মোঃ অালী হাসান: জয়পুরহাট জেলা প্রতিনিধিঃ জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি উপজেলার ধরঞ্জী ইউনিয়নের নন্দইল গ্রামে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ আদিবাসীদের স্মরণে নির্মিত হয়েছে আদিবাসী ভাস্কর্য। জয়পুরহাট জেলা সদর থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরে ভারত সীমান্তবর্তী এলাকা চারিদিকে সবুজে
ঘেরা নন্দইল গ্রামের কোল ঘেষে মাঠের পাশে নিরিবিলি পরিবেশে নির্মিত হয়েছে ভাস্কর্যটি। ২০১০ ও ২০১১ সাল জুড়ে জয়পুরহাট জেলা পরিষদের অর্থায়ন ও তত্ত্বাবধানে “নন্দইল গ্রামে ১৯৭১-এ শহীদ
আদিবাসীদের স্মরণে ভাস্কর্য” নির্র্মিত হয়। আদিবাসীদের ঐতিহ্য ও সংগ্রামের ইতিহাসের প্রতীক হিসেবে শহীদদের স্মরণে নির্মাণ করা হয়েছে উচু বেদীর উপরে তীর ধনুক হাতে পুরুষ এবং নারীর অংশগ্রহণমূলক ভাস্কর্য। ভাস্কর্যটির শিল্পী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষক জনাব কনক। জানা যায়, মুক্তিযুদ্ধের সময় ১৯৭১ সালের ২৬ আগস্ট পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নন্দইল গ্রামের চারজন আদিবাসী খোকা হেমব্রম, মন্টু হেমব্রম, সরেন হেমব্রম ও জোহন সরেনকে ধরে নিয়ে গিয়ে হাত-পা বেঁধে নির্মমভাবে নির্যাতন করে এবং জীবন্ত অবস্থায় মাটি চাপা দিয়ে হত্যা করে। স্বাধীনতার দীর্ঘ সময় পর তাদের স্মরণে এই ভাস্কর্য নির্মাণ করা হয়।
গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ রবিবার দুপুরে জয়পুরহাট জেলা আদিবাসী ছাত্র পরিষেদর নেতা সুরেশ রবিদাস ও
নিকোলাস খালকোর সাথে নন্দইলের আদিবাসী ভাস্কর্য পরিদর্শনে যাই। পরিদর্শনে গিয়ে উঠে আসে সেখানকার
বর্তমান চিত্র। নিরাপত্তা বেষ্টনী দেখা গেলেও ভাস্কর্য রক্ষণাবেক্ষনের কোন সুব্যবস্থা নেই। ভাস্কর্যের সৌন্দর্য হারিয়ে গেছে অনেকাংশেই। তীর ধনুক সংবলিত অংশের তীর নেই। সেটি ভেংগে ফেলা
হয়েছে। তীর রাখার বাক্সের তীরের বের হয়ে থাকা অংশগুলো বাঁকিয়ে ও ভেংগে নষ্ট করে দিয়েছে। এতে করে ভাস্কর্যটির সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে গেছে। এছাড়াও সেখানে প্রিতিনয়ত বসে মাদকের আখড়া। ভাস্কর্যের চারিপাশে সীমানা প্রাচীর থাকায় সেখানে বসে মাদক সেবনে সহজ হয় মাদকসেবীদের জন্য। ভাস্কর্যের পিছনের অংশে বসে চলে গাঁজা সেবনের জমজমাট আসর। নিরিবিলি এলাকা হওয়ায় বর্তমানে এটি মাদক সেবনের জন্য একটি নিরাপদ স্থানে পরিণত হয়েছে। আদিবাসী ভাস্কর্যটি নির্মাণ হয়েছে বীর শহীদদের স্মরণে। সেজন্য প্রয়োজন সুষ্টু রক্ষণাবেক্ষণ ও সংরক্ষণ। তা নাহলে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়ে যাবে এমন ঐতিহ্য ও ইতিহাস। বাংলাদেশের ইতিহাসের স্বাক্ষী
রক্ষা ও সংরক্ষণে সরকারসহ সকলকেই এগিয়ে আসা প্রয়োজন।
খবর ৭১/ ই: