থাকবে। ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবেন এবং ভোটররা কোনো রকম প্রভাব ছাড়া নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারবেন। এই পুরো প্রক্রিয়াটাই হবে বিশ্বাসযোগ্য। ভোটদের সামনে যদি বিশ্বাসযোগ্য বিকল্প থাকতে হয় তবে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন অবশ্যই হতে হবে।’
সুজন সম্পাদক বলেন, ‘এজন্য অনেকগুলো করণীয় রয়েছে। অনেকগুলো পক্ষ রয়েছে। যাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা দরকার। এক্ষেত্রে একটা গুরুত্বপূর্ণ পক্ষ হলো নির্বাচন কমিশন। তাদের নিরপেক্ষতা, তাদের আন্তরিকতা, সাহসিকতা, অনমনীয়তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
আগামী নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য লেভেল প্লেইং ফিল্ড আছে কী না? টেলিফোনে টকশোর দর্শকদের এমন এক প্রশ্নের জবাবে সাবেক সচিব আবু আলম মোহাম্মদ শহীদ খান বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে ঢাকাসহ সারাদেশে বিক্ষোভ করছে বিএনপি। এই বিক্ষোভ অনেক ক্ষেত্রেই পুলিধি বাধার মুখে পণ্ড হয়েছে। আমি মনে করি যেকোনো গণতান্ত্রিক দলকেই অসহিংসু আন্দোলনের সুযোগ দেয়া উচিত। তা না হলে লেভেল প্লেইং ফিল্ড তৈরি হবে না। আগামী নির্বাচনও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ও অংশগ্রহণমূলক হবে না।’
টক শোর অপর আলোচক ইন্ডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের প্রধান বার্তা সম্পাদক আশীস সৈকত বলেন, ‘আগে আমরা বলতাম অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। যেটা সর্বাগ্রে প্রাধান্য পেত। কিন্তু এখন ঘুরে ফিরে একটা প্রসঙ্গই আসছে সেটা হলো অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। কিন্তু অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের চেয়ে আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ সবার ভোটাধিকার। দেখা গেল সব দল নির্বাচনে অংশ নিল কিন্তু কিছুসংখ্যক লোক ভোট দিতে এলো না। তাদের ভয়-ভীতি দেখিয়ে ভোট দিতে বাধা দেয়া হলো। বিশেষ করে সংখ্যালঘুদের। তাহলে কিন্তু নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধই থেকে গেল। তাই আমি বলবো আওয়ামী লীগ আর বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলেই অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে না। নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক তখনই হবে যখন ভোটারদের বেশির ভাগেই স্বাচ্ছন্দ্যে ভোট কেন্দ্রে যাবেন। তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করার সুযোগ পাবেন।’
খবর৭১/জি: