খবর৭১:ত্রিপুরায় যেন এখন সাবেক সোভিয়েতের হাওয়া। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন যখন ভেঙে গিয়েছিল, পতন হয়েছিল বিশ্বের সর্ববৃহৎ সমাজতন্ত্রের, সে সময় রাতারাতি লেনিনগ্রাদের নাম বদলে গিয়ে হয়েছিল সেন্ট পিটার্সবার্গ।
যদিও, সেন্ট পিটার্সবার্গই এই শহরের পুরনো নাম। এমনকি, সেন্ট পিটার্সবার্গের কেন্দ্রস্থলে থাকা বিশাল লেনিনের মূর্তিকেও দড়ি বেঁধে মাটিতে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। সে সময় মোবাইলফোন এবং ইন্টারনেটের যুগ ছিল না। কিন্তু, প্রিন্ট মিডিয়ার বদৌলতে সেই ছবি ছড়িয়ে পড়েছিল বিশ্বজুড়ে। বলতে গেলে সমাজতন্ত্রবাদীদের গোড়ায় যেন আঘাত করেছিল এই ঘটনা। এরপরই বিশ্বজুড়ে লেনিনের মূর্তি ভাঙার একটা চল শুরু হয়।
তবে, ভারতবর্ষের বুকে লেনিনের মূর্তি ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়ার এমন কোনও ঘটনার উদাহারণ কিন্তু দিন কয়েক আগে পর্যন্তও পাওয়া যায়নি। লেনিনের মূর্তিতে কিছু ছোট-খাটো বিচ্ছিন্ন হামলার ঘটনার খবরই শুধুমাত্র কানে এসেছে। কিন্তু, ত্রিপুরার পালা-বদলে এবার লেনিন-এর মূর্তি ভাঙার তালিকায় জুড়ে গেল ভারতের নাম।
ত্রিপুরার ভোটের ফল ঘোষণার পর সোমবার সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে একটি ভিডিও। যেখানে দেখা যাচ্ছে জেসিবি দিয়ে দিনের বেলায় ভেঙে ফেলা হচ্ছে লেনিনের বিশাল মূর্তি। এমনকি ত্রিপুরার সিপিএম দলের পক্ষ থেকেও লেনিনের মূর্তি ভাঙার একটি ছবি ফেসবুকে পোস্ট করা হয়েছে। দাবি করা হয়েছে বিলোনিয়ায় এই ঘটনাটি ঘটেছে। আর এই ঘটনায় অভিযোগের আঙুল উঠেছে বিজেপি-র দিকে। বিজেপি লেখা টুপি এবং টি-শার্ট পরেও ঘটনাস্থলে বেশ কয়েক জনকে ঘুরতে দেখা গিয়েছে।
ত্রিপুরায় বামপন্থীদের ইতিহাস অনেক দিনের। এবার ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচনে বামেদের জয় হলে তারা অষ্টমবার সরকার গড়ত। বিজয়ী বিজেপি জোটের থেকে বামেদের পাওয়া ভোটের ফারাক মাত্র সামান্য। সুতরাং, এটা বলা যায় না যে ত্রিপুরা থেকে বামেরা এক্কেবারে উৎখাত হয়ে গিয়েছে। নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে তাঁদের ভোটব্যাঙ্ক।
এই পরিস্থিতিতে লেনিনের মূর্তি জেসিবি দিয়ে উৎখাত করার ঘটনা নিশ্চিতভাবে ত্রিপুরার রাজ্য-রাজনীতি ছাপ যে ফেলবে তাতে কোনও সন্দেহ নেই। ইতিমধ্যেই এই ঘটনাকে ঘিরে ফেসবুকে হইচইও শুরু হয়ে গিয়েছে বামপন্থীদের মধ্যে। কড়া প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন তারা।
সমাজতন্ত্রের অন্যতম পুরোধা বলা হয় লেনিনকে। রাশিয়ায় মেহনতি মানুষের জন্য তাঁর লড়াই বিশ্বজুড়েই স্বীকৃত। লেনিনের আন্দোলনের প্রভাব শুধু রাশিয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। একটা সময় তা ইউরোপ থেকে লাতিন আমেরিকা, চিন, ভারতেও প্রভাব বিস্তার করেছে। ধনতন্ত্রের ধারক বলে যে সব দেশের পরিচিতি সেখানে রয়েছে লেনিনের একাধিক মূর্তি থেকে তাঁর নামে সংগ্রহশালা।
কিন্তু, সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনে লেনিনের মূর্তিতে হামলা থেকে শুরু করে তাঁর স্মৃতিতে গড়ে ওঠা বিভিন্ন জিনিসের নাম বদলে ফেলা যে চল চালু হয়েছিল তা আজও অব্যাহত। কয়েক বছর আগেই ইউক্রেনে লেনিনের বিশ্বখ্যাত মূর্তিতে বোমা মারা হয়। বার্লিনে বড় বড় হাতুড়ি দিয়ে গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল লেনিনের মূর্তি। বলতে গেলে বিশ্বজুড়ে লেনিনের মূর্তি ভেঙে ফেলার ঘটনা আরও এক বিশাল কাহিনি। এই কাহিনিতে যে এবার ত্রিপুরার নাম উঠে গেল তাতে কারোরই কোনো সন্দেহ নেই।
সূত্র: ওয়ান ইন্ডিয়া
খবর৭১/জি: